বুদ্ধদেব বসু।
অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বুদ্ধ-প্রত্যয়’ (পত্রিকা, ১১-১) প্রবন্ধে বলেছেন, ‘‘সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর লেখক সোমেন চন্দের খুনের ঘটনাতেও’ বুদ্ধদেব বসু ‘প্রতিবাদ’ নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন।’’ বুদ্ধদেব কিন্তু চল্লিশের দশকে বিপরীত মেরুর ছিলেন না।
প্রগতি লেখক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৩৬ সালে প্রগতি লেখক সঙ্ঘের দ্বিতীয় সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছিলেন। সোমেনের হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি তাঁর ‘কবিতা’ পত্রিকায় এক বলিষ্ঠ সম্পাদকীয় লেখেন: ‘‘ঢাকার তরুণ সাহিত্যিক সোমেন চন্দের হত্যার সংবাদে বাংলার মনীষীমহলে যে উত্তেজনা প্রকাশ পেয়েছে তা একান্তই সঙ্গত। সংবাদপত্রের বিবরণ থেকে বোঝা যায় যে এ হত্যাকাণ্ডের পিছনে পূর্ব সংকল্প ছিল এবং এর নিছক নৃশংসতাও অকথ্য...’’ শুধু সম্পাদকীয় নয়, বুদ্ধদেব ‘সভ্যতা ও ফ্যাসিজম’ নামে একটি মর্মস্পর্শী পুস্তিকাও রচনা করেন।
অর্ঘ্যবাবু তাঁর লেখায় বুদ্ধদেব বসুর ‘রবীন্দ্র দ্রোহের’ (১৯২৬) কথা উল্লেখ করেছেন। সে দ্রোহ কল্লোলীয় উত্তেজনার ফল। পথরোধ করে বসে আছেন (অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের কবিতা) যে রবীন্দ্র ঠাকুর, আত্মপ্রকাশের সুযোগ দিচ্ছেন না নবীনদের, তাঁর বিরুদ্ধে দ্রোহ। কিন্তু ১৯৩৬ সালে কলকাতার আশুতোষ হলে প্রগতি লেখক সঙ্ঘের দ্বিতীয় সম্মেলনে বুদ্ধদেব বসু যে-ভাষণ দিয়েছিলেন, তার মধ্যে প্রগতি লেখক সঙ্ঘের দৃষ্টিকোণ প্রতিফলিত। সম্মেলনে রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। পৌষ উৎসবে ব্যস্ত থাকায় তিনি সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেননি। পাঠিয়ে দিয়েছিলেন লিখিত অভিভাষণ। সে-ভাষণে শিল্প-সাহিত্য সম্বন্ধে কোনও বক্তব্য ছিল না; ছিল এশিয়ার পুনর্জাগরণ, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ইত্যাদি রাজনৈতিক প্রসঙ্গ। এই সম্মেলনে মুলকরাজ আনন্দ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় ও পণ্ডিত সুদর্শনকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল সভাপতিমণ্ডলী।
অমৃতবাজার পত্রিকা বুদ্ধদেব বসুর ভাষণের শিরোনাম দিয়েছিল: 'The age of Rabindranath is no more'. বুদ্ধদেবের ভাষণের বিষয় ছিল, ‘আধুনিক বাংলা সাহিত্য : আধুনিক লেখকদের অবস্থা’। ভাষণে তিনি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলেন: ‘‘বোধ হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথের অতুলনীয় প্রতিভা আমাদের বুর্জোয়া-সংস্কৃতির সমস্ত সৃজনশীল ও প্রগতিশীল শক্তিকে আত্মস্থ করে তা প্রায় নিঃশেষ করে ফেলেছে। কেননা কাব্যে অথবা গদ্যে যাঁরাই তাঁর অনুগামী তাঁরা তাঁকে অন্ধভাবে অনুকরণ করলেন আর আজ তার পরিসমাপ্তি ঘটেছে।... যে যুগ রবীন্দ্রনাথকে সৃষ্টি করেছে, বহুদিন আগেই তা অতিক্রান্ত হয়েছে।’’ ( নেপাল মজুমদারের ‘ভারতে জাতীয়তা ও আন্তর্জাতিকতা এবং রবীন্দ্রনাথ’ ৫ম খণ্ড থেকে উদ্ধৃত)। তখনকার বুদ্ধদেব বসুর কথায় ‘মার্কসবাদী’ পত্রিকায় লিখিত ভবানী সেনের ক্ষীণ প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই।
দিলীপ মজুমদার
কলকাতা-৬০
ক্ষতিপূরণ
এনআরসি, সিএএ বাতিলের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্যে যখন সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করা হয়েছিল, তখন বিজেপি নেতৃত্বের কেউ কেউ দাবি তুলেছিলেন, ভাঙচুর যারা করেছে, তাদের কাছ থেকেই ক্ষতিপূরণ আদায় করা হোক। কিন্তু জেএনইউ ক্যাম্পাসে গুন্ডাবাহিনী যে-তাণ্ডব চালাল, তাতেও তো প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের জন্য বিজেপি নেতৃত্বের কেউ তো ক্ষতিপূরণ দাবি করলেন না! কেন?
রতন চক্রবর্তী
উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
আম আমাদেরই
‘আমও কিন্তু বহিরাগত’ (৮-১) শীর্ষক পত্রে লেখক আমকে জন্মসূত্রে বিদেশি বলে দাবি করেছেন। কিন্তু আম যে এই উপমহাদেশেরই ফল, তা ইতিহাসের বিখ্যাত পর্যটকগণ: ফা-হিয়েন, হিউয়েন ৎসাং, ইবন বতুতা, ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ে— প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন।
তবে আম চাষকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার দাবিদার পর্তুগিজ ও স্পেনীয় বণিক সমাজ। ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজরা গোয়া থেকে আফ্রিকায় আম নিয়ে যায়। ১৭০০ সালে স্পেনীয়রা নিয়ে যায় ব্রাজিল ও ফিলিপিন্সে। এর পর ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তারা ফিলিপিন্স থেকে আম নিয়ে যায় মেক্সিকোতে। ১৮২৫ সালে মিশর ভারত থেকে আমের চারা আমদানি করে এবং পরে সেখান থেকে নিয়ে যায় ইজ়রায়েলে।
১৮৩৩ সালে মেক্সিকো থেকে আমের চারা পৌঁছয় ফ্লরিডায়। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা ভারত থেকে আম নিয়ে যান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নানা স্থানে। মালয়েশিয়ায় উৎকৃষ্ট আমের প্রজাতিগুলি গিয়েছে ভারত থেকে প্রায় ষোলো-সতেরোশো বছর আগে।
ব্রাজিল হয়ে ১৭৪০ সালে আম পৌঁছয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে। ফিলিপিন্স হয়ে ১৮৬৫ সালে মোলাস্কাস পৌঁছয়। তার বেশ কয়েক বছর আগেই মোটামুটি অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আম পৌঁছেছিল ইয়েমেনে। এ তালিকা ইচ্ছে করলেই আরও অনেক বাড়ানো যেতে পারে।
ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে আমের গভীর সম্পর্কই প্রমাণ করে আম স্বদেশজাত একটি ফল। ভারতীয় সাহিত্যে আমকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে, যথা: চূত, মোকান্দ, মদির, সখ, কামাঙ্গ, সরম, মধুদূত, অঙ্গনপ্রিয়, পিকবল্লভ, ইত্যাদি।
কৌটিল্য ও বাৎস্যায়ন আমের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। বাল্মীকি ও তুলসীদাসের রামায়ণে ও ব্যাসদেবের মহাভারতে গুরুত্ব-সহ আমের বর্ণনা পাওয়া যায়।
মৎস্যপুরাণ ও বায়ুপুরাণে কালো আমের উল্লেখ আছে, যার রসপানে মানুষ অমরত্ব লাভ করে। ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম্’ কাব্যে কালিদাস আমের মঞ্জরীর বর্ণনা দিয়েছেন। ‘মেঘদূত’ কাব্যে তিনি আম্রকুট নামে এক পাহাড়ের বর্ণনা দিয়েছেন।
প্রাচীন সঙ্গীতশাস্ত্রে দু’টি রাগের নামকরণ হয়েছে আমকে ব্যবহার করে: আম-তাকেস্বর ও আম পঞ্চম।
প্রদীপনারায়ণ রায়
শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ
সাম্যবাদ
ভারতের কোথাও সাম্যবাদ এসেছে কি না জানা নেই, কিন্তু শিয়ালদহ (সাউথ) সেকশনের ট্রেনগুলিতে চাপলে বোঝা যায়, সাম্যবাদ কী।
ধরুন আপনি শিয়ালদহ থেকে অনেক কষ্টে সিট পেয়ে নির্দিষ্ট স্টেশনের দিকে যাত্রা শুরু করেছেন। কোনও এক জন সাম্যবাদী পুরুষ বা মহিলা এসে আপনাকে বলবেন, ‘‘দাদা, আপনি অনেক ক্ষণ বসেছেন, এ বার উঠুন। আপনি একাই পুরোটা রাস্তা বসে যাবেন? আমরাও তো টিকিট কেটেছি!’’
অরূপরতন আইচ
কোন্নগর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।