‘বাঘের পিঠে সওয়ার’ সম্পাদকীয়তে (২৫-৫) বলা হয়েছে, “ঘটনা হল, সরকারি চাকরি ছাড়া আর কোনও ক্ষেত্রেই মহার্ঘ ভাতার ব্যবস্থা নেই।” কথাটি অর্ধসত্য। আধা সরকারি সংস্থা, স্বশাসিত বোর্ড, সরকার অধিকৃত শিল্পক্ষেত্র, কোঅপারেটিভ সংস্থা ইত্যাদিতে মহার্ঘ ভাতা নামে বেতনের একটি অংশ আজও আছে। এ দেশের বহু অসরকারি সংস্থা আজও মহার্ঘ ভাতা তাদের কর্মচারীদের বেতনের পরিপূরক হিসেবে দেয়। এ ছাড়া দেশের অজস্র নামীদামি অসরকারি সংস্থা বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র নানা ধরনের ভাতা মাসিক বেতনের সঙ্গে যুক্ত করে, যা কোনও কোনও ক্ষেত্রে মূল বেতনের ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ফলে, মূল্যবৃদ্ধির প্রকোপ থেকে কর্মচারীরা যেমন সুরক্ষিত থাকেন, তেমনই এত ভাতা দিয়ে অভিজ্ঞ কর্মীদের ধরে রাখতে সমর্থ হয় সংস্থাগুলি। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের এই সব ভাতা নেই। সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা নির্ধারণ করা হয় ‘অল ইন্ডিয়া কনজ়িউমার প্রাইস ইনডেক্স’ অনুযায়ী। একটা সমতা বজায় রাখতেই আদালত পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা প্রসঙ্গে সম্প্রতি তাদের রায় দিয়েছে।
সম্পাদকীয়ের আরও একটি অসত্য বাক্য হল, “সরকারি কর্মীদের বেতন বা বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে তাদের কর্মকুশলতা, দায়বদ্ধতা কিছুরই কোনও সম্পর্ক নেই।” অত্যন্ত কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ করা হয়। এর পর রয়েছে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে প্রতিটি কর্মীর বার্ষিক মূল্যায়ন। মূল্যায়ন খারাপ হলে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ও প্রোমোশন বন্ধ হয়ে যায়। বহু অসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানেও যোগ্য কর্মীদের আনা, প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তাদের ধরে রাখার একটা দায় আছে। এ জন্য চাই সঠিক বেতন। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, প্রশিক্ষণ নিয়েও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অসংখ্য কর্মী অন্য চাকরিতে চলে গিয়েছেন কম বেতনের জন্য। সম্পাদকীয়তে যে বিপুল সংখ্যক রাজ্যবাসীর হয়ে সওয়াল করা হয়েছে, তাদের অগ্রগতিও কি এর ফলে থমকে যায় না? সময়মতো মহার্ঘ ভাতা না দিয়ে সরকার স্বেচ্ছায় বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছে।
তাপস ঘোষ, হাওড়া
অদক্ষ কে?
‘বাঘের পিঠে সওয়ার’ সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্রের অবতারণা। মহামান্য উচ্চ আদালতের ডিএ সংক্রান্ত রায়ের ফলে রাজ্য সরকারের ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থা। এক দিকে জনমোহিনী সামাজিক প্রকল্প, অন্য দিকে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা। এটা ঠিক যে, জনসংখ্যার ৯৬% শতাংশ মানুষ মহার্ঘ ভাতা থেকে বঞ্চিত। সেই কারণেই যখন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ডিএ পান, তখন জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই সুযোগটাকেই সুচতুর ভাবে কাজে লাগিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকার কর্মচারীদের প্রাপ্য মহার্ঘ ভাতা থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। মহার্ঘ ভাতা কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার না হলেও অধিকার তো বটেই। সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতির সঙ্গে কাজের দক্ষতা বা দায়বদ্ধতার কোনও যোগসূত্র না থাকলে কর্মসংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর্মচারীরা প্রশাসনের মূল চালিকাশক্তি, আর প্রশাসন পরিচালনা করেন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা। সুতরাং, কর্মচারীদের অদক্ষতার দায় বকলমে সরকার যাঁরা পরিচালনা করছেন বা করেছেন, তাঁদের উপরে এসে পড়ে না কি?
শেষাদ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
কর্মীর অর্জন
ডিএ পাওয়ার অধিকার সরকারি কর্মীদের অর্জিত অধিকার। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে সরকারি কর্মীরা এই অধিকার অর্জন করেছেন। তাই আদালত স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, ডিএ সরকারি কর্মীদের মৌলিক অধিকার। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে আয় বৃদ্ধির অধিকারের যে যুক্তি আদালত পেশ করেছে, তা সরকারি কর্মচারীদের সার্ভিস রুলের অন্তর্ভুক্ত। ডিএ বৃদ্ধির অধিকার সরকারি কর্মীদের দেওয়া হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা এবং সম্মানজনক জীবনধারণের কথা মাথায় রেখে।
ডিএ পাওয়ার অধিকারকে আদালত আইনি অধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছে। আইনি অধিকার হল একটি শক্তিশালী স্থায়ী অধিকার। অথচ, রায়ে ঘোষিত আইনি অধিকারের প্রসঙ্গটি সম্পাদক উল্লেখ করেননি। মহার্ঘ ভাতার সঙ্গে সরকারের কল্যাণপ্রকল্পগুলোর তুল্যমূল্য বিচার করে সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, “কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মী, না কি বিপুলসংখ্যক (নিশ্চিত ভাবেই দরিদ্রতর) রাজ্যবাসী, কার স্বার্থরক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়?”
এই বিভাজন তৈরি করে ডিএ প্রদানকে তথাকথিত উন্নয়নের বিপ্রতীপে দাঁড় করানো হয়েছে। অর্থাৎ, আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে সরকারি কর্মীদের ন্যায্য অধিকার যদি সরকার মিটিয়ে দেয়, তা হলে রাজ্যের গরিব মানুষেরা ভয়ঙ্কর দুর্বিপাকের মধ্যে পড়বেন। রাজ্যের কল্যাণপ্রকল্পগুলো আর চালু রাখা সম্ভব হবে না। অথচ, সরকার মেলা, খেলা, উৎসবের নাম করে বছরের পরে বছর কোটি কোটি টাকা অপচয় করছে। তাতে কি জনহিতকর প্রকল্প বাধাপ্রাপ্ত হয় না?
প্রবন্ধের শেষে সম্পাদক বলেছেন, “মহার্ঘ ভাতা ইত্যাদির তর্ক অতিক্রম করে সরকারি কর্মীদের বেতনকে উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত করার পথ খোঁজা জরুরি।” সরকারি কর্মীরা উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত নন, এ কথা কোথায় প্রমাণিত? অসংখ্য সরকারি প্রকল্প পরিচালনা তাঁরাই করছেন। এই সমস্ত সাফল্য কি উৎপাদনশীলতার আওতায় আসে না? অসরকারি সংস্থা ‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’ নীতি নিতে পারে। সরকার তো আর কর্পোরেট সংস্থা নয়।
কমল কুমার দাশ, কলকাতা-৭৮
কোহলির ফেরা
ক্রিকেট মহলে কান পাতলে এখন একটাই গুঞ্জন, বিরাট কোহলি কি তবে ফুরিয়ে গেলেন? যাঁর সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে ক্রিকেট ঈশ্বর সচিন তেন্ডুলকরের তুলনা হয়, তিনি গত আড়াই বছরে একটি শতরানেরও মুখ দেখেননি। ফলে জল্পনাটাই স্বাভাবিক। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ইডেনের গোলাপি বলের টেস্টে শেষ বার শতরান করেছিলেন বিরাট। সাম্প্রতিক কালে চূড়ান্ত ব্যর্থ তিনি। ব্যাটিং-এ মনোনিবেশ করতে ইতিমধ্যে সব ফরম্যাটে দেশের অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন। তবুও একের পর এক ইনিংসে শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে। ২০১০-২০১৯ পর্যন্ত ৪৩১ ইনিংসে ৭০টি সেঞ্চুরি-সহ গড়ে প্রায় ৫৮ রান করেছিলেন কোহলি। সেখানে গত আড়াই বছরে গড় মাত্র ২৮! স্বাভাবিক ভাবেই ক্রিকেটমহলে একটা উষ্মা তৈরি হয়েছে।
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা একটা কথা বরাবর বলে থাকেন, দেশের ক্রিকেটই হল একমাত্র পথ, যা যে কোনও ক্রিকেটারের হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিতে পারে। অতীতে সৌরভ, লক্ষ্মণ, দ্রাবিড়রা বার বার এই ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করেই স্বমহিমায় ফিরে এসেছিলেন আন্তর্জাতিক ময়দানে। সচিন তেন্ডুলকর তো অবসরের এক মাস আগে পর্যন্ত মুম্বইয়ের হয়ে রঞ্জিতে খেলে গিয়েছেন। আরও এক দৃষ্টান্ত হল চেতেশ্বর পুজারা। চূড়ান্ত অফ ফর্মের জন্য ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর সাসেক্সের হয়ে কাউন্টিতে নেমে লাগাতার চার ম্যাচে শতরান করেছেন, যার মধ্যে দু’টি দ্বিশতরান। অথচ, বর্তমানের আইপিএলের এই রমরমার বাজারে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ক্রিকেটে একেবারে খেলতে দেখা যায় না বললেই চলে। বিরাট, রোহিতদের শেষ কবে ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখা গিয়েছে, তা মনে করা কঠিন। কোহলিকে বুঝতে হবে আইপিএল নয়, রঞ্জি, কাউন্টির মতো ঘরোয়া ক্রিকেটই হতে পারে হারানো ফর্ম ফিরে পাওয়ার একমাত্র প্ল্যাটফর্ম। বিরাট কি পারবেন একটা আইপিএল মরসুম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার সাহস দেখাতে?
সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা