COVID19

অজুহাতেরও অভাব

ভারতে বারো বছরের কমবয়সিরা কোভিড টিকার একটি ডোজ়ও পায়নি। অথচ, দেশে অতিমারির চতুর্থ ঢেউ চলছে, দৈনিক সংক্রমণের রেখচিত্র ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২২ ০৫:৪৬
Share:

তার আগমনের পদধ্বনি বছরখানেক ধরে প্রায়ই শোনা গিয়েছে। কিন্তু সশরীর দর্শন মেলেনি। ফলে, এখনও অবধি ভারতে বারো বছরের কমবয়সিরা কোভিড টিকার একটি ডোজ়ও পায়নি। অথচ, দেশে অতিমারির চতুর্থ ঢেউ চলছে, দৈনিক সংক্রমণের রেখচিত্র ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী। এই অবস্থায় দেশব্যাপী শিশুদের বিন্দুমাত্র রক্ষাকবচ না থাকার বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। কিছু দিন আগে শোনা গিয়েছিল ডিসিজিআই-এর তরফ থেকে ৬-১২ বছর বয়সিদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে দু’টি টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। অতঃপর তা নিয়ে সাড়াশব্দ নেই। সত্য যে, বয়স্ক এবং অন্য রোগাক্রান্তদের ক্ষেত্রে কোভিড যতখানি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে, শিশুদের ক্ষেত্রে তেমন সম্ভাবনা কম। কিন্তু ভাইরাসটির ঘন ঘন রূপ পরিবর্তনের সামনে এই তথ্যে নিশ্চিন্ত থাকা যায় কি? ২০০ কোটি টিকাকরণের মাইলফলক পেরোনোয় দেশবাসীকে সম্প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ভাবী নাগরিকদের এক বৃহৎ অংশ যে লক্ষ্মণরেখার বাইরেই থেকে গেল, সেই গুরুত্বটি তিনি অনুধাবন করেছেন কি?

Advertisement

বস্তুত, কোভিডের বাইরেও দেশের সার্বিক টিকাকরণের ছবিটি রীতিমতো ভীতিপ্রদ। নানা মারণব্যাধির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সময়মতো প্রতিষেধক দানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও তাই সরকারি উদ্যোগে টিকাকরণ কর্মসূচিটি পরিচালিত হয়ে থাকে। কিন্তু গত দুই বছরে অতিমারি প্রতিরোধে সর্বশক্তি নিয়োজিত করায় সময়মতো টিকাকরণের কাজটিতে সবিশেষ অবহেলা দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের এক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ভারত-সহ পাঁচটি দেশে অন্তত আড়াই কোটি শিশু ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে জীবনদায়ী টিকা পায়নি। ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, এবং হুপিং কাশির ন্যায় মারণরোগ প্রতিহত করতে শিশুদের যে টিকা দেওয়া হয়, তার হার অন্তত পাঁচ শতাংশ কমেছে। এই তথ্য আশঙ্কা জাগায়। কারণ, নিয়মিত টিকাকরণে ঘাটতির লক্ষণ সার্বিক ভাবে শিশুস্বাস্থ্যের অবনতির দিকেই ইঙ্গিত করে।

পশ্চিমবঙ্গেও টিকাকরণের চিত্রটি আদৌ উজ্জ্বল নয়। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, এ রাজ্যে গত বছর নিয়মিত টিকাকরণ প্রকল্পের সুরক্ষা পেয়েছে মাত্র ষাট শতাংশ শিশু। এবং টিকাকরণে রাজ্যের মধ্যে নিম্নতম স্থানে কলকাতা। আরও উদ্বেগের, কলকাতার যে বরোগুলিতে পোলিয়ো টিকাকরণের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কম, তার একটিতেই সম্প্রতি নর্দমার জলে সন্ধান মিলেছে পোলিয়ো ভাইরাসের। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সোমালিয়া, নাইজিরিয়া, আফগানিস্তানের মতো দেশে দুর্বল টিকাকরণ কর্মসূচি এবং অতিমারির সুযোগে হামের সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর পাওয়া গিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে রাজ্য এবং দেশকেও। একই সঙ্গে, বার বার ঘোষণা সত্ত্বেও কেন পিছিয়ে যাচ্ছে শিশুদের কোভিড-টিকা প্রদানের কাজ, সে উত্তরও খুঁজতে হবে। স্কুল খুলে গিয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আকুল শিশুরা। রোগ-ব্যাধি যেন ফের তাদের জীবনে বিপর্যয় ডেকে না আনে, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। কোনও অজুহাতেই এই কাজে অবহেলা চলতে পারে না। অথচ, এখন সরকারের তেমন কোনও অজুহাত দেওয়ারও দায় নেই!

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement