Panihati

সম্পাদক সমীপেষু: আঁধার উৎসব

এ দিন প্রায় ভোরবেলা থেকেই চোখে পড়েছে কাতারে কাতারে মানুষ সোদপুর স্টেশন, কোন্নগর থেকে লঞ্চ ধরে মহোৎসবতলার দিকে রওনা হয়েছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২২ ০৫:০৮
Share:

সঙ্গীতশিল্পী কেকে-র মর্মান্তিক মৃত্যুর এক মাসও অতিবাহিত হয়নি। পানিহাটি দণ্ড মহোৎসবের দমফাটা ভিড় ও মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, তিলমাত্র শিক্ষাও আমরা নিইনি। প্রশাসন অপেক্ষায়, কখন কালের ফেরে সব বিস্মৃত হয়ে যাবে। কথিত আছে, সপ্তগ্রামের জনৈক জমিদার তনয় শ্রীরঘুনাথ দাস গোস্বামী অনেক অনুসন্ধানের পর তাঁর পরম আরাধ্য নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর দেখা পান এই মহোৎসবতলা ঘাটে। সেটা ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দ (৯২৩ বঙ্গাব্দ), জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ত্রয়োদশী। প্রভু তাঁর কাহিনি শোনামাত্র আশীর্বাদের বদলে তাঁকে অমোঘ দণ্ডনিক্ষেপ করেন, বাড়ির স্ত্রী-সন্তানদের একা ফেলে রেখে আসার জন্য। সে দণ্ড ছিল, স্থানীয় সব ভক্তকে পেটপুরে দই-চিঁড়ে খাওয়াতে হবে। এ কারণেই ‘দণ্ড’ মহোৎসব বা ‘চিঁড়া-দধি’ উৎসব। লোকমুখে এখন তার নাম হয়েছে ‘চিঁড়ের মেলা’। পাঁচশো বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাসে বহু মনীষীর পায়ের ধুলো পড়েছে ৭০০ বছরের সুপ্রাচীন বটবৃক্ষটিকে ঘিরে আবর্তিত হওয়া এই উৎসবে। কিন্তু এমন বিশৃঙ্খলা, প্রাণহানির নজির আজ অবধি নথিবদ্ধ হয়নি। শ্রীরামকৃষ্ণদেব প্রায় প্রতি বছর দক্ষিণেশ্বর থেকে এই উৎসবে যোগ দিতে আসতেন। স্বামী অদ্ভুতানন্দ, অর্থাৎ লাটু মহারাজের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, এখানে এসে এক বার শ্রীরামকৃষ্ণ সমাধিস্থ হয়েছিলেন, তাঁর পায়ের ধুলো নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ, উন্মাদনা বরাবরের, কিন্তু তা সামলানোর ব্যবস্থাও ছিল। বাম আমলে দেখেছি, তৎকালীন পুরপ্রধান সশরীরে সকাল থেকে রাত অবধি মেলার ভিড়ে দাঁড়িয়ে খুঁটিনাটি তদারকি করছেন। এ বার সপ্তাহখানেক আগে দেখলাম, ঘাটের মুখগুলো ব্যারিকেড করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বহু রাস্তাও উৎসবের দিন পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। ফলস্বরূপ পুণ্যার্থীদের যাতায়াত করতে হয়েছে একটিমাত্র সঙ্কীর্ণ পথ দিয়ে। এ কি বিচক্ষণতার পরিচয়?

Advertisement

এ দিন প্রায় ভোরবেলা থেকেই চোখে পড়েছে কাতারে কাতারে মানুষ সোদপুর স্টেশন, কোন্নগর থেকে লঞ্চ ধরে মহোৎসবতলার দিকে রওনা হয়েছেন। স্টেশন থেকে গঙ্গাতীর, এই দীর্ঘ পথের পাশে রাত থেকেই বাটি হাতে দেখা মিলছে কয়েকশো ভিক্ষুকের। ভিড়ের এই গতিপ্রকৃতি বুঝে তখন থেকেই কি ব্যবস্থা করা যেত না? এই প্রাণবিদারক গরমে স্থানে স্থানে জলসত্র, বিশ্রামাগার রাখা যেত না? প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক, মেডিক্যাল টিম, পুলিশি নিয়ন্ত্রণ আপৎকালীন ব্যবস্থার অংশ হয়ে অবতীর্ণ হবে আর কত দিনে? গুচ্ছের হোর্ডিং ছাপিয়ে ‘চিঁড়ের মেলায় পুণ্যার্থীদের স্বাগত’ জানালেই এই ভ্রান্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা তার দায় এড়াতে পারে না। ইডেনে খেলা কিংবা ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা থাকলে যেমন বিশেষ মেট্রো কিংবা স্থানীয় রেল পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়, এই উৎসবের গুরুত্ব বুঝেও কি তেমন কিছু করা যেত না? এমন অপ্রীতিকর ঘটনা নিশ্চিত ভাবেই পানিহাটির ইতিহাসকে কালিমালিপ্ত করল।

সায়ক সিংহ, কলকাতা-১১০

Advertisement

পুজোয় কী হবে

‘দমবন্ধ ভিড়, বলি ৩ প্রাণ’ (১৩-৬) সংবাদ প্রসঙ্গে এই পত্র। কেন ভিড়ের বলি হলেন তিন জন ভক্ত, ইতিমধ্যে সকলেই জেনেছেন। পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন পানিহাটির এই উৎসবে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী ব্যতীত ভিন্ন ধর্মের মানুষরাও আসেন। অতিমারি-উত্তর কালে এ বারের উৎসবে যে পুণ্যার্থীদের ঢল নামবে, জানা ছিল। একে তো উৎসবস্থলে প্রবেশপথ অপ্রশস্ত, আর পুণ্যস্থানের সঙ্গে জড়িত থাকে মেলা। বেলাগাম ভিড়কে সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা যথেষ্ট ছিল কি না, কেন বিপুল পুণ্যার্থীর প্রবেশ আগেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি, বা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল কি না, এখন এই সব প্রশ্ন উত্থাপন অহেতুক। অতীতে এ রকম দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে বহু ধর্ম সমাবেশ। কোনও সদুপদেশ পুণ্যার্থী সমাগমকে আটকাতে পারেনি, পারবেও না। করোনা এবং কঠোর আইন সক্ষম হয়েছিল জনসমাগম কিছুটা রুখতে। পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হতেই ফের হিড়িক বেড়েছে। ‘দণ্ড মহোৎসব’-এ ভিড় ও দুর্ঘটনা তার সাক্ষ্য বহন করে।

এ সব দেখে একটা আতঙ্ক-আবহ এখন থেকেই ঘাপটি মেরে বসেছে মনের মধ্যে। ইউনেস্কো-স্বীকৃত এ বারের দুর্গোৎসবের কাউন্ট-ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। এ বারের পুজোর আয়োজন, বিদেশিদের কাছে পুজো-দর্শনের আহ্বান, কর্পোরেট স্তরে আমাদের দুর্গাপুজোকে দর্শনীয় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। সফল হলে বিদেশিদের ঢল নামবে কল্লোলিনীর পথে। বিখ্যাত পুজো-কর্তারা তাঁদের সেরার সেরাটা উপহার দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। তীব্র প্রতিযোগিতা চলবে ভিড় টানাতেও। সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণের, এবং সার্বিক নিরাপত্তার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে প্রশাসন চিন্তাভাবনা করছে তো? উৎসব-মুখর মানুষের ঢল যাতে বিপর্যস্ত না হয়, তার একটা আগাম বার্তা প্রদানটুকু খুব জরুরি। কলকাতা পুলিশমহল বরাবর যে ভাবে পুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। তবু এই ‘দণ্ড মহোৎসব’-এর দুর্ঘটনা আর এক বার ভাবাবে প্রশাসনকে।

ধ্রুবজ্যোতি বাগচী, কলকাতা-১২৫

পুণ্যের খোঁজে

যে ভাবে কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রচণ্ড ভিড়ের চাপে পুণ্যার্থীরা বার বার নিহত ও আহত হচ্ছেন, তা লজ্জার ও উদ্বেগের। “হুঁশ নেই, পুণ্যার্থীর ‘মৃত্যু মেলা’ তাই চলতেই থাকে” (১৩-৬) সংবাদটি পড়লে একের পর এক উদাহরণ মেলে। ২০১৪-য় তারকেশ্বর মন্দির যাওয়ার পথে ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে রেলগেটে পড়ে এক মহিলার মৃত্যু, ২০১৯ সালে জন্মাষ্টমীর দিন কচুয়ায় লোকনাথ বাবার মন্দিরে পাঁচিল ভেঙে পাঁচ জনের মৃত্যু— এ সব ঘটনা থেকে কোনও শিক্ষা কি নিতে পেরেছি আমরা? কেনই বা পারিনি? দায় কার? ভিড় সমাগমের সম্ভাবনা দেখা দিলে পর্যাপ্ত পুলিশিব্যবস্থা, স্বেচ্ছাসেবক, ডাক্তার, অ্যাম্বুল্যান্স, দমকল, জল প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তাদের অনেক সতর্ক ও সাবধানি হতে হবে।

গৌতম মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১০১

আগাম প্রস্তুতি

বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, কোথাও দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে সরকার তৎপরতার সঙ্গে মৃত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করছে। কিন্তু দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, তার আগাম ব্যবস্থা করতে খুব বেশি তৎপরতা দেখা যায় না। অন্য দিকে, জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ঘটনা ঘটার পর যতটা তৎপরতা দেখা যায়, ঘটনার আগে সুস্থ সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সেটা দেখা যায় না। তাই এই ধরনের উৎসব-মেলা অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়ার আগে প্রশাসনের আয়োজকদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন বিশেষ প্রয়োজন। তা না থাকায় পানিহাটিতে বিপর্যয় ঘটল। এর দায় আয়োজক ও প্রশাসন, কেউই এড়িয়ে যেতে পারে না। এ বছর কত সংখ্যক ভক্তের সমাগম হতে পারে, এবং আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা বুঝে ব্যবস্থা করতে না পারা আয়োজক ও প্রশাসনের ব্যর্থতা।

অপূর্বলাল নস্কর, ভান্ডারদহ, হাওড়া

ভিড় কমাতে

পূর্ব রেলের মাঝারি, দূরপাল্লার প্রায় সমস্ত ট্রেন হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ছাড়ে এবং এখানেই ফেরত আসে। মেট্রো পরিষেবা দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে বালি, দক্ষিণেশ্বর ও ডানকুনি— এই তিনটি স্টেশনে হাওড়া, শিয়ালদহ থেকে ছাড়া ও ফেরত-আসা ট্রেনগুলিকে পরিকল্পনা মতো থামানো যায়। এতে প্রান্তিক স্টেশন হাওড়া, শিয়ালদহে ভিড় অনেক কমবে। দক্ষিণেশ্বর মেট্রো ব্যবহার করে মধ্য, দক্ষিণ কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি অঞ্চলের যাত্রীদের ট্রেন ধরতে ও গন্তব্যে পৌঁছতে খুব সুবিধা হবে। মেট্রো রেলের লাভও বাড়বে।

মানস দেব, কলকাতা-৩৬

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement