এক সপ্তাহব্যাপী সিরিয়াল ইন্ডাস্ট্রির অচলাবস্থার অবসান ঘটল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় মেগাসিরিয়ালে মগ্ন রাজ্যবাসী ধন্য ধন্য করল মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক দক্ষতার। পাশাপাশি বেশ কিছু প্রশ্ন অমীমাংসিত থেকে গেল। প্রথমত, সাড়ে ছ’বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যে কোনও সমস্যার সমাধানের জন্য কেন মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়? পাহাড়, জঙ্গলমহল, ভাঙড়, যাদবপুর, ছাত্রভর্তি, বাসভাড়ার জট, রেশনের বিলি বন্দোবস্ত, বেসরকারি হাসপাতালের দৌরাত্ম্য, ডেঙ্গি থেকে টলি-টেলিউডের অচলাবস্থা- হরেকরকমবা সমস্যা সমাধানের জন্য কেন দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি উঠে এলেন না? প্রযোজক, শিল্পী থেকে কলাকুশলী প্রায় সকলেই শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় কী ভাবে? রাজ্যবাসীর এক বড় অংশ আজ বোকাবাক্সের পানে চেয়ে বিনোদনতৃপ্ত হয়। সিরিয়াল বন্ধ সমস্যার চটজলদি সমাধান যদি হয় মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে, তিনি খুব সহজেই দর্শকদের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন। এ কম প্রাপ্তি নয়! তবে ট্রেনে, বাসে, চায়ের দোকানে একাধিক জনকে এই ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করতে দেখেছি। কারও কাছে তা ড্রামা, কারও কাছে ‘গট আপ’। এক ভদ্রলোক তো চার্লি চ্যাপলিন অভিনীত সিনেমার উপমা দিলেন, যেখানে ছেলে জানলার কাচ ভাঙার পর, বাবা এসে কাচ সারাই ফেরি করত।
রাজশেখর দাস
কলকাতা-১২২
রাস্তার জন্য
আমার মেয়ে পাঁচপোতা, নিউগড়িয়া এলাকার নেতাজি সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। এই কলেজে যাওয়ার প্রধান রাস্তা কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনে নেমে টোটো। এই রাস্তার দু’কিলোমিটার জায়গাকে এখন আর রাস্তা বলা যায় না। বিশাল বড় বড় পুকুরের মতো গর্ত আর মাঝে কিছু ইটের টুকরো ফেলা। মাঝে মধ্যেই টোটো উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে। ওই রাস্তায় গত এক বছর যাতায়াত করে আজ আমার মেয়ে Spinal chord disc degeneration এ আক্রান্ত। বেশি ক্ষণ বসা, দাঁড়ানো বা হাঁটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র উনিশ বছর বয়সে যা কল্পনাতীত। এমতাবস্থায় নেতাজি সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষ (টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ) তথা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বিনম্র অনুরোধ, কলেজ যাওয়ার রাস্তা তৎপরতার সঙ্গে মেরামত করা হোক।
ইন্দ্রাণী কর্মকার
কলকাতা-৯৪
পাশ-ফেল চাই
‘শৈশব কেড়ে নেওয়ার ঐতিহ্য’ শীর্ষক (২২-৮) নিবন্ধে পিয়ালী পাল পাশ–ফেল ফিরিয়ে আনার বিরুদ্ধতা করেছেন। লিখেছেন, “পাশ-ফেল মানে তো আসলে শিশুদের শৈশবটাকেই ছিনিয়ে নেওয়া।’’ কিন্তু পাশ-ফেল থাকলে “যে শৈশবে সে নানা কল্পনায়, কৌতূহলে পৃথিবীটাকে জানতে শেখে, জ্ঞানার্জনের সেই সজীব পদ্ধতিটাকেই কবরে ঠেলে দেওয়া এবং নিজেদের দায় সম্পূর্ণ ঝেড়ে ফেলে অন্যায়ের শিকার শিশুদের ঘাড়েই তাদের ব্যর্থতার দায় চালান করে দেওয়া” হবে কেন, বোঝা গেল না। তিনি নিজেই বলেছেন, প্রথম পরীক্ষায় অঙ্কে ফেল করায় তাঁর যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাতে আর কখনও ফেল করেননি। প্রবাদ আছে: failures are the pillars of success. ব্যর্থতা থেকেই মানুষ সফল হতে শেখে। শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে যে, এক বার ফেল করলেই সব শেষ হয়ে যায় না।
লেখিকা যে CCE –এর কথা বলেছেন, তা চালু করার পরিকাঠামো যে দেশে নেই, সেটা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। শিশু শিক্ষা অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, ছাত্রশিক্ষক অনুপাত ও পরিকাঠামো যা থাকার কথা, তা কার্যত কোথাও নেই। অথচ এই আইন অনুযায়ী পাশ-ফেল তুলে দেওয়া হয়েছে। বহু প্রাথমিক স্কুলে এক জন মাত্র শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষের অভাব। এ অবস্থায় CCE অর্থহীন নয় কি?
বর্তমান পরীক্ষাব্যবস্থার অনেক ত্রুটি থাকলেও, শিশু কতটা শিখল এবং শিক্ষক কতটা শেখাতে পারলেন, তার মূল্যায়নের এর থেকে ভাল পদ্ধতি আর কিছু আছে কি? কলকাতা ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, বিজ্ঞানী সুশীল কুমার মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, পাশ-ফেল প্রথা শুধু ছাত্রের মূল্যায়ন নয়, শিক্ষকদেরও মূল্যায়ন। পাশ–ফেল না থাকায় যে ছাত্ররা কিছুই শিখছে না এবং শিক্ষার মানের গুরুতর অবনতি হয়েছে—এটা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সমীক্ষাতেই প্রকাশ পেয়েছে। যে হেতু প্রাথমিক স্তরই শিক্ষার ভিত্তি গড়ে তোলে, তাই দেশের শিক্ষানুরাগী জনসাধারণ প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ-ফেল ফেরানোর দাবি করেছেন এবং এ নিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এ নিয়ে টালবাহানা করছে।
আসলে কোনও সরকারই চায় না জনগণ প্রকৃত শিক্ষা লাভ করুক, কারণ টলস্টয়ের কথায়, “জনগণের অজ্ঞতাই সরকারের শক্তির উৎস।’’ আর সরকারগুলি চায় সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে তা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে, যাতে তারা শিক্ষাকে নিয়ে ব্যবসা করে মুনাফা অর্জন করতে পারে। ফলে যাঁরা পাশ-ফেলের বিরোধিতা করছেন তাঁরা শিক্ষাকে বেসরকারিকরণের পথে ঠেলে দিতে চাইছেন না কি?
প্রদীপ কুমার দত্ত
অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ,
প্রেসিডেন্সি কলেজ
চাই না
পিয়ালী পালের নিবন্ধের বক্তব্য একদম ঠিক। গিনিপিগের ন্যায় পড়ুয়াদের ওপর একটার পর একটা পদ্ধতির গবেষণা চলবে, কিন্তু অন্বেষণ করব না সঠিক পথ। জ্বর হয়েছে অতএব প্যারাসিটামল খাইয়ে দাও। শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়ন মানে যেখানে কেন্দ্র রাজ্য চাপানউতোর, যেখানে একই ঘরে দুই ক্লাস চলে, যেখানে ছাত্র অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ হয় শ্রেণি অনুপাতে না হয়ে, যেখানে শিক্ষক নিয়োগ কোর্টের বিচারাধীন থাকে বছরের পর বছর, সেখানে ছাত্রের ফেল করা অন্যায় কোথায়? যে ছাত্রটি প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া, যার বাড়িতে পড়া বলে দেওয়ার কেউ নেই, বাবার পয়সা নেই অতএব গৃহশিক্ষক নেই, যে বিদ্যালয়ের শিক্ষককে পায় বছরের মাত্র ২০০ দিন, তার ফেল করাটাই শুধু অন্যায়? CCE কেন ফলপ্রসূ হল না, তা অনুসন্ধান করা হোক। তার পর ফিরুক পাশ-ফেল।
অভিজিৎ কাপাস
রাজনগর, পশ্চিম মেদিনীপুর
স্কুলের সমস্যা
শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী প্রতি তিন কিলোমিটারের মধ্যে উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু পঞ্চম থেকে অষ্টম এই চারটি শ্রেণির পঠনপাঠন এই স্কুলগুলোয় হলেও, অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংখ্যা তিন, এক জন গ্রুপ ডি, প্রধান শিক্ষক এবং ক্লার্ক নেই। তিন জন শিক্ষকের মধ্যে এক জন বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত অথবা বৈধ ছুটিতে। পঠনপাঠনের জন্য দৈনিক শিক্ষক গড়ে দুই। অধিকাংশ স্কুলে কম্পিউটার নেই, কিন্তু বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যকলাপ— শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী, নির্মাণ কাজের জন্য ই-টেন্ডার, শিক্ষক ও অন্য কর্মীদের বেতন এখন অনলাইনে করতে হচ্ছে। ফলে স্কুলের বাইরে গিয়ে এগুলো করতে হচ্ছে, গোপনীয়তা বজায় থাকছে না, সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। বরং এই স্কুলগুলিকে নিকটবর্তী হাই স্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হোক এবং সরকারি উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে পৌঁছনোর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হোক। তা হলে ছাত্র, শিক্ষক সকলেই উপকৃত হবেন এবং সরকারের কোষাগারেও খরচ কমবে।
সুমন্ত কোঙার
মুগুড়া, পূর্ব বর্ধমান