DTP Vaccine

সর্বনাশের আশায়

গোটা বিশ্বে ডিটিপি-১ না পাওয়া শিশুর সংখ্যাবৃদ্ধির হারে ভারতই এক নম্বরে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২১ ০৫:৪৯
Share:

ফাইল চিত্র।

মারণরোগকে প্রতিহত করিতে সার্বিক টিকাকরণ যে কত জরুরি, অতিমারি কালে তাহা বহুচর্চিত। অথচ, ভারতে সেই অতিমারি আবহেই ২০২০ সালে ৩০ লক্ষের অধিক শিশু ডিটিপি-১ প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ়টি পাইল না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ একযোগে এই সমীক্ষা প্রকাশ করিয়াছে সম্প্রতি। ডিটিপি-১ টিকাটি ডিপথেরিয়া, টিটেনাস এবং হুপিং কাশি হইতে শিশুদের সুরক্ষা প্রদান করে। অতিমারি কালে সারা বিশ্বেই শিশুদের টিকাকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হইয়াছে। ভারতও স্বভাবতই ব্যতিক্রম নহে। গোটা বিশ্বে ডিটিপি-১ না পাওয়া শিশুর সংখ্যাবৃদ্ধির হারে ভারতই এক নম্বরে। অর্থাৎ, পরিস্থিতি গুরুতর জানিয়াও তাহার প্রতিকারের ব্যবস্থাটি যথেষ্ট জোর পায় নাই।

Advertisement

এই সঙ্কট যে আসিতে চলিয়াছে, তাহা লইয়া গত বৎসরই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করিয়াছিলেন। লকডাউন পর্বে দীর্ঘ দিন অন্যান্য টিকাকরণ কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়। গণপরিবহণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে এবং সংক্রমণের আশঙ্কায় অভিভাবকরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রমুখী না হইবার জন্যও বহু শিশু প্রতিষেধকের আওতার বাহিরেই থাকিয়া যায়। প্রয়োজন ছিল আপৎকালীন ভিত্তিতে শিশুদের টিকাকরণ কর্মসূচিটি চালাইবার। প্রয়োজনে এই কাজে আশাকর্মী ছাড়াও পৃথক ভাবে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত করিবার, এবং টিকাকরণের কাজটি বাধাপ্রাপ্ত হইতেছে কি না, সেই বিষয়ে নিয়মিত নজরদারির। তাহা হয় নাই। উপরন্তু, ভঙ্গুর স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর প্রায় সবটুকুই নিয়োজিত হইয়াছে অতিমারি মোকাবিলায়। সরকারি তরফে শিশুদের টিকাকরণ লইয়া যে পরিকল্পনা, প্রচার ইত্যাদি হইয়াছিল, কার্যক্ষেত্রে যে তাহা যথেষ্ট নহে, উপরোক্ত পরিসংখ্যানেই প্রমাণিত। এবং কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আসন্ন। সুতরাং, অগ্রগতি যেটুকু হইয়াছিল, তাহার গতি পুনরায় বাধাপ্রাপ্ত হইবার সম্ভাবনা প্রবল। আশঙ্কা, আগামী দিনে কোভিড-১৯ নহে, শৈশবের বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগই শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ হইতে চলিয়াছে। এই স্বাস্থ্য-বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ভারত সরকার কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করিয়াছে কি?

প্রায় অর্ধশতক পূর্বে বিশ্বে শিশুদের জন্য যে বিস্তৃত টিকাকরণ কর্মসূচির সূচনা হইয়াছিল, তাহাতে ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, হুপিং কাশি, হাম, পোলিয়ো এবং যক্ষ্মার ন্যায় ছয়টি মারণরোগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, টিকাকরণের মাধ্যমে রোগের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখিয়া শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস করা। পরিসংখ্যান বলিতেছে, ২০০০ সাল হইতে ২০১৭ সালের মধ্যে টিকাকরণের কারণে বিশ্বে শিশুমৃত্যু প্রায় ৮০ শতাংশ হ্রাস পায়। সুতরাং, কোনও অবস্থাতেই যাহাতে এই কর্মসূচিটি বাধাপ্রাপ্ত না হয়, নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিটি শিশু যাহাতে টিকার নির্দিষ্ট ডোজ়টি লইতে পারে, তাহা নিশ্চিত করা প্রত্যেক দেশের সরকারের প্রধান কর্তব্য। অন্যথায় কী হইতে পারে, আফ্রিকার দেশগুলি তাহার প্রমাণ। ইবোলার সময় ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোয় হামের ভয়ঙ্কর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কারণ, সমগ্র স্বাস্থ্যব্যবস্থা ইবোলা মোকাবিলায় নিয়োজিত থাকিবার ফলে সেখানে টিকাকরণের ন্যায় স্বাস্থ্য পরিষেবা বাধাপ্রাপ্ত হইয়াছিল। এই উদাহরণ হইতে শিক্ষা লইতে হইবে। এক অতিমারি ঠেকাইতে অন্য বিপদের মুখে শিশুদের ঠেলিয়া দেওয়া যাইবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement