সম্পাদকীয় ২

নিষ্পক্ষ পর্যবেক্ষক

বস্তুত, সেই অধিকারের দার্শনিক গুরুত্ব বিপুল। ভারতের ক্ষেত্রে অন্য যে কোনও দেশের অবস্থানকে বলা যাইতে পারে নিষ্পক্ষ পর্যবেক্ষকের অবস্থান।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০১:১৪
Share:

ভারতে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি কেমন, সেই বিষয়ে মন্তব্য করিবার কোন অধিকার ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়স ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)-এর আছে? কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট এই প্রশ্নটি এমনই অকাট্য যে সরকার কমিশনের রিপোর্টটিকে লইয়া মাথা ঘামাইতেই নারাজ। অতএব, অধিকারের প্রশ্নটিকেই প্রথম বিচার করা বিধেয়। প্রথমত, মানবাধিকার বা স্বাধীনতার প্রশ্নগুলি ভৌগোলিক গণ্ডিতে আবদ্ধ নহে। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের অধিকার লঙ্ঘিত হইলে যেমন ভারতের উদ্বিগ্ন হইবার, এবং সেই উদ্বেগ জনসমক্ষে আনিবার অধিকার আছে, তেমনই ভারতে মুসলমান বা দলিতরা যদি রাষ্ট্রীয় রোষের সম্মুখীন হন, বিশ্বের যে কোনও দেশ তাহাতে উদ্বেগ জানাইতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বিলক্ষণ অধিকারী।

Advertisement

বস্তুত, সেই অধিকারের দার্শনিক গুরুত্ব বিপুল। ভারতের ক্ষেত্রে অন্য যে কোনও দেশের অবস্থানকে বলা যাইতে পারে নিষ্পক্ষ পর্যবেক্ষকের অবস্থান। নিষ্পক্ষ, কারণ ভারতে বিবদমান দুই গোষ্ঠীর— যাহার এক দিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষ, এবং তাহাদের প্রতিনিধিত্ব করিতে ব্যাকুল রাষ্ট্র, আর অন্য দিকে সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ— কোনওটির সঙ্গেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সংযোগ নাই। তর্ক উঠিতে পারে, ভিন্ন রাষ্ট্রের বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি অবধারিত ভাবে নিষ্পক্ষ না-ও হইতে পারে, তাহাতেও থাকিতে পারে স্বার্থের সংযোগ। কিন্তু তাহাতে মূল নীতির গুরুত্ব কমে না। নীতিগত ভাবে নিষ্পক্ষ পর্যবেক্ষকের ভূমিকা বিশেষ মূল্যবান। এই কথার অর্থ ইহা নহে যে দেশের অভ্যন্তরীণ বিচারটি গুরুত্বহীন। কিন্তু বাহিরের পর্যবেক্ষকের বিচারের গুরুত্ব এইখানে যে, দেশের অভ্যন্তরীণ মতামতগুলির মধ্যে কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়, এই মত তাহার দিকনির্দেশ করিতে পারে। অতএব, ভারত বিষয়ে যে কোনও বৈদেশিক পর্যবেক্ষণকেই অনধিকারচর্চা বলিয়া নাকচ করিয়া দেওয়ার বদলে সেই মতটিকে যাচাই করিয়া দেখা প্রয়োজন। দেশের অভ্যন্তরে বারংবার যে অভিযোগ উঠিতেছে, মার্কিন রিপোর্টেও যদি তাহারই প্রতিধ্বনি শোনা যায়, তবে সরকারের কি বোঝা উচিত নহে যে ঘোরতর অন্যায় হইতেছে, এবং তাহা আর গোপনও থাকিতেছে না? পরিস্থিতিটি বদলাইবার পথ সন্ধান করাই কি বিধেয় নহে?

মার্কিন রিপোর্টে যে কথাগুলি উঠিয়া আসিয়াছে, তাহা নূতন কিছু নহে, বরং বহুচর্চিত। গোসন্ত্রাস হইতে দলিতদের বিরুদ্ধে আক্রমণ, একটি চলচ্চিত্র লইয়া দেশব্যাপী অশান্তি হইতে সার্বিক গৈরিকীকরণের প্রচেষ্টা— এই কথাগুলিই রিপোর্টে আসিয়াছে। নরেন্দ্র মোদীও জানিবেন, কোনও অভিযোগই মিথ্যা নহে। আরও সত্য এই অভিযোগটি যে, দেশের সরকার এই সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতাকে নিয়ন্ত্রণ করিবার কোনও চেষ্টাই করে নাই, এবং ভারতের বহুত্ববাদী চরিত্রটি নষ্ট হইতে বসিয়াছে। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক মহলের চোখে ভারত ক্রমেই একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হইয়া উঠিতেছে। নরেন্দ্র মোদী হয়তো বুঝিতেছেন, তাঁহার কোলাকুলির কূটনীতিতে ভারতের সম্মান পুনরুদ্ধার হইবে না। তাহার জন্য প্রকৃত চেষ্টা প্রয়োজন। প্রয়োজন রাজধর্মের পালন। সংশয় হয়, রাজধর্মে ফেরা অসম্ভব বলিয়াই কি বিদেশি সমালোচকদের উদ্দেশে ভারতের বর্তমান শাসকদের এত চিৎকার করিয়া অনধিকারচর্চার অভিযোগে গাল পাড়িতে হয়?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement