‘আরব্য রজনীতে কোনও আলাদিন নেই’ (রবিবাসরীয়, ২৬-৫) শীর্ষক প্রবন্ধে লেখক বিখ্যাত গল্প সঙ্কলন ‘আরব্য রজনী’ নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। এই নিয়ে কিছু বক্তব্য।
রেনল্ড অ্যালেন নিকলসন (পারসি প্রভাষক কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি, প্রাক্তন ফেলো ট্রিনিটি কলেজ) ও ফিলিপ কে হিট্টি (সেমেটিক সাহিত্যের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা)— এই দুই গবেষকের আরবি সাহিত্য ও আরব জাতির ইতিহাস নিয়ে দুই গ্রন্থ, আরবি সাহিত্য ও সংস্কৃতির আলোচনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিকলসন (‘লিটারারি হিস্ট্রি অব দি আরবস’) এবং হিট্টি (‘হিস্ট্রি অব দি আরবস’) তাঁদের গ্রন্থে ‘আরব্য রজনী’ গ্রন্থের সঙ্কলন সম্বন্ধে অত্যন্ত সুস্পষ্ট মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন।
লেখকদ্বয়ের মূল বক্তব্য, ‘সহস্র এক রজনী (থাউজ়্যান্ড অ্যান্ড ওয়ান নাইট) শীর্ষক বইটি আরবি সাহিত্যের অন্য যে কোনও অত্যুৎকৃষ্ট পুস্তকের তুলনায় ইউরোপে অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিল। মামলুক (১২১৫-১৫১৭ খ্রি) শাসনকালেই তা চূড়ান্ত রূপ পেয়েছিল। দশম শতাব্দীর মধ্যভাগের কিছু আগে ‘আলিফ লায়লা ও লায়লা’ (এক হাজার এক রাত্রি) বইটির প্রথম খসড়াটি তৈরি হয়েছিল। আল ইরাকেই রচিত হয়। যে কাহিনির ভিত্তিতে এই খসড়াটি তৈরি হয়েছিল, সেটি ছিল পুরনো এক পারসিক বই। হাজার আফসানা (হাজার গল্প) নামের গল্পগুলি লিখিয়েছিলেন ‘বুক অব ভিজ়িটরস’-এর লেখক আবু আবদুল্লা মহম্মদ বিন আবদুল আল জাহশিয়ারি (মৃত্যু ৯৪২ খ্রি)। স্থানীয় গল্পকারদের অনেক গল্পও আল জাহশিয়ারি বইটিতে যুক্ত করেছিলেন। শাহারাজাদ ও দীনাজাদ নাম্নী দুই ক্রীতদাসীর কাহিনি-সহ প্রথম সারির বীর ও বীরাঙ্গনাদের নামের তালিকা, তাদের কেন্দ্র করে সংঘটিত বিভিন্ন কাহিনির পটভূমি ও ঘটনা, তথ্য জুগিয়েছিল এই আফসানায়। সেই সময় পারস্যের এই গল্পগুলি লোকমুখে মরু অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এটা পরিষ্কার যে হাজার আফসানা হল ‘অ্যারিবিয়ান নাইটস’-এর সারবস্তু এবং এ সম্ভাবনাও বর্তমান যে, এই পারসি মূল গ্রন্থে বর্তমান সংগ্রহের সর্বাপেক্ষা সুন্দর কল্পনাশক্তির পরিচায়ক গল্পগুলি অন্তর্ভুক্ত আছে। গল্পগুলি দু’টি প্রধান ভাগে বিভক্ত। চরিত্রের দিক থেকে উভয়েই সেমেটিক— একটি হল বাগদাদের। এগুলি মুখ্যত মজাদার ছোট ছোট সত্য কাহিনি ও প্রণয়মূলক কাহিনি, সেখানে বিখ্যাত হারুন আল রশিদ প্রায়শই আবির্ভূত হয়েছেন। অন্যটির কেন্দ্রবিন্দু হল কায়রো এবং দুষ্টুমিপূর্ণ বিদ্রুপাত্মক হাস্যকৌতুক ও যান্ত্রিক অতিপ্রাকৃতবাদ দ্বারা কাহিনিগুলি চিহ্নিত, যা ‘আলাদিন ও আশ্চর্য প্রদীপ’-এ সুন্দর ভাবে বর্ণিত।
হারুন আল রশিদের দরবারের পণ্ডিতেরাও নানা মজাদার সত্য কাহিনি ও প্রেমের গল্প বইটির সঙ্গে যুক্ত করেন। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে রানি ইস্টার কায়রোতে বসে এই গল্পগুলি হারুন আল রশিদকে শুনিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও মিশরে মামলুক শাসনের শেষ দিককার আগে ‘দি অ্যারাবিয়ান নাইটস’ তার চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেনি। গ্যালান্ড (গ্যালাঁ) সর্বপ্রথম ফরাসি ভাষায় বইটির অনুবাদ করেন। পরবর্তী কালে আধুনিক ইউরোপ ও এশিয়ার প্রায় সমস্ত ভাষায় বইটি অনূদিত হয়। শুধু তা-ই নয়, মুসলিম অধ্যুষিত প্রাচ্যের তুলনায় পাশ্চাত্য দেশগুলিতে এটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় আরবি সাহিত্য হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। এডওয়ার্ড উইলিয়াম লেন সর্বপ্রথম ইংরাজি ভাষায় বইটির অনুবাদ করেন।
ফলে আরব্য রজনীর গল্পের প্রেক্ষাপট ও তার চরিত্র এবং চরিত্রের নামকরণগুলি পর্যালোচনা করলে খুব সহজেই বোঝা যায়, গল্পগুলি কোন অঞ্চলের দিক নির্দেশ করছে। তা সে ‘আলাদিন’ হোক বা ‘আলিবাবা, সবগুলির রচনাশৈলী ও তার প্রেক্ষাপট এবং চরিত্রের নামকরণ, সবগুলিই পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সানোয়াজ খান
নাকোল, হাওড়া
নীতি কোথায়
‘কাটমানি’ নিয়ে রাজ্যব্যাপী আন্দোলন চলছেই। রাজ্যের শাসক দলের এক শ্রেণির নেতা-কর্মী যে তোলাবাজির সঙ্গে যুক্ত, তা সাধারণ মানুষের কাছে ছিল ‘ওপন-সিক্রেট’। ভুক্তভোগীরা ভিতরে ভিতরে ক্ষোভ নিয়ে চলছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের বিপর্যয় মুখ্যমন্ত্রীর মুখ দিয়ে বলিয়ে নিল, ‘‘দুর্নীতি বরদাস্ত করব না’’, কিংবা ‘‘চোরদের দলে রাখব না’’। এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীকেই তো জবাব দিতে হবে, দলে চোরেরা ঢুকল কী করে? না কি ভাল লোকেরা ঢুকে চোর হয়ে গিয়েছে?
ঘটনা হল, বানের জলের মত সিপিএমের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-কর্মীরা যখন তৃণমূলে ঢুকছিল, তখন নেত্রী কেবল চুপ করেই ছিলেন না, তিনি ছিলেন যারপরনাই উৎফুল্ল। দুর্নীতি-তোলাবাজি-স্বজনপোষণ-প্রোমোটিং-সিন্ডিকেট রাজ বিগত ৩৪ বছরের সিপিএম শাসনে চলছিল রমরমিয়ে, যে কারণে জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা মাঝে মাঝে শুদ্ধিকরণের আহ্বান জানাতেন। এখন মমতাও শুদ্ধিকরণের পদক্ষেপ হিসাবে ‘কাটমানি’র বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছেড়েছেন।
বিজেপি নেতৃত্ব আগামী বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এখন এই দুর্নীতি নিয়ে কটাক্ষ করতে পিছপা হচ্ছে না। কিন্তু কে না জানে, তাঁরা ইতিমধ্যেই দুর্নীতির চোরাগলিতে ঢুকে পড়েছেন । গ্যাসের ডিলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়া, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বিজেপির নেতা-কর্মীদের টাকা হাতানোর বিষয় সংবাদপত্রের পাতায় উঠে এসেছে। তার চেয়ে বড় কথা হল, অন্য দল থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত অপরাধী হিসাবে যাঁরা বহিষ্কৃত হচ্ছেন, তাঁদের নিজেদের দলে অন্তর্ভুক্ত করছেন বিজেপি নেতারা। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের অনেককে প্রার্থী করা হয়েছে, নেতা বানানো হয়েছে। এই দল ক্ষমতায় এলে, দুর্নীতি তো মাত্রাছাড়া হতে বাধ্য।
রাজনৈতিক দলগুলো অন্য দল থেকে লোকেদের নিজেদের দলে টানে, বা সাধারণ মানুষকে নিজ দলের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে, কোনও উন্নত নীতি-আদর্শকে সামনে রেখে নয়। নানা সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে। এখানে কোনও সামাজিক স্বার্থ কাজ করে না, কাজ করে ব্যক্তিস্বার্থ। আর ব্যক্তিস্বার্থ পূরণের লক্ষ্যে এগোতে গেলে তো অন্যায়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতেই হয়। ফলে এ জায়গায় দৃষ্টি না দিয়ে, শুধু ‘‘চোরেদের দলে রাখব না’’ বললে দল শুদ্ধ হতে পারে না।
গৌরীশঙ্কর দাস
সাঁজোয়াল, খড়গপুর
ক্ষতিপূরণ কেন
সম্প্রতি ট্রেনের ভিতর এক মাদ্রাসা শিক্ষক ও তাঁর তিন সহযাত্রীকে নিগ্রহের ঘটনায় রেল পুলিশ অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে নিগ্রহকারীদের গ্রেফতার করেছে। অভিনন্দন। কিন্তু এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ সরকারি কোষাগার থেকে নিগৃহীতদের প্রত্যেককে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিলেন কেন, বোঝা গেল না। যে কোনও নিগ্রহের ঘটনায় যদি রাজ্য সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, তা হলে সম্প্রতি এনআরএস হাসপাতালের তরুণ চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের নিগ্রহের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হল না কেন? সরকারি অর্থ এ ভাবে দান-খয়রাতি করে নষ্ট না করে, বরং মানুষের যথার্থ মঙ্গলের কাজেই ব্যয় করুক রাজ্য সরকার। পুলিশ ব্যবস্থা নিক। অপরাধীরা শাস্তি পাক।
সমীর কুমার ঘোষ
কলকাতা-৬৫
ভুল ধারণা
‘একই নামে’ (২-৭) চিঠিতে লেখা হয়েছে, বাংলা অমৃতবাজার হঠাৎ করে ইংরেজি পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। ঠিক তা নয়। ১৮৭৮-এর ১৪ মার্চ ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট জারি হওয়ার সময়, অমৃতবাজার ছিল বাংলা-ইংরেজি দ্বিভাষী সাপ্তাহিক পত্রিকা। সরকারি আইনকে ফঁাকি দেবার জন্য ২১ মার্চ থেকে এটি শুধুমাত্র ইংরেজি সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশিত হতে থাকে।
সারদাপ্রসাদ সিংহ
ইমেল মারফত
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।