সম্পাদকীয় ২

স্বাগত পরিবর্তন

সুখের কথা, নাসা আগামী বৎসরের জন্য এমন এক পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়াছে যাহার উদ্দেশ্য প্রাণ অন্বেষণ নহে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে যে সন্ধানী যান নাসা মহাশূন্যে প্রেরণ করিবে, তাহার নাম ‘পারকার সোলার প্রোব’।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০০:০৭
Share:

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’র পরিকল্পনাটি সাধুবাদ পাইবার যোগ্য। গ্রহ অন্বেষণ, এবং সেই স্থলে জল তরল অবস্থায় আছে কি না, ইত্যাকার গবেষণা ইদানীং সংস্থাটির মুখ্য কর্ম হইয়া দাঁড়াইয়াছে। নিন্দুকেরা বলিয়া থাকেন, ওই সব লক্ষ্যে অনুসন্ধান বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গ্রহ প্রাণের বাসভূমি হইবার যোগ্য, এবং জল গ্যাসীয় বা কঠিন অবস্থার পরিবর্তে তরল দশায় থাকিলে জীবের সুবিধা— এই সব ভাবনা অনুসন্ধানে ইন্ধন জোগায়। ভিন্গ্রহে প্রাণের সন্ধানে রত থাকিলে করদাতাগণকে বুঝানো যায় যে, মহাকাশ গবেষণা পথভ্রষ্ট হয় নাই। এই ব্যাপারে অত্যুৎসাহে নাসার মুখও পুড়িয়াছে। গত শতাব্দীর শেষে সংস্থাটি শোরগোল তুলিয়াছিল এই দাবিতে যে মঙ্গল গ্রহে একদা প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। ওই গ্রহ হইতে উৎক্ষিপ্ত এক প্রস্তরখণ্ড কোটি কোটি বৎসর পূর্বে পৃথিবীতে আসিয়া পড়িয়াছিল, সেই প্রস্তরে নাকি জীবাণুবৎ ওই প্রাণীর ‘ছাপ’ শনাক্ত হইয়াছে— এই দাবিতে আলোড়ন উঠে। পরে ওই দাবি দৃষ্টিভ্রম বলিয়া খারিজ হইয়া যায়।

Advertisement

সুখের কথা, নাসা আগামী বৎসরের জন্য এমন এক পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়াছে যাহার উদ্দেশ্য প্রাণ অন্বেষণ নহে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে যে সন্ধানী যান নাসা মহাশূন্যে প্রেরণ করিবে, তাহার নাম ‘পারকার সোলার প্রোব’। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইউজিন পারকার এক পেপার লেখেন, যাহার উপজীব্য ছিল সূর্য হইতে নির্গত দ্রুতগামী কণার ঝড়। ওই কণার স্রোত এবং তজ্জনিত চৌম্বক প্রভাব পৃথিবীর পক্ষে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ওই ঝড়ের সময় সূর্যের অগ্নিকুণ্ড হইতে প্রভূত পরিমাণে তড়িৎযুক্ত কণা মহাশূন্যে ছড়ায়। যাহার অবশ্যম্ভাবী পরিণামে দূরযোগাযোগ স্থাপনকারী কৃত্রিম উপগ্রহগুলি সাময়িক ভাবে বিকল হইয়া পড়ে। আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস-এর হিসাব, ইহাতে শুধু আমেরিকা রাষ্ট্রেরই ক্ষতি ২০০,০০০ কোটি ডলার। পারকার তাঁহার গবেষণা প্রবন্ধে প্রায় ৬০ বৎসর পূর্বে সৌর ঝড়ের নানা ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়াছিলেন। তিনি দাবি করিয়াছিলেন, উক্ত ঝড় অনুসন্ধানের নিমিত্ত এক যান সূর্যের নিকট প্রেরণ করা আবশ্যক। পারকারের বয়স এক্ষণে ৮৯ বৎসর। এত দিনে তাঁহার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হইবার অপেক্ষায়।

সূর্যের সমীপবর্তী হওয়া সহজ নহে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পারকার সোলার প্রোব ১৫ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়া সূর্যের ৬০ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছাইবে। তাহার পূর্বে সন্ধানী যানটিকে শুক্র গ্রহকে সাত বার প্রদক্ষিণ করিতে হইবে। ওই গ্রহের আকর্ষণের জাল ভেদ করিয়া সূর্যের সমীপবর্তী হইলে সন্ধানী যানটি মাত্র ৮৮ দিনে সূর্যকে এক বার প্রদক্ষিণ করিবে। সূর্যের নিজস্ব বৃত্তে উষ্ণতা ৬ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। ওই পরিবেশে মনুষ্যপ্রেরিত যান কস্মিনকালেও যাইতে পারিবে না। পারকার সোলার প্রোব যে অঞ্চলে পৌঁছাইবে, সেই স্থলের তাপমাত্রা প্রায় ১৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই উষ্ণতায় কর্মক্ষম থাকিয়া অনুসন্ধান কার্য চালানো কঠিন দায়িত্ব। এই কারণে পারকার সোলার প্রোব নির্মাণব্যয়ের মোটা অংশ খরচ হইবে তাপসহনশীল বর্ম প্রস্তুতে। তাহা হউক, ১৫০০ কোটি ডলার ব্যয়ের এই উদ্যোগ যে নাসা লইতেছে, তাহা অভিনন্দনযোগ্য।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement