Newsletter

বিপজ্জনক এক নকশার আভাস মিলছে

সাধ্বী প্রজ্ঞা এ বার বললেন, ‘‘বাবরি মসজিদ ভেঙে বেশ করেছি।’’ অর্থাৎ প্রথম বিতর্কিত মন্তব্যের রেশটা কাটতে দিলেন না। আবার একটা মারাত্মক মন্তব্য করে বসলেন। এই মন্তব্যের জন্য নির্বাচন কমিশন নোটিস ধরিয়েছে সাধ্বীকে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪৯
Share:

সাধ্বী প্রজ্ঞা। ছবি পিটিআই।

একটা নকশা যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমশ। ভোপাল আসনে সাধ্বী প্রজ্ঞাকে প্রার্থী করার যে সিদ্ধান্ত বিজেপি নিয়েছে, শুধুমাত্র ভোপাল বা শুধুমাত্র সেখানকার কংগ্রেস প্রার্থী দিগ্বিজয় সিংহের কথা মাথায় রেখে সম্ভবত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতটা অনেক বৃহৎ বলে প্রতীত হচ্ছে এ বার।

Advertisement

ভোপালের বিজেপি প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষিত হওয়ার পরে প্রথম বার সাধ্বী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর গোটা দেশের নজরটা নিজের দিকে টানলেন কী ভাবে? টানলেন দেশের জন্য শহিদ হওয়া পুলিশকর্তা হেমন্ত করকরে সম্পর্কে এক চূড়ান্ত অসংবেদনশীল মন্তব্য করে। সাধ্বীর সে মন্তব্যকে বিজেপি অনুমোদন করেনি, দূরত্ব বহাল রেখেছিল। কিন্তু সাধ্বীকে ভর্ৎসনা করা হয়নি দলের তরফ থেকে বিন্দুমাত্র। এবং তার পরে আরও বড় বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে নরেন্দ্র মোদী জোর গলায় সওয়াল করেছিলেন সাধ্বীকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্তের পক্ষে।

২৬/১১ জঙ্গি হামলার মোকাবিলা করতে গিয়ে শহিদ হয়েছিলেন মুম্বই পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখার তদানীন্তন প্রধান হেমন্ত করকরে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে নেমে জঙ্গির গুলিতে প্রাণ দিলেন যে পুলিশকর্তা, তাঁকেই ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দিলে দেশ কতটা আহত হয়, তা সাধ্বী প্রজ্ঞা সম্ভবত জানেন না। তাঁর শাপেই করকরের ‘সর্বনাশ’ হয়েছে বলে সাধ্বী যখন মন্তব্য করেন, তখন ভারত কতটা লজ্জিত বোধ করে, সাধ্বী সম্ভবত বোঝেন না। কিন্তু যে নরেন্দ্র মোদীকে আমরা দেশভক্ত হিসেবে চিনি, তিনি তো নিশ্চয়ই সে সব জানেন এবং বোঝেন। হেমন্ত করকরে সম্পর্কে সাধ্বী যা বলেছেন, সে বিষয়ে কোনও খেদ প্রকাশ না করে অন্য এক প্রসঙ্গে সাধ্বীর পক্ষে জোরদার সওয়াল সেই নরেন্দ্র মোদী কী ভাবে করলেন, প্রথমে বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছিল বোধ হয় অনেকেরই। কিন্তু এখন আর বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সাধ্বী প্রজ্ঞা এ বার বললেন, ‘‘বাবরি মসজিদ ভেঙে বেশ করেছি।’’ অর্থাৎ প্রথম বিতর্কিত মন্তব্যের রেশটা কাটতে দিলেন না। আবার একটা মারাত্মক মন্তব্য করে বসলেন। এই মন্তব্যের জন্য নির্বাচন কমিশন নোটিস ধরিয়েছে সাধ্বীকে। কিন্তু ওই নোটিসে তিনি আদৌ সতর্ক হবেন বলে মনে হচ্ছে না আর। কারণ এই কথাগুলো মুখ ফস্কে বেরিয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে না। হিসেব কষেই বিতর্কের জন্ম দেওয়া হচ্ছে বলেই প্রতীত হচ্ছে ক্রমশ বরং।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

গেরুয়া সন্ত্রাস তত্ত্বের অবতারণা যাঁরা করেছেন, তাঁদেরকে যোগ্য জবাব দিতেই সাধ্বী প্রজ্ঞাকে দেশের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে বলে নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই মন্তব্য করেছেন। গেরুয়া সন্ত্রাস বলে আসলে কিছুই হয় না, এই তত্ত্বের অবতারণা যাঁরা করেছেন, তাঁরা আসলে হিন্দুদের অপমান করেছেন— নরেন্দ্র মোদী এই বার্তাই চারিয়ে দিতে চেয়েছেন। মোদীর সেই সওয়াল, সেই সওয়ালের পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সাধ্বীর আর এক বিতর্কিত মন্তব্য বাবরি ধ্বংস প্রসঙ্গে— সব দেখে-শুনে মনে হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে গৈরিক শিবির। সচেতন ভাবেই সম্ভবত কট্টর হিন্দুত্বের হাওয়াটা তোলার চেষ্টা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ‘বাবরি ভেঙে বেশ করেছি’, ফের বিতর্কিত মন্তব্য সাধ্বীর, নোটিস ধরাল কমিশন

কট্টর হিন্দুত্বের কণ্ঠস্বর বিজেপির বহু পুরনো অস্ত্র। এ কণ্ঠস্বরকে কখনও সুপ্ত রাখা হয়। প্রয়োজন বুঝে কখনও আবার স্বরটাকে তুঙ্গে তোলা হয়। এই কট্টর হিন্দুত্ব বেশ কিছু নির্বাচনে বিজেপি-কে সাফল্য এনে দিয়েছে। এমন এক অস্ত্রকে কি এ বারের দেশজোড়া ধুন্ধুমারে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় রাখা সম্ভব বিজেপির পক্ষে!

অতএব উন্নয়ন, রাষ্ট্রীয় শৌর্য, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি ইস্যুকে এ বার সম্ভবত একটু পিছনে ঠেলে দেওয়া হতে পারে। বড় আকারে সামনে আনা হতে পারে কট্টর হিন্দুত্বকে। গেরুয়া সন্ত্রাস তত্ত্বের অবতারণা করার অর্থ হল হিন্দুদের অপমান করা— এই মন্তব্যের মধ্যেই সেই চেনা কণ্ঠস্বরের বা চেনা কট্টরবাদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। বাবরি মসজিদ ধ্বংস প্রসঙ্গে সাধ্বীর গর্জনে তো আরও স্পষ্ট এবং প্রকাশ্য ভঙ্গিতেই সে কণ্ঠস্বর ধরা দেয়।

উন্নয়ন ইস্যুতে ভরসা রেখেই এ বারের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিল বিজেপি। আড়াল-আবডাল থেকে কট্টরবাদ উঁকি দিচ্ছিল না, এমন নয়। কিন্তু উন্নয়ন ইস্যুতেই বেশি ভরসা রাখতে চেয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। সাধ্বী প্রজ্ঞা পর্বের অবতারণা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, উন্নয়নের আখ্যান শুনিয়েই বৈতরণী পেরনো যাবে, এমন আস্থা আর বিজেপি নেতৃত্বের নেই। অতএব তূণীর থেকে বেরিয়ে এল দলের জন্মলগ্ন থেকে সঙ্গে থাকা হাতিয়ারটা।

কোনও ধরনের কট্টরবাদই যে সমর্থনীয় নয়, সে কথা বলাই বাহুল্য। অতএব, যে নকশার আভাস মিলছে, তা কোনও সুবাতাস বয়ে আনবে না। আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বরং। যে রকম অনিয়ন্ত্রিত কথাবার্তা বলা শুরু হয়েছে, তা না থামলে সমূহ বিপদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement