বৃষ্টিতে ভাসল আরব আমিরশাহী। ছবি এএফপি।
আরব উপদ্বীপ অঞ্চলে শুষ্ক আবহাওয়ার জেরে ভারী বর্ষণ তো দূর স্থান, বৃষ্টিই ডুমুরের ফুল। অথচ সম্প্রতি তুমুল ঝড়বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত হল সংযুক্ত আরব আমিরশাহি-র রাজধানী
দুবাই-সহ অন্যান্য শহরের জনজীবন। দুবাইয়ে যেখানে বার্ষিক গড়ে ১০০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক বৃষ্টির পরিমাণ সে দেশের দেড় বছরের গড় বৃষ্টিপাতের সমান। এই অতিবর্ষণের ফলে পড়শি রাষ্ট্র ওমানেও হতাহত হয়েছেন বেশ কিছু মানুষ।
পরিস্থিতি এমন শোচনীয় হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ উপযুক্ত নিকাশিব্যবস্থার অভাব। এ-হেন ভারী বর্ষণের পরে সমাজমাধ্যমে দাবি ওঠে, কৃত্রিম বৃষ্টিপাত বা ‘ক্লাউড সিডিং’ ঘটাতে গিয়েই ঘটেছে এমন বিপর্যয়। ক্লাউড সিডিং এমন এক প্রযুক্তিগত পদ্ধতি, যেখানে মেঘকে বৃষ্টি উৎপাদনের জন্য প্রভাবিত করা হয়। উড়োজাহাজের মাধ্যমে করা যেতে পারে ক্লাউড সিডিং। এর সাহায্যে সিলভার আয়োডাইড-এর মতো ছোট ছোট কণা বা অণুকণা ছড়িয়ে দেওয়া হয় মেঘের উপরে। ফলে জলীয় বাষ্প খুব সহজেই ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিতে পরিণত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেঘে বীজ বপনের বিষয়টি এমনিতেই বিতর্কিত, যে-হেতু এই প্রক্রিয়া বাস্তবে কত কার্যকর, তার কোনও পোক্ত প্রমাণ এখনও মেলেনি। তা ছাড়া, আবহাওয়ার উপরে এর নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টিও অস্পষ্ট। তৎসত্ত্বেও গত কয়েক দশক ধরে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম প্রান্ত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো খরাপীড়িত অঞ্চলের প্রশাসন এই ধরনের প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ করে আসছে বৃষ্টি উৎপাদনের আশায়। শুধু তা-ই নয়, চিন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, মেক্সিকো এবং ভারতের মতো অনেক দেশই এখন ঝুঁকেছে এই প্রক্রিয়ার দিকে। চিন যেমন সেচের কাজে সুবিধার কারণে হামেশাই ব্যবহার করে থাকে এই প্রক্রিয়া। এমনও শোনা গিয়েছে, বেজিং অলিম্পিক্সের সময়ে আকাশ পরিষ্কার রাখতে এই প্রক্রিয়ার সাহায্য নিয়েছিল তারা।
তবে সমাজমাধ্যমে ‘মেঘে বীজ বপন’-এর দাবি নস্যাৎ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুবাইয়ের অতিবৃষ্টির মূলে রয়েছে এই অঞ্চলেরই সাধারণ আবহাওয়ার প্রক্রিয়া যা ভীষণ ভাবে প্রভাবিত হয়েছে মনুষ্যসৃষ্ট পরিবেশ পরিবর্তনের জেরে। লক্ষণীয়, পরিবেশ পরিবর্তনের জেরেই বর্তমানে চরম আবহাওয়ার নানা ঘটনাক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। যার অন্যতম শুষ্ক অঞ্চলে অতিবর্ষণ এবং বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলে খরা। মনে রাখতে হবে, বায়ুমণ্ডল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উত্তপ্ত থাকলে, তা জলভাগ থেকে বিপুল পরিমাণে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে। দুবাই যে-হেতু পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত, তাই জলীয় বাষ্প বিপুল পরিমাণে ঢুকে পড়ায় মরুশহরে ওই বিপর্যয় নেমে আসে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী দিনে উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পেলে দুবাইয়ের মতো শুষ্ক অঞ্চলে বাড়বে অতিবৃষ্টির প্রকোপও। বিশ্বের অন্যান্য অনেক শহরের তুলনায় দুবাইয়ের অর্থ তথা প্রযুক্তির জোর বেশি থাকলেও, প্রকৃতির মর্জির কাছে তাকে নতিস্বীকার করতে হয়েছে। ফলে ইঙ্গিত স্পষ্ট: প্রকৃতির সঙ্গে ছেলেখেলা চলে না। একই সঙ্গে উষ্ণায়নের বিষয়টিও যে মানুষকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে, তা আরও এক বার বোঝা গেল কি?