অগ্নিপরীক্ষা শুধু নির্বাচন কমিশনের কিন্তু নয়। আজ অগ্নিপরীক্ষার সামনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলোও। ছবি: এপি।
আরও এক দফা অগ্নিপরীক্ষার মুখে নির্বাচন কমিশন। অগ্নিপরীক্ষার মুখে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলো তথা রাজনৈতিক নেতৃত্বও।
পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের নানা প্রান্তে চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ আজ। যে সব আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে আজ, রাজনৈতিক তাৎপর্যে এবং সংবেদনশীলতায় সেগুলোঅত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বহরমপুর বা আসানসোলের মতো রাজনৈতিক হেভিওয়েটদের আসনে ভোটগ্রহণ হবে আজ। বীরভূমের মতো উত্তেজনাপ্রবণ জেলায় ভোট নেওয়া হবে। শাসক ও বিরোধীর মধ্যে প্রবল টানাপড়েনের জেরে শিরোনামে উঠে আসা জেলানদিয়াতেও ভোটগ্রহণ আজই। ২০১৮ সালে হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনের স্মৃতি ফিকে নাহয়ে গিয়ে থাকলেকারওরই বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, এই সব অঞ্চলে ভোটগ্রহণে অশান্তির আশঙ্কা কতখানি। আসানসোল, বোলপুর, বীরভূমের মতো এলাকাগুলো থেকে দশকের পর দশক ধরেভোটে কারচুপির অভিযোগআসে। সে প্রবণতা দিন দিন বেড়েছে বই কমেনি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওইসব অঞ্চলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কারচুপি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ এসেছিল রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, বহরমপুর থেকেও। অতএব, এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করা এই নির্বাচনে অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হওয়া আজ গণতন্ত্রের স্বার্থেই আবশ্যিক।
পঞ্চায়েত নির্বাচনেরাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল এই সব অঞ্চল। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দিকেও একই রকম অভিযোগের আঙুল উঠবে না তো?এই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এ বারের ভোটে এই অঞ্চলের পরিস্থিতির সংবেদনশীলতা বুঝে নেওয়ার চেষ্টানির্বাচন কমিশন করেনি, এমনটা বলা যাবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী আনানো হয়েছে। প্রায় সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনও করা হচ্ছে।বীরভূম জেলা তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সর্বাধিনায়ক অনুব্রত মণ্ডলকে নজরবন্দিত্ব ও অন্য কিছু বিধি নিষেধের মধ্যে রাখা হয়েছে।তবু এই অঞ্চলে নির্বাচনী সন্ত্রাসের ইতিহাসটাই নিশ্চিন্ত হতে দিচ্ছে না।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন: বাড়ছে নিরাপত্তা, চতুর্থ দফায় ৫৬১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী
আবার বলছি, অগ্নিপরীক্ষা শুধু নির্বাচন কমিশনের কিন্তু নয়।আজ অগ্নিপরীক্ষার সামনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলোও। নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা বা নির্বাচনকে অবাধ রাখার যাবতীয় বন্দোবস্ত ধ্বংস করে দেওয়ার অভিযোগটা কিন্তু রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধেই ওঠে।তার নেপথ্যে যে রাজনৈতিক নেতৃত্বেরপ্রশ্রয় থাকে, সে কথাও বলাই বাহুল্য। দিনের পর দিন এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে পশ্চিমবঙ্গেরগণতন্ত্র যেসাংঘাতিক ভাবে বিপন্ন হয়ে পড়বে, তা বোঝার জন্য খুব বেশি দূরদৃষ্টির প্রয়োজন হয় না। অতএব, গত বছর হওয়াপঞ্চায়েত নির্বাচনে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছিল বাংলাকে, এ বার আর কিছুতেই সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। পুনরাবৃত্তি ঘটলেগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর থেকেনাগরিকদের আস্থা চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে দায়টা কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপরেই বর্তাবে। অতএব, গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতার পরীক্ষা আজ দিতে হবে এ রাজ্যের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে।