৬ ফেব্রুয়ারি চলে গেছেন লতা মঙ্গেশকর। ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি এক প্রবাদপ্রতিম ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যুর পর প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সরকারি ভাবে অর্ধ দিবস ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এই ছুটিতে কেউ তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গেলেন, কেউ শপিং মলে গেলেন, কেউ বা মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখার সুযোগ পেলেন। রেস্তরাঁতে লতা মঙ্গেশকরের গান শুনতে শুনতে লোকজন চাইনিজ় খাবারে বুঁদ হয়ে থাকলেন। কিন্তু যে শিল্পী আজ হিমালয় সমান সৃষ্টি করে অমরত্ব লাভ করেছেন, তিনি, লতা মঙ্গেশকর কিন্তু কিছু দিন আগে অবধি প্রতি দিন রেওয়াজ করতেন, নিজের শারীরিক অসুস্থতাকে অগ্রাহ্য করে সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে থাকতেন।
প্রত্যেক সফলতম মানুষের মধ্যে একটাই মিল পাওয়া যায়— নিজের কাজের প্রতি আত্মত্যাগ। সচিন তেন্ডুলকর বাবার মৃত্যুর পরেও শারজায় মরুঝড় ঘটিয়েছিলেন। একই রকম ভাবে পিতৃহারা অশ্রুসজল মহম্মদ সিরাজ নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। এই সব মানুষের জন্য আমরা কী প্রতিদান দিয়ে থাকি? জন্মদিনের শ্রদ্ধা নিবেদন থেকে মৃত্যুর শোক পালন, সব কিছুর একটাই উত্তর— কর্মনাশা ছুটি। যাঁরা ইতিহাসে পাতায় চলে গেলেন তাঁদের কাজের মধ্য দিয়ে, আমরা তাঁদেরই স্মরণ করি কোনও কাজ না করে।
বিগত দশকে দেশ, সমাজের মধ্যে বহু পরিবর্তন এসেছে— জাপানের সুশি আমরা খেতে শিখেছি, আমেরিকান স্ল্যাং উচ্চারণ আর কিছু নতুন নয়, কিন্তু অলস কর্মনাশা ছুটি আমাদের ছেড়ে যেতে পারেনি। অথচ, এই জন্মদিন বা মৃত্যুদিন পালন অন্য ভাবেও তো হতে পারে। আধঘণ্টার একটা স্মৃতিচারণ হতে পারে দেশ জুড়ে একই সময়ে।
স্কুলের অত্যন্ত রাগী প্রধান শিক্ষিকা হয়তো বহু বছর পর গেয়ে উঠতে পারেন ‘প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া!’ অথবা ফাঁকিবাজ এক তরুণ সরকারি আধিকারিক অঙ্গীকার করতে পারেন— আর নয়, এ বার থেকে নিজের কাজ নিজেই করব। কোনও বিশিষ্ট মানুষের জন্মদিনে এক জন দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতার অন্য রকম ভাবনাই হবে সেই মানুষটির প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধার্ঘ্য। সুতরাং আর নয়, মহাপুরুষদের জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে সরকারি ছুটি দেওয়া বন্ধ হোক, কাজ করেই এই মহান মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হোক আমাদের নয়া মন্ত্র।
সৌগত মাইতি
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
কাঁদছেন শিল্পী
৬ ফেব্রুয়ারি চলে গেলেন লতা মঙ্গেশকর। পঞ্চাশের দশকে কলকাতার রাজভবনে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানে শিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ও আরও অনেকে। সে দিন উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খানের সঙ্গে সঙ্গত করছিলেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। উস্তাদজি যখন সঙ্গীত পরিবেশন করছেন, তখন হঠাৎ জ্ঞানপ্রকাশের চোখে পড়ল, উইংসের পাশে একটি চেয়ারে বসে লতা মঙ্গেশকর শুনছেন আর কেঁদে যাচ্ছেন। ঘটনাটি শ্রদ্ধেয় জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে শুনেছি।
কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়
শিবপুর, হাওড়া
হেমন্ত-লতা
‘শ্রী লতা মঙ্গেশকর (১৯২৯-২০২২)’ (৭-২) প্রয়াণলেখতে বলা হয়েছে, লতার বাংলা গানের সংখ্যা দু’শো ছুঁইছুঁই। প্রসঙ্গত জানাই, লতা মঙ্গেশকর বাংলা গান গেয়েছিলেন মোট ২২৫টি। বাংলা গানে লতার সাফল্যের নেপথ্যে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
হেমন্ত ও লতা জুটির আত্মপ্রকাশ রবীন্দ্রনাথের গানে। ১৯৫৩ সালে হেমন্তের অনুপ্রেরণায়, তত্ত্বাবধানে, দ্বৈতকণ্ঠে গেয়েছিলেন ‘মধুগন্ধে ভরা’ ও ‘তোমার হল শুরু’। হেমন্তের সুরে লতা প্রথম গেয়েছিলেন ১৯৫৭ সালে শেষ পরিচয় ছবিতে ‘কত যে কথা ছিল’, ‘গোপীজন মন চোর’। গীতিকার বিমলচন্দ্র ঘোষ। এই ছবিতে তাঁর কণ্ঠে দু’টি হিন্দি গানও শোনা যায়। তার পর এই জুটিতে শোনা যায় ১৯৫৮ সালে যৌতুক ছবিতে ‘এই মন বিহঙ্গ’, ১৯৫৯ সালে দীপ জ্বেলে যাই ছবিতে ‘আর যেন নেই কোনও ভাবনা’, ১৯৬৫ সালে মণিহার ছবিতে ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’, বাঘিনী ছবিতে ‘যদিও রজনী পোহাল তবুও’, অদ্বিতীয়া ছবিতে ‘চঞ্চল ময়ূরী এ রাত’ ইত্যাদি আরও কালজয়ী গান। কবিতা কৃষ্ণমূর্তি প্রথম বাংলা গান গেয়েছিলেন লতার সঙ্গে ১৯৭৩ সালে শ্রীমান পৃথ্বীরাজ ছবিতে ‘সখি, ভাবনা কাহারে বলে’ রবীন্দ্রসঙ্গীত। সুরকার ছিলেন হেমন্তই।
লতা ও হেমন্ত দ্বৈতকণ্ঠে গেয়েছিলেন ১৯৫৭ সালে পবিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সুরে বড় মা ছবিতে ‘ভগবান আমায় তুমি’। অসাধারণ গান। ১৯৬৮ সালে অদ্বিতীয়া ছবিতে গেয়েছিলেন যুগল প্রেমে ভালবাসায় ভরা ‘চঞ্চল মন আনমনা হয়’। সুর হেমন্তের। ১৯৭১ সালে কুহেলি ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘তুমি রবে নীরবে’। বেসিক রেকর্ডে এই জুটি দ্বৈতকণ্ঠে ১৯৭০ সালে হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের সুরে গেয়েছিলেন সেই বিখ্যাত গান ‘দে দোল দোল দোল’।
হেমন্তের সুরে বেসিক রেকর্ডে ১৯৫৮ সালে লতা গেয়েছিলেন চিরসবুজ গান ‘ও পলাশ ও শিমুল’ এবং ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’। ১৯৭৬ সালের আকাশবাণীর মহালয়ার প্রভাতী অনুষ্ঠান ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’-এ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে লতা গেয়েছিলেন দুর্গা বন্দনা ‘তুমি বিশ্বমাতা ব্রহ্মময়ী মা’। গীতিকার শ্যামল গুপ্ত। হেমন্তের সুরে লতা শেষ গেয়েছিলেন ১৯৮৮ সালে পরশমণি ছবিতে ‘যায় যে বেলা যায়, এ বার আমি যাই’।
বিশ্বনাথ বিশ্বাস
কলকাতা-১০৫
সাহিত্যে মেয়েরা
সমাজে যে কোনও ক্ষেত্রেই মেয়েদের অবদানকে ছোট করে দেখা বা নগণ্য বলে ধরা হচ্ছে বহু কাল ধরে। রুশতী সেনের ‘মেয়েরাও যে আছে...’ (৬-২) প্রবন্ধটি সাহিত্যে মেয়েদের অস্তিত্ব ভুলে যাওয়া সমাজকে মনে করিয়ে দেয় সত্যিটা। যে সময়টায় মেয়েরা পড়াশোনা করলেই মা-বাবাকে সহ্য করতে হত সমাজের কুমন্তব্য, সেই সময় কলম হাতে ধরে যে সব লেখিকা অসামান্য সাহিত্যসুধা উপহার দিয়েছেন, তা অবহেলায় ভুলে যাওয়া একান্তই কাম্য নয়। তবে ঝুলিতে আছে পুরুষ লেখকসৃষ্ট কালজয়ী মহিলা চরিত্রও। বাংলা সাহিত্যে এখনও বেঁচে আছে কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর ফুল্লরা, যে বারো মাসের দুঃখ সহ্য করেও সংসারের প্রতি দায়বদ্ধ। আছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবী চৌধুরানী, যে মেয়েদের ‘অবলা’ বলা সমাজকে ‘সবলা’ রূপের শক্তি দেখিয়েছে। শরৎচন্দ্রের ‘বামা’ গল্পে বামার দয়াময়ী স্বভাবের অন্তরালে যে সাহসী, অন্যায় সহ্য না করার সত্তা লুকিয়ে আছে, তা মুগ্ধ করে পাঠকদের। যুগে যুগে মহিলা চরিত্ররা ফিরে এসেছে বইয়ের পাতায়। এদের ভুললে কেমন করে হবে?
স্নেহা মাজি
পূর্ব বর্ধমান
বেতার দিবস
১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বিশ্ব বেতার দিবস। ২০১১ সালে ইউনেস্কো-র ৩৬তম সম্মেলনে দিনটি পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। দরিদ্র, নিরক্ষর মানুষ থেকে পড়ুয়া, চাষাবাদে যুক্ত মানুষ ও কর্মমুখী তরুণ-তরুণীদের নির্ভরযোগ্য এই মাধ্যম প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও জরুরি অবস্থায় যোগাযোগের নিশ্চিত আশ্রয়। বেতার আক্ষরিক অর্থেই এক মহামিলনের যোগসূত্র তৈরি করেছে।
সুপ্রতিম প্রামাণিক
আমোদপুর, বীরভূম