West Bengal government

সম্পাদক সমীপেষু: আনাজ বাঁচাতে

আবার ফলন ভাল হলে কৃষক থেকে ব্যবসায়ী, সকলকে জলের দরে বিক্রি করতে হয় ফসল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২২ ০৭:১৯
Share:

অঙ্কুশ সাহার প্রবন্ধ (‘শিম-পটলের বিদেশ যাত্রা’, ১২-৫) পড়ে এই চিঠি। রাজ্য সরকার কৃষিপণ্য রফতানি নীতি প্রকাশ করেছে। ফল ও আনাজ ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ অপেক্ষা, প্রতিবাদ চালানোর পর এই নীতি প্রকাশিত হয়েছে। তবে ব্যবসায়ী বা চাষিদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কে ফাঁক থেকে গেলে কৃষির উন্নতি কম হবে। তাই চাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে রাজ্য সরকার রফতানির উন্নতিতে পদক্ষেপ করলে ভাল হয়। পশ্চিমবঙ্গ কৃষিপ্রধান রাজ্য। আনাজ উৎপাদনে প্রথম। যে বছর খুব বেশি আনাজ, ফল বা ফসল ফলে, তখন রফতানি না হলে তা নষ্ট হয়। আবার ফলন ভাল হলে কৃষক থেকে ব্যবসায়ী, সকলকে জলের দরে বিক্রি করতে হয় ফসল।

Advertisement

বিদেশে ফসল রফতানি করতে বিমান ভাড়া বেশি পড়লে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সেই সঙ্গে, ফসল মজুত করে রাখার জন্য দরকার পর্যাপ্ত ‘স্টোরেজ ক্যাপাসিটি’। পর্যাপ্ত সংখ্যায় উপযুক্ত গুদাম না থাকার জন্য উৎপাদিত ফসল নষ্ট হয়। পরবর্তী কালে যখন রাজ্যবাসীর খাদ্যভান্ডারে টান পড়ে, তখন আনাজ, ফলের দাম বাড়তে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ আনাজ রফতানি করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। পাশের রাজ্যগুলো এবং বাংলাদেশ থেকে আনাজ, ফসলের পরিমাণ রফতানির ক্ষেত্রে অনেক বেশি, তাই পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা উপকৃত হন না। ওই পরিমাণ আনাজ এ রাজ্যের কৃষকরা বিদেশে রফতানি করতে পারলে উপকৃত হতেন। পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা রাজ্য সরকারের কাছে কৃষিজ পণ্য রফতানি করার জন্য সার্টিফিকেট পান না। ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে কেন্দ্র থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন। তাতেও সমস্যা হয়। যতটুকু পারেন তাঁরা বিদেশে রফতানি করেন, বাকিটা নষ্ট হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের রফতানি বৃদ্ধি এজেন্সি ‘অ্যাপেডা’ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে উদ্যোগী হয়ে কাজ করলে কৃষকদের সুবিধা হত। এ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি মানের শংসাপত্র বা ‘ফাইটো সার্টিফিকেট’ প্রদান করে, তা হলে এ রাজ্যের কৃষক, ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।

আশাদুল্লা খান, সিউড়ি, বীরভূম

Advertisement

দামের গেরো

পাট কমিশনার কাঁচা পাটের দাম সর্বোচ্চ কুইন্টাল প্রতি ৬৫০০ টাকা ধার্য করার পর থেকেই চটকল মালিকরা আপত্তি জানিয়ে আসছেন। তাঁদের বক্তব্য, বাজারে এই দামে পাট অমিল, এবং মিল চালিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চটের বস্তা সরবরাহ করতে তাঁদের বাজার থেকে ৭০০০-৭৫০০ টাকা দরে পাট কিনতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। চটকলগুলির ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতির বহর বাড়িয়ে চটকল চালাতে মালিকরা অপারগ। ইতিমধ্যে এই যুক্তি দেখিয়ে রাজ্যে বেশ কিছু চটকল বন্ধ হয়েছে। কয়েক হাজার শ্রমিকের কাজ গিয়েছে। এই অবস্থায় রাজ্যের ট্রেড ইউনিয়নগুলো শ্রমিক স্বার্থে আন্দোলনের পথে। বর্তমানে বেশ কয়েক বছর যাবৎ পাট উৎপাদক রাজ্য সমূহে পাট চাষের এলাকা ও উৎপাদন ক্রমহ্রাসমান। ২০০০-২০১০ সাল পর্যন্ত যেখানে সারা দেশে প্রতি বছর গড়ে উৎপাদন হয়েছিল ৮৫-৯৫ লক্ষ গাঁটের আশেপাশে, সেখানে গত কয়েক বছর উৎপাদন হচ্ছে ৭০ লক্ষ গাঁটের কাছাকাছি (১ গাঁট=১৮০ কেজি হিসাবে)। ফলে অতীতে অধিক ফলনের জন্য বেশির ভাগ বছরেই পাটের দাম সরকার নির্ধারিত সহায়ক মূল্যের নীচে চলে যেত এবং চাষিরা ফড়ে মহাজনদের কাছে অভাবী বিক্রিতে বাধ্য হতেন। সেই সব দিনে আড়তদার, মিল মালিকরা চাষিদের ঠকিয়ে মুনাফার পাহাড় গড়তেন। এঁদের শোষণের হাত থেকে ৪০ লক্ষ পাট চাষিকে বাঁচাতে ও সর্বনিম্ন সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করে, জোগান চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার তাগিদে কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৭১ সালে জুট কর্পোরেশন গঠন করে। আশির দশকের শেষ ভাগ পর্যন্ত পাট নিগম পাট অর্থনীতিতে এক বিশিষ্ট ভূমিকা নিত, যদিও নিগম তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করেও কখনও দেশের সমগ্র উৎপাদনের ১৫-২০ শতাংশের বেশি পাট সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে বৃহদাংশ উৎপাদন চটকল মালিকদের কাছে পৌঁছত ফড়ে, মহাজন, আড়তদারদের হাত ঘুরে। তখন কিন্তু আড়তদার, মিল মালিকদের চাষিদের ন্যায্য দাম দিতে আইনত বাধ্য করতে কোনও সরকার পারেনি। কয়েক বছর যাবৎ যখন পাটের দাম বাড়ছে এবং চাষিরা ভাল দাম পাচ্ছেন, তখন কার স্বার্থে পাট কমিশনার বাজার অর্থনীতির ধারণার বিপরীতে গিয়ে সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দিলেন? পাট নিগম বর্তমানে কাগজে-কলমে টিকে আছে। গত দশ বছরের পরিসংখ্যান বলবে, দেশের উৎপাদনের এক শতাংশ পাটও নিগম কিনেছে কি না। তাই আজ যখন এই সংবাদপত্রে দেখছি ‘চাষিদের থেকে পাট কিনবে জুট কর্পোরেশন’ (১৪-৫), প্রশ্ন জাগে, একেই কি বলে প্রহসন?

দেবকী রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়, উত্তরপাড়া, হুগলি

শিল্পের ভবিষ্যৎ

মিহির কানুনগোর ‘অছিলা পাট’ (১৮-৫) শীর্ষক চিঠি এবং ‘অর্জুনের চট বিক্ষোভ’ (২৫-৪) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে এই পত্রের অবতারণা। অর্জুন সিংহ এক কালের বিধায়ক থেকে এখন সাংসদ হয়েছেন। চটশিল্পে পূর্বপুরুষের শ্রম-ঘামের মর্যাদা দিতে পাটের নাড়ি তিনি ভালই বুঝবেন নিঃসন্দেহে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন তিনি সরব হলেন, তখন চার মাসে ১৪টা চটকল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমনকি ব্যারাকপুরেও শিল্পাঞ্চলে ২৭টি চটকলের মধ্যে ১০টি বন্ধ।

যেটা অর্জুন সিংহ বুঝলেন না তা হল, কেন পাটের ফলন ভাল হওয়া সত্ত্বেও কুইন্টাল প্রতি পাটের ঊর্ধ্বসীমা ৬৫০০ টাকা? খবরে প্রকাশ, ২০০৫ সালে খোলা বাজারে বস্তার দাম কম থাকা সত্ত্বেও সংরক্ষণের সুযোগ নিয়ে চড়া দামে চটকলগুলি বস্ত্রমন্ত্রককে ঠকিয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সরকার আঙুল তুলেছিল। আর এ জন্যই বর্তমানে পাটের ব্যাগ প্রতি প্রায় ৬০ টাকা বিক্রয় মূল্যেও ক্ষোভ জমে থাকে। তা হলে ৩০ টাকা মূল্যের প্লাস্টিক লবির আর দোষ কোথায়? সেখানেও তো লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন। তবে তাঁরা সংরক্ষণের সহায়তায় বেঁচে নেই। তার উপর প্লাস্টিকে জল চুইয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই। সিমেন্ট বা অন্য গুঁড়োর দূষণ নেই। সৌন্দর্যে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, বহু ব্যবহারযোগ্য, জল প্রতিরোধক। প্লাস্টিকের রমরমাকে কি তা হলে প্রতিযোগিতার বাজারে আদৌ ‘পরিকল্পনা-মাফিক পাট শিল্পের ধ্বংস’ বলা চলে?

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ৫০ শতাংশের বেশি বিধায়ক পাট চাষ বা চটকল এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধি। অথচ, বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি এখনও শিল্পের মর্যাদা পায়নি। পাট নিয়ে সরব হওয়ার কিছু পরেই অর্জুন সিংহ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তবে এই রাজনীতির ফলে চট শিল্প চাঙ্গা হবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।

সুব্রত পাল, শালবনি, বাঁকুড়া

মানদণ্ড

বিগত ২ মে থেকে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ইন্ডিয়া পোস্ট তাদের গ্রামীণ ডাক সেবক পদে আবেদনপত্র জমা নিচ্ছে। প্রতি বারের মতো এই বছরও এই পদে চাকরির জন্য মাধ্যমিকের রেজ়াল্টকে মানদণ্ড হিসেবে ধরা হচ্ছে। যদি আমাদের রাজ্যের বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়, তা হলে দেখা যাবে আগের চেয়ে বর্তমানে মাধ্যমিকে অনেক বেশি নম্বর ওঠে। শুধু তা-ই নয়, বিগত বছরগুলোয় অনলাইন অথবা কেবলমাত্র ক্লাস টেস্টের মাধ্যমেই মাধ্যমিকের মার্কশিট দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় মাধ্যমিকের মার্কশিট একটা পদে চাকরির জন্য আদৌ ভরসাযোগ্য হয়ে উঠতে পারবে কি? এই বিষয়টি অবশ্যই এখন থেকেই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

স্নেহময় দাস, রঘুনাথগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement