Bengali Year

বঙ্গাব্দের সূত্রপাত

আইন-ই-আকবরি’তে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, আকবর হিজরি সন পছন্দ করতেন না, তাই তিনি তারিখ-ই-ইলাহি’র সূচনা করেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৩ ০৫:৩৯
Share:

ফাইল চিত্র।

‘বঙ্গাব্দ তুমি কার, হিন্দুত্বের নয়া তাস’ (১০-৪) শীর্ষক অগ্নি রায়ের প্রতিবেদনটি সম্পর্কে কিছু তথ্য। প্রথমত, আইন-ই-আকবরি’তে ৩০ পাতা জুড়ে বিশ্বের ও ভারতের বিভিন্ন বর্ষপঞ্জির কালানুক্রমিক বিবরণ রয়েছে। সব শেষে রয়েছে তারিখ-ই-ইলাহি। কিন্তু ‘বঙ্গাব্দ’ বা ‘বাংলা সন’-এর কোনও উল্লেখ নেই। আকবর সত্যিই ‘বঙ্গাব্দ’ বা ‘বাংলা সন’ প্রবর্তন করলে আইন-ই-আকবরি’তে তার উল্লেখ থাকবে না, এ কি সম্ভব?

Advertisement

দ্বিতীয়ত, আইন-ই-আকবরি’তে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, আকবর হিজরি সন পছন্দ করতেন না, তাই তিনি তারিখ-ই-ইলাহি’র সূচনা করেন। তিনি বঙ্গাব্দের সূচনা করলে তার ভিত্তিবর্ষ তারিখ-ই-ইলাহি’র সঙ্গে সমান না রেখে অপছন্দের হিজরির সঙ্গে মেলাতেন কি? তৃতীয়ত, আকবরের শাসনকালে মোগল সাম্রাজ্যে বাংলা, ইলাহাবাদ, অযোধ্যা, আগরা, পটনা ইত্যাদি মোট বারোটি সুবা ছিল। তা হলে শুধুমাত্র বাংলার জন্য বিশেষ একটি বর্ষপঞ্জি তিনি তৈরি করতে গেলেন কেন?

চতুর্থত, পঞ্জাব থেকে দাক্ষিণাত্য, গুজরাত থেকে অসম, মণিপুর, মায়ানমার, তাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া হয়ে সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া— যেখানেই ভারতীয় সংস্কৃতি পৌঁছেছে, সেখানেই বর্ষ শুরু পয়লা বৈশাখে। তা হলে কি দিল্লির আকবর এই সকল জায়গায় ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেছিলেন? আইন-ই-আকবরি’তে ‘বঙ্গাব্দ’-এর যেমন উল্লেখ নেই, তেমনই উল্লেখ নেই ‘ফসল-ই-শান’ বা ‘ভাল ফসলের বছর’-এর। হিজরি সন চান্দ্র বর্ষপঞ্জি হওয়ায় অসময়ে রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে এবং তার জন্যই সৌর বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন করেন আকবর, এমন উল্লেখও নেই সেখানে। আবার প্রণয়নের পর সঠিক রাজস্ব আদায় হচ্ছে, তাও কোথাও বলা নেই।

Advertisement

পঞ্চমত, নীতীশ সেনগুপ্তর বই দ্য ল্যান্ড অব টু রিভার্স-এ উল্লেখ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার ডিহারগ্রাম ও সোনাতপন গ্রামের হাজার বছরেরও প্রাচীন টেরাকোটার শিব মন্দিরের। ওই মন্দির দু’টির গায়ে বঙ্গাব্দের কথা খোদিত রয়েছে, যা আকবরের থেকেও প্রাচীন।

পার্থ রায়, নিউ জার্সি, আমেরিকা

এক আত্মা

পঞ্চায়েত ভোটের ঘণ্টা বাজার আগেই রাজনৈতিক হিংসার বলি হলেন সাত জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। রামনবমী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে ভাবে দাঙ্গা ঘটেছে, তাতে ভারতের সম্প্রীতির ঐতিহ্য ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এ বার নাগরিকদের উচিত পথে নামা, রাজনৈতিক হিংসা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে। এগিয়ে আসুক নতুন প্রজন্ম। এই সময়টা খুবই উদ্বেগের। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে মুসলমানদের করুণ চিত্র দেখিয়ে দিচ্ছে, তাঁদের অবস্থা দিন-দিন খারাপ হচ্ছে। ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি অশুভ শক্তি যে ভাবে বিদ্বেষ প্রকাশ করছে, তাতে ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। সংবিধানকে রক্ষা করতেই হবে। স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমানদের এক বড় অংশের অবদান অনস্বীকার্য। মনে রাখতে হবে, ভারতের গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি আনুগত্য ও ভালবাসা রেখেই দেশভাগের পর ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের বড় অংশ দেশ ছেড়ে যাননি। বিভাজন সৃষ্টি করে ভারতের আত্মাকে পৃথক করা যাবে না।

মুসলিমদের পরিচালিত ট্রাস্ট ও সোসাইটির নিজস্ব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় যথেষ্ট না থাকার ফলে বহু ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষা অর্জনে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্তনিগম থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে ঋণ দেওয়া হয়, তার জন্য সরকারি চাকরিরত ‘গ্যারান্টর’ দাবি করে ব্যাঙ্ক। এর ফলে বিপদ বেড়েছে। সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিরত মুসলমানদের সংখ্যা নগণ্য। এক দিকে, প্রচুর ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলেও অর্থের অভাবে নিতে পারছে না। অন্য দিকে, চাকরিরত মুসলমানের সংখ্যা জনসংখ্যার (৩০%) শতাংশের অনুপাতে খুবই কম। তা হলে গ্যারান্টর পাওয়া যাবে কোথায়? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য যদি প্রকৃত উন্নয়ন করতে চায়, তা হলে সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারে।

দেশের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে, সংখ্যালঘু প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে জিতেছেন, ভাল কাজ করলেও তাঁদের অনেককেই প্রার্থী করা হয় না, বা আসন বদল করা হয়। কখনও বা ঠেলে দেওয়া হয় হেরে যাওয়া আসনগুলিতে। মুসলিম প্রার্থীদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় সুচতুর ভাবে।

২০১৬ ও ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘুদের বিপুল সমর্থন পেতে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল। যদিও সংখ্যালঘুদের সামাজিক সঙ্কটকে গুরুত্ব দিয়ে, তার সমাধানের কোনও চেষ্টাই করেনি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। রাজ্যের ২৩টি জেলায় বামফ্রন্টের পার্টি সম্পাদক আছেন, কিন্তু কোনও মুসলিমকে সে পদে বসাতে পারেননি বাম কর্তারা। তৃণমূল কংগ্রেসও সম্প্রতি যে সব জেলা কমিটি ঘোষণা করেছে, সেখানেও জনসংখ্যায় সংখ্যালঘুদের হারের বিন্যাস অনুযায়ী উচ্চপদ অধরা থেকে গিয়েছে। যদিও বর্তমান সরকার বিগত বছরগুলোতে কয়েক জন সংখ্যালঘুকে জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসনে বসিয়েছে। কলকাতা মহানগরীর মেয়র পদে অধিষ্ঠিত ফিরহাদ হাকিম। তা সত্ত্বেও দলীয় কোন্দলের জেরে সংঘর্ষে মুসলিমদেরই প্রাণ যাচ্ছে বেশি। সামনে পঞ্চায়েত, লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন। ভোটের ময়দানে কি ফের মুসলিমদের লড়াই করতে দেখা যাবে, যার পরিণাম হবে মৃত্যু? মুসলিমরা কি এখনও উপলব্ধি করবেন না যে, এ ভাবে রাজনৈতিক হানাহানি করাটা আসলে সংখ্যালঘু সমাজেরই সর্বনাশ?

ফারুক আহমেদ, ভাঙড়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

সমাধানের পথ

‘দায়িত্ব’ (১৩-৪) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি নিয়ে কিছু বলতে হলে প্রথমেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে হয়। চাকরিজীবনের একেবারে শুরুতেই আমি মফস্‌সল শহরে প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলাম। সেখানে পাড়ায়, পাড়ায় কালী এবং কার্তিক পুজো হত, অবশ্যই পাঁজি মেনে। জাঁকজমক হত বিসর্জনের দিন। আমি ওই এলাকায় বছর চারেক ছিলাম। তার মধ্যে তেমন বড়সড় কোনও গোলমাল হয়নি। এতে আমার তেমন কিছুই অবদান ছিল না। তবে বেশ কিছু দিন আগে থেকেই পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে মিটিং করে শান্তি কমিটি তৈরি হত। একটা চৌমাথা ছিল, সব কমিটি চাইত তারা আগে যাবে, যেটা সম্ভব ছিল না। আমরা সর্বসম্মতিক্রমে পুজোর বয়স ধরে অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করতাম, অবশ্যই কর্তাব্যক্তি এবং বয়স্কদের মতামতের ভিত্তিতে। পুলিশি ব্যবস্থা অবশ্যই থাকত, তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে শান্তি কমিটি সদর্থক ভূমিকা পালন করত। কিছু অত্যুৎসাহী মদ্যপদের সিধে করতে ধমকধামকই যথেষ্ট ছিল, পুলিশকে বলপ্রয়োগ করতে হয়নি। আসল কথা, তখনও বিভিন্ন উৎসবের প্রকট ভাবে রাজনীতিকরণ বা মেরুকরণ হয়নি। মনে রাখতে হবে, সত্তরের দশকের শেষ ভাগের কথা বলছি, তখন রাজনৈতিক দলভিত্তিক প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যে কোনও ধর্মের আনন্দ উৎসবেই সবাই আনন্দে মাতোয়ারা হত। দীর্ঘ দিন প্রশাসনিক কাজের মধ্যে থেকে এই সত্য উপলব্ধি করেছি, যে কোনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য সেই এলাকার মানুষকে ভাল করে চিনতে হবে। অনাবশ্যক রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করা, এবং প্রশাসনিক কাজে রাজনীতির হস্তক্ষেপ বন্ধ করা বাঞ্ছনীয়। আমাদের দুর্গোৎসবের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা সেলেব্রিটিরা পুজো উদ্বোধন করুন ভাল কথা, কিন্তু প্রশাসনিক বিষয়টির দায়িত্ব প্রধানত পুলিশের উপরই ন্যস্ত থাক।

সুবীর ভদ্র, ডানকুনি, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement