সম্পাদক সমীপেষু:অনশনের যুক্তি

গত তিন বছর ধরে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে কোনও স্বচ্ছ কাউন্সেলিং হয়নি। অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে নোংরা হস্টেলে দিন কাটিয়েছেন বহু ছাত্র। কর্তৃপক্ষ নরম ভাবে ছাত্রদের বুঝিয়েছিলেন, নতুন যে ১১ তলা বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে সেটা শেষ হয়ে গেলেই কাউন্সেলিং হবে, হস্টেল সমস্যার সমাধান হবে। নতুন বিল্ডিং তৈরি হওয়ার পরে দেখা যায়, অ্যালটমেন্টের ব্যাপারে গত তিন বছর ধরে হস্টেল পাননি যে ছাত্রেরা, কিংবা এত দিন যাঁরা তিন জনের ঘরে পাঁচ জনে গাদাগাদি করে থেকেছেন, তাঁরা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share:

মেডিক্যাল কলেজের অনশন আন্দোলন।নিজস্ব চিত্র।

মেডিক্যাল কলেজের অনশন আন্দোলন সম্পর্কে স্বাতী ভট্টাচার্যর ‘দাবি মেটাতে মরণ পণ?’ (৯-৮) নিবন্ধের কিছু প্রতিপাদ্য: ১) “একটি ন্যায্য প্রয়োজনকেও দাবি করে তুলতে হলে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।” ২) “দলমত নির্বিশেষে, মানবিকতার নির্দেশে মানুষ যে সমর্থন জানায়, রাজনীতির দানে তাকে তুরুপের তাস করলে সেটা নাগরিকের অপমান।” ৩) ‘‘যদি নাগরিক কার্যক্রম রাজনীতির খেলার ‘এক্সটেনশন’ হয়ে যায়, সে তো ভয়ানক কথা।” ৪) “কিন্তু রাজনৈতিক দলে টানার কাজটা কি খুব নির্বিষ?....ধর্ষকামী আর আনুগত্যকামী দু’জনেই চায় অন্যে আমায় মানুক, বিনা প্রশ্নে।”

Advertisement

ঠিক কী দাবিতে অনশন হল? গত তিন বছর ধরে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে কোনও স্বচ্ছ কাউন্সেলিং হয়নি। অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে নোংরা হস্টেলে দিন কাটিয়েছেন বহু ছাত্র। কর্তৃপক্ষ নরম ভাবে ছাত্রদের বুঝিয়েছিলেন, নতুন যে ১১ তলা বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে সেটা শেষ হয়ে গেলেই কাউন্সেলিং হবে, হস্টেল সমস্যার সমাধান হবে। নতুন বিল্ডিং তৈরি হওয়ার পরে দেখা যায়, অ্যালটমেন্টের ব্যাপারে গত তিন বছর ধরে হস্টেল পাননি যে ছাত্রেরা, কিংবা এত দিন যাঁরা তিন জনের ঘরে পাঁচ জনে গাদাগাদি করে থেকেছেন, তাঁরা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন না। অগ্রাধিকারের ভিত্তি বা মানদণ্ড অস্পষ্ট। অভিযোগ ওঠে, নিজেদের ইচ্ছেমতো কর্তৃপক্ষ কোনও রকম কাউন্সেলিং ছাড়াই হস্টেলের ঘর দিচ্ছেন প্রথম বর্ষের ছাত্রদের। এমন অভিযোগও ছিল, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ছাত্রদেরও নতুন হস্টেলে ঘর পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমসিআই-কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কর্তৃপক্ষের যুক্তি, প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সঙ্গে তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের ছাত্রদের রাখা যাবে না। যদিও এমসিআই এ রকম mandate দেয়নি। বরঞ্চ উল্টোটা আছে— ৭৫% ছাত্রের হস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে, প্রত্যেকের জন্য খাট, টেবিল, চেয়ার ও ঘরে কমপক্ষে একটি করে আলমারি, এমনকি হস্টেলে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করার কথা।

ছাত্রদের বক্তব্য ছিল, প্রথম বর্ষের ছাত্রদের হস্টেল দেওয়ার পরেও ১১ তলা বিল্ডিংয়ের বাকি ফ্লোরগুলোতে সিট বণ্টনের জন্য স্বচ্ছ কাউন্সেলিং হোক। প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের ছাত্রদের মাঝে সেগ্রিগেশনের এই চাপান-উতোরে ছাত্ররা প্রশ্ন তোলেন: তা হলে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট (পিজিটি) ছাত্রছাত্রীরা প্রথম বর্ষের সঙ্গে থাকবেন কোন যুক্তিতে। প্রশ্ন ওঠে নতুন পিজিটি-র ছাত্রীদের হস্টেলের মান, নিরাপত্তা নিয়েও। ছাত্রদের প্রথম দিনের ঘেরাও উর্দি পরা এবং চটি পরা ‘পুলিশ’ দিয়ে তুলে দেওয়া হয়। অথচ সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটেছে প্রাক্তন প্রিন্সিপাল জে বি মুখোপাধ্যায়ের সময়ে। দীর্ঘ সময় হস্টেলে জলের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা ঘেরাও করেছিলেন তাঁকে। পুলিশ ঢুকতে চেয়েছিল। তাঁর উত্তর ছিল: প্লাম্বার ডেকে আনুন, ছেলেদের জল দরকার।

Advertisement

শেষ অবধি সমস্ত দুয়ার বন্ধ দেখে, ১০ জুলাই দুপুর দুটো থেকে অনশনে বসেন ৬ জন ছাত্রছাত্রী। পরে আরও ১৫ জন যোগ দেন অনশনে, এঁদের মধ্যে এক জন মেয়ে ছিলেন স্বর্ণময়ী হস্টেলের, আর এক জন ডে বোর্ডার। উল্লেখযোগ্য, হিংস্রতা যখন মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে জনসমাজে সেখানে ছাত্রদের এই আন্দোলন ছিল passive resistance। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফে কখনও রাতে আলো নিভিয়ে, কখনও পুলিশ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মায়েদের ভয় দেখানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

অস্যার্থ, হঠাৎ করে কোনও রাজনৈতিক অভীপ্সা থেকে এ আন্দোলন গড়ে ওঠেনি, ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলো একটু একটু করে দানা বেঁধেছে। প্রিন্সিপাল এ সামান্য জায়গাটিতে নিজেকে ছাত্রদের প্রতিপক্ষ এবং প্রতিস্পর্ধী করে তুলে কোথায় নিয়ে গেলেন? মেডিক্যাল কলেজকে মিলিটারি ক্যাম্পের চেহারা দিয়ে দিলেন? এই মেধাবী, উজ্জ্বল ছাত্রেরা গুলি-বন্দুক-পেটো চালাতে জানেন না। এঁদের কানে স্টেথো, হাতে স্ক্যালপেল।

মেডিক্যাল কলেজের অন্যান্য হস্টেলে এ সমস্যা হয়নি। শঙ্খ ঘোষ বলেছিলেন: “পেটের কাছে উঁচিয়ে আছো ছুরি/ কাজেই এখন স্বাধীনমতো ঘুরি/ এখন সবই শান্ত এবং ভালো।” মেন হস্টেলের ছেলেরা আরও হাজারখানেক ছাত্রের জন্য এ রকম স্বাধীনমতো ঘোরার পরোয়া করেননি। তাতেই এত বিপত্তি। আর ‘বিকল্প’ অনশন সম্ভব। কিন্তু passive resistance-এর জোর আসে বিশ্বাস থেকে, আদর্শগত অবস্থান থেকে। নইলে দিনে অনশন, রাতে অশন— আমরা ১৯৭৬-এ মেডিক্যাল কলেজেই দেখেছি সে সময়ের ক্ষমতাসীন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের মধ্যে। ফলে নাগরিক সমাজকে এ রকম বিপদের মুখে পড়তে হত বলে মনে হয় না।

পার্টি সংগঠনের ক্ষেত্রে যে প্রশ্নহীন আনুগত্য ধর্ষকামীদেরও তুরুপের তাস, তা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের যূথবদ্ধতার সঙ্গে এক সুরে বাঁধা যায় না। এখানে ভিন্নমত শোনার পরিসর বিস্তৃত।

মেডিক্যাল কলেজের সর্বশেষ পরিস্থিতি: অনশন ওঠার পরে দু’সপ্তাহ পার হয়েছে। এখনও হস্টেল কাউন্সেলিংয়ের তারিখ দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। লিস্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে, হস্টেল ভেকেন্সি কত আছে, কত আবেদনকারী, কোন ইয়ার, দূরত্ব কত ইত্যাদি তৈরি। তবু অদ্ভুত কোনও কারণে কাউন্সেলিং-এর তারিখ ঠিক হচ্ছে না। ১০ তারিখের হস্টেল কমিটির মিটিংও সিদ্ধান্তহীন, কারণ পরাক্রমী নেতার মিটিং-এ ডাক পড়ল প্রিন্সিপালের। মিটিং-এর ওখানেই ইতি।

ক’দিন বাদে শুরু হবে সিমেস্টার। দুটো ইয়ারের। মেন হস্টেলের ফোর্থ ফ্লোরের ফলস সিলিং-এর অবস্থা মারাত্মক। সিমেস্টারের আগেও পিজি/মেস থেকে হস্টেল পেলেন না এক জনও। কত সময় লাগতে পারে স্বচ্ছ হস্টেল কাউন্সেলিংয়ের আয়োজন করতে? নাকি কালক্ষেপ করার পিছনে অন্য পরিকল্পনা?

ডা. জয়ন্ত ভট্টাচার্য

রায়গঞ্জ

আমার কী হবে

আমি নদিয়া জেলার এক গরিব, অসহায়, জেনারেল কাস্টের ছেলে। বহু কষ্ট করে জনমজুর খেটে পড়াশোনা করেছি। বিএ, লাইব্রেরি সায়েন্স, কম্পিউটার ডিপ্লোমা কোর্স পাশ করেছি। বয়স ৩৩। আমি এক জন ইসি (এক্সেম্পটেড ক্যাটেগরি)। তবুও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে একটাও চাকরি পেলাম না। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন চাকরির শূন্যপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ইসি-দের ৩০% আসন সংরক্ষিত। কিন্তু বাস্তবে এটা কি সত্যিই মানা হচ্ছে? বহু বার কাগজপত্র নিয়ে ‘নবান্ন’তে গিয়েছি। খাতায় সই করে এক তলার সিএমও অফিসে গেলে আমাকে বার বার তাড়িয়ে দিয়েছেন। আমার কাগজপত্র দেখা তো কোন ছার, কথাও শোনেননি কেউ। বহু বার গিয়েছি এক্সেম্পটেড অফিসে, সেখানেও প্রায় ঘাড়ধাক্কা খাওয়া অবস্থায় নিরাশ হয়ে ফিরেছি, এখনও ফিরছি। বহু বিজ্ঞাপনে রাজ্য সরকার ইসি কোটা রাখছে না; রাখলেও তা আশানুরূপ নয়। বিভিন্ন নিয়োগের আগে বিজ্ঞাপনে ইসি-দের আবেদন করতে নিষেধ করা হয়, বলা হয় ইসি অফিস থেকে সরাসরি নাম পাঠানো হবে।

ইসি সংরক্ষণ নিয়ে, নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠছে বার বার। এই সংরক্ষণ যথাযথ ভাবে কার্যকর না করার অভিযোগ তুলে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল (স্যাট)-এ একটি মামলাও চলছে। বিভিন্ন দফতরের হাজার হাজার শূন্য পদে যোগ্যতা অনুযায়ী ইসি-দের সরাসরি নিয়োগ করা হচ্ছে না কেন?

অনিমেষ বন্দ্যোপাধ্যায়

নদিয়া

ঠিক নয়

‘দুই ধারা’ (কলকাতার কড়চা, ১৩-৮) প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ‘আমার প্রাণের ’পরে চলে গেল কে’ গানটি কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পরে রচনা করেন। তথ্যটি ভুল। গানটি ১২৯০ বঙ্গাব্দে ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। কাদম্বরীর মৃত্যু পরের বছর, ১২৯১ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে।

দিলীপ মুখোপাধ্যায়

কলকাতা-২৯

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement