Editorial News

বিতর্কের মোড়টা কিন্তু ঘুরে গিয়েছে

রাজনৈতিক অবস্থান বা দৃষ্টিকোণ থেকেই এখন অধিকাংশ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে। সে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুবিধাজনক অবস্থানে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩১
Share:

—ফাইল চিত্র।

জটিলতাটা প্রশাসনিক। পশ্চাৎপটে যা-ই থাক, কেন্দ্রীয় প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্ঘাতের জেরেই আজ গোটা দেশের নজর কলকাতার দিকে। প্রশাসনিক স্তরে তৈরি হওয়া এই সঙ্কটকে অনেকে সাংবিধানিক সঙ্কটও বলছেন। কিন্তু সঙ্কটটা এখন দ্বিতীয় সারিতে চলে গিয়েছে। সামনে চলে এসেছে রাজনীতি। সাংবিধানিক নিক্তিতে আর মাপা হচ্ছে না ঘটনাপ্রবাহটাকে। রাজনৈতিক অবস্থান বা দৃষ্টিকোণ থেকেই এখন অধিকাংশ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে। সে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুবিধাজনক অবস্থানে।

Advertisement

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত বিপুল অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে সে তদন্তে সিবিআই-এর প্রবেশ। বেশ কয়েকটা বছর কেটেছে তার পরে, কিন্তু তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। সম্প্রতি তৎপরতা ফের বেড়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির। একটি চলচ্চিত্র প্রযোজক সংস্থার কর্ণধার কলকাতা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনারকেও বেশ কিছু দিন ধরেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। কারণ কলকাতার বর্তমান পুলিশ কমিশনার-ই এই অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছিলেন, সে সময়ে গঠিত হওয়া বিশেষ তদন্তকারী দলের প্রধান তিনিই ছিলেন। সেই বিশেষ তদন্তকারী দল এমন অনেক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছিল, যা পরে সিবিআই-কে হস্তান্তর করা হয়নি— সিবিআইয়ের দাবি অন্তত সে রকমই। সেই মর্মেই কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা সিবিআই-এর। কিন্তু বেনজির ভঙ্গিতে সেই চেষ্টা ভেস্তে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

সঙ্ঘাত তা হলে কার সঙ্গে কার? আপাতদৃষ্টিতে সিবিআই-এর সঙ্গে কলকাতা পুলিশের। অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রাজ্য সরকারের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের স্বর আকাশে তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ সফল ভাবেই প্রতিভাত করলেন যে, আসলে কোনও প্রশাসনিক সঙ্কট এটা নয়, আসলে এর নেপথ্যে রয়েছে এক বড়সড় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

কোনও অভিযোগ ছাড়াই হাওয়ায় ভেসে তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছিল, এমন নয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্তের সূচনা। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআইয়ের প্রবেশ। সে দিক থেকে দেখলে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব ধোপে টেকে না।

কিন্তু বিতর্কের অন্য একটা প্রান্তও তো রয়েছে। সেই প্রান্তে দাঁড়িয়ে তাকালে দেখা যায় যে, বছরের পর বছর কাটছে, কিন্তু সিবিআই তদন্ত শেষ করতে পারছে না। দেখা যায় যে, কোনও নির্বাচন এলেই সিবিআই একটু বেশি তৎপর হয়ে উঠছে।

আরও পড়ুন: মমতাকে রাস্তার লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনা খুব বড় ভুল হল না তো? চিন্তায় বিজেপি

টানাপড়েন অনেক দিন ধরেই বাড়ছিল। এ বার তা তুঙ্গে পৌঁছল। প্রশাসনিক সঙ্ঘাত রূপ নিল দেশজোড়া রাজনৈতিক দ্বৈরথে। সে দ্বৈরথের এক প্রান্তে বিজেপি প্রায় একা। অন্য প্রান্তে তৃণমূলের পাশে কংগ্রেস-সহ প্রায় সবক’টা বিরোধী দল।

এমন এক সন্ধিক্ষণে সহযোগী অর্থাৎ এনডিএ-র অন্য শরিকদের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়াটা জরুরি ছিল বিজেপির জন্য। কিন্তু শরিকরাও খোলাখুলি বিজেপি সমর্থনে এগিয়ে এল না। এই টানাপড়েনে অতএব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রই এগিয়ে রয়েছেন আপাতত।

সঙ্ঘাতটা প্রশাসনিক কি না, সঙ্কটটা সাংবিধানিক কি না, এই সঙ্কটের জন্য দায়ী কে বা কারা— এ সব নিয়ে বিতর্ক এখন চলবেই। কিন্তু এই সব বিতর্ক ঈষৎ গৌণ হয়ে গিয়ে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের তত্ত্বটাই যে মুখ্য আলোচ্য হয়ে উঠেছে, তা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই। এ-ও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নাই বিতর্কের মোড়টা ঘুরিয়ে দিল। শাসক ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলে আচমকা পুরনো লড়াকু ভাবমূর্তিতে ফিরলেন মমতা, শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফিরলেন রাজপথের আশ্রয়ে। শাসক মমতার চেয়ে এই মমতা যে অনেক বেশি অপ্রতিরোধ্য প্রতিপক্ষকদের কাছে, এ দেশের রাজনীতি তা ভাল ভাবেই জানে। অতএব এই টানাপড়েনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের আবার অনেক কিছুই নতুন করে ভাবা শুরু করতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement