Gender Discrimination

পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টি

তবে এ-হেন পরিসংখ্যানে আশ্চর্য বোধ হয় না। সমাজে মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিটি কী রূপ, তাহার প্রমাণ প্রাত্যহিক নানা ঘটনা হইতেই উঠিয়া আসে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২ ০৮:২৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

মানিতেই হইবে স্বামীর কথা— এমত ধারণা প্রায় সকল ভারতীয়েরই। পাশাপাশি তাঁহাদের সমর্থন পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের নির্ধারিত ভূমিকার প্রতি। অর্থাৎ, পুরুষ বাহিরের কাজ করিবেন, স্ত্রী সামলাইবেন ঘর। আধুনিক ভারতের এই বাস্তব চিত্রটি ধরা পড়িয়াছে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়। সেইখানে পারিবারিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে তো বটেই, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রেও মেয়েদের ভূমিকাকে এই দেশে কী ভাবে দেখা হইয়া থাকে, তাহার এক ধারণা মিলিয়াছে। প্রায় ৮০ শতাংশ ভারতীয় মনে করেন, যেখানে চাকুরির সংখ্যা সীমিত, সেখানে অবশ্যই পুরুষদের প্রাধান্য পাওয়া উচিত। অর্থাৎ, সমানাধিকার তত্ত্ব এবং নারীর ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত যে কথাগুলি এত দিন আলোচিত হইয়াছে, সরকারি এবং অ-সরকারি ক্ষেত্রে যেটুকু উদ্যোগ করা হইয়াছে, তাহা যে লিঙ্গবৈষম্যের শিকড়টিকে স্পর্শ করিতে পারে নাই, তাহা স্পষ্ট। নারী দিবসে ইহা অপেক্ষা অস্বস্তিকর বাস্তব আর কী হইতে পারে?

Advertisement

তবে এ-হেন পরিসংখ্যানে আশ্চর্য বোধ হয় না। সমাজে মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিটি কী রূপ, তাহার প্রমাণ প্রাত্যহিক নানা ঘটনা হইতেই উঠিয়া আসে। সম্প্রতি যেমন কেরল হাই কোর্ট পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষকে তীব্র ভর্ৎসনা এবং সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে জরিমানা করিয়াছে এক বিবাহবিচ্ছিন্ন মহিলাকে তাঁহার নাবালিকা কন্যার পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ে হয়রানির অভিযোগে। ‘সিঙ্গল পেরেন্ট’ হিসাবে শিশুটির যাবতীয় দায়িত্ব তাঁহার— এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও পিতার সম্মতি নাই, এই অজুহাতে নূতন করিয়া পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়াটিতে নানা রূপ বাধার সৃষ্টি করা হইয়াছিল। সমীক্ষার সঙ্গে এই ঘটনাটির সরাসরি হয়তো কোনও যোগ নাই। কিন্তু উভয় ঘটনা প্রমাণ করে, সমাজে মেয়েদের ‘স্বাধীন’ অস্তিত্ব এখনও অনেকাংশে স্বীকৃত নহে। সেই কারণেই মেয়েদের স্বাভাবিক অধিকারগুলিও তাঁহাদের হাতে তুলিয়া দিবার ক্ষেত্রে এক নিদারুণ অনীহা কাজ করে। সমাজ সমানাধিকারের কথা মুখে বলিতে পারে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে নারীকে সে সর্বদা পুরুষের ছায়ার তলেই দেখিতে অভ্যস্ত।

এবং এই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ধারক ও বাহক অনেক মহিলাও। হয়তো শতাংশের হারে কিছু কম, কিন্তু প্রায় কাছাকাছি সংখ্যক মহিলা বিশ্বাস করেন, স্বামীর কথা অবশ্যপালনীয়। গত বৎসর জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষায় দেখা গিয়াছিল, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ অনেক রাজ্যেই অধিকাংশ মহিলা মনে করেন, স্বামী স্ত্রীকে প্রহার করিলে তাহা গর্হিত কাজ নহে। স্বামীকে না বলিয়া গৃহের বাহিরে পা রাখিলে, সংসারকে অবহেলা করিলে, স্বামীর সঙ্গে তর্ক করিলে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলাই যায়। গার্হস্থ হিংসার প্রতি মেয়েদের এই সমর্থন আশঙ্কার বইকি। আশঙ্কার মূল কারণ পুরুষতান্ত্রিকতার এই সর্বব্যাপ্তি, যাহা দীর্ঘ দিনই শুধুমাত্র পুরুষদের নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্য হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছে। এই ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বের জায়গাটি আদৌ পুরুষ বনাম নারী নহে। ইহা একান্ত ভাবেই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টি, যাহা মেয়েদের মধ্যেও সমান ভাবে বর্তমান, তাহার সঙ্গে নারী অধিকারগুলির দ্বন্দ্ব। রাষ্ট্রপুঞ্জ কর্তৃক আন্তর্জাতিক নারী দিবস সূচনার পর প্রায় অর্ধশতক পার হইলেও সেই দ্বন্দ্বের মীমাংসা দূর অস্ত্।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement