সিঙ্গুরের জমিতে শস্যের বীজ ছড়িয়ে দশ বছর পরে চাষের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।—নিজস্ব চিত্র।
বৃত্তটা সম্পূর্ণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্পূর্ণ হল ঠিক দশ বছরের মাথায়। কৃষকের যে জমি বেদখল হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই রাজ্যের রাজনৈতিক বাঁক ফেরানো আন্দোলন করেছিলেন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সেই জমিই কৃষকের হাতে তুলে দিলেন যখন, সংশয় নেই, সেই মুহূর্ত তৃপ্তিরই ছিল। সেই মুহূর্তের মধ্যে গত দশ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসও ছিল। সাক্ষী থাকার অধিকার ছিল যার, সাক্ষী থাকলও সে। সিঙ্গুর।
এ যাবৎ ইতিহাস-বৃত্তান্ত তাঁর পক্ষে তৃপ্তিরই। কিন্তু এর পরেই যে তাঁর সামনে প্রকৃত চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, সে কথা সবচেয়ে বেশি বোঝেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। কৃষকের হাতে জমি তুলে দেওয়ার মধ্যে তাৎপর্য অপরিসীম, সেখানে অন্য সব কিছুকে ছাপিয়ে আছে হৃদয়প্লাবী আবেগ। কিন্তু কৃষকের যে সন্তান মাঠে লাঙলের পরিবর্তে পকেটে গোঁজা কলমকেই বেশি ধরতে চাইছেন, মাঠের কাদার বদলে অফিসের চাকরিতেই বেশি আগ্রহী হচ্ছেন, তাঁদের আশা-স্বপ্ন-আকাঙ্খাকে ছুঁতে পারাই এখন মুখ্যমন্ত্রীর শিরঃপীড়ার প্রধান কারণ। তার জন্য দরকার বিপুল কর্মসংস্থান, অতএব অবধারিত ভাবে শিল্পায়ন।
আশার কথা, এই সারসত্যটা উপলব্ধি করছে সরকার। সেই লক্ষ্যে উদ্যোগীও হচ্ছে। টাটাদের প্রতি ছুঁতমার্গকে ঝেড়ে ফেলে তাদের সঙ্গে বার্তালাপ চালু করার মধ্যে তারই ইঙ্গিত। বিপুল প্রত্যাশা জাগিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন মমতা। প্রত্যাশা পূরণের দায়ও তাঁরই।
সিঙ্গুরের জমি বেদখল হয়ে গিয়েছিল। এ রাজ্যে শিল্পের সম্ভাবনার জমি ধীরে ধীরে বহু বছর ধরেই বেদখল হয়েছে। সিঙ্গুরের জমিতে শস্যের বীজ ছড়িয়ে দশ বছর পরে চাষের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার কিন্তু শিল্পের জমিতেও বীজ ছড়ানোর পালা। কৃষকের সন্তানও সেই স্বপ্ন দেখছেন।