‘একশোয় একশো পাশ মাধ্যমিকে’ (২১-৭), এ রাজ্যের শিক্ষার ইতিহাসে এক অনন্য নজির। তবে এ ছাড়া মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আর কোনও উপায় ছিল না। করোনার অজুহাত দেখিয়ে পরীক্ষা না হওয়ার জন্য কোনও পরীক্ষার্থী যদি ফেল করত, এবং সে যদি এ ব্যাপারে আদালতের দ্বারস্থ হত, তা হলে সরকার বা শিক্ষা দফতর আর এক বিড়ম্বনায় পড়ত। এই বিড়ম্বনা এড়াতে সকল ছাত্রছাত্রীকে পাশ করাতে হয়েছে।
তবে পরীক্ষা না হওয়ার জন্য পরিকল্পনাহীনতা এবং ব্যর্থতার দায় বর্তায় রাজ্য সরকারের উপর। কারণ, গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে এ রাজ্যে করোনা সংক্রমণের হার ছিল খুবই কম। ঠিক সেই সময়ে হোম সেন্টারে করোনার বিধিনিষেধ মেনে মাধ্যমিক/ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা না করে জুন মাসে পরীক্ষার দিন পরিবর্তন করা হয়। এর মূল কারণ, শিয়রে বিধানসভা নির্বাচন। ওই সময়ে পরীক্ষাগুলো হলে যদি কোনও অঘটন ঘটে, তা হলে বিরোধীদের সমালোচনার সম্মুখীন হওয়ার ভয়, এবং অন্য দিকে, করোনার ভয় দেখিয়ে পরীক্ষা বাতিল করে অভিভাবকদের সহানুভূতি আদায়ের প্রচেষ্টা, এই দুই তাগিদে পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। ফলে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে অন্যের উপহাস বয়ে বেড়াতে হবে সারা জীবন। পরীক্ষা না দিয়ে পাশ করার জন্য তারা নিজেদের অপরাধী বলে মনে করবে। আগামী দিনে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে, কিংবা চাকরির ক্ষেত্রে, এ বছরের মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরকে সত্যিই কি গুরুত্ব দেওয়া হবে? নাকি এই মার্কশিটকে মূল্যহীন কাগজের মতো বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন?
তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
এত ঘর কই?
২০২১-এর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ভুল বললাম। এ বছর তো পরীক্ষাটাই হয়নি। তার আবার ‘ফল’ কিসের? পরীক্ষার্থীদের কাছে, বিশেষ করে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কাছে, বৃক্ষহীন এই সুদর্শন ফলের স্বাদ যে আদৌ লোভনীয় হবে না, সে কথা বলা বাহুল্য। এ বারের মাধ্যমিকে একশো শতাংশ উত্তীর্ণ এবং তার মধ্যে ৯০ শতাংশের প্রথম বিভাগ প্রাপ্তি আশ্চর্য করেছে। যেমন অবাক করেছে এই খবর যে, ৬৯৭ নম্বর পেয়ে ৭৯ জন প্রথম হয়েছে। প্রতি বছরই মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভর্তি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়, একটা বড় সংখ্যার অনুত্তীর্ণদের বাদ দিয়েও। এ বছর একশো শতাংশ উত্তীর্ণ হয়েছে, সুতরাং, ভর্তি সমস্যা যে কী সাংঘাতিক পর্যায়ে পৌঁছবে, তা সহজেই অনুমেয়। ভর্তি যদিও বা সম্পূর্ণ হয়, ক্লাসরুমে ছাত্রসংখ্যার কথা এক বার কল্পনা করুন!
কোভিড আমাদের কিছুটা হলেও অনলাইন পঠনপাঠনের সঙ্গে পরিচিত হতে শিখিয়েছে। কোভিড আমাদের যে শিক্ষা দিয়ে গেল, তা হয়তো আমাদের আগামী দিনের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে। মাধ্যমিকে যে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী এ বার একাদশে ভর্তি হবে, তাদের পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে অনলাইন পদ্ধতি ছাড়া গত্যন্তর আছে কি না, সন্দেহ আছে। জানি না ক্রমশ ক্লাসরুমটাই হারিয়ে যাবে কি না!
অমরনাথ কর্মকার, কলকাতা-১৫০
স্কুলের ভূমিকা
পরীক্ষা বাতিলের পর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তৎপরতায় যে ফল প্রকাশিত হল, তা অভিনব। ‘নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং দশম শ্রেণির ইন্টারনাল ফর্মেটিভ অ্যাসেসমেন্ট-এর নম্বরকে সমান গুরুত্ব দিয়ে’ এ বারের মূল্যায়ন। এই মূল্যায়নকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দানা বেঁধেছে। মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের আক্ষেপ, তাদের সঠিক মূল্যায়ন হল না! কিন্তু অতিমারি আবহে পর্ষদের কাছে এ ছাড়া আর বিকল্প উপায় ছিল না। যে দুটো পরীক্ষার ভিত্তিতে পর্ষদকে এগোতে হয়েছে, সে দুটো পরীক্ষাই ছিল প্রতিটি স্কুলের আওতায়। ফলাফল, একাধিক রেকর্ড ও নম্বরের ছড়াছড়ি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার মূল্যায়ন নিয়ে। যে হেতু মূল্যায়নের মূল কান্ডারি প্রতিটি স্কুল কর্তৃপক্ষ, তাই স্কুলের পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতে পর্ষদের ভূমিকা ছিল কেবল মার্কশিট প্রস্তুত ও ফল প্রকাশ করা। আগামী দিনে সঠিক মূল্যায়নের স্বার্থে স্কুলগুলোকে আরও বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। কে বলতে পারে, আগামী বছরও প্রতিটি স্কুলের ভূমিকা পর্ষদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠবে না?
অমরেশ পাল, সাহাগঞ্জ, হুগলি
তামাশা নয়
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এ বছর মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সমাজমাধ্যমে ট্রোলিং-এর ঝড় বয়ে গেল। দেশের এই পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়াটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। রাজ্য সরকার যেখানে ইমেলের মাধ্যমে মতামত চেয়েছিল রাজ্যের মানুষের কাছে, সেখানে বেশির ভাগই মাধ্যমিক না হওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন। তা হলে আজ কিসের এত হাসাহাসি, তামাশা? নবম ও দশম শ্রেণির ‘ইন্টারনাল ফর্ম্যাটিং ইভ্যালুয়েশন’-এর ভিত্তিতে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা হবে, এ তো পূর্বেই ঘোষিত হয়েছিল। এই পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। তবে এর মধ্যে যারা প্রকৃত যোগ্য, তারা ভবিষ্যতে নিজেদের স্থান অবশ্যই দখল করে নেবে। কিছু ছাত্রছাত্রী আছে, যারা সারা বছর পড়াশোনা করেছে, এবং মনের মতো নম্বরও পেয়েছে। সমাজমাধ্যমে ব্যঙ্গ এবং মিমের জন্য তারা নিজেদের আনন্দটুকু কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারছে না। সকল ছাত্রছাত্রী মানসিক ভাবে সমান হয় না। আজ কিছু স্থূল রসিকতার জন্য কোনও ছাত্রছাত্রী যদি আত্মহননের পথ বেছে নেয়, তা হলে এর দায়ভার আমরা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে পারব তো?
সুপান্থ বিশ্বাস, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ
দক্ষ কর্মী আছে?
অতিমারির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি দীর্ঘ দিন বন্ধ। এতে বিজ্ঞান বা কারিগরি বিভাগের ক্লাসগুলোর প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়গুলির ক্ষেত্রে হাতে-কলমে কাজ ও প্রয়োগশালার গুরুত্ব অপরিসীম। হয়তো কয়েক মাস পরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পঠনপাঠন চালু হবে। কিন্তু তত দিনে ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি বা কম্পিউটারগুলো কতটা কর্মক্ষম থাকবে, প্রশ্ন আছে। সব প্রতিষ্ঠান একই সময় চালু হবে ধরে নিলে প্রতিষ্ঠানগুলিতে ল্যাবরেটরি সংক্রান্ত রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থার বিপুল চাহিদা তৈরি হবে। কিন্তু সেই অনুপাতে দক্ষ কর্মী তাদের আছে কি না, সেটাও ভেবে দেখার।
প্রিয়দর্শী মজুমদার, কলকাতা-২৮
স্কুলছুট নয়
‘দু’লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী কি স্কুলছুটের দলে’ (২১-৭) প্রতিবেদনটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। স্কুলছুট হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অতিমারি পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা ভাবলেও আতঙ্কিত হতে হয়। কিন্তু প্রতিবেদকের মতে, স্বাভাবিক অবস্থায় নবম থেকে দশম শ্রেণিতে ওঠার সময় পড়ুয়ার সংখ্যায় যে ছাঁটাই হয়, এ বার তা হয়নি। তথ্যটি ভুল। কারণ ২০২১-এ যাদের মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হল, তারা নবম শ্রেণিতে পড়ত ২০১৯ সালে এবং সে বছরই তাদের বোর্ডে নাম নথিভুক্ত হয়। ওই বছর তারা স্কুলের সব পরীক্ষাই দেয় ও কিছু শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। এই অকৃতকার্য পড়ুয়ারা এ বছর দশম শ্রেণিতে রয়েছে (যে হেতু ২০২০-তে সকলকেই নবম থেকে দশমে উত্তীর্ণ করে দেওয়া হয়)। আশা করা যায়, ওই দু’লক্ষেরও বেশি উধাও হয়ে যাওয়া পড়ুয়ার কিছু দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। স্কুলছুট হয়নি।
প্রদীপ সর্দার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা