চিকিৎসার ব্যয়

নূতন সমীক্ষা তাহা ফের প্রতিষ্ঠা করিল। বিমা কেবল হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন রোগীর খরচ বহন করে। কিন্তু ব্যয়ের সিংহভাগ আসলে হইয়া থাকে হাসপাতালের বাহিরে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share:

স্বাস্থ্য বিমার কার্যকারিতা লইয়া ফের প্রশ্ন উঠিল। গুজরাত, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশ, ভারতের এই তিনটি রাজ্যে বারো শতেরও অধিক পরিবারে সমীক্ষা করিয়া গবেষকরা দেখিয়াছেন, স্বাস্থ্য বিমা থাকা সত্ত্বেও ছাব্বিশ শতাংশ পরিবার চিকিৎসার খরচ জুগাইতে গিয়া আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত হইয়াছে, টাকার অভাবে তাহাদের অতি-প্রয়োজনীয় ব্যয়ও কমাইতে বাধ্য হইয়াছে। তুলনায় বিমা নাই, এমন আঠাশ শতাংশ পরিবারও একই সঙ্কটে পড়িয়াছে। কারণটি দুর্বোধ্য নহে। চিকিৎসার ব্যয়ের অধিকাংশই বিমার অন্তর্গত নহে, তাই বিমা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত হইয়া পড়ে রোগীর পরিবার। গবেষকদের সিদ্ধান্ত, স্বাস্থ্য বিমা থাকিলে সুচিকিৎসা পাইবার সুযোগ বিশেষ বৃদ্ধি পায় না, আর্থিক ঝুঁকিও কমিবার ততটা সম্ভাবনা নাই। স্বাস্থ্যবিমার এই সীমাবদ্ধতা পূর্বেও ধরা পড়িয়াছে। নূতন সমীক্ষা তাহা ফের প্রতিষ্ঠা করিল। বিমা কেবল হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন রোগীর খরচ বহন করে। কিন্তু ব্যয়ের সিংহভাগ আসলে হইয়া থাকে হাসপাতালের বাহিরে। বহির্বিভাগে রোগী দেখাইতে এবং ঔষধ কিনিতে যে খরচ হয়, তাহাতেই পরিবারগুলি দারিদ্রে পতিত হয়। সমীক্ষা দেখাইতেছে, বেসরকারি বিমায় হাসপাতালের খরচ হয় অধিক। কিন্তু বেসরকারি বিমা অধিক আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে, এমন নহে। প্রধান কথাটি এই যে, চিকিৎসাজনিত ব্যয়ের ফলে আর্থিক সঙ্কট হইতে বাঁচাইবার উপায় হিসাবে বিমাকে প্রাধান্য দিলে তাহা ভুল হইবে। আক্ষেপ, এমন ভ্রান্ত নীতিই গ্রহণ করিয়াছে কেন্দ্র। ‘প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা’-টির অধীনে আরও অধিক নাগরিকের জন্য আরও অধিক টাকার স্বাস্থ্যবিমা করিবার অঙ্গীকার করা হইয়াছে। সাম্প্রতিক বাজেটে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সরকার স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম বাবদ চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করিয়াছে। তাহার অর্ধেকও বরাদ্দ করে নাই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির উন্নয়নের জন্য।

Advertisement

অথচ অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা বরাবর দাবি করিয়াছেন, দরিদ্র রোগীর সুরক্ষার শ্রেষ্ঠ উপায়— উন্নত সরকারি চিকিৎসা। এই বিষয়ে তাঁহাদের প্রত্যয়ের কারণ, বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশে এই নীতি কাজ করিয়াছে, হাতে-কলমে প্রমাণ মিলিয়াছে। ব্রাজ়িল, তাইল্যান্ডের মতো দেশ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নিরিখে যেগুলি ভারতের সঙ্গে তুলনীয়, সেগুলি সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আধুনিক এবং তৎপর করিয়া সুফল পাইয়াছে। মৃত্যুহার কমিয়াছে, নানা রোগের প্রকোপও নিয়ন্ত্রিত হইয়াছে। ভারতের নানা রাজ্যেও স্বাস্থ্যের সূচকে হেরফের রহিয়াছে। দক্ষিণের রাজ্যগুলির স্বাস্থ্যসূচক উন্নত, যাহার অন্যতম কারণ রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় অধিক বিনিয়োগ। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারও স্বাস্থ্য বিমার পাশাপাশি, সরকারি হাসপাতালে অধিক শয্যা, বিনা খরচে ঔষধ এবং পরীক্ষার উপর জোর দিয়াছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যচিত্রে তাহার কী প্রতিফল হইয়াছে, সেই বিচার করিবেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু নীতির দৃষ্টিতে ইহা যথাযথ সিদ্ধান্ত, সন্দেহ নাই।

আক্ষেপ, এই রাজ্যেও প্রাথমিক চিকিৎসা উপেক্ষিত। সরকারি ব্যবস্থার মধ্যেও বৃহৎ হাসপাতাল, সুপারস্পেশালিটি চিকিৎসার প্রতি রাজ্য সরকারের নজর কিছু অধিক। গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে সক্রিয় এবং সক্ষম করিলে উপরের স্তরের হাসপাতালগুলির উপর চাপ কমিত। রোগীর হয়রানি কমিত, গ্রামীণ চিকিৎসকের অপচিকিৎসা কমিত, সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগের প্রকোপ এবং মৃত্যুহার কমিত, কর্মদিবস বাড়িত। ফলে সরকার ও নাগরিক, উভয়েরই চিকিৎসার খরচ কমিত। প্রাথমিক চিকিৎসার উন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্য প্রকল্পে সংবৎসর কার্যসূচির যথাযথ পালন, এই দুইটির প্রয়োজন সর্বাধিক। অর্থনীতির দৃষ্টিতেও স্বাস্থ্যবিমা এইগুলির সমান গুরুত্ব পাইতে পারে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement