Jammu and Kashmir Assembly Election 2024

যাত্রারম্ভ

প্রধানমন্ত্রী মোদী অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন যাঁরা ভেবেছিলেন, ৩৭০ ধারা বিলোপের পর কাশ্মীর অন্ধকারে ডুবে যাবে, তাঁরা ভুল প্রমাণিত হলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ ০৪:৪৭
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রাজনীতি যদি সম্ভাবনার শিল্প হয়, তা হলে গণতন্ত্রকে হয়তো বলা যায়— বিস্ময়ের সম্ভাবনা। জম্মু ও কাশ্মীরের এ বারের নির্বাচনের ফলাফল কেবল পূর্বাভাস ও সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণিত করল না, এমন এক দৃশ্য তৈরি করল, যার জন্য হয়তো জয়ীরাও প্রস্তুত ছিলেন না। ন্যাশনাল কনফারেন্স মানুষের সমর্থন কুড়োবে, এটা প্রত্যাশা থাকলেও এত বিপুল জয়ের স্বপ্ন হয়তো ওমর আবদুল্লাও দেখেননি। বিজেপি যে ভাবে জম্মুকে কাশ্মীরের পাল্টা হিসাবে ভোটযুদ্ধে খাড়া করতে বিশদ পরিকল্পনা এঁটেছিল, দেখা গেল তাও ব্যর্থ। মানুষের মন দেবা ন জানন্তি, রাজনীতিকরা তো জানেন না-ই। আপাতত ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ একত্রে ৪৯টি আসন পেয়ে সরকার গড়তে চলেছে। নতুন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর প্রথম কাজই হতে চলেছে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পরিচয় সরিয়ে রাজ্য পরিচয় ফিরিয়ে আনা। কাশ্মীর উপত্যকার মানুষ তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার করে বুঝিয়ে দিলেন, যতই তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিষ্পেষণের বিপুল বিশদ বন্দোবস্ত থাকুক না কেন, যতই তাঁরা দুর্ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ুন না কেন, কেবল ভোটাধিকারটুকু প্রয়োগ করে তাঁদের ভাগ্য তাঁরা নিজেরাই গড়তে পারেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন যাঁরা ভেবেছিলেন, ৩৭০ ধারা বিলোপের পর কাশ্মীর অন্ধকারে ডুবে যাবে, তাঁরা ভুল প্রমাণিত হলেন। কেবলই বিস্ময়ের জন্ম হয়, এই গণতন্ত্র নামক ব্যবস্থায়।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জুটি ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি ঘটিয়ে, ডি-লিমিটেশন প্রয়োগ করে, কাশ্মীর ও জম্মুর তুলনামূলক জনসংখ্যা-ভিত্তিক আসন বাড়িয়ে কমিয়ে যে লক্ষ্য সাধন করতে চেয়েছিলেন, তার ফলে জম্মুতে বিজেপির ভোট আনেকখানি বাড়লেও, কাশ্মীরে যে-হেতু ভোট ভাগ না হয়ে প্রধান বিরোধী পক্ষের ভান্ডারে গিয়েছে বিরাট সংখ্যার ভোট, তাতেই পাশা উল্টে গিয়েছে। ১৮ ও ২৫ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর: তিন পর্বের ভোটে কাশ্মীর উপত্যকার মানুষ যে ভাবে বেরিয়ে এসে দশ বছর পর নিজেদের ভোট দিয়ে বিবেচনার পরিচয় দিলেন, তা বাস্তবিক একটি ইতিহাসের জন্ম দিল। ন্যাশনাল কনফারেন্স ও আবদুল্লা পরিবারের বিরুদ্ধে কাশ্মীরি সাধারণ মানুষের অভিযোগ কম নয়, অসঙ্গতও নয়। কিন্তু সম্ভবত তাঁরা বুঝতে পারছিলেন, ভোট বেশি ভাগ হয়ে গেলে বিজেপির নির্যাতন এবং কেন্দ্রীয় আগ্রাসন ঠেকানোর আর কোনও পথ খোলা থাকবে না। সঙ্গে এও স্পষ্ট যে, পিডিপি দলটি সম্ভবত কাশ্মীরের কাছে শাস্তি পেল, ২০১৪ সালে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়ার ‘অপরাধ’-এর। পা রাখতে পারলেন না নির্দল প্রার্থীরা, যাঁরা ভিন্ন পরিচয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে বিজেপিরই সুবিধা তৈরি করতে ব্যস্ত ছিলেন।

অর্থাৎ কেবল বিজেপি-ই নয়, আরও একটি রাজনৈতিক পক্ষ কাশ্মীরের ফলাফল থেকে কিছু বার্তা নিচ্ছেন— বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। যাঁরা কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতার কথা বলে এত দিন নিজেদের সমর্থন তৈরি করেছেন, এ বারের ভোট তাঁদের অধিকাংশের দুয়ারে হতাশা পৌঁছে দিয়েছে। জামাত-এ-ইসলামি পক্ষের রাজনীতিক ইঞ্জিনিয়ার রাশিদ যদিও ফল বেরোনোর পর বলেছেন, তাঁদের প্রকৃত লক্ষ্য জয় বা ক্ষমতালাভ ছিল না, বরং ছিল একটি রাজনৈতিক বার্তা তৈরি করা— কাশ্মীরি মনে প্রশ্ন উঠবেই, এত দিন ধরে ভারতবিরোধিতা ও ভোটবিরুদ্ধতার কড়া আক্রমণাত্মক রাজনীতি করার পর অকস্মাৎ আজ ভোটে দাঁড়িয়ে জিতে কিংবা না-জিতে ঠিক কী বার্তা তাঁরা দিতে চাইলেন? কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন ভূমি হিসাবে তৈরি করার লক্ষ্যে যদি আবারও জনসমর্থন সংগ্রহ করতে হয়, তাঁদের এ বার অনেক দীর্ঘতর পথ হাঁটতে হবে। এ বারের ভোট-ফল বলে দিল, কাশ্মীর উপত্যকা নিজের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করছে, আরও এক বার। সে রাস্তা যতই বন্ধুর এবং সঙ্কটময় হোক, যাত্রারম্ভের মুহূর্তটির গুরুত্ব তাতে একটুও ম্লান হয় না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement