সম্পাদক সমীপেষু: নগ্নতা ও ফেসবুক

১৯৭২ সালে ৮ জুন উত্তর ভিয়েতনামের দখলে চলে যাওয়া ‘ট্রাং ব্যাং’ গ্রাম আক্রমণ করে দক্ষিণ ভিয়েতনামের এয়ারফোর্স। সেখান থাকা দক্ষিণ ভিয়েতনামের সৈনিক ও সাধারণ মানুষ আত্মরক্ষার জন্য পালাচ্ছিলেন দক্ষিণ ভিয়েতনামের দখলে থাকা অঞ্চলের দিকে। এ দিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামের এয়ারফোর্স তাঁদের উত্তর ভিয়েতনামি ভেবে ভুল করে ন্যাপাম বোমা ফেলতে শুরু করে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

‘‘অশনি-সঙ্কেতকে ‘যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ’ ভাবল ফেসবুক’’ শিরোনামে প্রকাশিত (১-১১) খবরে, যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইয়েমেনের অনাহারক্লিষ্ট কন্যা, আমাল হুসেনের ছবি মার্ক জ়াকারবার্গের সংস্থা ফেসবুক থেকে নগ্নতা প্রদর্শনের কারণ দেখিয়ে প্রথমে ব্লক করা ও পরের দিন প্রবল প্রতিবাদের মুখে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘটনা পড়ে, ঠিক একই রকম আর একটা ঘটনার কথা মনে এল।

Advertisement

চিত্রসাংবাদিক নিক উট-এর বিখ্যাত ‘ন্যাপাম গার্ল’-এর (ছবিতে) বেলায় এ রকমটাই ঘটেছিল। নিক উট জন্মেছিলেন ভিয়েতনামে ১৯৫১ সালের ২৯ মার্চ। দাদা আমেরিকার ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’-এর (এপি) সাংহাই অফিসের চিত্রগ্রাহক ছিলেন। উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিজ়মের বিরুদ্ধে আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহায়তায় দক্ষিণ ভিয়েতনাম সরকারের এই যুদ্ধের চিত্র তোলার কাজ করতেন তখন নানান প্রেসের অনেক চিত্রগ্রাহক। বিভিন্ন পত্রিকায় সে ছবি ছাপা হত। আমেরিকান সরকার সে সব ছবিকে তাদের যুদ্ধের কৃতিত্ব রূপে ও সৈনিকদের মনোবল বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করত। এ রকমই এক চিত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে নিক উটের দাদা ১৯৬৫-তে যুদ্ধক্ষেত্রেই মারা যান। দাদার মৃত্যুর পরই মায়ের সঙ্গে এপি অফিসে গিয়ে নিক তখন কাজ চান। ফটোগ্রাফির কোনও প্রথাগত পাঠ তাঁর ছিল না। প্রথমে স্টুডিয়োয় কেমিক্যাল মেশানো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ দেওয়া হয় তাঁকে। নিজস্ব আগ্রহে ও দক্ষতায় মাত্র দু’বছরের মধ্যেই ফটোগ্রাফির সমস্ত কাজ শিখে নেন।

১৯৭২ সালে ৮ জুন উত্তর ভিয়েতনামের দখলে চলে যাওয়া ‘ট্রাং ব্যাং’ গ্রাম আক্রমণ করে দক্ষিণ ভিয়েতনামের এয়ারফোর্স। সেখান থাকা দক্ষিণ ভিয়েতনামের সৈনিক ও সাধারণ মানুষ আত্মরক্ষার জন্য পালাচ্ছিলেন দক্ষিণ ভিয়েতনামের দখলে থাকা অঞ্চলের দিকে। এ দিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামের এয়ারফোর্স তাঁদের উত্তর ভিয়েতনামি ভেবে ভুল করে ন্যাপাম বোমা ফেলতে শুরু করে। একটি নগ্ন বাচ্চা মেয়েকে ও তার সঙ্গে আরও কিছু বাচ্চাকে কালো ধোঁয়ার মধ্যে থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসতে দেখেই নিক উট ছবি তোলা শুরু করেন। ৯ বছর বয়সি বাচ্চা মেয়েটির নাম ‘ফান থি কিম ফাক’। তাদের বাড়ি ছিল ‘ট্রাং ব্যাং’ গ্রামেই। ন্যাপাম বোমার প্রবল উত্তাপে মেয়েটির এক হাত ও শরীরের পিছনের দিক সম্পূর্ণ ঝলসে যায়। কয়েকটি ছবি তোলার পর কাছাকাছি আসতেই মেয়েটির এই অবস্থা দেখে নিক নিজের গাড়িতে করে মেয়েটিকে, তার ভাইকে ও অন্য বাচ্চাদের নিয়ে মিলিটারি হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

Advertisement

ছবি পাঠানো হল ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এ। প্রথমে তো এডিটর নগ্নতার কারণে ছবিটি ছাপাতেই আপত্তি করলেন। পরে আলোচনার পর ও ছবির গুরুত্ব বুঝে ছবিটির ‘ক্রপ্ড ভার্শান’ পরের দিনের সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বড় করে ছাপা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই সে ছবি ‘যুদ্ধের ভয়াবহতা’ শিরোনামে সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। এমনিতেই বেশির ভাগ সাধারণ আমেরিকাবাসী মানুষ এই ভিয়েতনাম যুদ্ধকে অযৌক্তিক বলে মনে করতেন। তার ওপর এই ছবি, যুদ্ধের নৃশংস ও নগ্ন রূপ চোখের সামনে এনে ফেলল। এবং এতই প্রবল সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল, আমেরিকা যুদ্ধ থেকে পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। ভিয়েতনামে দীর্ঘ কুড়ি বছরের অধিক সময় ধরে চলা এক বীভৎস হত্যালীলার অবসানে তাই এই ছবির অবদান কল্পনাতীত। এই ছবির জন্য নিক উট ১৯৭৩ সালে পুলিৎজ়ার পুরস্কার পান এবং এই ছবিকে ওই বছরই ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অব দি ইয়ার’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।

নরওয়ের লেখক টম অ্যাজল্যান্ড ২০১৬ সালে ‘যুদ্ধের ভয়াবহতা’ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেখানে এই বিখ্যাত ছবিটি যুক্ত করেন। সেখান থেকে নরওয়ের প্রায় অর্ধেক মন্ত্রী ছবিটি শেয়ার করেন। ফেসবুকের সিইও, মার্ক জ়াকারবার্গ ফেসবুক থেকে ‘ন্যাপাম গার্ল’-এর ছবি ‘সম্মুখ নগ্নতা’র কারণ দেখিয়ে মুছে দেন। ঐতিহাসিক ছবিটিকে মুছে দেওয়ায় সারা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। নরওয়ের সংবাদপত্রে জ়াকারবার্গকে ‘পৃথিবীর সব চেয়ে ক্ষমতাবান সম্পাদক’ বলে কটাক্ষ করা হয়। অবশেষে বহু বিরোধিতার চাপে জ়াকাররবার্গ ফেসবুকে ছবি পুনঃস্থাপিত করতে বাধ্য হন।

কোন ছবি নগ্নতা প্রদর্শনের আর কোন ছবি পৃথিবীর সামনে শুধু যুদ্ধের ভয়াবহতাকেই তুলে ধরছে, এটুকু বোঝার ক্ষমতা না থাকলে জ়াকারবার্গরা এ ভাবে বারে বারেই পৃথিবীর কাছে ধিক্কৃত হবেন।

সুধেন্দু সরকার

কলকাতা-৩১

অঙ্গন কর্মীর ভাতা

‘বাড়িয়েও ভাতা কমল অঙ্গন কর্মীর’ (৮-১১) শীর্ষক প্রতিবেদনটি বিভ্রান্তিকর। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ২৩-০৮-২০১৮ তারিখে রাজ্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের জন্য ১০০০ টাকা সাম্মানিক বৃদ্ধি হ্রাস করা হয়েছে। এটি সত্য নয়। সত্য হল— এই বৃদ্ধি বহাল আছে এবং পুরোটাই রাজ্য সরকার নিজস্ব বাজেট থেকে বহন করছে।

এই বর্ধিত সাম্মানিকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে ২০-০৯-২০১৮ তারিখে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ঘোষিত সাম্মানিকের ৪০% রাজ্য সরকারের প্রদত্ত অংশ এবং ০১-১১-২০১৮ তারিখে এই দফতরের ঘোষিত অতিরিক্ত সাম্মানিক।

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বর্ধিত সাম্মানিক হল ১৯০০ টাকা, যার মধ্যে ৯০০ টাকা কেন্দ্রীয় সরকার ও ১০০০ টাকা রাজ্য সরকার এবং সহায়িকাদের বর্ধিত সাম্মানিক হল ১৪৫০ টাকা যার মধ্যে ৪৫০ টাকা কেন্দ্রীয় সরকার ও ১০০০ টাকা রাজ্য সরকার বহন করছে।

অভিজিৎ মিত্র

যুগ্মসচিব, শিশু ও নারী বিকাশ ও সমাজ কল্যাণ দফতর,

পশ্চিমবঙ্গ সরকার

প্রতিবেদকের উত্তর: রাজ্য সরকার যে অতিরিক্ত সাম্মানিক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে এসেছে, সেটাই ছিল প্রতিবেদনের অভিমুখ। কারণ, ২৩ অগস্ট, ২০১৮ তারিখের বিজ্ঞপ্তিতে (No.4537-SW/P/3SF-14/12 Pt.1) রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সহায়কদের অতিরিক্ত সাম্মানিক মাথাপিছু প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে বাড়ানো হবে। সেই সূত্রে তখন তাঁদের মোট অতিরিক্ত সাম্মানিকের পরিমাণ ১৮৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছিল ২৮৫০ টাকা।

কিন্তু গত ১ নভেম্বরের দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে (5867- SW/P/35F-14/12 Pt.1) অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ক্ষেত্রে ১৮৫০ টাকার সঙ্গে ৪০০ টাকা যুক্ত করে অতিরিক্ত সাম্মানিক করা হয়েছে ২২৫০ টাকা। এবং অঙ্গনওয়াড়ি সহকারীদের ক্ষেত্রে ওই ১৮৫০ টাকার সঙ্গে ৭০০ টাকা যুক্ত করে প্রাপ্যের মোট অঙ্কটা দাঁড়াচ্ছে ২৫৫০ টাকা।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সাম্মানিক ৩০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা বাড়িয়ে প্রতি মাসে ৪৫০০ টাকা এবং অঙ্গনওয়াড়ি সহকারীদের সাম্মানিক ১৫০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ২২৫০ টাকা করেছিল। তবে আইসিডিএস প্রকল্পের আওতায় সাম্মানিক দেওয়া হয় কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ বরাদ্দ থেকে। কেন্দ্র দেয় ৬০ শতাংশ এবং রাজ্য দিচ্ছে ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সাম্মানিকের বর্ধিত ১৫০০ টাকার মধ্যে ৬০০ টাকা দিচ্ছে রাজ্য। অঙ্গনওয়াড়ি সহকারীদের সাম্মানিকের বর্ধিত ৭৫০ টাকার মধ্যে ৩০০ টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার।

এই অংশটির সঙ্গে নিজেদের অতিরিক্ত সাম্মানিকের বর্ধিত অংশের যোগফল ১০০০ টাকা। যেমন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ক্ষেত্রে ৪০০+৬০০ এবং অঙ্গনওয়াড়ি সহকারীদের ক্ষেত্রে ৭০০+৩০০। সেই দিক থেকে রাজ্য সরকারের বাড়তি অবদান ১০০০ টাকাই হচ্ছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উভয়কেই অতিরিক্ত সাম্মানিক হিসেবে মাথাপিছু এবং প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement