মেরুনা মুর্মুর ‘ত্রাহি ত্রাহি রব চলছেই’ (২২-৯) অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মনে করিয়ে দিল। স্কুল, কলেজ, চাকরিজীবনে দলিত ও আদিবাসীদের যে মানসিক হেনস্থার শিকার হতে হয়, তা অকল্পনীয়। অনেক বর্ণহিন্দু বলেন জাতপাত মানেন না। অথচ, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে সবর্ণ/উচ্চ অসবর্ণ পাত্র/পাত্রী খোঁজেন। আবার অনেক উচ্চবর্ণ বলেন, পূর্বপুরুষের কৃতকর্মের জন্য তাঁরা দায়ী নন। কিন্তু পূর্বপুরুষের পদবিটা তো নিতে ভোলেন না! এটা কি চূড়ান্ত সংরক্ষণ-মানসিকতার পরিচয় নয়? আগে পদবি ছাড়ুন, পৈতের মতো বস্তাপচা সংরক্ষণ প্রথা বর্জন করে দেখান, একমাত্র ব্রাহ্মণরাই পুজো করতে পারে— এই মানসিকতা ছাড়ুন।
কলেজ সার্ভিস কমিশনের ইন্টারভিউ বোর্ডে একটা সময় উচ্চবর্ণের লোকজন থাকত। যাচ্ছেতাই অপমান, তাচ্ছিল্য এক জন দলিত বা আদিবাসী প্রার্থীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না কি? আজ অবধি অধিকাংশ উচ্চপদ উচ্চবর্ণের লোক দখল করে আছে। তা হলে প্রশ্ন, দেশের এই হাল কেন? দেশের বড় বড় কেলেঙ্কারি, আর্থিক নয়ছয়ের ঘটনায়ও তাঁদের অনেকেই জড়িত। যতই নতুন করে নতুন রূপে শোষণের জাঁতাকলে দলিত ও আদিবাসীদের পিষে দেওয়ার চেষ্টা চলুক, সেটা আর সম্ভব হবে না। কারণ নিজের অধিকার নিয়ে তাঁরা আজ সচেতন ও সদাজাগ্রত।
উমাশংকর সরদার, ক্যানিং, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
সংরক্ষিত
মেরুনা মুর্মুর ‘ত্রাহি ত্রাহি রব চলছেই’ (২২-৯) প্রসঙ্গে বলতে চাই, দেশের সংবিধানে তফসিলি জাতি, জনজাতি ও ওবিসিদের সংরক্ষণ যাতে অব্যাহত থাকে এবং ধীরে ধীরে তার হার বাড়ে, সে জন্য প্রচুর উচ্চবর্ণের মানুষ সওয়াল করেছেন। মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য যে সমস্ত জেনারেল ক্যাটেগরির মানুষ সামনের সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের কথা ভুলে যাওয়া কি উচিত? যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা সংরক্ষণের আওতায় এসে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের কত জন নিজের জাতির ছেলেমেয়েদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন? অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সংরক্ষণের জন্য চাকরি যাঁরা পান, তাঁদের বেশির ভাগই শ্রেণিচ্যুত হয়ে পড়েন।
কিসের ভিত্তিতে জেনারেল ক্যাটেগরির দশ শতাংশ সংরক্ষণ, লেখক সেটাও বলেননি। পারিবারিক বাৎসরিক আয় আট লক্ষের বেশি হলে, বাড়ি ও জমি সরকার থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আয়তনের বেশি হলে জেনারেল ক্যাটেগরির কেউ দশ শতাংশ সংরক্ষণের আওতায় আসবেন না। যে সমস্ত তফসিলি জাতি, জনজাতি ও ওবিসি পরিবারের বাৎসরিক আয় আট লক্ষের বেশি, তাঁদের ছেলেমেয়েরা কেন সংরক্ষণের বাইরে আসবেন না? আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের জন্য পাঠলাভের পরিবেশ, সুষম আহার আর স্বাস্থ্যের পরিকাঠামো সরকার তৈরি না করলে সংরক্ষণ ভোট রাজনীতির হাতিয়ারই হয়ে থাকবে।
পঙ্কজ পাঠক, শ্রীপল্লি, বর্ধমান
বেনিয়ম
মেরুনা মুর্মু ২০০৪ সালে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় উল্লেখ করে যথার্থই লিখেছেন যে, এক জন অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত মেধাবী প্রার্থীও জেনারেল ক্যাটেগরির আসনের জন্য প্রতিযোগিতায় বসতে পারেন। সব কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে এই নিয়ম মেনে চলা হয়। রাজ্যগুলিরও তা করা উচিত। নিয়মভঙ্গের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে বিরল নয়। কয়েক বছর আগে তফসিলি জাতির এক কৃতী ছাত্র কলকাতার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করে। জেনারেল ক্যাটেগরির কিছু ছাত্রের তুলনায় নম্বর বেশি থাকা সত্ত্বেও তার নাম ওঠে সংরক্ষিত তালিকায়। অর্থাৎ, তাকে জেনারেল ক্যাটেগরির আসন থেকে বঞ্চিত করা হয়। আবার উত্তর ২৪ পরগনার এক নামী স্কুলে আমার এক তফসিলি জাতির ছাত্রকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির সময় লটারিতে বেনিয়ম লক্ষ করি। নিয়ম হল— জেনারেল, এসসি, এসটি এবং ওবিসি, সব আবেদনপত্র প্রথমে একসঙ্গে মিশিয়ে লটারি হবে। এতে জেনারেল আসনেও কিছু নন-জেনারেল ছাত্র ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। এর পর নন-জেনারেল আবেদনপত্রগুলো বাছাই করে আলাদা করে নিয়ে সংরক্ষিত আসনগুলোর জন্য আবার লটারি হবে। কিন্তু ওই স্কুলে তা করা হয়নি।
গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস, কলকাতা-১২৬
বেসরকারিতে?
মেরুনা মুর্মুর তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটির মধ্যে যা বাদ গিয়েছে, তা হল বেসরকারিকরণ। যে হেতু সরকারি ক্ষেত্র ছাড়া সংরক্ষণের কথা ভাবা যায় না, তাই বেসরকারিকরণের পর সংরক্ষণের স্বাভাবিক মৃত্যু হবে। যতই সংরক্ষণের ময়দানে লড়াই করি না কেন, তলার মাটি কিন্তু বেসরকারি বানের তোড়ে ক্ষয়ে চলেছে নিশ্চিন্তে। কাজেই বেসরকারি সংস্থাতেও সংরক্ষণ জরুরি।
একই সঙ্গে লক্ষণীয়, ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজব্যবস্থা এমনই যে, দেশের মাটিতে যাঁরা বর্ণবাদের ধারক এবং বাহক, তাঁরাই বিদেশে সাদা চামড়ার নিপীড়নে পড়ে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন করেন। অথচ তাঁরা দেশে ‘দলিত লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন করতে ভুলে যান।
তুষার কান্তি মল্লিক, বসুনগর, মধ্যমগ্রাম
সবাই পান না
মেরুনা মুর্মু সুন্দর যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন, কেন সংরক্ষণ থাকা উচিত। তবে এখানে একটাই কথা বলার, সংরক্ষণের সুবিধে বেশি পাচ্ছেন সেই আদিবাসীরা, যাঁরা তুলনামূলক ভাবে ভাল জায়গায় আছেন। জনজাতিভুক্ত ডাক্তার, সরকারি আমলার সন্তান যে সুবিধা পায়, সেটা প্রত্যন্ত এলাকার জনজাতির গরিব ছেলেমেয়েরা পাচ্ছে না। জেনারেল ক্যাটেগরির সবাই বিত্তবান নন, অনেকেরই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাঁদের সবাই প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে সন্তানকে
পড়াতে পারেন না। আর সবাই জনজাতি বা দলিত-বিরোধীও নন। মনে হয় মেধার সঙ্গে আপস না করে যদি অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হত, সেটাই যথার্থ হত।
সর্বানি গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া
পশ্চিমবঙ্গ নয়
বাবাসাহেব ভীমরাও অম্বেডকর পশ্চিমবঙ্গ থেকে গণপরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন, লিখেছেন মেরুনা মুর্মু। বস্তুত অম্বেডকর ব্রিটিশ ভারতে অবিভক্ত বাংলা থেকে প্রাদেশিক নির্বাচনে ১৯৪৬ সালে নির্বাচিত হন। তাঁকে বাংলা থেকে নির্বাচিত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, যিনি দেশভাগের পরে পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী হন। অচিরে কোণঠাসা অবস্থায় পদত্যাগ করে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসেন যোগেন্দ্রনাথ।
গোপালচন্দ্র চক্রবর্তী, কলকাতা-১১০
উপান্ন
প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্নের কিছু ভার লাঘব করার জন্য পাশে একটা ছোট পরিসরের উদ্বোধন হয়েছে, নাম দেওয়া হয়েছে ‘উপান্ন’। সংসদ বাংলা অভিধান বা আশুতোষ দেব প্রণীত বাংলা অভিধানে ‘উপান্ন’ বলে কোনও শব্দ খুঁজে পেলাম না। ‘উপ’ অর্থে আমরা বুঝি অল্পতা, শূন্যতা বা গৌণ। ঠিক কোন অর্থে উক্ত বাড়ি বা ভবনটির নাম ‘উপান্ন’ রাখা হল? তা কি শুধু নবান্নের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে? নাম রাখার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আবেগ থাকতে পারে, কিন্তু স্থান, কাল বা মাহাত্ম্যের বিচারে সরকারি ভবনের নাম ‘উপান্ন’ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
অরুণ কুমার বকসি, কলকাতা-৮১
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।