lockdown

লকডাউনের পৃথিবী যেন ‘ফ্রোজেন’ ছবির সেই চিরঘুমন্ত শীতের দেশের মতো

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ১৫:৫২
Share:

লকডাউনের বার্মিংহাম যেন রূপকথার ঘুমন্তপুরী—ছবি:লেখক

অবসর পেলে মানুষ সৃষ্টিশীল হয়। কিন্তু সেই অবসর যদি ভয়ের আর অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য হয়, তা হলে মন দুর্বল হয়, কাজে মন বসানো যায় না। ইউ কে-এর অবস্থাও তাই। এখানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এই অতিমারির প্রকোপ থেকে বাদ যাচ্ছে না পাঁচ বছরের বাচ্চাও। ডাক্তার, নার্স থেকে আরম্ভ করে বাস ড্রাইভারদেরও অনেকেই আজ সংক্রামিত।

Advertisement

এই দেশের মানুষ সারাবছরই ঠান্ডা, বৃষ্টি আর কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে স্কুল কলেজ অফিস চালিয়ে যায়। আর তাকিয়ে বসে থাকে কবে ইস্টার হলিডে আসবে। নিজের ক্যারাভান বা ভেহিকেল নিয়ে, না হলে কোনও ক্যারাভান-হলিডে-পার্কে গিয়ে বা কোনও সি বিচ-এ সোনা রোদ গায়ে মেখে এক সপ্তাহের ছুটি কাটাবে।

এই অতিমারি এ বছর ‘সে গুড়ে বালি’ অবস্থা করে দিয়েছে। মুশকিল হচ্ছে বাচ্চাদের বোঝানো। তারা পার্কে যেতে পারছে না, বন্ধুদের বাড়ি স্লিপ-ওভার এ যেতে পারছে না, দাদু-দিদাই বা ঠাম্মি-দাদুর বাড়ি গিয়ে হুল্লোড় করতে পারছে না, বেড়ানোও বাদ, মামাতো-পিসতুতো ভাইবোনদের সঙ্গে ইস্টার এগ হান্ট-ও এ বার হবে না।

Advertisement

আমরা সমস্ত পৃথিবীর মানুষ আজ একসঙ্গে লড়ছি—ছবি:লেখক

২০ মার্চ সন্ধ্যা থেকে ইংল্যান্ডে লকডাউন শুরু হয়েছে। টেক-অ্যাওয়েগুলো এখনও খোলা থাকলেও রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ। স্কুলগুলো আংশিক ভাবে খোলা রাখা হয়েছে হাসপাতালের ফ্রন্টলাইন স্টাফ এবং অন্যান্য কি-ওয়ার্কারদের বাচ্চাদের জন্য। জিম বা সুইমিং পুল বন্ধ। সরকার এর নির্দেশ, সাইকেল বা হাঁটা সংক্রান্ত শরীরচর্চার জন্য দিনে এক বার বেরনো যাবে। ঠিক তেমনই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিষ ও ওষুধপত্র কেনার জন্য বেরনো যাবে। মানুষ বুঝতে পারেনি বিপর্যয় কতটা। তাই হয়তো খানিকটা নিয়মের বাইরে চলে যাওয়া আটকাতে পারেনি সংক্রমণ। অপেক্ষাকৃত শিথিল পরিস্থিতির জন্য আজ মৃতের সংখ্যা ৫০০০ ছুঁই ছুঁই। সংক্রামিতের সংখ্যা ৪৭ হাজারের বেশি।

যেহেতু ৯৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীই বাড়িতে, তাই পড়াশোনা চলছে অনলাইনে বা গুগল ক্লাসরুম এর মাধ্যমে। আর গান বাজনার ক্লাস চলছে স্কাইপ, জুম বা টোনারার ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে।

লকডাউনের শুরুতেই খাদ্যসামগ্ৰী, হ্যান্ড ওয়াশ, হ্যান্ড জেল, টয়লেট টিস্যুর মতো কিছু জিনিসের আকাল তৈরি হয়েছিল। তবে এখন আবার সব স্বাভাবিক। চাল, ডাল , দুধ, মাংস বাড়িতে বসে ডেলিভারি পেতে দু’-তিন সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। কিন্তু সুপারমার্কেটগুলোর যোগান বেশ ভাল এখন। আমি, আমার স্বামী বা ছেলে কেউ গত দু’সপ্তাহ বাইরে যাইনি। বন্ধুদের কাছে ফোনে শুনলাম, দূরত্ব বজায় রেখে এক জন করে স্যানিটাইজড ট্রলি দিয়ে সুপারমার্কেটে ঢোকানো হচ্ছে এবং সুশৃঙ্খল ভাবে মাছ, মাংস, ওয়ার্ল্ড ফুড-সহ প্রতিটি জায়গায় এক জনের বেশি ক্রেতাকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু সমস্যা একটাই, ঘর থেকে বেরতেই ভয় হচ্ছে।

এখানে 'ফারলো' ঘোষিত হয়েছে বেশির ভাগ কাজের ক্ষেত্রে। সরকার থেকে জানানো হয়েছে, কাজ না করলেও প্রত্যেকে তার বেতনের ৮০ শতাংশ পাবে ঘরে বসেই। এই ব্যবস্থা আপাতত ৬ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে মানুষ কাজে ফিরতে না পারলে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই ব্যবস্থা মে বা জুনেও বজায় থাকতে পারে। যারা ছোটখাটো দোকানের কর্মচারী বা ‘দিন-আনি-দিন-খাই’ ভাবে জীবন যাপন করেন, তাঁরা এতে উপকৃত হবেন। সরকার থেকে আরও বলা হয়েছে, না পারলে হাউস মর্টগেজ, কাউন্সিল ট্যাক্স-ও কিছু দিনের মতো স্থগিত রাখা যাবে। বাড়ি কেনাবেচা বা নতুন বাড়িতে বসবাস শুরুর ক্ষেত্রে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বাড়ির মালিকদের বলা হয়েছে, ভাড়াটেদের ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়াতে। সরকার ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি বৃদ্ধবৃদ্ধাদের কেয়ার হোমগুলির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস এর যোগান দিয়ে এবং ছেলে-মেয়ে-নাতি- নাতনিদের সঙ্গে ভিডিও চ্যাট-এ সাহায্য করছে এই সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা।

আজকের এই পৃথিবী যেন সেই ‘ফ্রোজেন’ এর গল্পের মতো, যেখানে আনার দেশ ‘এরেন্ডাল’ চির-ঘুমন্ত শীতের দেশে পরিণত হয়েছিল। আর তার থেকে উদ্ধার পেতে আনা আর ক্রিস্টফকে লড়তে হয়েছিল অনেক। করোনাভাইরাস থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য সমস্ত পৃথিবীর কাছে এ-ও এক বড় লড়াই। তবে আশার কথা এটাই, আমরা সমস্ত পৃথিবীর মানুষ আজ একসঙ্গে লড়ছি। তাই আজ হোক কাল হোক এই অন্ধকারের সামিয়ানা ছিঁড়ে আমরা পৃথিবীকে আবার আলোয় ভরিয়ে দিতে পারব।

অন্বেষা চট্টোপাধ্যায় (চট্টরাজ), শিক্ষিকা, বার্মিংহাম, ইংল্যান্ড

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন,feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement