Crime Against Women

দ্বিতীয় ঢেউ

অতঃপর হেনস্থার বিরুদ্ধে একযোগে অভিনেত্রীদের মুখ খুলতে এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে আনতে দেখা গিয়েছে। মালয়ালি পরিচালক রঞ্জিৎ বালকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন এক অভিনেত্রী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:০১
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কর্মক্ষেত্র মেয়েদের আর্থিক স্বনির্ভরতার সন্ধান দিতে পারে, কিন্তু তার নিরাপত্তা, সম্মান, সমানাধিকার সুনিশ্চিত করতে পারে কি? মালয়ালম চলচ্চিত্র জগতে পর্দা উদ্ঘাটিত হল এক অন্ধকার অধ্যায়ের। জানা গেল, সে জগৎটি মেয়েদের প্রতি চরম বঞ্চনা, যৌন হেনস্থা, এবং কু-ব্যবহারের অসংখ্য ঘটনার ভারে ভারাক্রান্ত। চলচ্চিত্র জগতে ‘কাস্টিং কাউচ’ শব্দটি অপরিচিত নয়। হেমা কমিটির সাম্প্রতিক রিপোর্ট মালয়ালম চলচ্চিত্র জগতের পরিপ্রেক্ষিতে সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিয়েছে। অতঃপর হেনস্থার বিরুদ্ধে একযোগে অভিনেত্রীদের মুখ খুলতে এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে আনতে দেখা গিয়েছে। মালয়ালি পরিচালক রঞ্জিৎ বালকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন এক অভিনেত্রী। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ অস্বীকার করলেও এর অব্যবহিত পরেই কেরলের চলচ্চিত্র অ্যাকাডেমি থেকে পদত্যাগ করেছেন পরিচালক। অ্যাকাডেমির সহ-সম্পাদক অভিনেতা সিদ্দিক, ‘অ্যাসোসিয়েশন অব মালয়ালম মুভি আর্টিস্টস’-এর সভাপতি অভিনেতা মোহনলাল পদত্যাগ করেছেন। তাঁর সঙ্গে কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্যও পদত্যাগের পথে হেঁটেছেন।

Advertisement

এ যেন ২০১৮ সালের শেষের দিকে ভারতে শুরু হওয়া ‘মি টু’ আন্দোলনের দ্বিতীয় ঢেউ। যে আন্দোলন শুধুমাত্র দক্ষিণী বিনোদন জগতের গণ্ডি পার করে আক্ষরিক অর্থেই সর্বভারতীয় হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে। শোনা গিয়েছে, মহারাষ্ট্র সরকারও এমনই একটি কমিটি গড়ার পথে হাঁটতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন জানানো হয়েছে, বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্ত মেয়েরা যাতে সুরক্ষিত থাকেন, সুষ্ঠু বিচার পান, সেই ব্যবস্থা করার। কিন্তু বাস্তবচিত্র তাতে পাল্টাবে কি? কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা আটকানোর জন্য আইন চালু হয়েছে ২০১৩ সালে। এক দশকের অধিক সময়কাল পেরিয়েও মেয়েদের যৌন হয়রানি, যৌন হয়রানিকে কাজ পাওয়ার, এবং উন্নতির শর্ত বানিয়ে তোলার মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ হ্রাস পায়নি। ২০১৭-১৮ সাল নাগাদ যখন সমগ্র বিশ্বে ‘মি টু’ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে, তখন ভারতেও মূলত সমাজমাধ্যমকে হাতিয়ার করে মেয়েরা অভিনয় জগতে, কর্মক্ষেত্রে নিজেদের হেনস্থা হওয়ার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল বলিউডের একাধিক প্রভাবশালী অভিনেতা-পরিচালকের বিরুদ্ধেও। হেমা কমিটির রিপোর্ট প্রমাণ করল, চিত্রটি অ-পরিবর্তিত।

পরিবর্তনের জন্য সর্বাগ্রে জরুরি মেয়েদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে শেখা। এ দেশে হামেশাই ক্ষমতা, প্রভাব এবং অর্থের বিনিময়ে হেনস্থার অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয়। প্রবল পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা বুঝিয়ে দেয়, যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার মূল কারণ মেয়েটির আচরণ। ভাবতে শেখায়, এর পিছনে মেয়েটিরও সম্মতি আছে। এই মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। একই সঙ্গে জরুরি কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রোধের আইনটির সার্থক প্রয়োগ। দল, ক্ষমতা, আর্থিক-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে। কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষিত পরিবেশে সসম্মানে কাজ করা মেয়েদের ন্যায্য অধিকার। এর অনুপস্থিতি বহু মেয়েকে কর্মক্ষেত্রের পরিধির বাইরে থাকতে বাধ্য করবে। মেয়েরা যে ক্রমশ সেই বিপদ বুঝতে পারছেন এবং প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন— এইটুকুই আশার কথা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement