নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
রাজনীতির মারাত্মক অবনমন। কোনও না কোনও তরফে তো বটেই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরাসরি অভিযোগের আঙুলটা তুলেছেন। গুজরাতের নির্বাচনে নাক গলাতে চাইছে পাকিস্তান। এ বিষয়ে পাকিস্তানকে সহায়তা করছে কংগ্রেস। খুব স্পষ্ট করেই এই অভিযোগ করেছেন মোদী।
কংগ্রেস প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদে বসেও মোদী এত ‘মিথ্যাচার’ করছেন কী ভাবে! প্রবল বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে বিরোধী দলের তরফে।
গুজরাতে নির্বাচন জেতার জন্য কংগ্রেস যদি বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে থাকে, তা হলে সে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত নিন্দনীয়, মারাত্মক এবং রাজনীতির সাংঘাতিক অবনমন। কিন্তু যদি তা না হয়, যদি নরেন্দ্র মোদীর এই মারাত্মক অভিযোগটা আদ্যন্ত অসার হয়, যদি এটা মোদীর নির্বাচনী কৌশল হয়, সে ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় নিন্দনীয় ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে কমই ঘটেছে। রাজনীতির অবনমন তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী পদেরও সাংঘাতিক অমর্যাদা সে ক্ষেত্রে ঘটিয়ে ফেলেছেন মোদী।
আমাদের সম্পাদক অঞ্জন বন্দোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
প্রধানমন্ত্রী কী অভিযোগ করেছেন? বিজেপি-কে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে গুজরাতে আহমেদ পটেলকে মুখ্যমন্ত্রী করতে আগ্রহী পাকিস্তান। কংগ্রেস এবং পাকিস্তান হাত মিলিয়ে নিয়েছে সেই লক্ষ্যে। পাক রাষ্ট্রদূত এবং প্রাক্তন পাক বিদেশ মন্ত্রীর সঙ্গে তা নিয়ে গোপন বৈঠক করেছেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি। মণিশঙ্কর আইয়ারের বাড়িতে এই বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দাবি এমনই।
প্রধানমন্ত্রীর তোলা এই অভিযোগকে নস্যাৎ করছি না একেবারেই। নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চ থেকেই বলুন বা অন্য কোনও অবস্থান থেকে— কথাটা বলছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অতএব অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হচ্ছি। দেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানকে জড়ানোর চেষ্টা যদি করে থাকে দেশের বিরোধী দল, তা হলে সে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি যদি সেই ‘ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত থাকেন, তা হলে সে ততোধিক গর্হিত। অবিলম্বে এঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা উচিত বলে মনে করছি। কিন্তু মোদী শুধু অভিযোগটা তুলেই কেন থেমে থাকছেন, বুঝতে পারছি না।
আরও পড়ুন: মোদীকে ‘অপমানই’ করা হয়েছে, বলছেন কংগ্রেসি ভরতও
অবোধ যে বালক রাজনীতি বোঝে না, সেও আজ উদ্বেগে। সেও জানতে চাইছে, পদক্ষেপটা কেন করা হচ্ছে না? দেশের স্বার্থ রক্ষা করার প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী আপসহীন হিসেবেই তো পরিচিত। মনমোহন, হামিদ, মণিশঙ্কররা এমন সাংঘাতিক কাণ্ড ঘটানোর পরেও কেন তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছেন না মোদী? সিবিআই বা এনআইএ তদন্ত শুরু করা হচ্ছে না কেন? যে ‘জঘন্য চক্রান্ত’ হয়েছে, তা যখন প্রকাশ্যে এসেই পড়েছে, তখন আর অপেক্ষা কীসের? অবিলম্বে এর বিহিত করা হোক। প্রমাণ করে দেওয়া হোক, কংগ্রেস নেতৃত্বের ‘কুকীর্তি’। তার পর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা হোক।
তদন্ত যে হওয়া উচিত এবং মনমোহন সিংহ-হামিদ আনসারিরা এই গুরুতর অপরাধ ঘটিয়ে থাকলে তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা যে হওয়া উচিত, এ কথা কিন্তু কংগ্রেসও বলছে। কিন্তু তদন্ত শুরু হবে কি না, বিচারের কাঠগড়ায় অভিযুক্তদের পৌঁছে দেওয়া হবে কি না, সে নিয়ে নরেন্দ্র মোদী আর মুখ খুলছেন না। সংশয়টা সেখানেই তৈরি হচ্ছে।
বিরোধী দল কী চায়, কী চায় না, সে এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যদি পাকিস্তানের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে দুর্বল করতে চান, তা হলে সে রাষ্ট্রদ্রোহের সামিল। কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত মোদীর। কেন পদক্ষেপ করছেন না এখনও? কীসের অপেক্ষা? বলটা তো এখন নরেন্দ্র মোদীর কোর্টেই। তাঁকেই তো পরবর্তী পদক্ষেপটা করতে হবে। থেমে রয়েছেন কেন মোদী? গোটা দেশ জানতে চাইছে। কিন্তু সদুত্তর নেই।
আরও পড়ুন: গুজরাতে পাক ছক দেখছেন মোদী
তা হলে কি আর এগোতে ভয় পাচ্ছেন মোদী? মনমোহন সিংহদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগটা কি নেহাতই কথার কথা? কংগ্রেসকে পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া গেলে কি গুজরাতের জনমতকে নিজের দিকে টানতে সুবিধা হয়? শুধুমাত্র সেই কারণেই কি এত মারাত্মক অভিযোগ তুললেন? গুচ্ছ প্রশ্ন অপেক্ষা রয়েছে আপনার জন্য নরেন্দ্র মোদী। এর জবাব আপনাকে দিতেই হবে।
সঙ্কীর্ণতার সাধনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনীতির নামে যেন। এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করতে পারেন একজন রাজনীতিক! তা-ও আবার দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসে! রাজধর্মের কোনও পরোয়াই নেই। যে কোনও উপায়ে, যে কোনও মিথ্যাচারে ভর করে স্রেফ ভোটটুকু জিততে পারলেই কেল্লা ফতে— মানসিকতা কি আজ এই স্তরে পৌঁছে গিয়েছে?
এখনও বলছি, আপনার তোলা অভিযোগকে অবিশ্বাস করছি না নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী পদে বসে যখন এত বড় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আপনি তুলেছেন, তখন আপনার তত্ত্বেই বিশ্বাস রাখছি। কিন্তু যে অভিযোগ আপনি তুললেন, তা প্রমাণ করার এবং অপরাধীকে শাস্তি পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্বও আপনারই। সে পথে যদি না হাঁটেন, তা হলে কিন্তু আর বিন্দুমাত্র বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না আপনার। ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকায় সবচেয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যেতেও পারেন আপনি। সে কথা মাথায় রেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ হবে আশা করা যায়। অপেক্ষায় রইলাম। অপেক্ষায় রইল গোটা দেশ।