বইটির প্রকাশ আটকাতে ট্রাম্প হন্যে হয়ে উঠেছিলেন

‘প্রমিস’ করেছিলেন তিনি, হারবেনই, একদম পাক্কা

সবই ঠিক করা ছিল, হারার পর কে কী করবে। স্ত্রী মেলানিয়া আবার তাঁর ‘রিচ অ্যান্ড এলিট’ লাইফস্টাইলে সুখে-সংগোপনে ফিরে যাবেন।

Advertisement

সেমন্তী ঘোষ

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৬:০০
Share:

বইটা তখনও বেরোয়নি। কিন্তু অক্টোবরেই ঊননব্বই-এ পা-দেওয়া দার্শনিক নোম চমস্কি এমন একটা কথা বলেছিলেন, এ বই পড়তে গিয়ে মনে হয় যেন এটারই সমালোচনা করতে বসেছিলেন তিনি। ওঁর মতে— ট্রাম্প নিয়ে চার দিকে এই যে রাশি রাশি ‘খবর’, সবই তো লোকটির বোকামি ও পাগলামি বিষয়ক। কিন্তু এই অসাধারণ বোকামি পাগলামির (‘বাফুনারি’) ফাঁক গলে যে সাংঘাতিক সংকট ঘনিয়ে আসছে দেশে দুনিয়ায়, তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট হেলদোল আছে কি?

Advertisement

এক জন মূর্খ, অসহিষ্ণু, হামবড়া (চমস্কির ভাষায় ‘ইগনোর‌্যান্ট, থিন-স্কিনড মেগ্যালোম্যানিয়াক’) মানুষ, যাঁর ‘একমাত্র আদর্শ তিনি নিজেই’— মার্কিন দেশটার এবং গণতন্ত্র বস্তুটার কত বড় ক্ষতি করে দিয়ে গেলেন, সেটা আমরা বুঝতে পারছি কি না, এটাই তবে প্রশ্ন। সম্প্রতি প্রকাশিত মাইকেল উলফের বইটিতে ট্রাম্পীয় পাগলামির অজস্র ‘খবর’ পড়েও অনেকেই এ রকম একটা খুঁতখুঁতে কথা পেড়েছেন। অবিশ্বাস্য অ্যানেকডোটস, অসাধারণ বর্ণনা, সাড়ে তিনশো পাতার বইটি ক্রাইম থ্রিলারকেও হার মানায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক জন মেগ্যালোম্যানিয়াক একনায়কের পাগলামি ছাড়া আমরা কী পেলাম?

আমি কিন্তু বলব, পেলাম অনেক কিছুই। উলফ কী চেয়েছিলেন জানি না, কিন্তু ট্রাম্পের সম্পর্কে তাঁর ইঙ্গিতের তির্যকতা ও বর্ণনার ভয়ালতার মধ্য দিয়ে যে বৃহত্তর ‘তাৎপর্য’ বেরিয়ে আসছে, আমরা তাতে আতঙ্কে আবিষ্ট হয়ে পড়তে পারি। এই ভয়ংকর রসের রাজনৈতিক রম্য-রচনা পড়তে গিয়ে হাসতে হাসতে আমাদের হাড় হিম হয়ে যায়।

Advertisement

এই যেমন, একটা সামান্য তথ্য— প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর টিম কী ভাবছিলেন। তাঁদের সর্বৈব আশা ছিল যে তাঁরা হারবেন, কেননা হারলেই তাঁদের উদ্দেশ্য একশো শতাংশ সিদ্ধ হবে, নতুবা নয়। এই তথ্য কি কম জরুরি? মার্কিন রাজনীতি ও গোটা পৃথিবীর রাজনীতির চালচলন বিষয়ে কি এর থেকে আমরা অনেক কিছু বুঝে নিই না? সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের উচ্চতম পদটিতে প্রাণপণ লড়ে হারতে চাইছেন এক জন ধনকুবের, কেননা প্রতিদ্বন্দ্বীর সামনে তাঁর জেতার চান্স নেই, আর চান্স থাকলেও তিনি তা মোটেই চান না, কেননা তাতে বড্ড বেশি ফেঁকড়া, বরং হারলে যখন তিনি বিশ্ববিখ্যাত হয়ে যাবেন, তখনই কার্যসিদ্ধি। তাঁর নামটা সকলের মুখে মুখে ঘুরবে, তাঁর ব্যবসায়িক প্রোজেক্টগুলোর কথা সবাই জেনে যাবে, বিখ্যাত-হয়ে-যাওয়া ব্যাবসাগুলো তখন দিব্যি জমিয়ে করা যাবে, এই তো ছিল প্ল্যান। প্রেসিডেন্ট ভোটে দাঁড়ানোটা তাঁর কাছে ব্যাবসার ডিল-এর মতো, কিন্তু এমন ডিল যাতে বেশি টাকা ঢালতেও তিনি রাজি নন। যে ভোটে হারাটাই লক্ষ্য, সেটার প্রচারে বেশি খরচ করবেন কেন। ক্যাম্পেন-এর জন্য তাঁর কাছ থেকে টাকা বার করতে ঘাম ছুটে যেত তাঁর টিম-এর।

সবই ঠিক করা ছিল, হারার পর কে কী করবে। স্ত্রী মেলানিয়া আবার তাঁর ‘রিচ অ্যান্ড এলিট’ লাইফস্টাইলে সুখে-সংগোপনে ফিরে যাবেন। মেয়ে ইভাঙ্কা ও জামাই জারেড কুশনার নাম-কা-বাস্তে উড়নচণ্ডী ‘রিচ কিডস’ থেকে ‘সেলেব্রিটি’তে পরিণত হবেন, রাজা-উজির মারতে পারবেন। মুখ্য উপদেষ্টা স্টিফেন ব্যানন দেশের আগুনখেকো দক্ষিণপন্থী দল টি পার্টি-র প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন। আর ট্রাম্প নিজে? হারলেই তার পর, ‘মোস্ট ফেমাস ম্যান ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ চালু করবেন ট্রাম্প-টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, তাঁর কত দিনের স্বপ্ন!

ভোটে দাঁড়ানোর খবর শুনেই ভেঙে পড়েছিলেন মেলানিয়া। কান্নাকাটি করতেন। ট্রাম্প বারংবার তাঁকে ‘প্রমিস’ করতেন, কখনওই এ রকম হতে পারে না, তিনি হারবেনই, একদম পাক্কা। শুনে হাসি ফুটত মেলানিয়ার মুখে। ২০১৬ সালের নভেম্বরের সেই সকালে ভোটের ফল বার হওয়ার পর মেলানিয়ার অবস্থা দেখে মায়া হয়েছিল অনেকেরই।

তা ছাড়া প্রেসিডেন্ট হওয়া কি চাট্টিখানি কথা? শেষরক্ষা অবশ্য হল না, ঘাড়ে এসে পড়লই সব ঝক্কি। ঝক্কির গোড়াটা তো একেবারে গোড়াতেই: ট্রাম্প বিলক্ষণ জানেন যে কোনও বিষয়েই কিচ্ছুটি জানেন না তিনি। সমাজ রাজনীতি চুলোয় যাক, বিলিয়নেয়ার ব্যবসায়ী হয়েও ব্যালান্স শিট পর্যন্ত মেলাতে শেখেননি। একমাত্র একটা বিষয়েই তিনি কিছু জানেন, ও কথা বলতে উৎসাহ বোধ করেন— বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন। ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ বড় সাধের ব্র্যান্ড। ওই একটি ব্র্যান্ডের পিছনে তাঁর সাক্ষাৎ মেহনত আছে। আর তার বাইরে ব্যবসায় যা কিছু সমঝোতা বা নেগোশিয়শন দরকার, সে সবও তিনি করতে পারেন না। এত খারাপ তাঁর ডিল-হ্যান্ডলিং যে বেগতিক সামলাতে সঙ্গীরাই সর্বদা সে কাজটা করে দেন। এখন তিনি প্রেসিডেন্ট হলে কী হবে? এত শত নেগোশিয়শন-এর হ্যাপা সামলাবে কে!

‘ডিল’ দূরস্থান, ঘরোয়া মিটিং-এর কমেন্ট বা প্রকাশ্য মিটিং-এর স্পিচ, এ সব নিয়েই কি কম মুশকিল? কোনও কিছুই যে বেশিক্ষণ মনে ধরে রাখতে পারেন না ডোনাল্ড। অন্যের কথা শুনতেও পারেন না বেশিক্ষণ। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওবামার স্পিচগুলো তাঁকে শোনানোর চেষ্টা হচ্ছে সেই কবে থেকে। উত্তরাধিকার হিসেবে তাঁকে ওবামার সমালোচনা করতে হবেই, সুতরাং ওবামা কী বলতেন সেটা তো নিজের কানে শোনা দরকার। নাঃ, কয়েক মিনিটের মধ্যেই ট্রাম্প সটান উঠে পড়তেন, ধুর্, ‘মোস্ট বোরিং’, কে শুনবে এত সব ভারী ভারী কথা! কেবল শোনায় সমস্যা নয়, পড়া ও লেখাতেও সমস্যা। কয়েক পাতা একসঙ্গে পড়তে পারেন না তিনি, কোনও রিপোর্ট, পলিসি, কিছুই না। মাইকেল উলফ-এর দুটি অনুমান, এক, ট্রাম্প ‘সেমি-লিটরেট’ মানে অর্ধশিক্ষিত। হতেই পারে, বিশেষ করে যখন ট্রাম্পের ডিসলেক্সিয়া ধরনের সমস্যা আছে, আবার অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিসঅর্ডারেও তিনি ভোগেন। আর দুই, ট্রাম্প ‘পোস্ট-লিটরেট’, অর্থাৎ সেই গোত্রের মানুষ যাঁদের সব জানাশোনাই টিভি দেখতে দেখতে।

অন্যের কথা কেন, নিজের বলা কথাগুলোও ভুলে যান বেমালুম। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে সকলকে বলে রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার কোনও চান্সই নেই। কিন্তু যে-ই না জেতা, সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা গেল, একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেছে তাঁর মত। আরে, তিনিই তো প্রেসিডেন্ট হওয়ার সবচেয়ে যোগ্য! তিনি ছাড়া আর কে এই দেশকে চালানোর ক্ষমতা রাখেন? ওয়াশিংটন ডিসির মেমোরিয়াল চত্বরে প্রথম বক্তৃতার দিনটিতে তত ভিড় হয়নি বুঝে কিছু মন্তব্য করে ফেলেছিলেন। তার পর নিজের বোঝাটাকেই পালটে দিতে হন্যে হয়ে উঠলেন। পড়িমরি করে সেই দিনের ছবির ওপর অন্য ছবি সুপার-ইমপোজ করে ছড়িয়ে দিলেন দিগ্বিদিকে। আর পালটানো ছবির কল্যাণে— ‘লক্ষ লক্ষ লোক’ এসেছিল সে দিন তাঁর কথা শুনতে, এই কথাটা সবচেয়ে আগে অন্তর থেকে বিশ্বাস করে ফেললেন তিনি নিজেই।

সত্যি মিথ্যে ঠিক ভুল সবই মায়া। নৈতিক চরিত্র ইত্যাদি নিয়ে তাই কোনও পচা ইমেজে বিশ্বাস রাখেন না ভদ্রলোক। বন্ধুদের স্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তাঁর নিয়মিত বিনোদন, বন্ধুরাও জানেন। একটা ছক আছে তাঁর, কী ভাবে বন্ধুপত্নীদের ‘পথে আনবেন’। ট্রাম্প টাওয়ারের বিভিন্ন তলায় বাড়ি, অফিস, ও তাঁর ছক কার্যকর করার অবকাশ-বন্দোবস্ত। ভালই ছিলেন, মাঝখান থেকে হোয়াইট হাউসের মতো বস্তাপচা বিল্ডিং-টায় এসে পড়তে হল।

হোয়াইট হাউস নিয়ে প্রথম থেকেই তাঁর বহুবিধ বিরক্তি। অন্য প্রেসিডেন্টরা সকলে নাকি এই বাড়িতে এসে দিশেহারা হয়ে পড়েন, ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ তো সকলেরই ‘সাধারণ’, এত বিশাল প্রাসাদ, এত হুকুমপ্রার্থী বরকন্দাজ, অপেক্ষমাণ এয়ারফোর্স, দিনে রাতে নিরাপত্তারক্ষীদের তীক্ষ্ণ ঘেরাটোপ, তাঁরা কেউ যেন থই পেতেন না প্রথম কিছু দিন। অবশ্য ট্রাম্পের কথা আলাদা। ট্রাম্প টাওয়ারের কড়ে আঙুলেরও যোগ্য নয় এই সাদা বাড়ি। প্রাইভেট জেটের সারি তো তাঁর জন্য সেই কবে থেকেই মজুত থাকত। তাই হোয়াইট হাউসে আসার পর ওঁর বরং চোখে পড়তে থাকে, কোথায় কী সারাই দরকার, কোন লক-টা কাজ করছে না, কোন শাওয়ারের জলের ফোর্স নেই ইত্যাদি। তাঁর প্রেসিডেনশিয়াল বেডরুমে (মেলানিয়ার ঘর আলাদা, প্রেসিডেন্ট কেনেডির পর এই প্রথম এমন ‘বিচ্ছিন্ন’ ব্যবস্থা) মাত্র একটা টিভি, বোঝো ব্যাপার! হাঁকডাক করে আরও দুটো টিভি লাগিয়ে নিয়েছেন তিনি, এরা জানেও না যে একসঙ্গে তিনটে টিভি স্ক্রিনে কেব্‌ল চ্যানেল দেখার অভ্যেস তাঁর। বিরক্তির একশেষ।

নিজের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা তাঁর। তাই ‘হোয়াইট ট্র্যাশ’ শব্দটা শুনলেই পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেন— ‘অর্থাৎ, পিপল লাইক মি’, কেবল ‘ওরা একটু গরিব, আর আমার অনেক টাকা!’ অন্যের বিষয়ে ধারণাও খুব পরিষ্কার। ট্র্যাশ হোক আর না হোক, যা কিছু ‘হোয়াইট আমেরিকা’র বাইরে, সবই খারাপ, খুব খারাপ। ওবামার বার্থ সার্টিফিকেট দেখে বিস্ময় তাঁর বাঁধ মানে না, ‘এই সব জিনিস’ কোথা থেকে আসে এ দেশে? কাউকে এক ইঞ্চি বিশ্বাস করেন না, ধরে নেন সবাই কিছু না কিছু চক্রান্ত করছে, সবাই ‘র‌্যাট’, ইঁদুরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে ধান্দাবাজির জন্য। টাকাপয়সা আর ক্ষমতার এটাই বিপদ, র‌্যাটদের জ্বালায় নাজেহাল। কোনও রেস্তরাঁয় খেতে যেতে তাই ভারী আপত্তি করেন, বরং ম্যাকডোনাল্ডস-এর বার্গার সবচেয়ে পছন্দ, হ্যাঁ, ওখানে তো তিনি আসছেন জেনে বা ভেবে কেউ বার্গার বানায় না, তাই বিষ দেওয়ার চান্সও জিরো।

এত বিপদ চার দিকে। এত শত্রু। এরই মধ্যে হোয়াইট হাউসের কর্মীরা অবাক হয়ে দেখেন, কী যেন বিড়বিড় করে চলেন প্রেসিডেন্ট। কান পেতে শুনলে বোঝা যায়, তিনি আউড়াচ্ছেন, আই অ্যাম দ্য গ্রেট, আই অ্যাম দি আলফা মেল, মানে, বীরপুঙ্গব। এফবিআই-এর দুঁদে ডিরেক্টর জেমস কমিকে ‘র‌্যাট’ বলে যে দিন কলমের এক আঁচড়ে বরখাস্ত করে দিলেন তিনি, ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা ‘হাঁ হাঁ’ করে উঠেছিলেন। স্টিফেন ব্যানন তো চিৎকার শুরু করেছিলেন। কে শোনে কার কথা। ‘আলফা মেল’-কে ঠেকাবে কে। এ দিকে কমির বরখাস্ত চিঠিটা লিখতে কালঘাম ছুটে গেল সকলের, প্রেসিডেন্টের সই করা চিঠিতে এত ভিত্তিহীন অজুহাত লেখা চাট্টিখানি কথা? তবে পুরোপুরি স্বেচ্ছাচারী বলা যাবে না তাঁকে। ‘স্ব-ইচ্ছা’ ছাড়াও আর এক জনের ইচ্ছা ও উসকানি কমি-বিতাড়নের মতোই তাঁর অনেক কাজের পিছনেই আছে। তিনি— জামাতাপ্রবর জারেড কুশনার।

এই বইয়ের প্রধান চরিত্র যদি হন ট্রাম্প, দ্বিতীয় চরিত্র কুশনার দম্পতি— কন্যা ইভাঙ্কা ও জামাই জারেড। অনেক তথ্য জানিয়েছেন উলফ, অনেক অনুমানও করেছেন, বেশ বিশ্বাসযোগ্য অনুমান। পাওয়ার-কাপল হিসেবে সতত সঞ্চরমাণ এই দুই ব্যক্তি হোয়াইট হাউসে বড় ধরনের অ্যাজেন্ডা নিয়ে এসেছেন, ‘বিটুইন-দ্য-লাইনস’ এই অভিযোগ উঠে এসেছে বার বার। ‘জারাভঙ্কা’ সম্পর্কে ব্যাননের মুখে যত কথা জানিয়েছে এই বই, তাতে এই বই প্রকাশের পর ব্যানন হোয়াইট হাউস থেকে নির্বাসিত না হয়ে পারেননি। আমরা জানতে পেরেছি, ইভাঙ্কা মনেপ্রাণে প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হতে চান। (সেই সূত্রে স্মরণ করেছি যে ক’মাস আগে ওভাল রুমে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে ইভাঙ্কা সহাস্যমুখে আসীন দেখে কত কথাই না হয়েছিল! আহা, বেচারি ওই চেয়ারে বসাটা অভ্যেস করছিলেন তখন!) বাবাকে মোটেই পাত্তা দেন না তাঁরা স্বামী-স্ত্রী, কিন্তু হাতে রাখেন সব সময়ে। অলক্ষ্য জারেডের প্রচ্ছন্ন অঙ্গুলিনির্দেশ কী ভাবে ট্রাম্পকে প্রভাবিত করে, পড়তে পড়তে গায়ে কাঁটা দেয়। তার পর আছে রাশিয়ার সরকারি দূতদের সঙ্গে ট্রাম্প মহলের যোগাযোগ, ঠান্ডা যুদ্ধের স্পাই থ্রিলারকেও হার মানায়! ফরেন পলিসি নামক বস্তুটি কী সাংঘাতিক তাৎক্ষণিক এবং যুক্তিহীন ভাবে তৈরি হয় আজকাল, পাতার পর পাতা তার আখ্যান পাই আমরা। দুই দিন আগেই খবর ছিল, মার্কিন বিদেশনীতির বিশ্বাসযোগ্যতা এখন তলানিতে। কোন দুর্লভ ক্ষমতায় সুপারপাওয়ারের এই হাল বানাতে পারেন কেউ, এই বইতে তার হদিশ।

স্বাভাবিক ভাবেই এখন সব কিছু অস্বীকারের ধুম পড়েছে। ট্রাম্প তো বরবাদ করেই দিয়েছেন— ‘ফেক বুক’, জাল বই। ফেক ব্যাপারটা তিনি দারুণ বোঝেন, ফেক রিপোর্টিং নিয়ে তাঁর মতো জ্ঞান কম লোকের আছে। কী করে ফেক খবর প্ল্যান করা হয়, প্ল্যান্ট করা হয়, প্রচার করা হয়, সব জানেন তিনি। আরে, নিজেই কত বার ফেক নিউজ বাজারে ছেড়েছেন, আর দেখেছেন ‘দে অলওয়েজ প্রিন্ট ইট’!

তবে ‘ফেক’ বই হলে প্রকাশের আগেই সেটা আটকানোর জন্য এতখানি হন্যে হয়ে উঠলেন কেন তিনি, সকলে জানতে চাইছে। আর প্রকাশের পরই বা এত রকম প্রতিক্রিয়া, ক্ষমাপ্রার্থনা, নাটক কেন— সে প্রশ্নও তুলছে বইকি।

সব উত্তরই যখন জানা, প্রশ্নের মধ্যে ঢুকে লাভ নেই। আমরা বরং চমস্কির ভাবনাটায় ফিরে যাই।

শুধুই গালগল্প? শুধুই বোকামি পাগলামি?

নাকি এই ছোট ছোট গল্পগুলো একটা বড় গল্পও বলে? রক্ত-জল-করা একটা গল্প? ব্যক্তি আর সিস্টেম কী ভাবে হাতে হাত রেখে পরস্পরকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে, তার গল্প? ব্যক্তির চর্চায় আমরা ভেসে যেতেই পারি, কিন্তু এ-ও তো আমাদের মানতে হবে যে, সিস্টেম, এবং তার প্রতিষ্ঠানই অনন্ত গণসমুদ্র থেকে ব্যক্তিগুলিকে তুলে আনে? এমন সব ব্যক্তি, যাঁরা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি নিয়েই প্রতিষ্ঠানে আসেন? এটা ভাবতে গেলে ‘ফায়ার’ এবং ‘ফিউরি’ দুটো শব্দেরই কেমন যেন আলাদা মানে তৈরি হয়ে যায়, তাই না?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement