Iran Hijab Row

ইরান বসন্ত

নতুন বছরে ইরানের মানুষ কেমন থাকবেন, তা এখনও অনিশ্চিত, কিন্তু যে বছরটি অস্তাচলগামী, তাকে তাঁরা স্মরণীয় করে গেলেন ভয়হীনতার বার্তা দিয়ে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৩১
Share:

ইরানের প্রতিবাদ। ছবি: রয়টার্স।

যথাযথ ভাবে হিজাব না পরার অপরাধে রাষ্ট্রপোষিত নীতিপুলিশের হাতে মাহশা আমিনির মৃত্যু ছিল ইরানের প্রশাসনের কাছে স্ফুলিঙ্গ-সম। শেষ পর্যন্ত সেটা দাবানলের রূপ ধারণ করে। এতটা হয়তো আঁচ করতে পারেনি সে দেশের রাষ্ট্রশক্তি। ১৯৭৯ সালে ইসলাম রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে ইরানের সরকার-বিরোধী আন্দোলনকে ছাপিয়ে যাওয়া এই গণ-অভ্যুত্থান ইতিমধ্যেই শতাধিক দিবস পার করে ফেলেছে। সরকার-বিরোধীরা নিরস্ত্র, অসংগঠিত, নেতৃত্বহীন হলেও, এবং শাসক দলের অত্যাচার সত্ত্বেও আন্দোলন জারি রেখেছেন। ১৮০০০-এরও বেশি আন্দোলনকারী গ্রেফতার হয়েছেন। ৪৭৫-এরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। ১১ জনকে এখনও পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রকাশ্যে ফাঁসি হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অনড়। হিজাব আইন অমান্য এখনও সেখানে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও, বিশেষ করে তেহরানে, মহিলারা চুল ঢাকতে অস্বীকার করছেন। ২০২২ সালের এই বিপ্লব আক্ষরিক অর্থেই ঐতিহাসিক: রাষ্ট্র এবং সমাজের মধ্যে সম্পর্কে যে আমূল পরিবর্তন এসেছে, তা বিভিন্ন ঘটনাক্রমেই স্পষ্ট।

Advertisement

অন্য দিকে, ইরানের রাষ্ট্র দেখিয়ে দিয়েছে, চাপের মুখে নতিস্বীকার বা আদর্শের সঙ্গে আপস না করা। যখনই কোনও পরিস্থিতিতে তাকে সংস্কার এবং দমনের মধ্যে বিকল্প বাছতে হয়, নিশ্চিত ভাবে দমনের পথই নির্বাচিত হয়। সর্বময় ধর্মীয় নেতা আলি খামেনেই জানেন যে, বাধ্যতামূলক হিজাব আইন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ক্ষান্ত হবেন না জনগণ, বরং তাঁরা জোর পাবেন সেই সমস্ত ব্যক্তিগত স্বাধীনতা দাবি করার, যা থেকে দেশের ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র এত দিন তাঁদের বঞ্চিত রেখেছে। অন্যান্য স্বৈরাচারী শাসনের মতোই, ইরানের শাসক দল ভয়কে হাতিয়ার করেই রাজত্ব করে থাকে।

কিন্তু সেই ভীতির ছায়া কি ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে? প্রশ্ন তুলে গেল ২০২২ সাল। বহু জায়গায় কারাবাস বা অত্যাচারের ভয় না করে খেলোয়াড় এবং অভিনেত্রীরা হিজাব ছাড়াই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন বা অভিনয় করছেন, যা অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করছে। রাজনৈতিক বা অন্যান্য বন্দিরাও অকথ্য অত্যাচারের মুখে থাকছেন বেপরোয়া। তাঁদের মৃত্যু আন্দোলনকারীদের দমানোর বদলে আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করছে। এ বারের আন্দোলনের মূলমন্ত্র হল নারী অধিকার নিশ্চিত করার শপথ, বহুত্ববাদে বিশ্বাস এবং দেশপ্রেম। তাই এ বার প্রতিবাদের মুখ শুধু বুদ্ধিজীবীরা নন, খেলোয়াড়, সঙ্গীতশিল্পী এবং সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মহিলারা, যাঁদের ‘উইমেন, লাইফ, ফ্রিডম’-এর প্রগতিশীল স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। শহিদ হয়েছেন একাধিক নারী। সাধারণ মানুষের এই সাহসিক প্রতিরোধ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে লক্ষ করেছে দুনিয়া। ইতিহাস বলে, বিরোধী দলের সাহস ও শাসক দলের রোখ, এই দু’টির সম্পর্ককে হতেই হবে ব্যস্তানুপাতিক। আধিপত্যবাদকে দেখে মনে হয় সে সর্বশক্তিমান, কিন্তু যখন তার পতন হয়, তা ঘটে খুব দ্রুত, অতি দ্রুত। এক দিন যা ছিল অভাবনীয়, তা-ই অচিরে হয়ে পড়ে ঘোর বাস্তব। নতুন বছরে ইরানের মানুষ কেমন থাকবেন, তা এখনও অনিশ্চিত, কিন্তু যে বছরটি অস্তাচলগামী, তাকে তাঁরা স্মরণীয় করে গেলেন ভয়হীনতার বার্তা দিয়ে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement