Corruption

সম্পাদক সমীপেষু: কলুষিত গণতন্ত্র

রাজনৈতিক দলগুলি ঘোলা জলে মাছ ধরার যে কৌশল বজায় রেখেছে তাতে সার্বিক কল্যাণ কখনওই সম্ভব নয়। দলের লাভ যত প্রকট হয়ে উঠছে, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৫৫
Share:

বর্তমান ভারতের সবচেয়ে বড় সঙ্কট রাজনৈতিক দলগুলির দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া। প্রতীকী ছবি।

অশোক সরকারের ‘স্বচ্ছ ভারত, অস্বচ্ছ পার্টি’ (৭-২) শীর্ষক প্রবন্ধটি সময়োপযোগী। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, বর্তমান ভারতের সবচেয়ে বড় সঙ্কট রাজনৈতিক দলগুলির দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া। প্রবন্ধকার সঙ্গত ভাবেই সেই চিন্তাকে উস্কে দিয়েছেন। দল এবং দেশকে পৃথক পাত্রে রেখে উন্নয়ন চিন্তার যে ভ্রান্ত নীতি নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি, তা জনগণকে ক্রমশ বিপথগামী করছে। গণতন্ত্রের পক্ষে এ সংবাদ নিঃসন্দেহে উৎকণ্ঠার। এক বিরাট বৈষম্য ভারতের গণতান্ত্রিক মাহাত্ম্যকে কলুষিত করছে।

Advertisement

প্রবন্ধটি থেকে স্পষ্ট, রাজনৈতিক দলগুলি ঘোলা জলে মাছ ধরার যে কৌশল বজায় রেখেছে, তাতে সার্বিক কল্যাণ কখনওই সম্ভব নয়। দলের লাভ যত প্রকট হয়ে উঠছে, ততই দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মুষ্টিমেয় ক্ষমতাসীন মানুষ অবৈধ অর্থে ফুলেফেঁপে উঠছেন, দলীয় অস্বচ্ছতার সুযোগ নিয়ে জনগণের প্রভূত ক্ষতি করছেন। কেবলমাত্র ভোটে জেতার অঙ্ক মেলাতে দলদাস অনেক তৈরি হচ্ছে, কিন্তু দেশরক্ষক গড়ে উঠছে না। অষ্টাদশ শতকের সামাজিক অবক্ষয়ের দিনে রাজা রামমোহনের হাত ধরে বাংলায় এসেছিল নবজাগরণ। তার ফলে আমরা পেয়ে গিয়েছিলাম কত স্মরণীয় দেশনায়ককে। তাঁদের আত্মত্যাগ দেশবাসীর কাছে ছিল দৃষ্টান্ত। ব্যক্তির নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল প্রবল প্রতাপশালী ইংরেজের প্রতি বিরোধিতার সুর। অথচ, তাঁদেরই উত্তরসূরিরা আজ ইচ্ছে করে অস্বচ্ছতাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, নির্বাচনে দলকে জেতানোর অছিলায়। এমন চললে পরিণাম কী হবে, সে দিকে ইঙ্গিত করছে এই প্রবন্ধটি।

দীপায়ন প্রামাণিক, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা

Advertisement

যন্ত্রের দাপটে

‘শেষে কি নিজেকে খাবে?’ (২৮-১) শীর্ষক পুনর্জিৎ রায়চৌধুরীর প্রবন্ধ পড়ে নিজেকেই জিজ্ঞেস করছিলাম— সত্তরের দশকের শেষে ভারতীয় ব্যাঙ্কের জাতীয়তাবাদী বিপ্লবের শুভলগ্নে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাজে যোগ দিয়ে যখন আজকের ‘কৃত্রিম মেধা আর স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা’-নিবিড় ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং থেকে অবসর নিলাম, আমি বা আমরাও কি নিজেদের খেলাম? আমরাই আশির দশকের শেষ থেকে ব্যাঙ্ক শিল্পে কম্পিউটার চালু করার বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করেছি, ধর্মঘট করে মাইনে কাটিয়েছি। ব্যাঙ্ক বন্ধ করার জন্য, আধুনিকতার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য গালি খেয়েছিলাম। এবং সেই থেকে ২০১০-এর দশক অবধি কথা শুনেছি, সেই তো কম্পিউটারের কাছে মাথা নোয়াতে হল। আমরা, ব্যাঙ্কশিল্পে বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলো সে দিন বোঝাতে পারিনি— কম্পিউটার নয়, আমাদের বিরোধিতা ছিল ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার শ্রমনিবিড় অর্থনীতিতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার যথেচ্ছ ব্যবহারের বিরুদ্ধে। আমরা এখনও বিশ্বাস করি, সে দিন যদি আগ্রাসী স্বয়ংক্রিয়তার বিরুদ্ধে বাধা না দেওয়া হত, তা হলে আজকের ব্যাঙ্ককর্মী ও গ্রাহকদের অবস্থা অনেক আগেই দুর্বিষহ হত।

অস্বীকার করি না, আমরা ভয় পেয়েছিলাম নিজেদের জীবিকার সঙ্কটের জন্য। কিন্তু সেই ভাবনা ছিল সমগ্র ব্যাঙ্কশিল্প, তথা অর্থনীতিতে আধুনিক প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে। অনেক গ্রাহক তা বুঝেছিলেন, ক্ষতি স্বীকার করেও ধর্মঘট সমর্থন করেছিলেন। ২০২০’র দশকে দেখা যাচ্ছে, ব্যাঙ্ককর্মী ও গ্রাহক, দু’পক্ষই এখন দৃশ্যমান ইট-কাঠ-পাথরের ব্যাঙ্কব্যবস্থার বাইরে ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং-এ কার্যত হাবুডুবু খাচ্ছেন। আমরা তো চাইনি এমন স্বয়ংক্রিয় অর্থনীতি, যা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কব্যবস্থায় গ্রাহক, কর্মী ও নিয়ামক সরকারি ব্যবস্থাগুলোকে ক্রমশ আরও অসহায় করে তুলবে। এই অব্যবস্থার মধ্যেই ক্রমশ বেড়েছে আর্থিক অসাম্য। লেখক সঙ্গত প্রশ্ন তুলেছেন, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন তা হলে কি ‘গুরুত্বহীন’ হয়ে পড়ল?

ভারতের বিশাল জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে ১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রসার হয়েছিল, যা অনেক বেশি মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য ব্যাঙ্কের শাখা পৌঁছে দিয়েছে। মানুষকে ঋণ দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিকে বিকশিত করেছে। ১৯৯০ সাল থেকে ব্যাঙ্ক শিল্পে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা কম্পিউটারের প্রচলন কর্মী-সংখ্যাকে কমিয়েছে। গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ বছর কর্মজীবনের এক জন স্থায়ী কর্মীর বদলে এল যে সব বৈদ্যুতিন যন্ত্র, তার আয়ু অ্যাকাউন্টেন্সির হিসাবে বছরে ৩৩ শতাংশ মূল্যহ্রাস ধরলে ৩ বছর মাত্র। প্রতি তিন বছরে ফের নতুন হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার আরও বেশি দামে এখনও কিনতে হচ্ছে। বাতিল যন্ত্রের আবর্জনা (ই-ওয়েস্ট) বাড়তি সমস্যা আনল। যোজনা ধনধান্যে-র জানুয়ারি ২০১৮ পত্রিকার পরিসংখ্যান (‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ব্যাঙ্কের ভূমিকা’, চরণ সিং, শিবকুমার, পৃ ৩৩) অনুযায়ী, একটি ব্যাঙ্ক শাখা পিছু জনসংখ্যা ছিল ১৯৬৯ সালে ৮২৬২ জন, যা ২০১৭ সালে হয়েছিল ১৩,৮০৫৯ জন। আরও বাড়বে জনসংখ্যা, আরও কমবে ব্যাঙ্কের শাখা ও কর্মীর সংখ্যা।

কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার বালিতে মুখ গুঁজে আছে। মুখ তুলে সবার মুখে ভাতের সঙ্গে সবার হাতে কাজ দিতে হবে। সরকারি সংস্থাকে আরও প্রসারিত করতে হবে। অসরকারি সংস্থার স্বল্পকালীন চুক্তিভিত্তিক অল্প প্যাকেজের শ্রমিকের চাহিদা ও অতি মুনাফার আবদারকে উপযুক্ত করব্যবস্থা দিয়ে সহনশীল করতে হবে। শিল্প-কৃষি-পরিষেবা ক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিজেকে শিক্ষিত করার সময়-সুযোগ দিতে হবে। ৭ শতাংশ উন্নয়ন বৃদ্ধিতে সন্তুষ্ট না হয়ে ভারতের দুর্বলতা, অভাব কোথায়, সে সব খুঁজে বার করতে হবে।

শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি

দিগনগর

পঞ্চায়েত এলাকার বহু দ্রষ্টব্য স্থান রয়েছে, যেগুলি উপযুক্ত দেখভালের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। যেমন, নদিয়ার কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের দিগনগর গ্রামে রয়েছে ১৫৯১ শকাব্দের পোড়ামাটির শিব মন্দির। অপরূপ ওই মন্দিরটি পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধিগৃহীত হলেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। পোড়ামাটির অপরূপ নকশাগুলির প্রতি দিন একটু একটু করে ক্ষতি হয়ে চলেছে। অথচ, এই গ্রামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়দিদি সৌদামিনীর বাড়ি রয়েছে। লোকসাহিত্য গ্রন্থে ‘ছেলেভুলানো ছড়া’ বিভাগে রবীন্দ্রনাথ ‘ও পারে জন্তিগাছটি’ ছড়ায় দিগনগরের উল্লেখ করেছেন। “আজ সুবলের অধিবাস, কাল সুবলের বিয়ে/ সুবলকে নিয়ে যাব আমি দিগনগর দিয়ে/ দিগনগরের মেয়েগুলি নাইতে বসেছে/ মোটা মোটা চুলগুলি গো পেতে বসেছে/ চিকন চিকন চুলগুলি ঝাড়তে নেগেছে/ হাতে তাদের দেবশাঁখা মেঘ নেগেছে/ গলায় তাদের তক্তিমালা রক্ত ছুটেছে/ পরনে তার ডুরে শাড়ি ঘুরে পড়েছে।” অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্ষীরের পুতুল বইটিতে এই গ্রামের নানা স্থান উল্লেখ আছে। এই সব ইতিহাসের তথ্য বিষয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে ওয়াকিবহাল করানোর কোনও উদ্যোগ নেই। পর্যটনের এটি একটি সম্ভাবনাময় স্থান। গ্রামের বারো কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে দিগনগর, শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর, বাদকুল্লা, নবদ্বীপধাম রেল স্টেশন। পরিতাপের বিষয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়া সত্ত্বেও এই জায়গাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না।

অনুপম মোদক, কৃষ্ণনগর, নদিয়া

পরোক্ষ ধূমপান

ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক— এ কথা সবাই জানেন, তবুও বাইক, সাইকেল চালাতে চালাতে, হাসপাতাল চত্বরে, স্টেশনে বহু জনকে সিগারেট বা বিড়ির ধোঁয়া ছাড়তে দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনে (২০১০) জানানো হয়, পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ মারা যান। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৬৫ হাজারই হল শিশু। পরোক্ষ ধূমপানের জন্য প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৮১,০০০ নারী মৃত্যুবরণ করেন। সে দিন স্টেশন চত্বরে এক ব্যক্তি সিগারেট খাওয়ায় আমি বিরক্তি প্রকাশ করায় তিনি বললেন, “অসুবিধা হলে অন্যত্র যান।” এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই।

রিক্তা বসু, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement