আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট যখন আগামী ২-৩ মে হওয়ার কথা প্রথম ঘোষণা হয়, তখন পয়লা মে শ্রমিক দিবসে কাজ করতে হবে বলে বিভিন্ন রাজ্য কর্মচারী সমিতির নেতাদের গলায় আক্ষেপের সুর বেজে উঠেছিল। পয়লা মে কাজ করলে সত্যি কি শ্রমিকের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়? না কি একটা ছুটি উপভোগ করতে না পারার জন্য আক্ষেপ? সরকারি, আধা সরকারি বা সংগঠিত বেসরকারি সংস্থার শ্রমিক এই মর্যাদা হয়তো পান। কিন্তু যাঁরা এসেনশিয়াল সার্ভিসে কাজ করেন, যেমন হাসপাতাল, রেল, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিভাগে, এঁদের কোনও ছুটিই নেই— সে উত্সব হোক আর মহাপুরুষের জন্মদিন। এ ছাড়া বহু অসংগঠিত সংস্থার বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের কাছে ‘মে দিবস’ শব্দটাও অচেনা। সংগঠিত সংস্থার কর্মচারী সমিতির নেতারা এ সব ভাবেন কি?
সংগঠিত সংস্থার সকল শ্রমিক কি সঠিক মর্যাদায় কাজ করতে পারছেন? যেমন ধরুন রেল সংস্থা। এখানে তিন ধরনের কর্মচারী কাজ করেন। স্থায়ী, অস্থায়ী ও ঠিকা শ্রমিক। এমনও অস্থায়ী কর্মচারী আছেন, যাঁরা স্থায়ী হওয়ার দিন গুনতে গুনতে অস্থায়ী হিসেবে অবসর নিয়ে চলে যান। আবার কেউ এমন সময় স্থায়ী হলেন, যখন তাঁর চাকরি আছে হয়তো আর ছ’সাত বছর। সারা জীবন স্থায়ী কর্মচারীদের সঙ্গে একই কাজ করে, কোনও সুবিধা ভোগ ছাড়াই যখন এই অস্থায়ী কর্মী অবসর নিচ্ছেন, তখন এঁদের কথা কোন নেতা ভাবছেন? এই অস্থায়ী কর্মী কোনও না কোনও ইউনিয়নকে হয়তো চাঁদা দিয়ে গিয়েছেন প্রতি মাসে। রেল চলাচলের কাজের সঙ্গে যাঁরা সরাসরি যুক্ত, তাঁদের শিফ্টিং ডিউটি করতে হয়। সাধারণত আট ঘণ্টা, আবার ১২ ঘণ্টার শিফ্ট এখনও চলছে। রিলিভ টু রিলিভ চাকরি। অর্থাৎ এক জন ডিউটিতে না এলে, ডিউটি ছেড়ে অন্য জন যেতে পারেন না। এমনকী অফিসের বাইরে টিফিন করতেও যাওয়া যায় না, যে হেতু এই কাজের সঙ্গে সুরক্ষার প্রশ্ন জড়িয়ে থাকে। রেস্ট ডে ছাড়া আর অন্য কোনও ক্যালেন্ডার ছুটি নেই। সিএল-সহ জমানো নিজস্ব ছুটি চাইলে, শূন্যপদের কারণে বেশির ভাগ সময়ে তা মঞ্জুর হয় না। এ ব্যাপারে মুখ খোলা চলে না। তা হলে বিভাগীয় সুপারভাইজার নানা ভাবে প্রচ্ছন্ন চাপ সৃষ্টি করে রাখেন। যে হেতু এঁরাই প্রশাসনের চোখ-কান, এঁদের রিপোর্টে ট্রান্সফার বা শো-কজ করা হয় নানা অছিলায়। এর সঙ্গে সিটি নন-সিটি ট্রান্সফারের জুজু দেখান এঁরা। সাধারণ সাংসারিক চাকুরে মানুষ তাই চুপচাপ থাকেন। কর্মচারী সমিতির নেতারা তাঁদের অফিস সদস্য ছাড়া সাধারণ কর্মচারীর এ ব্যথায় উদাসীন থাকেন।
এ বার ঠিকা শ্রমিক। আমার বিভাগে ঠিকা শ্রমিক কেবল সাফাইকর্মী। ঠিকাদারের মেয়াদ দু’বছর। নতুন ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে, একই লোক কাজ করেন। আমি যে ইউনিটের ইনচার্জ হয়ে এসেছি, সেখানে গত কন্ট্র্যাক্টে ১৩ জন লোক কাজ করতেন। আর এখন সেই কাজ চার জনে করার কন্ট্র্যাক্ট। তা হলে এখানে ন’জন কাজ হারালেন। দু’বছর বা তারও বেশি সময় ধরে কাজ করে আসা মানুষগুলো হঠাৎ কাজ হারালেন। প্রশাসন কম পয়সায়, কম লোকে কাজ চালাতে চাইবে। এটাই হয়তো স্বাভাবিক। শুধু এই ন’জন নন, সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন সংস্থায় বিশাল সংখ্যক মানুষ কাজ হারাচ্ছেন এ ভাবে। তা ছাড়া অসংগঠিত ক্ষেত্রে বহু শ্রমিকের কষ্ট এখনও আলোতে আসে না। এঁদের মে দিবস আছে?
নরেন্দ্রনাথ কুলে ই-মেল মারফত
হোমার পায়রা
অনিরুদ্ধ সরকারের লেখা ‘কানপুর, দিল্লি থেকে কলকাতা উড়ে আসে ওরা’ (রবিবাসরীয়, ২২-৪) পড়ে কিছু কথা মনে পড়ে গেল। আমার বাপের বাড়ি মধ্য কলকাতায়। আমার দাদু এবং বাবারও হোমার পায়রা পোষা ও ওড়ানোর খুব শখ ছিল। আমি এখন ৭৭ বছর বয়সি। খুব ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের বাড়ির তিন তলার ছাদে টালি ছাওয়া জালে ঘেরা পায়রার ঘর। অন্তত ৪০-৫০টা হোমার পায়রা ছিল, পায়ে স্টিলের রিং পরানো। ঘরের মধ্যে কাঠের চৌকো খোপ করা, তার সামনে কব্জা দিয়ে জালের পাল্লা দেওয়া দরজা। তাদের খাবার ছিল গম, ভুট্টা ভাঙা, মাঝেমাঝে পেস্তা, আখরোট ভাঙা ইত্যাদি। মাটির গামলায় জল দেওয়া থাকত খাওয়া ও স্নানের জন্য, দিনে তিন-চার বার জল পাল্টাতে হত। প্রতিযোগিতার সময়, বাবা ক্লাবে গিয়ে ঘড়িতে (ঘড়িটা চৌকো বাক্সের আকৃতি, বন্ধ করে চাবি দেওয়া যায়) টাইম নোট করে চাবি দিয়ে নিয়ে আসতেন। বাক্সভর্তি পায়রা নিয়ে মোগলসরাই, পটনা, রাঁচী, বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে প্রতিযোগীরা একসঙ্গে পায়রা ছাড়তেন। পায়রারা ফিরে এলে, আমরা তাদের পায়ে পরানো রবারের রিং খুলে বাড়ির বাক্সে ফেলে, সময়টা নোট করতাম। পরে সবাই ক্লাবে গিয়ে পর পর ঘড়ির বাক্স খোলা হত, প্রতিযোগীদের স্থান নির্ণয় হত। আমার দাদু ও বাবা অনেক ফার্স্ট প্রাইজ এবং সার্টিফিকেট জিতেছিলেন। ১৯৪৭ সালে আমার দাদুর মৃত্যুর পর, পার্টিশন ও দাঙ্গার ডামাডোলে বাবার শখ নষ্ট হয়ে যায়। বাবা অনেক দুঃখে পায়রাগুলো লোককে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে এক-আধটা পায়রা বাড়ি ফিরে এলে বাবা ভীষণ উত্তেজিত হয়ে যেতেন, আমাদের ডেকে দেখাতেন।
মঞ্জুশ্রী দাস কলকাতা-২৯
‘রাজধানী’ নয়
সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে সোমেশ ভট্টাচার্যের রচনা (২১-৪, পত্রিকা) উপভোগ্য, তবে সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবিতে যে ট্রেনের কথা বলা হয়েছে, সেটি কিন্তু রাজধানী এক্সপ্রেস নয়, ওটা ছিল এয়ারকন্ডিশনড এক্সপ্রেস, যদিও ছবির চোদ্দো আনা ট্রেনের শুটিং স্টুডিয়োতেই হয়েছিল। ‘নায়ক’ মুক্তি পায় ১৯৬৬-তে, শুটিং আরও আগে, তখন রাজধানী এক্সপ্রেস ছিলই না। রাজধানী এক্সপ্রেস চালু হয় তিন বছর পর, ১৯৬৯ সালে। পরবর্তী কালে এয়ারকন্ডিশনড এক্সপ্রেস ট্রেনের নাম বদলে হয় পূর্বা এক্সপ্রেস।
কিশোর পাল চৌধুরী কল্যাণী, নদিয়া
চোখ বোজা
অ্যাপ-ক্যাবে চড়েছি, চালক বেশ তরুণ। সারা দিন রোদ খেয়ে এই বার ঠান্ডা পরিবেশের সংস্পর্শে এসে আমার চোখটা লেগে এল। চালক টুকটাক কথা বলতে শুরু করল। বিরক্ত লাগলেও হুঁ-হাঁ করে জবাব দিচ্ছিলাম। এই বার ছেলেটি বলল, ‘‘স্যর, আমি আপনার সঙ্গে গল্প করতে চাই।’’ সে কী! কেন? ‘‘আমার চোখ জড়িয়ে আসছে।’’ আমার ঘুম ছুটে গেল। সর্বনাশ! বললাম, ‘‘বাবা, তুমি যা ইচ্ছে করো, চোখ বুজো না। কারণ, তুমি চোখ বুজলে আমারও চোখ বুজে যাবে, চির দিনের জন্য।’’ কারণটাও শুনলাম। ছেলেটি সারারাত গাড়ি চালায়। পুরো সময়টাই কাটে বাতানুকূল পরিবেশে। ফলে সকালে বাড়ি ফিরে ফ্যানের নীচে আর ঘুম আসে না। অতঃপর, কলেজ স্ট্রিট থেকে নিউ আলিপুর আমিও বকবকে মেতে উঠলুম। সে রাজনীতিতে হাতির ভূমিকা হোক, বা, বাড়ির ছাদে আখরোটের চাষ। আমি নেমে যাওয়ার আগেই গাড়িটি ফের বুক্ড হল। জানি না পরের যাত্রী কে হবেন!
অজিতেশ নাগ কলকাতা-৪৭
ভ্রম সংশোধন
‘সাধুবাদ প্রাপ্য’ শীর্ষক লেখায় (২৮-৪, পত্রিকা) মালবিকা সেন, রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, মালবীশ্রী দাস এবং প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ভুল প্রকাশিত হয়েছে। ঠিকটি হল যথাক্রমে মালবিকা মিত্র, রথীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, মালবশ্রী দাস এবং প্রতীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়