প্রতীকী ছবি।
লক্ষ্য, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। সেই লক্ষ্য পূরণেই যন্ত্রচালিত তাঁতের ক্ষেত্রে নূতন আর্থিক উৎসাহ নীতি আনিতেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পশ্চিমবঙ্গে কয়েক লক্ষ হস্তচালিত তাঁত থাকিলেও, যন্ত্রচালিত তাঁতের সংখ্যা যথেষ্ট কম। মানও উন্নত নহে। সুতরাং, গৃহসজ্জার বিভিন্ন উপকরণ তৈরির মূল উপাদান ‘কাপড়’ আমদানির জন্য নির্ভর করিতে হয় ভিনরাজ্যের উপর। অথচ, বস্ত্রশিল্পকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করিতে রাজ্যের মধ্যেই সুতা তৈরি হইতে কাপড় উৎপাদন এবং তাহা দিয়া পোশাক, গৃহসজ্জার উপকরণ-সহ বিবিধ সামগ্রী তৈরির একটি সৃশৃঙ্খল ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। সেই পরিকাঠামো নির্মাণকে উৎসাহিত করিতেই জানানো হইয়াছে, নূতন বৎসরে যন্ত্রচালিত তাঁত কিনিবার মূলধনী খরচের ২০ শতাংশ জোগাইবে রাজ্য, বিদ্যুৎ মাসুল, জিএসটি-সহ আরও কিছু ক্ষেত্রে ভর্তুকি মিলিবে। যে পাওয়ারলুম সংস্থা কাপড় উৎপন্ন করিতে চাহিবে, তাহাদের সুতা জোগাইবে তন্তুজ। তৈরি কাপড় তাহারাই ক্রয় করিবে।
ইহা সুবিন্যস্ত পরিকল্পনা। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গের নূতন শিল্প-সম্ভাবনার কথাটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারংবার বলিয়াছেন। এবং বলিয়াছেন, যে ক্ষেত্রগুলিতে রাজ্যের দক্ষতা সর্বাধিক, সেইখানে জোর দিবার প্রচেষ্টা করা হইবে। বাংলার তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য নূতন করিয়া বলিবার নহে। কিন্তু এই ঐতিহ্যশালী শিল্প খুব ভাল অবস্থায় নাই। ইতিপূর্বে জিএসটির ধাক্কায় হস্তচালিত তাঁত বিপর্যস্ত হইয়াছিল। দাম বৃদ্ধি পাইয়াছিল জরি, রং, সাধারণ সুতা-সহ সমস্ত কাঁচামালের। ফলে, উৎপন্ন বস্ত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে চাহিদা হ্রাস পায়। সেই ক্ষতির ধাক্কা কাটাইয়া উঠিবার পূর্বেই আসিয়াছে অতিমারি এবং তজ্জনিত লকডাউন। দীর্ঘ সময় তালাবন্দি থাকিবার কারণে চরম অনটনে ভুগিয়াছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষ। যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকিবার কারণে উৎপন্ন সামগ্রী বিক্রয় করা যায় নাই। নূতন বরাতও জোটে নাই। কাজ হারাইয়া অনেকেই দিনমজুরে পরিণত হইয়াছিলেন। এমতাবস্থায় যন্ত্রচালিত তাঁত লইয়া সরকারের এ-হেন পরিকল্পনা আশা জাগায়। কারণ, সরকার শুধুমাত্র পরিকাঠামো নির্মাণের উপরেই দৃষ্টিপাত করে নাই, বাজার ধরিবার ভিত গড়িবার কথাও ভাবিয়াছে। এই সামগ্রিক ভাবনার প্রতিফলন অন্যত্রও দেখা গেলে সার্বিক ভাবে তাঁতশিল্পের উন্নতি হইবে।
এবং ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন পাটশিল্পের ক্ষেত্রেও। পাটের বাজার নাই, এমন নহে। পরিবেশবান্ধব সামগ্রী হিসাবে দেশ-বিদেশে পাটজাত সামগ্রীর কদর বাড়িতেছে। ইহা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শিল্পও বটে। তৎসত্ত্বেও দীর্ঘকাল ধরিয়া চটশিল্প রুগ্ণ শিল্পের তকমা পাইয়া আসিতেছে। একের পর এক বন্ধ হইতেছে রাজ্যের চটকলগুলি। চটকলগুলির প্রযুক্তি এবং কৃৎকৌশলও আধুনিক শিল্পের উপযোগী হইয়া উঠিতে পারে নাই। খাঁড়ার ঘা দিয়া কিছু মাস পূর্বেই কেন্দ্রীয় সরকার রবি মরসুমে গম প্যাকেটজাত করিবার ক্ষেত্রে পঁয়ত্রিশ শতাংশ প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়াছিল রাজ্যকে। ইহাতে সঙ্কট গুরুতর হইয়াছে। সুতরাং, অবিলম্বে পাটের ক্ষেত্রেও এক সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করিতে হইবে। সরকারি উৎসাহ পাইলে পাটশিল্পে নূতন দিশা মিলিতে পারে। রাজ্যের অর্থনীতির পক্ষেও তাহা স্বস্তিদায়ক হইবে।