Abortion Law

সম্পাদক সমীপেষু: অকারণ খবরদারি

গর্ভপাত নিষিদ্ধকরণ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানোটা কি নারী স্বাধীনতার উপর খবরদারি বা নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন নয়?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২২ ০৪:৩১
Share:

দেবাঞ্জন সেনগুপ্তের ‘যাঁর জরায়ু, তাঁর অধিকার নয়?’ (২৯-৬) প্রবন্ধ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন। আমেরিকা প্রথম শ্রেণির একটি উন্নত রাষ্ট্র। সে দেশের সুপ্রিম কোর্টই যদি ৫০ বছর পরে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে হঠাৎ পিছন ফিরে হাঁটতে শুরু করে, তবে অন্যান্য অনেক দেশ, যেখানে গর্ভপাত আইনকে শিথিল করার চেষ্টা চলছে, বা যেখানে বিষয়টা বিবেচনাধীন, সেখানে এই সিদ্ধান্তের কুপ্রভাব পড়া কি অস্বাভাবিক? দ্বিতীয়ত, সারা বিশ্বে যখন প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে, নানা ভাবে দূষণে মানুষের দুর্গতির অন্ত নেই, ঠিক তখন গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার অর্থ জনবিস্ফোরণকে পরোক্ষে স্বীকৃতি দেওয়া নয় কি? তৃতীয়ত, গর্ভপাত নিষিদ্ধকরণ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানোটা কি নারী স্বাধীনতার উপর খবরদারি বা নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন নয়?

Advertisement

এবং শেষ প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্টের এই অবিশ্বাস্য রায়ের মারাত্মক প্রভাব পড়তে বাধ্য দরিদ্র শ্রেণির উপর; যাঁদের পক্ষে শিথিল-আইনের রাষ্ট্রে গিয়ে গর্ভপাত করানোর বিষয়টি বাস্তবিকই অসম্ভব। এ ব্যাপারে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়ে ওই সমস্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের অন্য বহু সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এ-হেন ক্ষতিকর দিকগুলি কি নতুন ভাবে বিবেচনা করে দেখবেন আমেরিকার সর্বোচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারকগণ?

Advertisement

শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া

উন্নততর জীবন

আমেরিকার সর্বোচ্চ আদালত নারীর গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে রায় দিল। এই বিষয়টি যে অভিধায়, এবং যে সকল স্পর্শকাতর শব্দচয়নে সম্পাদকীয় কলমে উপস্থাপন করা হয়েছে (‘অন্ধকারের উদয়’, ২-৭), সে সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। ১৯৭৩ সালের ঐতিহাসিক রায়ে গর্ভপাতের অধিকার আইনি মান্যতা পেয়েছিল যে যুক্তিতে, সেটা কেবলমাত্র অযৌক্তিকই নয় বরং প্রচ্ছন্ন ভাবে অন্য রকম ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দেওয়া। গর্ভপাত, যা অন্য কথায় ভ্রূণ-হত্যা, তা কখনও মৌলিক অধিকার হতে পারে না। স্বাধীনতার অধিকার তো নয়ই, শোষণের বিরুদ্ধে অধিকারও বলা যায় কি? উপধারার যত রকম ক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে গৰ্ভাধান প্রক্রিয়া আসে না, আসতে পারে না। কারণ, সেখানে বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীর প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সেই গর্ভ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কোনও এক জন, এমনকি নারীর নিজেরও থাকতে পারে না। ভ্রূণ-হত্যা বাস্তবিকই শিশু-হত্যা, তথা মানব-হত্যারই নামান্তর।

ভ্রূণ-হত্যা করা পাপ ধর্মের কারণেই। এখানে ‘পাপ’ ও ‘ধর্ম’ যে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে, তাকে মান্যতা না দিয়ে, ধর্মকে তাচ্ছিল্য করে, গণতান্ত্রিক অধিকার বিচারের মাপকাঠি হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এই প্রয়াস নিন্দনীয়। পক্ষান্তরে বলা যায়, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার একটি কৌশলী উপায়মাত্র। অধিকার দানের অছিলায় নারীর তথা মাতৃত্বের অবমাননা, মানবজাতির অবমাননা। পাশাপাশি, স্বেচ্ছাচারকে আইনি মান্যতা দেওয়া। সাম্প্রতিক রায় সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে বেঁধে রেখে উন্নততর জীবনবোধে উন্নীত করতে পারে। এ-হেন জীবনশৈলী সভ্য সমাজের কাম্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। সে ক্ষেত্রে ‘অন্ধকারের উদয়’ বলাটা এক অবিবেচনাপ্রসূত বাগাড়ম্বর মনেহতে বাধ্য।

সনৎ কুমার পাল, সিঙ্গুর, হুগলি

অযোগ্য পাত্র

সম্প্রতি এক সংবাদপত্রে স্কুলশিক্ষক ব্যতীত উপযুক্ত পাত্রের খোঁজ চেয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। তা নিয়ে সমাজমাধ্যম ও সংবাদপত্র রীতিমতো সরগরম (‘পাত্র চাই, তবে স্কুলশিক্ষক নয়’, ২৭-৬)। এই বিজ্ঞাপনটি সত্তর-আশির দশকের শিক্ষকদের অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কথা মনে করিয়ে দেয়। তখন শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, কোনও মেয়ের বাবা পাত্র হিসেবে স্কুলশিক্ষকের চেয়ে নিচু পদে কর্মরত পুলিশকর্মীদের শ্রেয় বলে মনে করতেন। তখন শিক্ষকরা যে বেতন পেতেন, তা দিয়ে সংসার চালানো খুবই কঠিন ছিল। শিক্ষকদের বেতন ও তাঁদের পাত্র হিসেবে নির্বাচন করা নিয়ে নানা রসালো গল্প ও হাস্যকৌতুক লোকমুখে শোনা যেত। পরনে ধুতি-পাঞ্জাবি, পায়ে চপ্পল, হাতে লম্বা ছাতা ও চোখে চশমাওয়ালা এক জন আদর্শ শিক্ষকের সঙ্গে ‘প্লেন লিভিং অ্যান্ড হাই থিঙ্কিং’ কথাটি খুবই মানানসই ছিল। বামফ্রন্টের আমলে আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে শিক্ষকদের বেতন বাড়তে থাকে। নব্বইয়ের দশকে শিক্ষকরা সমাজে আর্থিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হন। সেই সময় থেকেই শিক্ষক পাত্র মেয়ের বাবাদের কাছে লোভনীয় হয়ে ওঠে।এমনকি ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার ছেড়ে পাত্রীর পরিবার শিক্ষকদের পাত্র হিসেবে পাওয়া বেশি পছন্দ করতে শুরু করে।

২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষা থেকে শুরু করে আপার প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্ট অনিয়ম ও অবৈধ ভাবে নিয়োগের কারণে বহু শিক্ষকের চাকরি বাতিল ঘোষণা করেছে। এমতাবস্থায় ‘স্কুলশিক্ষক ছাড়া উপযুক্ত পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন মোটেই অস্বাভাবিক ও অর্থহীন নয়। এমন তো হতে পারে যে, শিক্ষক পাত্রের সঙ্গে বিয়ের পর জানা গেল শিক্ষকের চাকরি নেই। তখন সে ধকল তো পাত্রীর পরিবারকেই পোহাতে হবে। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে পাত্রীর পরিবার ঠিকই করেছে। বিজ্ঞাপনটি অত্যন্ত অর্থবহ, ব্যঞ্জনাধর্মী ও তাৎপর্যপূর্ণ।

হারান চন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

শূন্য পদ

ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের সঙ্গে ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতর সংযুক্তিকরণের ফলে ওই বিভাগের বর্তমান নাম হয়েছে, ‘ল্যান্ড অ্যান্ড ল্যান্ড রিফর্মস অ্যান্ড রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ডিপার্টমেন্ট’। এই সংযুক্তিকরণে এক দিকে যেমন কাজের বহর বেড়েছে, অন্য দিকে কর্মীদের অবসর গ্রহণের জন্য হুহু করে বেড়েছে শূন্যপদের সংখ্যাও। রাজ্যের ১৬টি জেলা বেড়ে হয়েছে ২৩টি, অর্থাৎ ৪৩ শতাংশ। ফলে, ভূমি অধিগ্রহণ দফতরের সংখ্যাও বেড়ে হয়েছে ২৩টি। সারা রাজ্য জুড়ে এই দফতরে ২০০৯-এ মোট সার্ভেয়ার ছিলেন ২০৪ জন। তার থেকে ৭২ জন সার্ভেয়ার অবসর নেওয়ায় এখন রয়েছেন ১৩২ জন। এরই মধ্যে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্প, যার সার্থক রূপায়ণে আরও বেশি সার্ভেয়ার দরকার।

ভূমি অধিগ্রহণ দফতরের কাজ মূলত সার্ভেয়ার-ভিত্তিক হলেও জমিজটে আটকে থাকা বিভিন্ন দায় সামলাতে হয় ভূমি অধিগ্রহণ আধিকারিকদের। ব্লক অফিসগুলি (বিএল অ্যান্ড এলআরও) থেকে প্রোমোশন পেয়ে, কিংবা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অনেকে এই পদে আসীন হন। ফি বছর তাঁদের সংখ্যা বাড়লেও সার্ভেয়ারদের সংখ্যা সেই হারে বাড়েনি।

১৯৮৯ সালে রাজ্য জুড়ে বিভাগীয় পরীক্ষায় ৭৫ জন সার্ভেয়ার নিযুক্ত হয়েছিলেন, যা ছিল সার্ভেয়ার নিয়োগে রাজ্যের সর্ববৃহৎ পদক্ষেপ। ২০০৯-এর পর এক দশকেরও বেশি নিয়োগ না হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ দফতর জমিজটের সমস্যা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। বিলম্বজনিত কারণে আদালতের রায়ে সরকারকে গুনতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার খেসারত। এক দিকে গ্যাস অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড, অন্য দিকে ভারতমালা প্রকল্পের জাতীয় সড়ক— এই সব বাড়তি কাজের ঝক্কি সামলাতে সার্ভেয়ারদের নাজেহাল অবস্থা।

এভারেস্ট অভিযানের শতবর্ষ পূর্তি, ও সার্ভেয়ার রাধানাথ সিকদারের স্মরণে সার্ভেয়ারের সঙ্কট মেটাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে আবেদন করছি। আরও সার্ভেয়ার নিয়োগ করে জনকল্যাণমুখী কাজ ত্বরান্বিত করা হোক।

অমরেশ পাল, ইন্দা, খড়্গপুর

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement