‘সুযোগবঞ্চনা’ (১৫-২) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি প্রাসঙ্গিক এবং যুক্তিযুক্ত! আর প্রয়োজন নেই ঋদ্ধিমান সাহার, এমন একটা ঘোষণা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ! ঋদ্ধিমান কি দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য কাউকে ধরাধরি করছিলেন? না, তেমন কোনও খবর নেই! তা ছাড়া তিনি যথেষ্ট প্রচারবিমুখ এবং তৈলমর্দনের অভ্যাস থেকে বেশ কয়েক মাইল দূরে থাকা এক ক্রিকেটার!
তবে? সম্পাদকীয়টিতে যথার্থই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রতিভা, নিষ্ঠা এবং পরিশ্রমই শেষ কথা নয়! ঋদ্ধিমানের টেস্ট অভিষেক ঘটেছিল সেই ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে, শেষ টেস্ট খেলা ২০২১ সালে নিউ জ়িল্যান্ডের বিপক্ষে। এই সময়ের মধ্যে ৪০টা টেস্টে ঋদ্ধিমানের মোট রান ১৩৫৩ (গড় ২৯.৪১), সেঞ্চুরি ৩, অর্ধশতরান ৬! এর সঙ্গে ক্যাচ এবং স্টাম্পিং যোগ করলে তাঁর কৃতিত্ব অবশ্যই অবজ্ঞা করার মতো নয়। ২০১৬ সালে ইডেন উদ্যানে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর দুই ইনিংসে যথাক্রমে অপরাজিত ৫৪ এবং অপরাজিত ৫৮ নির্ভরশীলতার দৃষ্টান্ত! আইপিএল-এ কলকাতা নাইট রাইডার্স, চেন্নাই সুপার কিংস, পঞ্জাব কিংস-এর গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন! আসলে বঞ্চনার ট্র্যাডিশন আজও চলছে, চলবেও!
বিশ্বজিৎ কর, কলকাতা-১০৩
পড়ানো মুখ্য নয়?
‘ক-খ, ১-৯ চেনে না বহু পড়ুয়াই: সমীক্ষা’ (১০-২) শীর্ষক সংবাদ পড়ে লজ্জা হল! বাংলামাধ্যম স্কুলের এই হাল সত্যিই আশ্চর্যের। এখন সমস্যা হচ্ছে, এর দায় কে নেবে— শিক্ষক, শিক্ষা দফতর, অভিভাবক, না কি সরকার? সরকারি প্রাথমিক স্কুলের বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীর এই হাল। তাই তো সরকারি স্কুলের সিংহভাগ শিক্ষক তাঁদের ছেলেমেয়েদের বেসরকারি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে ভর্তি করেন। তবে কি এটাই প্রমাণ হচ্ছে না যে, সরকারি স্কুলে ভাল পড়াশোনা হয় না? এটা কোনও ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয় যে, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ভাল পড়াতে পারেন না। অভিভাবকদের অনেকেই নিরক্ষর। এখন পড়ে রইল শিক্ষা দফতর। তাঁদের কাছে ছাত্রছাত্রী তৈরি করাটা বড়? না কি মিড-ডে মিলের হিসাবটা বড়। পড়ানো ছাড়া অন্য সব কাজে এঁদের নজর। সরকারি প্রাথমিক স্কুলে যেন পড়ানোটা আসল উদ্দেশ্যই নয়।
আর যে সমস্ত বাংলামাধ্যমের প্রান্তিক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা নামমাত্র সাম্মানিকের বিনিময়ে ছাত্রছাত্রীদের তৈরি করছেন, তাঁদের উৎসাহ কে দেবে? এটা কি সমাজসেবা নয়? সমীক্ষা বলছে, করোনার সময়ে সরকারি স্কুলে ভর্তি বেড়েছে। এটি একটি প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। পড়ছে ওই প্রান্তিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, আর নাম লিখিয়ে রাখছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আমি নিজে একটি ওই ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২৪ বছর শিক্ষকতা করছি। দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে ইদানীং ওই নাম লিখিয়ে রাখার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র নাম লিখিয়ে রাখলেই সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি প্রথম বন্ধ হওয়া উচিত। সরকারি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একজোট করে এগিয়ে নিয়ে গেলেই ওই সমীক্ষার রিপোর্ট উল্টে যাবে। শিক্ষায় বাংলা তার হৃত গৌরব ফিরে পাবে।
রামমোহন চক্রবর্তী, নবদ্বীপ, নদিয়া
ফাগুন লেগেছে
দূর বনরেখায় লেগেছে রঙের আগুন। শিমুল-পলাশে লালে লাল চার দিক। দখিনা বাতাসে ভেসে যায় মনকেমন করা বনফুলের সুবাস। কোকিলের ডাক জানান দিয়েছে বসন্তের আগমন বার্তা।
গ্রামবাংলায় ছেলেমেয়েদের আজ বড় ব্যস্ততা। গাছের শুকনো পাতা সংগ্রহে তারা কেবলই ছুটে চলেছে। মুখে বলছে— “আজ আমাদের নেড়াপোড়া, কাল আমাদের দোল। পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে, বলো হরিবোল।” হোলিকা দহনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় এই বসন্তোৎসব। উৎসবের আগের দিন সন্ধ্যায় মানুষ একত্রিত হয়ে অগ্নিকুণ্ডের চার পাশে পুজো করে প্রার্থনা করেন নিজের ভিতরের অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য। হিরণ্যকশিপুর বোন ছিলেন এই হোলিকা। ভগবান বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদকে বাঁচাতে এই অগ্নিকুণ্ডেই বধ করেছিলেন হোলিকাকে। এই উৎসবের মধ্যে দিয়েই হয় শুভ শক্তির জয়। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে উদ্ভূত হলেও আজ এই হোলি ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল, এমনকি পশ্চিমের বিভিন্ন অংশেও।
ভারতের প্রতিটি অংশে এই উৎসব পালিত হয়। আলাদা আলাদা রাজ্যে আলাদা আলাদা নামে। পশ্চিমবঙ্গে আমরা দোল বললেও গোয়া, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ডে কিন্তু অন্য নামে এই উৎসব পালিত হয়। যেমন— উত্তরাখণ্ডে খাড়ি হোলি, পঞ্জাবে হোলা মহল্লা, উত্তরপ্রদেশে লাঠমার হোলি, বিহারে ফাগুয়া ইত্যাদি! তবে যে নামেই একে ডাকা হোক, এ উৎসব রঙের।
এই রং খেলায় রয়েছে অনেক বিপদ। রঙে এমন কিছু রাসায়নিক থাকে, যা আমাদের ত্বকে ক্যানসারের কারণ হতে পারে। বিপজ্জনক রং অসাবধানে খেললে চোখ ও মুখের ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল। এখন প্রাকৃতিক রং ব্যবহার হচ্ছে অনেক জায়গাতেই। তাতে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে। আমরা যদি নিয়ম মেনে হোলি উৎসবে একত্রিত হই, তবে চিন্তার কারণ থাকে না। পুলিশ-প্রশাসনের কাজও অনেক সহজ হয়। এই উৎসব প্রেমের উৎসব। তাই রং লাগুক মনে, শরীরে নয়।
প্রদ্যুৎ সিংহ, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
অচেনা দেশ
এই কি আমার ভারত? সত্তর বছর ধরে যে দেশকে চিনি, আজ তাকে বড় অচেনা মনে হয়। বোধ করি কোনও দিন সে ভাবে চেনাই হয়নি? আদালতে স্কুলের ছাত্রীদের হিজাব পরিধানের পক্ষে যুদ্ধরত আইনজীবী দেবদত্ত কামাথের প্রতি হিন্দুত্ববাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। এক জন কোঙ্কণী ‘ব্রাহ্মণ’ সন্তান কেন মুসলমানদের পক্ষে আদালতে সওয়াল করছেন? দাবি উঠেছে এক জন হিন্দু কেমন করে হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে এ রকম কাজ করতে পারেন? দাবি উঠেছে, কামাথকে সমাজচ্যুত করা হোক। এক জন আইনজীবী তাঁর পেশার তাগিদ থেকে যে কোনও পক্ষের হয়ে সওয়াল করতেই পারেন, তিনি কী বিশ্বাস করেন তার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। এক জন আইনজীবী যখন এক জন ধর্ষক ও খুনির পক্ষে সওয়াল করেন, তন্দুর হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের পক্ষে সওয়াল করেন, তখন ধর্মরক্ষকদের বলতে শুনিনি, এই আইনজীবীকে বয়কট করো, সমাজচ্যুত করো। আইনজীবীরা অনেক সময় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযুক্তদের পক্ষে আদালতে লড়াই করতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ধর্মের ধ্বজাধারীরা কখনও প্রতিবাদে এগিয়ে আসেননি। এই কি আমার ভারত? আমরা চুপ করে থাকব?
অন্য দিকে হিজাব প্রসঙ্গেও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নটি উঠবেই। কোনও প্রতিষ্ঠানের পোশাকের নির্দিষ্ট রীতি থাকতেই পারে। কিন্তু হঠাৎ এমন কোন ঘটনা ঘটল যে, স্কুলছাত্রীদের হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ করতে হবে? হিন্দুত্ববাদীরা বলছেন, হিজাবের আড়ালে অস্ত্র লুকোনো থাকতে পারে। অদ্ভুত যুক্তি!
ভারতের কোনও স্কুলে এ রকম ঘটনা ঘটেছে, তার একটিও উদাহরণ নেই। যদি থাকেও, সেও এক বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র। উদ্দেশ্য একটিই, মুসলমানদের তটস্থ রাখো, হিন্দু ভোটারদের সংগঠিত করো, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে। যাঁরা মনে করেন এই দেশ সবার, এই দেশের অনন্য সংস্কৃতি উদাহরণ হয়ে উঠুক, আসুন সবাই একবাক্যে এই প্রচেষ্টার নিন্দা করি। অন্যথায় আগামী কাল কোনও দেশ যদি বিধান দেয় হিন্দু বিবাহিত মেয়েরা শাঁখা-সিঁদুর পরে স্কুলে যেতে পারবে না, শিখ সম্প্রদায়ের ছাত্ররা পাগড়ি মাথায় দিয়ে স্কুলে যেতে পারবে না, তখনও আমরা চুপ করে থাকব?
শ্যামল দানা, কলকাতা-৯৪