আমপান-এর তাণ্ডবে আমার বাড়ির কাছেই একটি প্রাচীন বটগাছ মাটি থেকে উপড়ে একটি ফ্ল্যাটবাড়ি এবং একটি অতি পুরনো বাড়ির ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। পরের দিন থেকে অসংখ্য তরুণ-তরুণী এবং অতি উৎসাহী মানুষের মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি হয়েছে গাছটির দুর্দশার ছবি।
অথচ বিগত ১৪-১৫ বছর ধরে গাছটির প্রতি চূড়ান্ত অবহেলা অত্যাচার দেখে এসেছি। গাছের তলায় প্রতিনিয়ত জমা হতে দেখেছি সংসারের ভাঙা-পরিত্যক্ত জিনিসপত্র, নোংরা আবর্জনা, এমনকি বাথরুমের ভেঙে যাওয়া নোংরা প্যান। এ ছাড়াও অনেক পুজোর শেষে গাছের গোড়াটাই হয়ে উঠেছিল প্রতিমা বোঝাই করার স্থান। গাছটিতে দড়ি বেঁধে, পেরেক পুঁতে নানা ধরনের বিজ্ঞাপনেরও অন্ত ছিল না।
যাঁরা আজ এত ভালবেসে, উৎসাহ ভরে ছবি তুললেন এবং নিশ্চয়ই পরিচিত জনের হোয়াটসঅ্যাপে ছবি পাঠালেন দরদ ভরে, গাছটি বেঁচে থাকতে কোনও দিনও কি গাছের ছবি পাঠিয়ে বলেছিলেন, আমার শহরে আমার সঙ্গেই আমার পাড়ায় বাস করে এক প্রাচীন বট, যে আমায় বর্ষায় কচি পাতার সুঘ্রাণ দেয়, দেয় নিত্য নতুন পাখির কাকলি?
শুধু আমার পাড়ার গাছটি কেন, শহর জুড়ে অসংখ্য গাছ সম্পর্কেও আজ এই কথা প্রযোজ্য। এই গাছেদের মৃতদেহ দেখে ‘ইস’ বলার আগে আমরা যেন মনে রাখি, তাদের প্রতি আমাদের যত্ন করার কর্তব্যটা ভুলে, শুধু এদের পতনের সময় দীর্ঘশ্বাস ফেললে হবে না।
পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৫০
এ কেমন ছবি!
২২-৫ তারিখে প্রথম পাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত দুই যুবকের ছবি যে ভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তা বাঞ্ছিত নয়। অনুরোধ করব, এ ধরনের ছবি অন্তত প্রথম পাতায় না প্রকাশ করার জন্য। এটা যে কোনও সুস্থ মানুষকে মানসিক আঘাত দেয়।
অশোক দাশ
রিষড়া, হুগলি
লজ্জাকর
২২-৫ তারিখের প্রথম পাতার ছবিতে, জলমগ্ন মৃত যে ব্যক্তির দেহ বাঁশ দিয়ে ঠেলা হচ্ছে, তাঁর বন্ধু বা আত্মীয়দের যে এ ছবি চোখে পড়তে পারে— এ সব কি ছবিটা ছাপার সময় ভাবা হয়নি? যুদ্ধে মৃত সৈনিকের ছবি হলে সে এক কথা (যদিও তা নিয়েও তর্কের অবকাশ আছে)। সেটাকে ‘মৃত্যুবরণ’ বলা যায়— কর্তব্যের খাতিরে কারও মহান আত্মত্যাগের, গৌরবের প্রমাণ। কিন্তু একটা নিছক দুর্ঘটনা, যা কোনও ভাবেই অভিপ্রেত নয়, যা কোনও বীরকে মহিমান্বিত বা দোষীকে লজ্জিত করে না, তার বর্ণনার সঙ্গে এ রকম ছবি দেওয়া কি ঠিক?
ধীমান চক্রবর্তী
ইলিনয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
শেষ নেই
আমপান যাওয়ার পর ১০০ ঘণ্টার বেশি কেটে গেলেও, চার পাশের ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি বা শেকড় ওপড়ানো গাছ সরাতে পারলাম না। বিদ্যুৎ নেই। জল নেই, ভরসা খাল-বিল-পুকুর। কলেরা-আন্ত্রিক কেবল সময়ের অপেক্ষা। মহামারির ফলে প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া অর্থ নিয়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে চাইলে, ব্যাংক আবার বলছে: লিঙ্ক নেই।
প্রণব বর্মণ
সুতাহাটা, পূর্ব মেদিনীপুর
অন্য শহরে
ঝড়ের পর কী করলে শহর ছন্দে ফিরত তাড়াতাড়ি? পৃথিবীর কোনও শহরেই একশো বছরে এক বার আসা বিপর্যয়ের জন্য অতিরিক্ত কর্মী ও যন্ত্রপাতি তৈরি থাকে না। অন্য দেশে, এই ধরনের সঙ্কটে, আগে থেকে দূরের শহরের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের নিয়ে আসা হয় যন্ত্রপাতি সহ। ঝড় থামলেই তাঁরা স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমে পড়েন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে। যদি এমনটা করা সম্ভব হয়, কলকাতার বিপদে, দিল্লি মুম্বই বেঙ্গালুরু থেকে বিদ্যুৎকর্মীরা আসবেন ও তৈরি থাকবেন, তা হলে সমস্যা অনেক কমে যেতে পারে। গাছ কাটার ক্ষেত্রেও, অন্য শহর থেকে মেশিন ও কর্মীদের আনিয়ে রাখলে, অনেক সুবিধে হত।
মানস রায়
ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
কথা বলুন
আমার এলাকায় আমপানের ১০১ ঘণ্টা পর রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাব্যক্তিরা এসে বলেন, এ পাড়ায় এইটুকু কাজ হবে মাত্র, বাকিটুকুর জন্য কেব্ল আনতে হবে। জলের অভাব পাঁচ দিন ধরে, বাচ্চা-বুড়ো, রোগী নিয়ে ঘর করছে লোকজন। পাঁচ দিনে কোন এলাকার কী প্রয়োজন, তার একটা ‘অ্যাসেসমেন্ট’ও কি করে উঠতে পারেনি স্থানীয় কার্যালয়গুলি? এক কর্তা বলে গেলেন, যার সার্ভিস লাইন ছিঁড়েছে, ওটা তেমনই থাকবে। এঁরা এলাকায় এসে লোকজনের সঙ্গে ঠিক করে কথা বলেন না, কথা বলেই যে ক্ষোভ অনেকটা প্রশমিত করা যায়, বোঝেন না।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা
কলকাতা-১৫৪
কলকাতা বনাম
আমপানের পরে চার দিকে একটা রব উঠেছে যে, জাতীয় সংবাদমাধ্যমে আমপানের খবর সে ভাবে নেই। ভারতের কাছে বাংলা উপেক্ষিত। এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু ভাল করে ভেবে দেখতে গেলে, আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও কি এ রকম একটা উপেক্ষার বাতাবরণ নেই? একটা স্পষ্ট বিভাজনরেখা? কলকাতা বনাম বাংলা? আমরা কাগজে অভাব-অভিযোগের বেশির ভাগ প্রতিবেদন ও ছবি কি কলকাতা সম্পর্কে দেখছি না? সেই তুলনায়, জেলার খবর ও ছবি কি অনেকটা কম নয়?
সৈকত হাজরা
সালকিয়া, হাওড়া
শাঁখের করাত
‘ভোটের অঙ্কেই কি বঙ্গ-প্রীতি?’ (২৩-৫) শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে যে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তা একেবারেই অর্থহীন। প্রধানমন্ত্রী যদি ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে না আসতেন, তখন আপনারা কী বলতেন? এমন হলে তো মুশকিল, এলেও সমালোচনা, না এলেও সমালোচনা। আর এটা তো মনে রাখতে হবে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের ঝড়ে বিধ্বস্ত জায়গাগুলি নিজের চোখে দেখে যেতে প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে এসেছেন।
কোনও একটি দুর্যোগের কাছাকাছি সময়ে যদি একটি নির্বাচন পড়ে যায়, আর সেই দুর্যোগ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার কিছু ব্যবস্থা নেয়— সে ক্ষেত্রে যদি বলা হয় ভোটের জন্যই সরকার সব করছে, সত্যিই তা শাঁখের করাত।
বরং এই রাজ্যে যিনি ‘করোনা’ নিয়ে কোনও রাজনীতি নয়, ‘ঘূর্ণিঝড়’ নিয়ে রাজনীতি নয়— মুখে এ কথা বলে, এ সব নিয়ে নিজেই সবচেয়ে বেশি রাজনীতি করেন, তাঁর সমালোচনা করুন।
প্রণব রাহা
দুর্গাপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।