বাজেটে বঞ্চিত যারা। — ফাইল চিত্র।
এ বছরের বাজেটে অসংগঠিত ক্ষেত্রের জন্য বরাদ্দ কতটা সীমিত, সীমন্তিনী মুখোপাধ্যায় তা স্পষ্ট দেখিয়েছেন (উন্নয়নের বাইরে যাঁরা, ৩-২)। যে কোনও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের যেগুলি প্রধান সমস্যা— ক্ষুধা, অসাম্য, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি— সেগুলো রুখতে গেলে কৃষি, শিশুপুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দলিত-জনজাতি, মহিলাদের উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। বাজেটে বরং এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিই অবহেলিত থেকে গিয়েছে। আমরা দেখলাম ধনিক শ্রেণির ব্যবহার্য উপকরণে, বড় কর্পোরেটের উপরে কর কমানো হয়েছে। দেশে ‘অমৃতকাল’ সমাগত বলে নাকের সামনে যে গাজর ঝোলানো হচ্ছে, তা এই মুষ্টিমেয় লোকের আর্থিক উন্নতির বহর দেখিয়েই। মধ্যবিত্তের আয়কর কমানো হয়েছে বলে যে প্রচার চলছে, সেটি ভাঁওতাবাজি। বস্তুত ৮০সি ধারার আওতাভুক্ত স্কিমগুলির (স্বাস্থ্য বিমা, গৃহঋণ, জীবন বিমার প্রিমিয়াম, ডাকঘরের সঞ্চয় প্রকল্পের কিস্তি প্রভৃতি) জন্য দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত যে কর ছাড় পাওয়া যেত, নতুন আয়কর ব্যবস্থায় সেগুলিকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে বরাদ্দের অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে জাতীয় আয়ের ২ শতাংশ। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে আগেই যেখানে বরাদ্দ যথেষ্ট কম ছিল (যথাক্রমে জিডিপি’র ২ এবং ৩ শতাংশ), সেখানেও বরাদ্দ কমানো হয়েছে। অথচ, আন্তর্জাতিক সূচকে শিশু পুষ্টির অবস্থা পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নীচে! অসরকারি সংস্থার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, পঞ্চম শ্রেণির শিশু দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যবই পড়তে পারছে না। নারী উন্নয়নের যে ঢক্কানিনাদ শোনা যায়, জাতীয় সমীক্ষার তথ্য বিকৃত করে বা আংশিক প্রকাশ করে উন্নয়নের যে অলীক ছবি আঁকা হয়, তাতে বহুল প্রচলিত মার্ক টোয়েনের কথাই সত্য প্রতিপন্ন হয়, ‘মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা এবং পরিসংখ্যান’। অন্তত ভোটের জন্য ‘জনমোহিনী’ বাজেট হবে বলে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু কার্যত সরকার বিপরীতে হাঁটল। তা হলে কি মানুষের কথা না ভেবে, এখন শুধুই ধনিক শ্রেণির তুষ্টির জন্য বাজেট তৈরি হবে?
শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
সঞ্চয়-সঙ্গী
মহিলাদের সঞ্চয়ী করে তুলতে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেটে ডাকঘরে ‘মহিলা সম্মান পত্র’ নামে নতুন প্রকল্পের জন্য অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে অভিনন্দন। এতে দু’লক্ষ টাকা অবধি রাখা যাবে। কিন্তু এই নতুন ব্যবস্থার জন্য মহিলা স্বল্প সঞ্চয় এজেন্টদের যুক্ত করা হল না। আমি এক জন এজেন্ট, ১৯৭২ সালে সূচিত ‘মহিলা প্রধান ক্ষেত্রীয় বচত যোজনা’ (এমপিকেবিওয়াই) রেকারিং ডিপোজ়িট স্কিমের এজেন্ট হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে কাজ করছি। স্বল্প সঞ্চয়ের সুবিধা বিষয়ে স্বল্পবিত্ত পরিবারের মেয়েদের জানানো, সবার থেকে টাকা সংগ্রহ, বইয়ে হিসাবপত্র লেখা, ইত্যাদি কাজ করে আসছি। বহু সঞ্চয়কারী আমাদের মতো এজেন্টদের উপর নির্ভর করেই সঞ্চয় করেন। আক্ষেপের বিষয়, শ্যামলা গোপীনাথ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর থাকাকালীন তাঁর নামাঙ্কিত কমিটির সুপারিশের ফলে কিসান বিকাশ পত্র, এমপিকেবিওয়াই প্রভৃতির এজেন্টদের কমিশন এক শতাংশ থেকে কমে অর্ধেক হয়ে গেল। তার পর দশ-বারো বছর কেটে গিয়েছে, সেই কমিশনের পরিমাণে কোনও সংশোধন হয়নি। অথচ, মেয়েদের স্বল্প সঞ্চয়ে আমাদের ভূমিকা কমেনি। কমিশন না পাওয়া গেলেও, প্রচুর আশীর্বাদ পাওয়া যায় মহিলা বা বৃদ্ধদের ফর্ম লিখে দিলে, ত্রৈমাসিক সুদের টাকাটা তুলে দিলে। কিন্তু শুধুমাত্র আশীর্বাদে কত দিন চলবে? স্বল্প সঞ্চয় এজেন্টদের অপ্রাসঙ্গিক করে দিলে সারা ভারতে প্রায় ছ’লক্ষ এজেন্ট, যাঁরা সাধারণ ভারতবাসীকে নানা প্রলোভনের হাতছানি এড়িয়ে সঞ্চয়মুখী করেছিল, তাঁরা লক্ষ্যহীন হয়ে যাবেন। ক্ষতি হবে তাঁদের পরিবারেরও।
আর একটি প্রশ্ন। মাসিক আয় প্রকল্পে সীমা বেড়ে ন’লক্ষ টাকা হয়েছে। প্রবীণ নাগরিক প্রকল্পের সীমা বাড়াতেও আমরা খুশি। তবে আরও খুশি হতাম সীমা উঠে গেলে। ব্যাঙ্কের মাসিক আয় প্রকল্পে কোনও সীমা তো নেই! প্রয়োজন মতো টাকা রাখা যায়, আবার ঋণও পাওয়া যায়। একবিংশ শতাব্দীতে এই সীমার প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাই না।
মিনতি মণ্ডল, কৃষ্ণনগর, নদিয়া
কমিশনে বঞ্চনা
বর্তমানে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ডাকঘর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুদের হার ব্যাঙ্কের চাইতে বেশি হওয়ায় অনেকের কাছে ডাকঘরের প্রকল্পগুলি অনেক বেশি আকর্ষণীয়। চিট ফান্ডের ধাপ্পাবাজি থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে, তাঁদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ডাকঘরের বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করেন পোস্টাল এজেন্টরা। ফর্ম পূরণ থেকে প্রকল্পের নিয়ম-নীতি বুঝিয়ে দিয়ে, মানুষের সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি করতে সাহায্য করেন তাঁরা। বিনিময়ে তাঁরা জমা-করা টাকার উপর সামান্য একটা কমিশন পান। এতে যেমন হাজার হাজার বেকার ছেলেমেয়ে স্ব-রোজগারী হতে পারেন, তেমনই বহু পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ধীরে ধীরে সেই এজেন্টদের কমিশনের উপর কোপ দিতে শুরু করেছে। পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড, সিনিয়র সিটিজ়েন স্কিম, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা ইত্যাদি প্রকল্পে এজেন্টদের কোনও কমিশন দেওয়া হয় না। যদিও সেই সব খাতে অর্থ জমা করার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ গ্রাহক তাঁদের সাহায্য নেন। এত দিন মাসিক আয় প্রকল্পে সামান্য হারে কমিশন দেওয়া হত। সেটির ক্ষেত্রেও বর্তমানে চেক-এ টাকা জমা দেওয়ার ফরমান জারি করে ঘুরপথে এজেন্টদের কমিশন পাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, পোস্ট অফিসে ৯০ শতাংশের বেশি গ্রাহক চেক বই ব্যবহার করেন না। সরাসরি টাকা তোলার স্লিপ দিয়ে কাজ সারেন। ফলে কাজে সাহায্য করলেও এজেন্টরা এই কাজে কমিশন পাচ্ছেন না। ডাকঘরের লেনদেনে এজেন্টদের ভূমিকা অনেকখানি। অথচ রোজগারে কোপ পড়ায় পোস্টাল এজেন্টরা তাঁদের কাজে উৎসাহ হারাচ্ছেন। এর ফলে গ্রাহকেরাই নানা অসুবিধার সম্মুখীন হবেন।
প্রদ্যোৎ পালুই, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
গ্রাহকের স্বার্থ
একটি সরকারি বিমা কোম্পানি যদি কর্পোরেট গ্রাহককে কোনও পলিসি দেয়, তবে সেই গ্রাহক অন্য কোনও সরকারি বিমা কোম্পানিতে তাঁর পলিসি করতে পারবেন না, এটা এক অদ্ভুত ও নীতিবিরুদ্ধ নিয়ম। যদি কাস্টমার তাঁর বর্তমান বিমা কোম্পানি বা তার প্রতিনিধির পরিষেবা অথবা ব্যবহারে অসন্তুষ্ট থাকেন, তিনি চাইলে প্রাইভেট বিমা কোম্পানিতে পলিসি করতে পারবেন। এতে কার ক্ষতি হল? ইনশিয়োর্যান্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি সরকারের আয় কমিয়ে বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলির ব্যবসা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করছে। ওই কর্তৃপক্ষ কি সত্যিই বিমা গ্রহীতার স্বার্থ রক্ষা করছে?
অন্য দিকে, প্রাইভেট বিমা কোম্পানিও গ্রাহকের ইচ্ছার মূল্য দেয় না। এজেন্টের পরিষেবা বা ব্যবহার খারাপ হলেও ওই একই কোম্পানিতে গ্রাহকের বিমা একই এজেন্টের দ্বারা করতে হবে। অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ দফতরকে গ্রাহক-অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে।
পার্থময় চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
শূন্য পদ
সামনে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট। তাতে যুক্ত থাকেন রাজ্য, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী, ব্যাঙ্ক ও জীবন বিমার কর্মীরা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরকারি কর্মী, তথা ব্যাঙ্ক বা জীবন বিমার কর্মীরা অবসর নিচ্ছেন, সেই শূন্য পদে নিয়োগ হচ্ছে না। তা হলে কী ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা হবে? অবিলম্বে নিয়োগ দরকার।
স্বপনকুমার আঢ্য, ভান্ডারহাটি, হুগলি