নরেন্দ্র মোদি।
ভারতের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের পরে কি কিছুটা স্বস্তিতে পড়শি রাষ্ট্র চিন? আসল কথা, এ বারের নির্বাচনেও মোদী তাঁর প্রতাপ ধরে রাখতে পারলেন কি না, সেই দিকে কড়া নজর রেখে চলছিল এই বিশেষ পড়শি রাষ্ট্রটি। শেষ অবধি নির্বাচনের ফলাফলে তৃতীয় বার দিল্লির গদিতে মোদী ফিরলেও, আগের তুলনায় তাঁর শক্তি যে খানিক সঙ্কুচিত হয়েছে বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না মেলায়, তাতে বোধ হয় বেজিং বৃত্তে একটা স্বস্তিই তৈরি হয়েছে। এটা সর্বজনবিদিত যে, জোট সরকারের বাধ্যবাধকতার জেরে কেন্দ্রীয় সরকার বহু ক্ষেত্রেই একটি দলের প্রাধান্য রাখতে পারে না। বদলটা সেখানেই আসবে, এমন ধরে নেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে ভূরাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে গোটা বিশ্বে ভারতের গুরুত্ব দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বশক্তি চিন এবং আমেরিকা যু্ক্তরাষ্ট্রের কাছে যতখানি বেড়েছে, আর কোনও দেশের তত নয়। সমগ্র এশিয়ায় তার আধিপত্য প্রশমিত করতে ভারত ব্যতিরেকে এই অঞ্চলে আর কোনও বিকল্প শক্তি সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। ভারতীয় লোকসভার নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি চিনের বিশেষ নজর ছিল সেই কারণেই।
এই পরিস্থিতি কৌতূহলোদ্দীপক, বলতেই হয়। এক বাণিজ্যমনস্ক নেতা হিসেবে গুজরাতের জন্য বিনিয়োগ আনতে এবং তার অর্থনৈতিক রূপান্তর থেকে শিক্ষা নিতে এক সময় গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদী বেশ কয়েক বার বেজিং সফরে গিয়েছিলেন। তবে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পরে পড়শি রাষ্ট্রের আচরণে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আগামী দিনে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সহজ হবে না। প্রসঙ্গত, ওই বছর সেপ্টেম্বরে চিনের শীর্ষনেতা শি জিনপিং-এর ভারত সফরকালেই দক্ষিণ লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পার করে ভারতে অনুপ্রবেশ করে চিন সেনা। গত এক দশকে লাল ফৌজের অনুপ্রবেশ যেমন অব্যাহত থেকেছে, তেমনই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ক্রমাগত অবনতি ঘটেছে ২০২০ সালে গলওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার অতর্কিত হামলার জেরে। অন্য দিকে, তথাকথিত গ্লোবাল সাউথ-এর উন্নয়নশীল দেশগুলির নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রেও একে অপরকে ক্রমাগত টক্কর দিয়ে চলেছে দুই দেশ। লক্ষণীয়, গত বছর জি২০ সম্মেলনের মঞ্চকে দরিদ্র দেশগুলির সমর্থন প্রদর্শনে যখন ব্যবহার করে ভারত, তখন সেই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকেন চিনের শীর্ষ নেতা। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্য পদ সংরক্ষণের অভিপ্রায়েও অন্যতম প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে চিন। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ভারতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে আর্থিক ও পরিকাঠামোগত সহায়তার মাধ্যমে বহু রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলছে চিন।
প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ কালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের চিনসফরের ভিতরেই আগামী সংঘাতের ইঙ্গিত স্পষ্ট। তবে গত দুই মেয়াদে চিন সংক্রান্ত বিদেশনীতি নিয়ে বিরোধীদের কোনও স্পষ্ট ধারণা না দেওয়ার অভিযোগ ছিল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসে বিদেশমন্ত্রীর পদে গত বারের মন্ত্রী এস জয়শঙ্করকেই পুনর্বহাল করেছেন মোদী। চালক এক থাকলেও পড়শি রাষ্ট্রের সম্পর্কচালনায় কিছুটা পরিবর্তন প্রত্যাশা করছে ভারতের কূটনৈতিক মহল।