লকডাউনে ভারতবাসী বাড়িতে বসে থেকে যাতে মহাকাব্য ও পুরাণ বিষয়ক কয়েকটি ধারাবাহিক দেখতে পারে, সেই জন্য ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগ ডিডি ন্যাশনাল ও ডিডি ভারতী চ্যানেলে পুরনো কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক দেখানোর ব্যবস্থা করেছে।
এর মধ্যে বিশেষ ভাবে স্মরণীয়, ‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকটি। এটি প্রচারিত হওয়ার সময় (১৯৮৭-৮৮) সমগ্র ভারতবাসীকে উত্তাল করে দিয়েছিল, এবং লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বে রথযাত্রা হওয়ার সময় (১৯৯০) ধর্মীয় ভাবাবেগকে এক হিন্দু জাগরণে পরিণত করার ক্ষেত্রেও এর বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে অনেকে মনে করেন।
সেই সময় ‘দেশ’ পত্রিকায় বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অমলেশ ত্রিপাঠী ‘হিন্দু জাগরণ’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, “হিন্দু জাগরণ হোক, কিন্তু তার চেয়ে বড় মনুষ্যত্বের জাগরণ। মনুষ্যত্ব বাদ দিয়ে হিন্দুত্ব কেন, কোনও সত্যকার ধর্ম কল্পনা করা যায় না। ধর্মকে হতে হবে আরও বেশি উদার, পরমতসহিষ্ণু, যুগের সঙ্গে চলিষ্ণু। যেখানে সঙ্গম, সেইখানেই সংহতি।” (‘স্বাধীনতার মুখ’ গ্রন্থে প্রবন্ধটি আছে)।
বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রভাব ও বিস্তার, তৎকালীন ভারতীয় জনতা পার্টির থেকে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ও শক্তিশালী। ভেবে দেখা দরকার, ৩৩-৩৪ বছর পরে পুরনো ধারাবাহিকগুলি দেখানোর ব্যবস্থাটি, ভারতবাসীকে আবার নব হিন্দুত্বের জাগরণে উদ্দীপ্ত করার প্রয়াস নয় তো?
তথ্য সম্প্রচার বিভাগের কাছে আবেদন, জওহরলাল নেহরু লিখিত ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’ অবলম্বনে নির্মিত, শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘ভারত এক খোঁজ’ ধারাবাহিকটি প্রচার করুন। তা হলে আজকের প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেক কিছু জানতে পারবে। নইলে তা-ই হবে, গিরিশচন্দ্র ঘোষ তাঁর ‘চৈতন্যলীলা’ নাটকে কলির মুখ দিয়ে যা বলিয়েছিলেন: “ভক্তি স্রোতে যুক্তি ভেসে যায়।...বিজ্ঞান পলায় দূরে।”
শৈবাল মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-২৬
উত্তরাধিকার কর
কৌশিক বসু সম্প্রতি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিত্তকর এবং উত্তরাধিকার কর বসিয়ে রাজস্ব বাড়ানো উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের। কয়েক বছর আগে এ বিষয়টা আমি অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের কাছে তুলেছিলাম, কিন্তু তাঁরা বলেছিলেন যে এতে নতুন ধরনের উদ্যোগে বিনিয়োগে ধনীর আগ্রহ কমবে। আমাদের সরকার ইতিমধ্যেই কর্পোরেটদের বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছে— করের হার কমানো হয়েছে, ঋণে সুদের হার কমেছে, ব্যাঙ্কে বিপুল অনাদায়ী ঋণ জমতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর কোনওটা তাদের বিনিয়োগের উপর প্রভাব ফেলেছে, এমনটা নজরে আসেনি। বরং এগুলোর ফলে অর্থনীতির প্রধান সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে, আর্থিক বৈষম্য আরও বেড়েছে।
ফরাসি অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি দেখিয়েছেন, ভারতের মোট সম্পদের ৭০ শতাংশ রয়েছে ১০ শতাংশেরও কম মানুষের হাতে। অল্প ক’জনের হাতে প্রচুর সম্পদ জড়ো হওয়ার এই ঝোঁক বেড়েই চলেছে। প্রয়োজন হল, তাদের হাত থেকে অধিকাংশ মানুষের হাতে তা পৌঁছে দেওয়া। বিত্ত এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের উপর কর এ ব্যাপারে অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। কিছু লোকের অত্যধিক আয় সম্পদ-মালিকানায় আরও বৈষম্য তৈরি করে, যা থেকে আয়ে অসাম্য আরও বেড়ে যায়। এটাই আমাদের দেশে অর্থনৈতিক অসাম্য দ্রুত বেড়ে চলার প্রধান কারণ।
ধনীর সন্তানেরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কাজের সুযোগের নিরিখে অনেক বেশি সুবিধে পায়। উত্তরাধিকার সূত্রে আরও বেশি সম্পদ পাওয়ার প্রত্যাশা তাদের ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত নয়। তাই উত্তরাধিকার কর বসানোর পক্ষে যথেষ্ট জোরালো যুক্তি আছে। এই প্রস্তাব আমাদের নীতি প্রণেতারা যেন যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন।
নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রাক্তন অধ্যাপক, অর্থনীতি, সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস, কলকাতা
বৃত্তিমুখী
‘‘জ্ঞানের চেয়ে দক্ষতায় জোর ‘কর্মী জোগাতে’!’’ (১৬-৫) সংবাদে জানতে পারলাম, সিবিএসই বোর্ডের আওতায় সমস্ত স্কুলে নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে ‘দক্ষতা তৈরির শিক্ষা’কে পাখির চোখ করতে। যাকে সমর্থন জানিয়ে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীরও দাবি, ‘‘প্রতি দিনের এবং ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরির উপরেই স্কুলের শিক্ষায় জোর দেবে সিবিএসই।’’ বৃত্তিমুখী শিক্ষা এক জিনিস। কিন্তু পুরো স্কুল শিক্ষাব্যবস্থাকে বৃত্তিমুখী করা বিপজ্জনক। এর অর্থ জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে কোনও শাখারই কেবল ব্যবহারিক দিকটি শেখানো, চিন্তাগত দিকটি নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রবণতার আভাস লক্ষ করে আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘‘...এক জন মানুষকে কোনও বিদ্যায় বিশেষত্বের শিক্ষা দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়। এর ফলে সে একটি প্রয়োজনীয় যন্ত্রে পরিণত হতে পারে, কিন্তু কখনওই পরিপূর্ণ বিকশিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারে না। মূল্যবোধ সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা এবং জীবনানুগ উপলব্ধি অর্জন করা ছাত্রদের পক্ষে অপরিহার্য। যা কিছু সুন্দর এবং নৈতিক দিক থেকে শুভ, সে সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট উপলব্ধি তাকে অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে তার বিশেষত্বের জ্ঞান নিয়ে কুকুরের মতোই বেড়ে উঠবে, সর্বাঙ্গ বিকশিত মানুষ হিসাবে নয়।’’
স্মরণে আসে, এক বার ড. রাধাকৃষ্ণণ এই ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্রদের সম্পর্কে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে লিখেছিলেন, ‘এডুকেটেড বারবারিয়ান’।
সামসুল আলম
কলকাতা-১৪
নার্স কোথায়
রাজ্য থেকে প্রায়ই ভিন্ন রাজ্যের নার্সগণ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিং হোমের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বা দীর্ঘকালীন ছুটি নিয়ে নিজ রাজ্য বা প্রদেশের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। এই অতিমারির সঙ্কটকালে এটা যথেষ্টই চিন্তার কারণ।
বেসরকারি হাসপাতালে সেবিকা পদের ৪০% দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের, আরও অনেকেই উত্তর-পূর্ব ভারত আর প্রতিবেশী ওড়িশা, বিহার বা ঝাড়খন্ডের। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, নার্স বা সেবিকা পদে চাকরির উপযুক্ত তরুণী কি এ রাজ্যে নেই? উত্তর খু্ব সোজা। আগ্রহী প্রার্থী প্রচুর থাকলেও উপযুক্ত প্রশিক্ষিত প্রার্থী নেই।
এ রাজ্যের নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় খুবই সীমিত হওয়ার কারণে, আসন সংখ্যাও নিতান্ত নগণ্য। আজকাল অনেক অভিভাবক মোটা টাকা খরচ করে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মেয়েদের নার্সিং পড়াতে পাঠাচ্ছেন। রাজ্যে যথেষ্ট নার্সিং কলেজ বা প্রতিষ্ঠান থাকলে, তাঁদের অন্য রাজ্যে যেতে হত না।
সাবির চাঁদ
রেজিনগর, মুর্শিদাবাদ
আরও দুই
‘কয়েক জন’ (১৩-৫) চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চুনী গোস্বামীর মতোই কয়েক জন খেলোয়াড়ের নাম, যাঁরা একাধিক খেলায় দক্ষতার পরিচয় দিয়োছেন। আমি আরও দু’জনের নাম উল্লেখ করতে চাই, যাঁরা ফুটবল এবং হকি খেলায় সমান পারদর্শী ছিলেন।
এক জন হলেন বালু, যিনি ১৯৫৭ সালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বেটন কাপ জয়ী দলের নিয়মিত রাইট ইন খেলতেন এবং ১৯৬১ সালের ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কলকাতা লিগ এবং আইএফএ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন।
আর এক জন হলেন রবি দাস, ফুটবলে ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং ১৯৫৭ সালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বেটন কাপ জয়ী দলের নিয়মিত রাইট আউট খেলতেন।
দীপক সেনগুপ্ত
কলকাতা-৪৮
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।