Editorial news

ধোঁয়াশা তৈরি করে লাভ কিন্তু হবে না

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সংবাদপত্র একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বেকারত্বের সুউচ্চ হারের ‘তথ্য’ তুলে ধরেছে। কেন্দ্রীয় সরকার একবারও স্পষ্ট করে বলতে পারেনি যে, ওই পরিসংখ্যান আদ্যন্ত ভিত্তিহীন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১৯
Share:

—ফাইল চিত্র।

পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত ৪৫ বছরে কখনও ভারতে বেকারত্বের হার এত বেশি ছিল না— বলছে পরিসংখ্যান। কর্মসংস্থান সংক্রান্ত এই পরিসংখ্যান নিয়ে ইতিমধ্যেই এক দফা ধুন্ধুমার ঘটে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিস-এর তৈরি করা কর্মসংস্থান সংক্রান্ত রিপোর্ট সরকারি ভাবে এখনও প্রকাশ করা হয়নি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে রিপোর্ট প্রকাশ আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান। কিন্তু রিপোর্ট চাপা থাকেনি। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সংবাদপত্র একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বেকারত্বের সুউচ্চ হারের ‘তথ্য’ তুলে ধরেছে। কেন্দ্রীয় সরকার একবারও স্পষ্ট করে বলতে পারেনি যে, ওই পরিসংখ্যান আদ্যন্ত ভিত্তিহীন।

Advertisement

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর প্রতিবেদনটি নিয়ে সারা দেশেই হইচই শুরু হয়েছে। অতএব কেন্দ্রীয় সরকারকে মাঠে নামতে হয়েছে। নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্তকে দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করিয়ে কর্মসংস্থানহীনতার সুউচ্চ হারের তত্ত্ব খণ্ডন করানোর প্রয়াস হয়েছে। অমিতাভ কান্ত-ও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কর্মসংস্থানহীনতা সংক্রান্ত যে পরিসংখ্যান এখন দেশ জুড়ে চর্চিত হচ্ছে, সেই পরিসংখ্যানকে ‘আদ্যন্ত মিথ্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারেননি নীতি আয়োগের কর্তাও।

২০১১-১২ সালে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ২.২ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.১ শতাংশে। ২০১১-১২ অর্থবর্ষে দেশের যুব সমাজের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে তা পৌঁছে গিয়েছে ২৭ শতাংশে। গ্রামীণ কর্মসংস্থান, শহরাঞ্চলের কর্মসংস্থান, নারীর কর্মসংস্থান, পুরুষের কর্মসংস্থান— সব দিকেই হাহাকারটা গত ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ। জবাবদিহি অতএব করতেই হবে। বিপুল কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির মসনদে আসীন যখন হয়েছিলেন, তখন হিসেবটাও বিশদে বুঝিয়ে দিতে হবে এ বার।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

৫ বছর আগে নরেন্দ্র মোদীদের সেই অঙ্গুলিনির্দেশ এখনও গোটা দেশ ভুলে যায়নি। মনমোহন সিংহের সরকারের দিকে আঙুলটা তোলা হচ্ছিল।

‘অকর্মণ্য’ এবং ‘নীতিপঙ্গু’ একটা সরকার হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছিল তৎকালীন সরকারকে। আর্থিক বৃদ্ধি থমকে গিয়েছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে না, নতুন কলকারখানার খোঁজ নেই, সরকার বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না— এইরকম নানা অভিযোগ তোলা হচ্ছিল পূর্বতন সরকারটার বিরুদ্ধে। জমানা বদল হলেই দিন বদল হবে, ‘বুরে দিন’ চলে গিয়ে ‘অচ্ছে দিন’ আসবে— এইরকম স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। প্রতিশ্রুত ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্নে দেশ যে বিশ্বাস রেখেছিল, ভোটের ফলাফলেই তার প্রমাণ মিলেছিল। অতএব দেশবাসীর বিশ্বাসের মর্যাদা দেওয়ার দায়টা নরেন্দ্র মোদীদের নিতেই হবে। বিশ্বাসের মর্যাদা কতটা দিতে পারলেন, প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা পূরণ করতে পারলেন, তার হিসেবও স্পষ্ট করে জানাতে হবে। রিপোর্ট চেপে রাখলে চলবে না।

নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল অনেক। তার জন্য দায়ী নরেন্দ্র মোদী নিজেই। মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-টু সরকার কতটা ‘নিষ্কর্মা’ আর তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে সরকার কতটা তৎপর হবে— তার আভাস ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে মোদী নিজেই দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। অতএব মোদীর কাছ থেকে প্রত্যাশা অনেক বেশি।

আরও পড়ুন: ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ, মোদী জমানায় রেকর্ড বেকারত্বের মধ্যে ভারত, বলল ‘গোপন’ রিপোর্ট

জনসাধারণের প্রত্যাশা কিন্তু বিষমবস্তু। প্রত্যাশার চাপ সামলানো সহজ কথা নয়। ক্ষমতায় আসার আগে মোদী স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন অনেক। সব স্বপ্ন পূরণ করা কঠিন। কিন্তু যে প্রত্যাশা তিনি জাগিয়েছিলেন, তার কিয়দংশ বা অধিকাংশ তো পূরণ করতেই হবে। মনমোহন সিংহের ‘অকর্মণ্য’ এবং ‘নীতিপঙ্গু’ সরকারটার আমলে পরিস্থিতি যে রকম ছিল, এই আমলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ হয়েছে— এমনটা মেনে নেওয়া তো খুবই কষ্টকর।

সেই কারণেই কি এই রিপোর্ট প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে? সেই কারণেই কি পরিসংখ্যান সামনে আনায় এত অনীহা? জনগণ যদি তেমনটা ধরে নেন, তাহলে কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে বিপদ ঘনাতে পারে। পরিসংখ্যান সংক্রান্ত বিতর্কের মাঝে সে কথাও যেন মাথায় রাখেন নরেন্দ্র মোদী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement