West Bengal

সম্পাদক সমীপেষু: কাজের সুযোগ

সরকারি সংস্থায় তিন ধরনের কর্মী বহাল রয়েছেন— স্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক ও অবসরপ্রাপ্ত। প্রশ্ন, অবসরপ্রাপ্তরা কি আদৌ সরকারি চাকরি পাওয়ার যোগ্য?

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২২ ০৪:৫০
Share:

ভারতীয় নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে, কিন্তু কাজ পাওয়ার অধিকার যে নেই, তা আবারও প্রমাণ হল। খাদ্য দফতরের সাব-ইনস্পেক্টর পদে চাকরির পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করার পরেও ৮১৭ জন চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগ আটকে রয়েছে তিন বছর ধরে (‘রোদে অসুস্থ, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি চাকরিপ্রার্থীদের’, ৩০-৪)। ফি বছর ভোটারের সংখ্যা বাড়লেও কর্মসংস্থান সেই হারে বাড়েনি। বরং চাকরির বাজারে কাজের সংখ্যা ক্রমশ তলানিতে। তদুপরি ভোটকুশলীদের পাল্লায় পড়ে অনেকেরই ভোটাধিকার হয় বিকিয়ে গিয়েছে, নয় লুট হয়েছে। একাধিক বার সংশোধনের ফলে সংবিধানে ভোটাধিকার ও কাজের দাবির মধ্যে বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। ফলে, লক্ষ লক্ষ শূন্যপদ পূরণ না হওয়ায় সরকারি পরিষেবা ও প্রশাসনিক কাজকর্মের জন্য নতুন কর্মিবাহিনী তৈরি হচ্ছে না। অবস্থা সামাল দিতে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের চটজলদি পুনর্নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রবীণ নাগরিকদের কাজে পুনর্বহাল শুধু অমানবিকই নয়, বেকার ছেলেমেয়েদের কাছে তা এক রকম বঞ্চনাই। অথচ, এ বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়েই তৎপর।

Advertisement

সরকারি সংস্থায় তিন ধরনের কর্মী বহাল রয়েছেন— স্থায়ী, চুক্তিভিত্তিক ও অবসরপ্রাপ্ত। প্রশ্ন উঠছে, অবসরপ্রাপ্তরা কি আদৌ সরকারি চাকরি পাওয়ার যোগ্য? বিতর্ক থাকতে পারে সরকারি চাকরির ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বয়স নিয়েও। কিন্তু এই ভাবে চললে আগামী দিনে যথেষ্ট কর্মীর অভাবে সরকারি সংস্থাগুলো হয় মুখ থুবড়ে পড়বে, নয়তো তাদের তুলে দিতে হবে বেসরকারি সংস্থার হাতে। বহু রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অর্জিত হয়েছিল ভারতের স্বাধীনতা। তার ৭৫ বছর পূর্তিতে বেকার ছেলেমেয়েরা ভোটাধিকারের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের অধিকারও চায়। কেন্দ্র ও সকল রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন, চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ রদ করে স্থায়ী পদে নিয়োগের পথ প্রশস্ত করা হোক।

অমরেশ পাল
খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

Advertisement

বিনিয়োগে বাংলা
‘বিনিয়োগের শর্ত’ (২৭-৪) সম্পাদকীয়টির বিষয়বস্তুর গুরুত্ব অপরিসীম। এ বারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের যুবসমাজকে কয়েক লক্ষ চাকরির স্বপ্ন দেখিয়েছেন। ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। শিল্পপতিরা বিনিয়োগ করতে চাইলে আগে দেখবেন, তাঁদের কোনও লাভ থাকবে কি না। একই সঙ্গে তাঁরা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পরিকাঠামো, শ্রমিক, আইনব্যবস্থা ও সরকারের সদিচ্ছাটাও দেখেন। সিঙ্গুরের দৃষ্টান্তের পর বিনিয়োগকারীরা এখনও জানেন না, তাঁদের পছন্দমতো জমিতে শিল্প করতে পারবেন কি না। এ বারের বাণিজ্য সম্মেলন আড়েবহরে অনেক বড় হয়েছে। বিয়াল্লিশটা দেশের পাঁচশোরও বেশি বিদেশি প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। গত এগারো বছরে শিল্পে বিনিয়োগের চিত্রটা কেমন? কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্য সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯২ থেকে ২০১০— এই সময়কালে যা বিনিয়োগ হয়েছে, তার পরিমাণগত অঙ্কে গুজরাত প্রথম, মহারাষ্ট্র দ্বিতীয় এবং পশ্চিমবঙ্গ তৃতীয় স্থানে ছিল। আর ২০১১ থেকে ২০২১ সালের হিসাবে বিনিয়োগের পরিমাণগত অবস্থানে গুজরাত প্রথম, মহারাষ্ট্র দ্বিতীয়, ওড়িশা তৃতীয় আর পশ্চিমবঙ্গ চলে গিয়েছে দ্বাদশ স্থানে। অর্থাৎ, গত দশ বছরে রাজ্য প্রশাসন বিনিয়োগকারীদের শর্ত পূরণে তেমন সফল হয়নি, তাই বিনিয়োগ এসেছে সামান্যই। তা হলে এ বারের শিল্প-সম্মেলন থেকে রাজ্যবাসীর নতুন কিছু পাওয়ার ভরসা কোথায়?

প্রবীর চক্রবর্তী
গোচারণ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

তেলের দাম
‘তেলে ভ্যাট: মোদীর তির, জবাবি আক্রমণে মমতাও’ (২৮-৪) শীর্ষক সংবাদটি পড়তে পড়তে মনে হল, প্রধানমন্ত্রী ও কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সৌজন্যে আবার এক প্রস্থ নাটক অভিনীত হল। কোনও রাজ্য সরকার ও তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারও চায় না সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকুক। সত্যিই যদি তারা চাইত, তা হলে অনেক আগেই পেট্রোপণ্যকে ভ্যাট-এর পরিবর্তে জিএসটি-র অন্তর্ভুক্ত করা হত। প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত প্রতিটি জিনিসের উপর সাধারণ মানুষ যখন জিএসটি পরিষদের দ্বারা নির্দিষ্ট হারে কর দিচ্ছেন, তখন পেট্রোপণ্যের ক্ষেত্রে নিয়ম আলাদা হবে কেন? সত্যিই যদি তারা সাধারণ মানুষদের স্বস্তি দিতে চাইত, তা হলে ৪৫তম জিএসটি পরিষদের বৈঠক, যা উত্তরপ্রদেশের লখনউ শহরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানে সিদ্ধান্ত নিতেন পেট্রোপণ্যের জিএসটি-র অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে।

এই সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এক লিটার পেট্রলের পরিবহণ খরচ-সহ মূল্য ৬১.৩২ টাকা। বিলাসিতার দ্রব্য হিসেবে জিএসটি-র সর্বোচ্চ কর ২৮ শতাংশ নেওয়া হলেও পেট্রলের মূল্য লিটারে ৭৮.৪৮ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সাধারণ মানুষকে দিতে হচ্ছে লিটার প্রতি ১১৫.১২ টাকা, যার মধ্যে কেন্দ্রের উৎপাদন শুল্ক ২৭.৯০ টাকা, রাজ্যের ভ্যাট ২২.৩০ টাকা, ডিলার কমিশন ৩.৬০ টাকা। একই ভাবে ডিজ়েলের পরিবহণ খরচ-সহ মূল্য ৬১.৬০ টাকা, কেন্দ্রের উৎপাদন শুল্ক ২১.৮০ টাকা, রাজ্যের ভ্যাট ১৪.১৮ টাকা, ডিলার কমিশন ২.২৫ টাকা। মোট ৯৯.৮৩ টাকা প্রতি লিটার। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য হিসেবে ১৮ শতাংশ কর নেওয়া হলেও প্রতি লিটার ডিজ়েলের মূল্য ৭২.৬৮ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিস পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত যানবাহন ডিজ়েলেই চলে। স্বাভাবিক ভাবেই ডিজ়েলের মূল্য বৃদ্ধির অর্থ, প্রতিটি জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি। ডিজ়েলের প্রতি লিটারের মূল্য ৯৯.৮৩ টাকার পরিবর্তে ৭২.৬৮ টাকা হলে সাধারণ মানুষ হয়তো কিছুটা স্বস্তি পেতেন।

পার্থ সারথী মণ্ডল
সেগুনবাগান, নদিয়া

দমবন্ধ
হাওড়া স্টেশনের সাবওয়ে দিয়ে প্রতি দিন হাজার হাজার নিত্যযাত্রী চলাচল করেন। অথচ, পথটি বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছে। ভিতরে প্রচুর হকার বসে থাকেন। প্রচণ্ড গরমে নেই হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা। এই দমবন্ধ-করা অবস্থা দেখেও পূর্ব রেল যেন নির্বিকার।

সেখ মুবারক হোসেন
বড়তাজপুর, হুগলি

অছিলা পাট
‘সুর বদলে ফের পাট নিয়ে হুঙ্কার অর্জুনের’ (২-৫) সংবাদের প্রেক্ষিতে বলতে চাই, এই হুঙ্কার অর্জুন সিংহের বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার আগাম ইঙ্গিত ছাড়া আর কিছু নয়। বর্তমান রাজনীতিতে নেতার স্বার্থসিদ্ধিই যেন বড় হয়ে উঠেছে। ন্যায়, নীতি, আদর্শ, ও আত্মত্যাগের সমাধি ঘটেছে। কিছু দিন আগেই জানা গিয়েছে, অর্জুনের এক আত্মীয় সমেত তাঁর বেশ কিছু সঙ্গী বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে সাদরে আমন্ত্রিত হয়েছেন। সম্ভবত অর্জুন এখন দুর্বল হয়ে রাজনৈতিক অভিলাষ পূর্ণ করতে পারছেন না। পাট নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধ করে অর্জুন তৃণমূলে গেলে পশ্চিমবঙ্গে পাট শিল্প, শ্রমিক ও চাষিদের সমস্যা কি মিটে যাবে? কেন্দ্রের সঙ্গে অসংখ্য বিষয়ে অগণিত দ্বিমত আছে রাজ্য সরকারের। দলবদল করে যদি প্রশাসনিক সমস্যার সমাধান
করা যেত, তা হলে ভারতে কোনও সমস্যাই থাকত না।

মিহির কানুনগো
কলকাতা-৮১

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement