২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, বাম জমানায় শিক্ষকদের প্রতি যে সব অবিচার এবং অন্যায় হয়েছিল, তার সুবিচার করবেন। তাঁর শাসনকালের প্রায় এক দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও শিক্ষকেরা ব্রাত্য এবং অবহেলিতই থেকে গেলেন। রাজ্য সরকার ২০১২ সালের টেট-কে প্রথমে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের পরীক্ষা হিসেবে মান্যতা দেয়নি। স্কুল সার্ভিস কমিশন তখন জানিয়েছিল, ওই পরীক্ষা উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রাথমিক বাছাই মাত্র। কিন্তু পরবর্তী কালে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা হাই কোর্টে মামলা করেন। উচ্চ আদালত সেই পরীক্ষাকে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের পরীক্ষা (টেট) হিসেবে মান্যতা দেয়। জানায়, ২০১২ সালের পরীক্ষাকে টেট বলেই গণ্য করতে হবে। আদালতের নির্দেশমতো পাশ-করা প্রার্থীদের টেট-উত্তীর্ণের শংসাপত্রও দেয় রাজ্য সরকার। অজানা কারণে রাজ্য সরকার আজ পর্যন্ত সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উঠতে পারেনি। ফের এ বছর কলকাতা হাই কোর্ট গত তিন বছরে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়াকে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা হিসেব গণ্য করেছে (‘টেট রবিবার, কোর্টে ফের ধাক্কা রাজ্যের’, ২৯-১)!
২০১৬ সালে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে ৬০ হাজার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। পরের বছর পরীক্ষার পরে নিয়োগের জন্য ৫৪২২ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। আরও কয়েক হাজার প্রার্থীকে রাখা হয় ওয়েটিং লিস্টে। মেধা তালিকায় প্রায় ৮০০ জনের নাম থাকলেও কেউ চাকরি পাননি। সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো মোটর কারখানা হতে না দেওয়া ছিল শিল্পায়নের মূলে কুঠারাঘাত। এ রাজ্যে কর্মসংস্থানের আশা উবে গিয়েছে। বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে ভিন্রাজ্যে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে ২০২১-এর নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরে বর্তমান শাসক দল ৩৫ লক্ষ লোকের চাকরির ব্যবস্থা করবে, এই প্রতিশ্রুতি কি বিশ্বাসযোগ্য? আর কত দিন মানুষকে বিভ্রান্ত করা হবে?
সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৯১
নৈরাজ্যের শিকার
‘নৈরাজ্যপ্রেম’ (সম্পাদকীয়, ৩০-১) পড়ে কিছু প্রকৃত তথ্য উপস্থাপন করতে বাধ্য হচ্ছি। সম্পাদক মহাশয় একটি পাঁচমিশেলি সংগঠনের পরিচালনায় বিধানসভার সামনে সংঘটিত কর্মকাণ্ডের দায় সম্পূর্ণ পার্শ্বশিক্ষক সমাজের উপরে চাপিয়েছেন, যা বিস্মিত এবং মর্মাহত করেছে। ওই আন্দোলনে অল্প কয়েক জন পার্শ্বশিক্ষক ছিলেন। অধিকাংশ পার্শ্বশিক্ষকদের সংগঠন ‘পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চ’-এর সদস্যরা এক বছর আগে দীর্ঘ অনশন করেছিলেন, যার পরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন, এবং প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে আন্দোলন করার পরামর্শ দেন। সেই কথা অনুসারে, বিগত প্রায় দু’মাস বিকাশ ভবনের সামনে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন আমাদের সদস্যরা। এর সঙ্গে বিধানসভার কর্মকাণ্ডের কোনও সম্পর্ক নেই। মঞ্চ ওই অনভিপ্রেত ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। পার্শ্বশিক্ষকদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ না করলেও সম্পাদক উষ্মা প্রকাশ করেছেন— শিক্ষামন্ত্রী পর্যায়ক্রমে নিয়োগের প্রয়াস সত্ত্বেও কেন আমরা আন্দোলন মঞ্চ ত্যাগ করে প্রতিশ্রুতি পূরণের আশায় অপেক্ষা করছি না?
প্রকৃত তথ্য অন্য। এক, আমাদের দাবি ন্যায্য বলেই হাই কোর্ট দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। দুই, ক্ষমতায় আসার আগে বার বার, এবং আসার পর প্রথম সরকারি কর্মদিবসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের স্থায়ীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর কার্যকালের মধ্যে সামান্যতম সুযোগ-সুবিধা প্রদান থেকে বিরত থেকেছেন। তিন, যোগ্যতার সমস্ত মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও, এমনকি টেট পাশের পরও এক জন পার্শ্বশিক্ষকেরও ‘পর্যায়ক্রমে নিয়োগ’ হয়নি। চার, অন্যান্য দাবি থাকলেও আমাদের মূল দাবি ন্যূনতম বেতন কাঠামো, যাতে বার বার বেতন বৃদ্ধির জন্য আমাদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে রাস্তায় এসে বসতে না হয়।
সুজাতা আচার্য, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
প্রতিশ্রুতিই সার
‘পাঁচ বছরেও চাকরি হয়নি, পথে নবম-দ্বাদশ শ্রেণির প্রার্থীরা’ (২-২) সংবাদের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। গত লোকসভা ভোটের আগে কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে টানা ২৯ দিন অনশন করেছিলেন নবম-দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীরা । তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং অনশন মঞ্চে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, লোকসভা ভোটের পরে তাঁদের দাবি মেটাবেন। কিন্তু লোকসভার ভোট পেরিয়ে রাজ্যে বিধানসভার ভোট দোরগোড়ায়, মুখ্যমন্ত্রী কথা রাখেননি। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ‘স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্ট’-এ যাঁরা পাশ করেছিলেন, তাঁদের কয়েক জনের নাম মেধাতালিকাভুক্তও হয়েছিল। দুর্ভাগ্য, মেধাতালিকায় অস্বচ্ছতা থাকায় তালিকার নীচের দিকে নাম-থাকা প্রার্থীদের চাকরি হয়ে গিয়েছে। গত পাঁচ বছরে অন্যদের চাকরির ব্যাপারে রাজ্য সরকার সদর্থক পদক্ষেপ করেনি। আসন্ন ভোটের আচরণবিধি চালু হয়ে গেলে দাবি পূরণ হবে না, এই আশঙ্কায় তাঁরা নতুন করে সেন্ট্রাল পার্কের পাঁচ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন।
বামফ্রন্ট সরকারের শেষের দিকে প্রায় দেড় দশক ধরে রাজ্যে টেট ও এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতি বছর প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের কাজ চলেছিল। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর টেট ও এসএসসি পরীক্ষা ও তার ভিত্তিতে নিয়োগ নানা অনিয়ম ও মামলার গেরোয় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এমন হওয়ার কথা ছিল না।
হারান চন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
শ্রমিকের কথা
রাজ্যে গদি দখলের জন্য রাজনৈতিক দলের লড়াই শুরু হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশার কথা কেউ আলোচনা করছে না। কেউ ভাবে না, কোটি কোটি মানুষ এই অতিমারিতে কাজ হারিয়েছেন। অন্যায় ভাবে বহু কর্মীকে ছাঁটাই করেছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মাইনে কেটেছে। কেন্দ্রীয় সরকার অতিমারির সুযোগে শ্রম আইন পরিবর্তন করেছে। শোনা হয়নি শ্রমজীবী মানুষের কথা। অন্যায় বদলি, ছাঁটাই, ন্যূনতম মজুরি না দেওয়া, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি, বেতনে বৈষম্য ইত্যাদির সমাধান কঠিন, কারণ আইনি পদ্ধতির জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা রয়েই গিয়েছে। প্রতিবাদে শ্রমিক সংগঠনগুলি রাস্তায় নেমেছে। আইনি ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা আরও বেড়েছে লকডাউনের অজুহাতে। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক আইনি সহায়তা এবং ঠিক সময়ে বিচার পাচ্ছেন না। লাভবান হচ্ছেন মালিকপক্ষ। নির্দিষ্ট দফতরে অভিযোগ জানিয়েও সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে ও সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে শ্রমজীবী মানুষরা এক সঙ্গে লড়াই না করলে অনিশ্চয়তা বাড়বে।
জয়ন্ত কুমার পাঁজা, কোন্নগর, হুগলি
লাগামছাড়া
ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারের ভাষা ততই শালীনতা হারিয়ে ফেলছে। যা এক প্রকার রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। নির্বাচন কমিশন কি এই মর্মে নির্দেশ জারি করতে পারে না যে, শালীনতা বজায় রেখে প্রচার করতে হবে? নেতাদের আজ সেন্সর বোর্ডের মতো কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রয়োজন, যা তাঁদের মনে করিয়ে দেবে সমাজ-সংস্কৃতি, ও মানুষকে সম্মানের কথা। তাঁদের লাগামহীন কথা সংস্কৃতিকে বেআব্রু করার পক্ষে যথেষ্ট।
রাধারমণ গঙ্গোপাধ্যায়, বজবজ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা