Quota System

সম্পাদক সমীপেষু: পুরনো বিধান

পড়শি দেশে সম্প্রতি সংরক্ষণ নিয়ে নিদারুণ ঘটনা ঘটে গেল, সেখানকার রাজনীতিতেও আকস্মিক পট পরিবর্তন হল। আমাদের এই তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশে এমন বিপ্লব কি আশা করা যায় না?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৪:২৯
Share:

ভীমরাও রামজি আম্বেডকর।

‘গোষ্ঠী, না ব্যক্তি’ (২৪-৮) সম্পাদকীয় অনুষঙ্গে কিছু কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছি। আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, এত বছর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও আমরা সেই সংবিধানের পুরনো বিধান নিয়ে পড়ে আছি। আম্বেডকর (ছবি) স্বাধীনতার দশ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ চালু করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু রাজনীতির চক্রে থাকা কোনও নেতাই আজ পর্যন্ত সংরক্ষণের প্রয়োজন বাস্তবে কতটা এবং কেন, তা অনুধাবন করার চেষ্টা করেননি। তা হলে তো ভোটব্যাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার চেয়ে এ দেশে আর কী গুরুত্ব পেতে পারে? সুতরাং, অবস্থা অপরিবর্তিত থেকেই যায়। সাধারণ শ্রেণি ‘কোটা সিস্টেম’-এর ফাঁদে পড়ে চিরকালই অন্ধকারে ঘুরপাক খাবে।

Advertisement

অন্তহীন সংরক্ষণ বজায় রাখার তাগিদ সব রাজনৈতিক দলের মধ্যেই রয়েছে। সম্পাদকীয়তে তাই যথাযথ ভাবেই লেখা হয়েছে, স্বাধীনতার সাত দশকের পরেও গোষ্ঠী-পরিচয়কেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেখানে ব্যক্তি-পরিচয় বা ব্যক্তির সঙ্কট কখনওই গুরুত্ব পায়নি। অর্থনৈতিক ভারসাম্যের কথা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিবিদ বললেও, কেবল ভোট-রাজনীতির জন্য কোনও দলই তা গ্রাহ্য করেনি। প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় সংরক্ষণ বা কোটা সিস্টেমের সুবিধা নিয়ে এক-একটি পরিবারে একাধিক চাকরিরত মানুষ রয়েছেন, অথচ সংরক্ষণের ফাঁসে পড়ে সাধারণ বর্গের ব্যক্তিরা আজ হতাশায় নিমজ্জমান।

পড়শি দেশে সম্প্রতি সংরক্ষণ নিয়ে নিদারুণ ঘটনা ঘটে গেল, সেখানকার রাজনীতিতেও আকস্মিক পট পরিবর্তন হল। আমাদের এই তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশে এমন বিপ্লব কি আশা করা যায় না? গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আলোচনার মাধ্যমে নতুন দিশার সন্ধান নিয়ে সম্পাদক যে আশা ব্যক্ত করেছেন, তাকে পূর্ণ সমর্থন করি।

Advertisement

শ্যামলজিৎ সাহা, চুঁচুড়া, হুগলি

চাই উপশ্রেণি

দেশে তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্ত ব্যক্তিদের সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় চলতি সংরক্ষণ নিয়ে ১ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য ছিল, তফসিলি জাতি-জনজাতিভুক্ত সব সম্প্রদায় আর্থ-সামাজিক দিক থেকে সমমান ও সমচরিত্রের নয়। বরং তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। তাই এই পিছিয়ে পড়া প্রান্তিকদের ‘উপশ্রেণি’ হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের জন্য আলাদা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারবে রাজ্যগুলি। অর্থাৎ, সংরক্ষণের মধ্যেই ‘উপশ্রেণি’র জন্য আলাদা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।

বিচারপতিরা মন্তব্য করেছেন, পদ্ধতিগত ও পরিকাঠামোগত বৈষম্যের কারণে তফসিলি জাতি-জনজাতিদের সকলে সুযোগ পেয়ে উপরে উঠে আসতে পারেনি। তফসিলি জাতি-জনজাতির অন্তর্ভুক্ত কোনও আইএএস, আইপিএস, আইআরএস আধিকারিকের সন্তান, আর পঞ্চায়েত এলাকার স্কুলে পড়া কোনও পড়ুয়া, এই দু’জনে সমান সুযোগ পায় না। অথচ, সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্যই সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তাই ‘উপশ্রেণি’ তৈরি করে পিছিয়ে পড়া অংশকে তুলে আনা উচিত সামনের সারিতে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টই প্রশ্ন তুলেছে, সংরক্ষিত গোষ্ঠীদের মধ্যে ‘ক্রিমি লেয়ার’ যারা, তাদের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণের সুযোগ কেন থাকবে? প্রশ্নটি যুক্তিগ্রাহ্য, সঙ্গত। এই ব্যবস্থা সমাজের সার্বিক ক্ষতি করে চলেছে।

কেন্দ্রে এখন সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় তফসিলি জাতির জন্য ১৫ শতাংশ, জনজাতির জন্য সাড়ে সাত শতাংশ কোটা আছে। রাজ্যগুলিতে অবশ্য এই হার ভিন্ন। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়ে সংরক্ষণের এই হার বজায় রেখেই প্রান্তিকদের জন্য নতুন ভাবে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিচার করে, আলাদা ভাবে উপশ্রেণি চিহ্নিত করতে হবে। তার জন্য রাজনৈতিক সততা ও সদিচ্ছার প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলি হয়তো এই খেলায় নিজেদের মতো করে ঘুঁটি সাজানোর চেষ্টা করবে এবং তার ফলে সাম্যের অধিকার মুখ থুবড়ে পড়বে। সংরক্ষণ নিয়ে শীর্ষ আদালতের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা উচিত শাসক ও বিরোধী, সব পক্ষের।

শুভজিৎ বসাক, কলকাতা-৫০

তাণ্ডবের অর্থ

ইদানীং দৌরাত্ম্য-দুষ্কর্মের সমার্থক হয়ে উঠেছে ‘তাণ্ডব’ শব্দটি। ‘হাওড়ায় প্রকাশ্যে তোলাবাজি, মার চিকিৎসক-সহ কয়েক জনকে’ (২৩-৭) প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, নিগৃহীত চিকিৎসক-সহ আক্রান্ত সকলের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালালেও পুলিশের দেখা মেলেনি। সংসদ বাংলা অভিধান-এ ‘তাণ্ডব’ শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে ‘প্রলয়ংকর ব্যাপার’ বা ‘ভয়াবহ ক্রিয়াকলাপ’। আচার্য হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তাঁর বঙ্গীয় শব্দকোষ-এ তাণ্ডব শব্দের এ ধরনের মানে লেখেননি। হিন্দু সঙ্গীতের (ভারতীয় রাগবিদ্যা নয়) প্রামাণিক গ্রন্থ ভরতের নাট্যশাস্ত্র-এ তাণ্ডব নিয়ে একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে, শিব সন্ধ্যাবেলা ‘করণ-অঙ্গহার-রেচক’ সহযোগে নৃত্য করতেন এবং দক্ষযজ্ঞ বিনাশের পরেও যথারীতি নৃত্য করেছিলেন। শিব-শিষ্য তণ্ডুমুনি গীত ও বাদ্যের সঙ্গে শিবনৃত্য যুক্ত করেছিলেন যা তাণ্ডব নামে খ্যাত। ভরতমুনি জানিয়েছেন, সুকুমার শৃঙ্গাররসপ্রধান এই তাণ্ডব নৃত্য সাধারণত দেবস্তুতি যুক্ত হয়। অতএব তাণ্ডব উদ্দাম নৃত্যও নয়। নাট্যশাস্ত্র-এ আরও বলা হয়েছে, শিবসৃষ্ট এই নৃত্য যে করে, সে সব পাপ মুক্ত হয়ে শিবলোকে গমন করে।

এই সময়ে অবশ্য ‘তাণ্ডব’ শব্দটি দুষ্কৃতীদের উন্মত্ত আচরণকে বোঝানোর জন্যই বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, অরবিন্দ নগর, বাঁকুড়া

বিস্মৃত পণ্ডিত

জেমস প্রিন্সেপের ভারতবিদ্যা চর্চায় অবদান প্রসঙ্গে ইন্দ্রজিৎ চৌধুরীর ‘বেনারসে দশ বছর’ (২৫-৮) প্রবন্ধটির পরিপ্রেক্ষিতে আরও এক বিদ্বানের কথা তুলতে চাই। তিনি কমলাকান্ত বিদ্যালঙ্কার। অশোকের শিলালিপি পাঠে কমলাকান্ত প্রিন্সেপকে খুবই সাহায্য করেছিলেন। কিছু বর্ণ তিনিই প্রথম বুঝতে পারেন বলেও মনে করা হয়, আর তাতেই আরও অনেকটা বোঝার রাস্তাও খুলে যায়। কমলাকান্ত ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষক জয়গোপাল বিদ্যালঙ্কারের সহকর্মী। জয়গোপালের সঙ্গেই ১৮২৪ সালে কমলাকান্ত সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তার আগে কলকাতাতেই তাঁর টোল ছিল। ১৮২৭ সালে তিনি মেদিনীপুরের জজ পণ্ডিত হয়ে চলে যান। পরে এক সময় কমলাকান্ত এশিয়াটিক সোসাইটির সঙ্গেই যুক্ত হয়েছিলেন। তাই মনে হয়, প্রিন্সেপকে নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তাঁর সঙ্গেই সম্পর্কিত এবং প্রায় বিস্মৃত এই মেধাবী পণ্ডিতকেও স্মরণ করা যায়। তবে, তাঁর সম্বন্ধে নানা তথ্য নানা জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে। কোনটা সত্য, কোনটা কল্পিত এবং ঠিক কতটা গুরুত্ব তাঁর প্রাপ্য, বোঝা শক্ত। তাই উপযুক্ত পণ্ডিতেরা এগিয়ে এলে ভারত-ইতিহাসের উপকার হবে।

অলখ মুখোপাধ্যায়,কলকাতা-১০৭

চাই শৌচালয়

‘রোগীর স্বাস্থ্য দেখবে কে, হাসপাতালের স্বাস্থ্যেরই ভগ্নদশা’ (২১-৮) প্রসঙ্গে বলি, এ অভিজ্ঞতা গণ শৌচালয়গুলির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। হাসপাতাল, রেল স্টেশন এবং পুরসভা পরিচালিত অধিকাংশ শৌচালয়ে কল থাকে না, থাকলেও জল পড়ে না, মেঝেতে জল পড়ে থাকে, দেওয়ালে পান-গুটখার দাগ, দুর্গন্ধে পূর্ণ— এক কথায় অপরিচ্ছন্নতার নজির অসংখ্য। এর সবচেয়ে বড় শিকার হন কাজের জন্য বাইরে বেরোনো মহিলারা। তাঁরা কম জল পানের জন্য নানা রোগে, অথবা অপরিচ্ছন্ন শৌচালয় ব্যবহারের কারণে সংক্রমণে আক্রান্ত হন।

প্রশান্ত দাস,খলিসানি, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement