অভিরূপ সরকারের ‘কোন খাতে টাকা খরচ হচ্ছে’ (১২-৪) শীর্ষক প্রবন্ধটি সুচিন্তিত। কিন্তু মহার্ঘ ভাতাকে যে ভাবে তিনি জনকল্যাণমূলক খাতে খরচের পথে বাধা হিসেবে তুলে ধরেছেন, তাতে অর্থনীতির হিসাব মেনে একটি সরকারের ‘ফিসকাল ম্যানেজমেন্ট’-এর অপদার্থতাই প্রতিপন্ন হয়। কেন্দ্রের সরকারের কথা বাদই দিলাম, কারণ তারা নোট ছাপাতে পারে। কিন্তু অন্য রাজ্যের সরকারগুলির দিকে তাকালেও দেখা যাবে যে, তারা অধিকাংশই এক দিকে যেমন জনহিতকর কাজে ভাল রকম অর্থ বরাদ্দ করছে, তেমনই মহার্ঘ ভাতার ৩১ কিস্তির বেশির ভাগ, বা কোনও কোনও রাজ্য পুরোটাই প্রদান করেছে। মানুষের উপকারের জন্য কাজ করার পাশাপাশি, কর্মীদের স্বার্থ যাতে সুরক্ষিত হয়, সেটা দেখাও একটি সরকারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
তা ছাড়া বকেয়া কিস্তির পরিমাণ তো এক দিনে এতখানি হয়নি। বকেয়া টাকা সময়ে সময়ে একটু করে মিটিয়ে দিলে তো আজকে এসে অভিরূপবাবুকে ২৩০০০ কোটি টাকা বকেয়ার গল্প শোনাতে হত না। এতে যে দু’পক্ষের স্বার্থে দ্বন্দ্বের আবহাওয়া তৈরির সম্ভাবনা থাকে, সেটা কি ওঁর মনে হয় না?
এখনও পর্যন্ত সরকারি কর্মীরা এক সঙ্গে পুরো বকেয়ার জন্য দাবি তুলে আন্দোলন করছে বলে জানা নেই। অসহায় দরিদ্র মানুষের উপকারের জন্য সরকারের কর্মীরাই কাজ করে চলেছেন। কর্মীরা তো সরকারের শত্রু নন। তাঁদের সাধারণ মানুষের চোখে প্রতিপক্ষ হিসাবে তুলে ধরা হলে সরকারের সুবিধের পরিবর্তে অসুবিধের সম্ভাবনাই বেশি।
রাসবিহারী দাস, কলকাতা-৬১
ঋণসর্বস্ব
অভিরূপ সরকার লিখেছেন, “ঋণগ্রস্ত থাকার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল প্রতি বছর মোট খরচের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পুরনো ধার এবং সেই ধারের উপর সুদ মেটাতে চলে যায়। এই অংশটা উন্নয়নের কাজে লাগে না।” ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকার চলে যাওয়ার সময় তাদের ঋণের পরিমাণ ছিল ১.৯২ লক্ষ কোটি টাকা। এ নিয়ে এখনও রাজ্যের শাসক দল পূর্বতন সরকারের তীব্র সমালোচনা করে থাকে। অথচ, ১১ বছরে এই রাজ্য যে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, অতীতে এ রাজ্যের কোনও সরকার তা নেয়নি। রাজ্যের বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে এই সামগ্রিক ঋণের অঙ্কটা বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছবে ৫.৮৬ লক্ষ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গে একটি শিশুর জন্মলগ্নেই তার মাথায় ঋণের বোঝার ভার পঞ্চাশ হাজার টাকারও বেশি। কেবল পুরনো ধার ও তার সুদ মেটানোর সমস্যাই কি একমাত্র কারণ?
২০১৫-২০২০ অর্থবর্ষের মধ্যে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্যগুলি কেন্দ্র থেকে ৩২ শতাংশের পরিবর্তে ৪২ শতাংশ রাজস্বের অন্তর্ভুক্ত হয়। রাজ্যগুলি এই সময় কেন্দ্র থেকে পেয়েছে ৩৯.৪৮ লক্ষ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছে ৭.৩২৪ শতাংশ, মোট অর্থের পরিমাণ ২,৮৭,৪৩৬ কোটি টাকা। হিসাবে যা ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দের দেড় গুণ। তা হলে রাজ্য সরকারকে এত বেশি নতুন ঋণ নিতে হচ্ছে কেন?
অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বলেন, ঋণ কমানোর জন্য যথাসম্ভব ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা হল অন্যতম পথ। অথচ, এই রাজ্যে ‘ডোল’ বিলির একের পর এক কর্মসূচি, খেলা-মেলা-উৎসব ইত্যাদিতে হুহু করে বাড়ছে বিভিন্ন পরিকল্পনা-বহির্ভূত খরচ। এর জেরে রাজ্যের রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণও গত বছরের ২৬,৭৫৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এ বার হয়েছে ২৮,২৮০ কোটি টাকা। রাজ্য ক্রমশই যদি এ ভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে যায়, তবে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ, স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি হবে কী করে? জাতীয় নমুনা সমীক্ষার একটি তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গে গত দশকে শিল্প ও কৃষিতে কর্মসংস্থান আদৌ বাড়েনি। পরিষেবার ক্ষেত্রে কিছুটা বেড়েছে।
আসলে সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতার উপর যত বেপরোয়া কোপই পড়ুক, সরকারি ক্ষেত্রে সাড়ে পাঁচ লক্ষ পদ পুরোপুরি শূন্যই থাক আর এ নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা চাইলে যত ‘ঘেউ ঘেউ’-ই করুন, এ রাজ্যের সরকারের কাছে এমন জরুরি বিষয়ের চেয়ে অনুদান ও ভাতা প্রদানের রাজনীতি অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ, এমনই মনে হচ্ছে।
পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি
বিভাজনের নীতি
অভিরূপ সরকার রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা খাতে প্রাপ্য টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গে লিখেছেন, এতে “সরকারের বার্ষিক খরচ হবে ২৩০০০ কোটিরও বেশি।” অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মীদের ন্যায্য বেতন ঠেকিয়ে রাখাই ঠিক। অথচ, সরকার তো কর্মীদের ন্যায্য বেতন দিতে বাধ্য। তা ধরেই রাজ্যের বার্ষিক বাজেট ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তৈরি হওয়ার কথা। প্রবন্ধকার লিখেছেন, “যদি এই খরচটা করা হত, পিছিয়ে পড়াদের জন্য কল্যাণমূলক খাতে যে ৪০,০০০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে, সেটা অর্ধেকেরও বেশি কমে যেত।” এ বিষয়ে কিছু বিচার-বিবেচনা দরকার।
এক, ‘কল্যাণমূলক’ প্রকল্পগুলো অধিকাংশ অসহায়দের সেবামূলক খাতে ব্যয় করার জন্য বরাদ্দ হওয়াই বিধেয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ধনী-দরিদ্র সবাই পাচ্ছেন। এতে সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে। দুই, এই প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সাধারণত শ্রমের সম্পর্ক নেই। শারীরিক ভাবে অসমর্থ ব্যক্তিদের পরিবর্তে সমর্থ বেকারদের নানা প্রকল্পে অনুদান দিয়ে ছদ্ম-বেকারত্বকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। তিন, শাসক দলের ঘনিষ্ঠরা এই প্রকল্পগুলোর সুবিধা আগে পাচ্ছেন, সংবাদে তা নিত্য প্রকাশিত। চার, সাধারণত আর্থিক বর্ষ শুরু হওয়ার আগে জনসংখ্যার বিচার করে এবং রাজ্যের রাজস্ব আয়ের সম্ভাব্য পরিমাণ হিসাব করে কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ ঠিক করা হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর জনমোহিনী ঘোষণায় এই বিবেচনা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এই সব কারণে রাজস্বের বিপুল অপচয় হচ্ছে, যার সংস্থান আসে জনগণের দেওয়া কর, শুল্ক ইত্যাদি রাজস্ব আয় থেকে। এই ন্যায় ও নীতির কথা বলা দরকার ছিল প্রবন্ধে।
সরকারি কর্মীরা এই সমাজের অংশ, এবং সরকারের অংশ। কল্যাণের নামে এক অংশকে বঞ্চিত করে অন্য অংশকে পাওয়ানো হল ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতির প্রয়োগ। এক দল না পেলে তার জন্য অন্য দলকে অভিযুক্ত করে তাকে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লেখক আসলে পচা শাক (‘এমন কথা বলার উপায় নেই’) দিয়ে পচা মাছ (‘পশ্চিমবঙ্গের ঋণ লাগামছাড়া’) ঢাকতে ব্যস্ত। এই ভ্রান্ত দর্শনের সংস্কার হওয়া দরকার।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
ঠিকা মন্ত্র
অভিরূপ সরকার বলেছেন, বর্তমান শাসক দল বামফ্রন্ট সরকারের ঋণের দায় বারো বছরে ১৫-১৬% কমিয়েছে। ভাল কথা। এ সবের পরেও বর্তমান সরকার যে নতুন নানা উন্নয়নের ব্যয় চালাচ্ছে, পুরনো উন্নয়নও বাদ দেয়নি, আবার ঋণ-আয় অনুপাতও কমাচ্ছে, সে-ও ভাল কথা। কিন্তু টাকা আসছে কোথা থেকে? কতটা করের টাকা,কতটা নতুন ঋণ? নতুন করে আবার কত
সম্পাদক সমীপেষু: মিথ্যা দ্বন্দ্ব
অভিরূপ সরকারের ‘কোন খাতে টাকা খরচ হচ্ছে’ (১২-৪) শীর্ষক প্রবন্ধটি সুচিন্তিত। কিন্তু মহার্ঘ ভাতাকে যে ভাবে তিনি জনকল্যাণমূলক খাতে খরচের পথে বাধা হিসেবে তুলে ধরেছেন, তাতে অর্থনীতির হিসাব মেনে একটি সরকারের ‘ফিসকাল ম্যানেজমেন্ট’-এর অপদার্থতাই প্রতিপন্ন হয়। কেন্দ্রের সরকারের কথা বাদই দিলাম, কারণ তারা নোট ছাপাতে পারে। কিন্তু অন্য রাজ্যের সরকারগুলির দিকে তাকালেও দেখা যাবে যে, তারা অধিকাংশই এক দিকে যেমন জনহিতকর কাজে ভাল রকম অর্থ বরাদ্দ করছে, তেমনই মহার্ঘ ভাতার ৩১ কিস্তির বেশির ভাগ, বা কোনও কোনও রাজ্য পুরোটাই প্রদান করেছে। মানুষের উপকারের জন্য কাজ করার পাশাপাশি, কর্মীদের স্বার্থ যাতে সুরক্ষিত হয়, সেটা দেখাও একটি সরকারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
তা ছাড়া বকেয়া কিস্তির পরিমাণ তো এক দিনে এতখানি হয়নি। বকেয়া টাকা সময়ে সময়ে একটু করে মিটিয়ে দিলে তো আজকে এসে অভিরূপবাবুকে ২৩০০০ কোটি টাকা বকেয়ার গল্প শোনাতে হত না। এতে যে দু’পক্ষের স্বার্থে দ্বন্দ্বের আবহাওয়া তৈরির সম্ভাবনা থাকে, সেটা কি ওঁর মনে হয় না?
এখনও পর্যন্ত সরকারি কর্মীরা এক সঙ্গে পুরো বকেয়ার জন্য দাবি তুলে আন্দোলন করছে বলে জানা নেই। অসহায় দরিদ্র মানুষের উপকারের জন্য সরকারের কর্মীরাই কাজ করে চলেছেন। কর্মীরা তো সরকারের শত্রু নন। তাঁদের সাধারণ মানুষের চোখে প্রতিপক্ষ হিসাবে তুলে ধরা হলে সরকারের সুবিধের পরিবর্তে অসুবিধের সম্ভাবনাই বেশি।
রাসবিহারী দাস, কলকাতা-৬১
ঋণসর্বস্ব
অভিরূপ সরকার লিখেছেন, “ঋণগ্রস্ত থাকার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল প্রতি বছর মোট খরচের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পুরনো ধার এবং সেই ধারের উপর সুদ মেটাতে চলে যায়। এই অংশটা উন্নয়নের কাজে লাগে না।” ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকার চলে যাওয়ার সময় তাদের ঋণের পরিমাণ ছিল ১.৯২ লক্ষ কোটি টাকা। এ নিয়ে এখনও রাজ্যের শাসক দল পূর্বতন সরকারের তীব্র সমালোচনা করে থাকে। অথচ, ১১ বছরে এই রাজ্য যে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, অতীতে এ রাজ্যের কোনও সরকার তা নেয়নি। রাজ্যের বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে এই সামগ্রিক ঋণের অঙ্কটা বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছবে ৫.৮৬ লক্ষ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গে একটি শিশুর জন্মলগ্নেই তার মাথায় ঋণের বোঝার ভার পঞ্চাশ হাজার টাকারও বেশি। কেবল পুরনো ধার ও তার সুদ মেটানোর সমস্যাই কি একমাত্র কারণ?
২০১৫-২০২০ অর্থবর্ষের মধ্যে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্যগুলি কেন্দ্র থেকে ৩২ শতাংশের পরিবর্তে ৪২ শতাংশ রাজস্বের অন্তর্ভুক্ত হয়। রাজ্যগুলি এই সময় কেন্দ্র থেকে পেয়েছে ৩৯.৪৮ লক্ষ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছে ৭.৩২৪ শতাংশ, মোট অর্থের পরিমাণ ২,৮৭,৪৩৬ কোটি টাকা। হিসাবে যা ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দের দেড় গুণ। তা হলে রাজ্য সরকারকে এত বেশি নতুন ঋণ নিতে হচ্ছে কেন?
অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বলেন, ঋণ কমানোর জন্য যথাসম্ভব ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা হল অন্যতম পথ। অথচ, এই রাজ্যে ‘ডোল’ বিলির একের পর এক কর্মসূচি, খেলা-মেলা-উৎসব ইত্যাদিতে হুহু করে বাড়ছে বিভিন্ন পরিকল্পনা-বহির্ভূত খরচ। এর জেরে রাজ্যের রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণও গত বছরের ২৬,৭৫৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এ বার হয়েছে ২৮,২৮০ কোটি টাকা। রাজ্য ক্রমশই যদি এ ভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে যায়, তবে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ, স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি হবে কী করে? জাতীয় নমুনা সমীক্ষার একটি তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গে গত দশকে শিল্প ও কৃষিতে কর্মসংস্থান আদৌ বাড়েনি। পরিষেবার ক্ষেত্রে কিছুটা বেড়েছে।
আসলে সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতার উপর যত বেপরোয়া কোপই পড়ুক, সরকারি ক্ষেত্রে সাড়ে পাঁচ লক্ষ পদ পুরোপুরি শূন্যই থাক আর এ নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা চাইলে যত ‘ঘেউ ঘেউ’-ই করুন, এ রাজ্যের সরকারের কাছে এমন জরুরি বিষয়ের চেয়ে অনুদান ও ভাতা প্রদানের রাজনীতি অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ, এমনই মনে হচ্ছে।
পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি
বিভাজনের নীতি
অভিরূপ সরকার রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা খাতে প্রাপ্য টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গে লিখেছেন, এতে “সরকারের বার্ষিক খরচ হবে ২৩০০০ কোটিরও বেশি।” অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মীদের ন্যায্য বেতন ঠেকিয়ে রাখাই ঠিক। অথচ, সরকার তো কর্মীদের ন্যায্য বেতন দিতে বাধ্য। তা ধরেই রাজ্যের বার্ষিক বাজেট ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তৈরি হওয়ার কথা। প্রবন্ধকার লিখেছেন, “যদি এই খরচটা করা হত, পিছিয়ে পড়াদের জন্য কল্যাণমূলক খাতে যে ৪০,০০০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে, সেটা অর্ধেকেরও বেশি কমে যেত।” এ বিষয়ে কিছু বিচার-বিবেচনা দরকার।
এক, ‘কল্যাণমূলক’ প্রকল্পগুলো অধিকাংশ অসহায়দের সেবামূলক খাতে ব্যয় করার জন্য বরাদ্দ হওয়াই বিধেয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ধনী-দরিদ্র সবাই পাচ্ছেন। এতে সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে। দুই, এই প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সাধারণত শ্রমের সম্পর্ক নেই। শারীরিক ভাবে অসমর্থ ব্যক্তিদের পরিবর্তে সমর্থ বেকারদের নানা প্রকল্পে অনুদান দিয়ে ছদ্ম-বেকারত্বকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। তিন, শাসক দলের ঘনিষ্ঠরা এই প্রকল্পগুলোর সুবিধা আগে পাচ্ছেন, সংবাদে তা নিত্য প্রকাশিত। চার, সাধারণত আর্থিক বর্ষ শুরু হওয়ার আগে জনসংখ্যার বিচার করে এবং রাজ্যের রাজস্ব আয়ের সম্ভাব্য পরিমাণ হিসাব করে কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ ঠিক করা হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর জনমোহিনী ঘোষণায় এই বিবেচনা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এই সব কারণে রাজস্বের বিপুল অপচয় হচ্ছে, যার সংস্থান আসে জনগণের দেওয়া কর, শুল্ক ইত্যাদি রাজস্ব আয় থেকে। এই ন্যায় ও নীতির কথা বলা দরকার ছিল প্রবন্ধে।
সরকারি কর্মীরা এই সমাজের অংশ, এবং সরকারের অংশ। কল্যাণের নামে এক অংশকে বঞ্চিত করে অন্য অংশকে পাওয়ানো হল ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতির প্রয়োগ। এক দল না পেলে তার জন্য অন্য দলকে অভিযুক্ত করে তাকে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লেখক আসলে পচা শাক (‘এমন কথা বলার উপায় নেই’) দিয়ে পচা মাছ (‘পশ্চিমবঙ্গের ঋণ লাগামছাড়া’) ঢাকতে ব্যস্ত। এই ভ্রান্ত দর্শনের সংস্কার হওয়া দরকার।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
ঠিকা মন্ত্র
অভিরূপ সরকার বলেছেন, বর্তমান শাসক দল বামফ্রন্ট সরকারের ঋণের দায় বারো বছরে ১৫-১৬% কমিয়েছে। ভাল কথা। এ সবের পরেও বর্তমান সরকার যে নতুন নানা উন্নয়নের ব্যয় চালাচ্ছে, পুরনো উন্নয়নও বাদ দেয়নি, আবার ঋণ-আয় অনুপাতও কমাচ্ছে, সে-ও ভাল কথা। কিন্তু টাকা আসছে কোথা থেকে? কতটা করের টাকা,কতটা নতুন ঋণ? নতুন করে আবার কত ঋণের দায় চাপছে মানুষের উপর? সাধারণ মানুষের এ সব যেন জানার অধিকার নেই।
লেখক বলেছেন, নানা জনহিতৈষী কাজের খোরাক জোগাতে সরকারকে কমাতে হয়েছে অনেক জরুরি খাতের খরচ। যেমন, স্থায়ী নিয়োগ তুলে দিয়ে সে জায়গায় চুক্তিতে কাজ করানো হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন, পরিষেবা, সর্বত্র। লেখক বলতে চেয়েছেন, এর ফলে খরচই শুধু কমেনি, কর্মসংস্থানও বেড়েছে। প্রশ্ন হল, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো জরুরি ক্ষেত্রে এ ধরনের সমঝোতা করা যায় কি? ঠিকায় শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ, কর্মচারী নিলে খরচ তো কমবেই। কিন্তু তা দিয়ে এক উন্নত সমাজ তৈরি হয় না।
শিবপ্রসাদ দাস, আন্দুল মৌড়ি, হাওড়া
ঋণের দায় চাপছে মানুষের উপর? সাধারণ মানুষের এ সব যেন জানার অধিকার নেই।
লেখক বলেছেন, নানা জনহিতৈষী কাজের খোরাক জোগাতে সরকারকে কমাতে হয়েছে অনেক জরুরি খাতের খরচ। যেমন, স্থায়ী নিয়োগ তুলে দিয়ে সে জায়গায় চুক্তিতে কাজ করানো হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন, পরিষেবা, সর্বত্র। লেখক বলতে চেয়েছেন, এর ফলে খরচই শুধু কমেনি, কর্মসংস্থানও বেড়েছে। প্রশ্ন হল, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো জরুরি ক্ষেত্রে এ ধরনের সমঝোতা করা যায় কি? ঠিকায় শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ, কর্মচারী নিলে খরচ তো কমবেই। কিন্তু তা দিয়ে এক উন্নত সমাজ তৈরি হয় না।
শিবপ্রসাদ দাস, আন্দুল মৌড়ি, হাওড়া