Intense Summer Season

উষ্ণ ফাঁদ

বেপরোয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ। নগরায়ণ স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, গ্রাম ধীরে ধীরে শহরে পরিণত হবে, তার পরিকাঠামোগত উন্নতি ঘটবে, এতে বিরুদ্ধ মত থাকা উচিত নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৪ ০৭:৩০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ভারতের বড় শহরগুলিতে গ্রীষ্মের দিন যে ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠছে, সে বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই। সম্প্রতি দিল্লির তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ৫০-এর আশেপাশে, যা অভূতপূর্ব। কিন্তু বর্ষাকালীন বৃষ্টিও যে কাঙ্ক্ষিত স্বস্তি দিতে পারছে না, বরং ক্রমবর্ধমান উত্তাপ এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতার যুগলবন্দিতে অস্বস্তি ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে, সে কথা জানাল দিল্লির সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই)। শহরগুলির এই তালিকায় রয়েছে বেঙ্গালুরু, কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লি, হায়দরাবাদ ও মুম্বই। শুধু তা-ই নয়, এত দিনের সাধারণ জ্ঞান যা বলে— দিনের বেলার উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ রাতে দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়— তারও খোঁজ মিলছে না। শহরাঞ্চলে রাতের স্বস্তিটুকুও উধাও হয়েছে তাপমাত্রা সে ভাবে না-কমায়। একমাত্র কলকাতাই ব্যতিক্রম। সিএসই-র তথ্য অনুযায়ী, ২০০১-১০ সালের মধ্যে কলকাতার রাতের তাপমাত্রা যতখানি হ্রাস পেত, ২০১৪-২৩’এর দশকে সেই হারই অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু বাকি শহরগুলির তথ্য তা বলছে না। তাই এ কথা বলাই যায়, উষ্ণায়ন যে হারে বিশ্বকে উত্তপ্ত করে তুলছে, বৃহৎ শহরগুলি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে তার চেয়ে অনেক বেশি হারে।

Advertisement

এমনটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। সৌজন্যে, বেপরোয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ। নগরায়ণ স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, গ্রাম ধীরে ধীরে শহরে পরিণত হবে, তার পরিকাঠামোগত উন্নতি ঘটবে, এতে বিরুদ্ধ মত থাকা উচিত নয়। রূপান্তরের এই মডেলটিকে বলপূর্বক আটকে পিছনে হাঁটার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। আপত্তি, যখন সেই রূপান্তর ঘটানো হয় পরিবেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে। বেশ কয়েক দশক আগে পর্যন্ত জলাভূমি বুজিয়ে, গাছ কেটে নগরসভ্যতার বিকাশ নিয়ে তেমন প্রতিবাদ ওঠেনি, কারণ সার্বিক ভাবে পরিবেশ সচেতনতায় ঘাটতি ছিল। বিশ্ব উষ্ণায়ন যে মানবসভ্যতার ত্রাসস্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে, এবং শেষের দিনটি যে এমন হুড়মুড়িয়ে এগিয়ে আসবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা গড়ে ওঠেনি। কিন্তু ধারণা যখন তৈরি হল, তখনও যে প্রশাসনিক স্তরে নড়েচড়ে বসার যথেষ্ট লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, সেটাই আতঙ্কের। রিপোর্টে বলা হয়েছে, শহরগুলিতে ‘হিট স্ট্রেস’-এর জন্ম হচ্ছে। তাপমাত্রাজনিত অস্বস্তির এই কুচক্র তৈরি হয় বাতাসের তাপমাত্রা, ভূমির তাপমাত্রা, এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতার সম্মিলিত প্রভাবে। অন্যতম কারণ, শহরগুলি ক্রমশ কংক্রিটে মুড়েছে। ফলে ভবিষ্যতে যদি শহরের সবুজ আচ্ছাদন বৃদ্ধিও করা হয়, তা দিনের তাপমাত্রাকে হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করবে, কিন্তু রাতের স্বস্তি ফিরবে না।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে শহরের লাগামছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ‘হিট আইল্যান্ড’ কথাটি বহুশ্রুত। যার অর্থ, শহরের তাপমাত্রা যখন চার পাশের গ্রামাঞ্চলের তুলনায় অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। সিএসই-র রিপোর্টেও তারই প্রতিধ্বনি। দেখা গিয়েছে, যে শহরের ‘কংক্রিটায়ন’ যত বেশি, তার তাপমাত্রা বৃদ্ধিও তত বেশি। এর প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন ছিল কংক্রিটের সঙ্গে সবুজ এবং জলাভূমির মধ্যে এক সুন্দর ভারসাম্য রক্ষা। উন্নয়ন ঘটানো, কিন্তু পরিবেশগত ক্ষতিকে ন্যূনতম রাখা। আশ্চর্য, পুরনো জনবসতিগুলি তো বটেই, অত্যাধুনিক সদ্য-নির্মিত নগরগুলিতেও সেই ভারসাম্য বজায় রইল না। উষ্ণতার ফাঁদে ছটফটিয়ে মরাই কি তবে নগরজীবনের ভবিতব্য?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement