Antibiotics

ওষুধের বিপদ

রোগের উপশমে সাধারণত ওষুধের দোকান থেকে অথবা নিজস্ব ‘ডাক্তারি-বুদ্ধি’র প্রয়োগ ঘটিয়ে ওষুধ কিনে খাওয়ার প্রবণতা নাগরিকের মজ্জাগত। সমস্যা হল, এ ক্ষেত্রে না মানা হয় ওষুধ খাওয়ার নির্দিষ্ট পদ্ধতি, না মানা হয় নির্দিষ্ট সময়সীমা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৬:২৬
Share:

অসুখ সারাতে সঠিক ওষুধের প্রয়োগই একমাত্র পথ। কিন্তু সেই ওষুধই যখন ক্ষেত্রবিশেষে কাজ করে না, তখন অসুখ সারবে কিসে? বর্তমান ভারত তথা সারা বিশ্ব দাঁড়িয়ে আছে সেই মারাত্মক সম্ভাবনার মুখে, যেখানে জানা যাচ্ছে, অনেকের শরীরেই অ্যান্টিবায়োটিক আর ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। সম্প্রতি ভারতের কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ এক সমীক্ষায় দাবি করেছে, বেশ কিছু ব্যাকটিরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। ফলে কিছু অতি পরিচিত অসুখ, যেমন— মূত্রনালির সংক্রমণ, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, রক্তের কিছু সংক্রমণজনিত রোগ ইত্যাদি সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকে সারছে না। আর এই সমস্ত কিছুর মূলে আছে মানুষের একটি অতি পরিচিত কু-অভ্যাস— চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই মুঠো মুঠো ওষুধ খাওয়া।

Advertisement

রোগের উপশমে সাধারণত ওষুধের দোকান থেকে অথবা নিজস্ব ‘ডাক্তারি-বুদ্ধি’র প্রয়োগ ঘটিয়ে ওষুধ কিনে খাওয়ার প্রবণতা নাগরিকের মজ্জাগত। সমস্যা হল, এ ক্ষেত্রে না মানা হয় ওষুধ খাওয়ার নির্দিষ্ট পদ্ধতি, না মানা হয় নির্দিষ্ট সময়সীমা। অন্য দিকে, কোন অসুখে ঠিক কোন ওষুধটি খাওয়া প্রয়োজন, সেই জ্ঞান সাধারণ ভাবে থাকে না। রোগটি ভাইরাসঘটিত না ব্যাকটিরিয়াজনিত, সেটিও সাধারণ বুদ্ধিতে জানা সম্ভব হয় না। ফলে, একের ওষুধ অন্য অসুখের ঘাড়ে চাপাতে গিয়ে বিপদ বাড়ে। মরসুমি অনেক অসুখ সাধারণ ওষুধেই সেরে যায়— অনেক ক্ষেত্রে বিনা-ওষুধেই সারে। বরং অ্যান্টিবায়োটিকের অযথা প্রয়োগ শরীরের ক্ষতি করে বেশি। কিন্তু সেই সদুপদেশ মানবে কে? সাধারণত উৎসবের মরসুমে, ঋতু বদলের দিনে সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে বাড়ে মুড়ি-মুড়কির মতো ওষুধের খাওয়ার প্রবণতাটিও। বহু বার এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা হয়েছে, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, কিন্তু তাতে অবস্থা পাল্টায়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক শ্রেণির চিকিৎসকেরও অযথা অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের অভ্যাস।

ভয়ের বিষয় হল, এই অভ্যাসের ফাঁক দিয়ে যে বিপদ আড়ালে বাড়ছে, বিজ্ঞানের পরিভাষায় তার নাম ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স’। অর্থাৎ, অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী সংক্রমণ। সে বিপদ শুধুমাত্র ভারতের নয়, সমগ্র বিশ্বের। বিভিন্ন জায়গায় কিছু রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া বাসা বেঁধেছে বলে প্রমাণ মিলেছে। সাধারণ ওষুধে কাজ না হওয়ায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে উচ্চ মাত্রায় বা অত্যন্ত দামি অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট-এর একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী সংক্রমণের কারণেই প্রায় চার কোটি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা। সুতরাং, অবিলম্বে ভারতেও কেন্দ্র এবং রাজ্য স্তরে এই বিষয়ে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা করা আবশ্যক। শুধুমাত্র নজরদারিতে যে উপযুক্ত ফল মিলছে না, তা স্পষ্ট। সুতরাং, অ-নিয়মে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তিদানের পথে হাঁটতে হবে। প্রেসক্রিপশন অডিট-এর যে প্রস্তাব ইতিপূর্বে করা হয়েছে, কার্যকর করতে হবে তা-ও। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে ভারতের স্থান বিশ্বে একেবারে প্রথম দিকে। জনস্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে তা মোটেও স্বস্তিদায়ক তথ্য নয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement