জম্মু কাশ্মীরের পুরনির্বাচনের তৃতীয় দফায় ভোটদানের হার তিন শতাংশ; অর্থাৎ ১০০ জন কাশ্মীরির মধ্যে ৯৭ জন এই ভোট থেকে দূরে থেকেছেন। এর কারণ নিশ্চয় ভয় নয়, তা হলে এত পদপ্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারতেন না। বাকি থাকে একটাই— ভারতীয় গণতন্ত্রে অনাস্থা। কাশ্মীরিরা পাকিস্তানকে পছন্দ করেন কি না সেটা বিতর্কের বিষয়, তাঁরা যে ভারতকে পছন্দ করেন না, সেটা সন্দেহাতীত। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দক্ষতা কংগ্রেস সরকারের ছিল না— প্রতিশ্রুত গণভোট নেওয়ার সাহস তারা দেখায়নি। বর্তমান রাষ্ট্রনায়করা দমননীতির সাহায্যে পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তুলেছেন। তাঁরা এখনও মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন যে রবার বুলেট ছুড়ে আর স্পেশাল পুলিশ নিয়োগ করেই সমস্যার সমাধান হবে। আন্তর্জাতিক স্তরে তা যতই নিন্দিত হোক না কেন; এই পরিস্থিতি আমরা জিইয়ে রাখতে চাই। এত ভাল ‘রেড হেরিং’ সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রে আর পাওয়া যাবে না!
দেবাশিস মিত্র
কলকাতা-৭০
সাইফা প্রসঙ্গে
সাইফাকে সত্যি প্রশংসা করতে হয়। তবে সাইফা ১২ বছর পর্যন্ত স্কুলে না গিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসা প্রসঙ্গে কিছু প্রশ্ন (‘১২ বছরে মাধ্যমিকে...’, ২৭-১০)।
১) স্কুলে ৫ বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি না নেওয়ায় সাইফাকে বাড়িতে মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ দেন তাঁর বাবা-মা। এখানে বলা ভাল, সাইফা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু। তাকে প্রতিটি বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক দিয়ে উন্নত পাঠ দেওয়া উচিত। তার বাবা মায়ের দেওয়া পাঠ যথার্থ পরিপূরক তো? বাবা মায়ের বিষয় দক্ষতাকে খাটো করছি না। বাড়িতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক দিয়ে উন্নত পাঠ দেওয়া যেত।
২) সাইফা ৫ বছরে পঞ্চম শ্রেণির উপযোগী হয়। তার বাবার কথায় ৮ বছরে মাধ্যমিকের বই শেষ করে। তিন বছরে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির সিলেবাস শেষ করা সহজ কথা নয়। সাইফাকে শুধু মাধ্যমিকের অর্থাৎ দশম শ্রেণির পাঠ দেওয়া হয়নি তো? কারণ পূর্বাপর ক্লাসের জ্ঞান না থাকলে ভবিষ্যতে উন্নত পাঠ নিতে বাধা সৃষ্টি হবে।
৩) সাইফাকে মেধার ভিত্তিতে বয়স হিসাবে যে প্রশংসা করা হচ্ছে, সে দিক থেকে টেস্ট পরীক্ষায় প্রাপ্ত ৫২ শতাংশ নম্বর প্রশংসার দাবি রাখে না। সাইফা জানিয়েছে, শুধু পরীক্ষায় বসা-ই নয়, তার লক্ষ্য রাজ্যে প্রথম হওয়া। সে যদি বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক পড়ত তা হলে লক্ষ্যে পৌঁছনো হয়তো সহজতর হত। টেস্টের নম্বর দেখে সংশয় হয়, সে লক্ষ্যচ্যুত হবে না তো?
৪) সাইফার বাবা বলেন, ‘‘আমার মেয়ে মৌসুমির মতোই।’’ নিছক প্রতিদ্বন্দ্বিতার তাগিদে সাইফাকে বড় পরীক্ষায় নামানো হচ্ছে না তো? তা হলে কিন্তু তার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
৫) সাইফা টেস্টে পৃথক পৃথক বিষয়ে ৫২ শতাংশ নম্বর পায় তো তবু ঠিক আছে। যদি সব বিষয়ে গড় হয়, কোনও বিষয়ে যদি খুব কম নম্বর থাকে, তার দায় কে নেবেন?
৬) সাইফা নিজের তুলনা প্রসঙ্গে বলেছে রবীন্দ্রনাথ, আশাপূর্ণা দেবীর স্কুলে না যাওয়ার কথা। কিন্তু দুটো পরিস্থিতি আলাদা।
৭) বাড়ির মেয়েকে স্কুল-কলেজে পাঠাতে এখনও কিছু কিছু পরিবারের দ্বিধা থাকে। সাইফাকে আদর্শ করে বাড়িতে সন্তানকে পাঠ দিয়ে, বিদ্যালয়ের পাঠ থেকে বঞ্চিত করার প্রবণতা বাড়বে না তো? বিদ্যালয়ে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে পড়াশোনায় শিশুর সামাজিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে, সে কথা অস্বীকার করা যায় না।
সাইফার মতো উন্নত মেধার শিক্ষার্থীকে ঠিক পথে পরিচালিত করা কেবল পরিবারের নয়, রাষ্ট্রেরও কর্তব্য। এমন উন্নত মেধা সমাজ রাষ্ট্রের সম্পদ। তাকে যথার্থ পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে পরিবার, প্রশাসন কেউ দায় এড়াতে পারে না।
শ্রীমন্ত কুমার দাস
সবড়া রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবন,
পশ্চিম মেদিনীপুর
মানবদরদি
সুমিত চক্রবর্তীর ‘ক্লাসঘরে একটু নীতিবিদ্যার পাঠ?’ (৩১-১০) শীর্ষক নিবন্ধ পড়ে এক মানবদরদি জনপ্রিয় চিকিৎসক ডা. সাধন সেনের কথা মনে পড়ল। ১৯৫২ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করে শুধু গরিব দুঃস্থদের চিকিৎসা ও সমাজ গঠনের ভাবনা নিয়ে ১৯৫৪ সালের মে মাসে স্থায়ী ভাবে অশোকনগরে চলে আসেন। এই চিকিৎসকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেশা ও তাঁর সঙ্গে কিছু সামাজিক কাজকর্মে যুক্ত থাকার সুযোগ হয় আমার। তিনি বলতেন, রোগী ও চিকিৎসক একে অপরের পরিপূরক। চিকিৎসকের চিকিৎসাতে রোগী যেমন সুস্থ হয়ে ওঠেন, তেমনই চিকিৎসকও রোগীর থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন। সেই জন্য রোগী-চিকিৎসক সম্পর্ক ছাড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলতেন, চিকিৎসকরা সমাজের কাছে দায়বদ্ধ। কেননা অধিকাংশ চিকিৎসক সমাজের (সরকারের) পয়সায় চিকিৎসক হয়েছেন। তাই গরিব ও সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াটা দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। মনে রাখা দরকার চিকিৎসা পরিষেবা ব্যবসা নয়, সমাজসেবা। তাঁর ৫০ বছরের উপর চিকিৎসক জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এই কাজই করে গিয়েছেন। এখনও অশোকনগর ও হাবরার বৃহত্তর অঞ্চলের মানুষেরা, বিশেষ করে গরিব মানুষ, তাঁদের প্রিয় চিকিৎসকের অভাব অনুভব করেন। ডা. সেন ২০০৪ সালের ২২ অক্টোবর শারদ উৎসবের নবমীর দিন প্রয়াত হন। তিনি বিশ্বাস করতেন স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো জরুরি পরিষেবাগুলো বাণিজ্য-তুখড় মানুষদের হাতে ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়। ডা. সেন বলতেন, যদি নিজেদের সভ্য বলে দাবি করি, তা হলে উচিত দুর্বল আর অক্ষম মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। তাঁর উদ্যোগে হাবরা অশোকনগর-সহ সমগ্র উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতে আর্সেনিক, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, ডেঙ্গি প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়। তাঁর দাবি ছিল, আর্সেনিক জাতীয় সমস্যা, এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। তাঁর মৃত্যুর পর সরকার তার দায় স্বীকার করেছে। কিন্তু আর্সেনিকের সমস্যা দূর হয়নি। শহর মফস্সলের মানুষেরা জল কিনে পান করছেন। কিন্তু কেনা জলও কতটা নিরাপদ, সন্দেহ আছে। ডেঙ্গি মহামারির রূপ ধারণ করে। প্রতিরোধ আন্দোলন কোথায়? জন উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে তাঁর উদ্যোগে ১৯৯২ সালে ‘হাবরা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিকাশ কেন্দ্র’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে ওঠে। ডা. সেনের নেতৃত্বে এই সংগঠন হাবড়া অশোকনগর-সহ হাবরা-১ এবং হাবরা-২ ব্লকের অসংখ্য গ্ৰামে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নিয়ে আলোচনা সভা ও সচেতনতা শিবির সংগঠিত করে। এই সচেতনতার কাজে তিনি মহিলাদের উপর বেশি গুরুত্ব দিতেন। বহুমুখী সামাজিক কর্মধারা ছিল তাঁর সাধনা। জনদরদি এই চিকিৎসকের কর্মধারা স্মরণে রাখতে ডা. সাধন সেন স্মৃতি রক্ষা কমিটি প্রতি বছর ১৭ অক্টোবর তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে; দলমতনির্বিশেষে বহু মানুষ সেখানে আসেন। ডা. সাধন সেনের মৃত্যুর পর, উত্তর চব্বিশ পরগনার গুমার কাছে খোর্দবামনিয়া গ্ৰামে তাঁর হাতে গড়ে ওঠা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ডা. সাধন সেন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ফর ট্রপিক্যাল ডিজ়িজ়েস অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার নির্মাণ করছে। যেখানে গরিব দুঃস্থদের সুচিকিৎসা ও স্বল্প খরচে রোগ নির্ণয় করা যাবে।
আব্দুল অলিল
কলকাতা-১২৫
ভগবান
মানুষের মধ্যে ভগবান বিরাজ করেন। আমদের মন আমাদের দেহ— সর্বত্র তিনি। তা হলে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে নারীর শরীরে যখন ঋতুচক্র অসে, তখন সেই ক’দিন ভগবান কি দেহ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যান?
দেবজিত সেনগুপ্ত
কলকাতা-১২২
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।