দুঃসময় আসিলে প্রবল পরাক্রান্তও গর্তে পড়ে। একশত দিনের কাজের প্রকল্পকে একদা ‘গর্ত খুঁড়িবার প্রকল্প’ বলিয়া বিদ্রুপ করিয়াছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ তাঁহার সরকার বাজেট-বরাদ্দের উপর আরও চল্লিশ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করিল সেই প্রকল্পের জন্য। বস্তুত আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলার যে প্যাকেজ কেন্দ্র ঘোষণা করিয়াছে, তাহার মধ্যে দরিদ্রের নিকট সরাসরি আর্থিক সহায়তা পৌঁছাইতে এই প্রকল্পের উপরেই সর্বাধিক ভরসা করিয়াছে সরকার। এই একটি ক্ষেত্রেই দরিদ্রের চাহিদা সরকারের জোগানকে নির্ধারণ করিতে পারে, কারণ দরিদ্রের কাজের দাবির ভিত্তিতেই প্রকল্প তৈরি করে পঞ্চায়েতগুলি। মোদী কার্যত স্বীকার করিলেন, কর্মসৃষ্টি এবং ন্যূনতম রোজগার নিশ্চিত করিতে হইলে মাটি কাটিবার এই প্রকল্প ব্যতীত গতি নাই। ইহাতে বিরোধী দলগুলি, বিশেষত কংগ্রেস, কিছু আত্মপ্রসাদ লাভ করিবে। রাজনৈতিক দানে তাঁহারা এক ঘর আগাইবার দাবিও করিতে পারেন। নাগরিক সমাজের যে অংশটি এই প্রকল্পের পক্ষে সওয়াল করিয়াছিলেন, তাঁহারাও হৃষ্ট হইবেন, সন্দেহ নাই। মোদী সরকার গত কয়েক বৎসরে এই প্রকল্পটিকে যে ভাবে ক্রমাগত নীরক্ত, দুর্বল করিয়া তুলিয়াছে, তাহা এই প্রকল্পের সমর্থকদের ক্ষুণ্ণ করিয়াছে। অল্প বরাদ্দ, বিলম্বে অর্থ প্রেরণ, এবং নানারূপ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রকল্পটি ক্রমশ গতি হারাইতেছিল। এ বৎসর বাজেটে বরাদ্দ (একষট্টি হাজার কোটি টাকা) প্রয়োজনের তুলনায় কম, তাহার অনেকটাই বকেয়া মিটাইতে যাইবে, এমন শোরগোল উঠিয়াছিল। সহসা মরা গাঙে বান ডাকিবার মতো বাড়তি অর্থের জোয়ার আসিল প্রকল্পে।
গ্রামের দরিদ্র মানুষের জন্য, বিশেষত ঘরে প্রত্যাগত কর্মহীন শ্রমিকের জন্য ইহা আশার কথা বটে। কিন্তু কেন একশত দিনের প্রকল্প ভিন্ন গ্রামীণ রোজগার নিশ্চিত করিবার পথ মিলিল না, সে প্রশ্নটিও করিতে হইবে। মোদী তরুণ-তরুণীদের কুশলতা বাড়াইয়া তাহাদের নিয়োগ বাড়াইবার আশ্বাস দিয়াছিলেন। প্রতি বৎসর এক কোটি কাজ সৃষ্টি হইবে, অঙ্গীকার করিয়াছিলেন। বাস্তবে কর্মহীনতা বাড়িয়াছে। গত বৎসর এক জাতীয় সমীক্ষা সেই সত্য প্রকাশ করিয়াছে। তাহার উপর মোদীর নোট বাতিলের নীতি কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ে গভীর সঙ্কট আনিয়াছিল, কারণ তাহা এখনও প্রধানত নগদ-নির্ভর। কৃষির উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রেও মোদী সরকার কোনও উল্লেখযোগ্য সংস্কার আনিতে পারে নাই, কৃষি লাভজনক হয় নাই, চাষির বিক্ষোভে দেশ তোলপাড় হইয়াছে। অর্থের অভাব এমন আকার লইয়াছে যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য ব্যয় কমিয়াছে, চাহিদা নিম্নমুখী হইয়াছে। অতিমারি এই সঙ্কটকে আরও তীব্র করিয়াছে মাত্র।
যে আপৎকালীন পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে, তাহাতে একশত দিনের কাজের প্রকল্পের উপযোগিতা অনস্বীকার্য। দ্রুত অর্থ জুগাইবার কার্যকর উপায় এই প্রকল্প, তাহা প্রমাণিত। প্রকল্পে অধিক বরাদ্দের প্রয়োজন বিষয়েও দ্বিমত থাকিতে পারে না। তবু, অগণিত মানুষকে অন্নের সংস্থানের জন্য কায়িক পরিশ্রমেই ফিরিতে হইতেছে, ইহাতে স্বস্তির কারণ কিছু নাই। শ্রমের অধিক উৎপাদনশীলতা, মানবসম্পদের উন্নততর বিনিয়োগের যে প্রতিশ্রুতি নরেন্দ্র মোদী দিয়াছিলেন, তাহাও ভুলিলে চলিবে না। তাহার পালন গ্রামের মানুষের প্রতি সরকারের কর্তব্য।