—প্রতীকী চিত্র।
‘কেন ব্যর্থতা’ (১২-১০) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। যে সমাজে কলেজপড়ুয়া দিদিকে রাতে বাস স্টপ থেকে নিয়ে আসার জন্য ছোট ভাইকে নিয়মিত হাজির থাকতে হয়, সেখানে নারী সম্পর্কিত মূল ভাবনাগুলি যে এখনও বিকশিত হয়নি, তা বলা বাহুল্য। দাঙ্গাবিধ্বস্ত গুজরাতে যেমন বিলকিস বানো শুধুমাত্র এক অত্যাচারিতের নাম, তেমনই পশ্চিমবঙ্গে উনিশ বছরের কলেজছাত্রী শুধুই নিগৃহীতা এক নারী-শরীর।
গুজরাতে চোদ্দো বছরের সাজাপ্রাপ্ত নির্দোষ প্রমাণিত। আর পশ্চিমবঙ্গে শাস্তি কমে যায়, কিংবা বেকসুর খালাস হয়। দেশের দুই প্রান্তে নারী-অত্যাচারের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের বিচারে কী অদ্ভুত মিল! সমাজের সংবেদনশীলতা কি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত! না হলে কামদুনির ঘটনার অব্যবহিত পরেই দু’টি মেয়ে তাঁদের বান্ধবীর প্রতি অবিচারের কথা বলতে গিয়ে কেন রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্বের ভর্ৎসনার মুখে পড়বেন কিংবা ‘মাওবাদী’ বলে অভিহিত হবেন? দল-মত নির্বিশেষে উদ্যোগ করলে কামদুনির উনিশ বছরের কলেজছাত্রীটির প্রতি যে নৃশংস আচরণ সংগঠিত হয়েছিল, এত দিন পর তার কি সত্যিই সুবিচার পাওয়া যেত না! একটি ঘৃণ্য ঘটনায় অভিশপ্ত গ্রামটি কী ভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ল, সে সম্বন্ধে ভাবনারও অবকাশ রয়ে যায়। এ ভাবেই আদালতের অঙ্গনে যখন বিচারপ্রক্রিয়াটি পৌঁছয়, তখন সেই ঘটনার অভিঘাত নেহাতই লঘু হয়ে যায়।
দেশে আইন যেমন আছে, তেমনই রয়েছে আইনের ফাঁকও। ছলে বলে কৌশলে, ক্ষমতার অপব্যবহারে, প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় অপরাধী চিরকালই বিচারব্যবস্থায় নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগে। তাই দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি যথাযথ সম্ভ্রম এবং শ্রদ্ধা রেখেও বলা যায় যে, সঠিক ভাবে তদন্তের কাজ না এগোনোয় অনেক ঘৃণ্য ঘটনায় অভিযুক্ত আসামিরাও বেকসুর মুক্ত হয়ে সমাজের বুকে চলাফেরার ছাড়পত্র পেয়ে যায়।
সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
অপূর্ণ আশা
‘কেন ব্যর্থতা’ শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। মুখে গণতন্ত্রের বুলি (মা, মাটি ও মানুষ), আর সততার ধ্বজা উড়িয়ে তথাকথিত পরিবর্তনের পথে যে সরকার এল ২০১১ সালে, রাজ্যবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা কতটুকু তারা পূর্ণ করতে পারল, সেটা বিচারের সময় আজ বোধ হয় এসেছে। অপরাধকে ছোট করে দেখার প্রবণতা রাজ্যের মুখ্য প্রশাসকের আছে, যদি অপরাধী তাঁর দলীয় কর্মী হয়। তাই রায়গঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ নিগ্রহের মতো ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ‘ছোট ছোট ছেলেদের দুষ্টামি’। সে দিন থেকেই শাসক দলের অপকর্মকারীরা বুঝে গিয়েছিল, এ রাজ্য এখন থেকে তাদেরই দখলে। ২০১৩ সালে উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে যে ভাবে একটি উনিশ বছরের তরুণীকে গণধর্ষণের পরে খুন করা হল, তা বোধ হয় এই রাজ্যে বিরলতম ঘটনা। প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়ার পরিবর্তে যে সব মহিলা প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিত্বের কাছে তাঁদের ক্ষোভের কথা জানাতে এসেছিলেন, তাঁদের ‘মাওবাদী’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। আর রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন যে দলের অনুগত, সে প্রমাণ তো রাজ্যবাসী একাধিক ঘটনায় জেনেছেন। রাজ্য সরকার মামলাটি বারাসত থেকে রাজারহাট থানায় সরিয়েছিল, বিচার সরেছিল বারাসত আদালত থেকে নগরদায়রা আদালতে, ১৬ বার পরিবর্তন করা হয়েছে রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি। সর্বোপরি, নিহতের পরিবারকে চাকরি দিয়ে তাঁদের গ্রাম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ মঞ্চের বিপরীতে, তৃণমূলের শান্তি রক্ষা কমিটি গঠন করে, ঘটনাটির আসল চরিত্র পাল্টে দেওয়া হয়েছে। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ড আদালতে বিচার পেল, অপরাধীদের সাজাও মিলল, শুধু কামদুনি যথার্থ বিচার পেল না।
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, উত্তর ২৪ পরগনা
শব্দদানব
বাজি পোড়ানো এবং উচ্চৈঃস্বরে ডিজে বাজানোটা আজ ধর্মীয়, তথা যে কোনও উৎসবের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন উৎসবের মরসুমে শব্দবাজি ও ডিজের তাণ্ডবে আমাদের প্রিয় শহর ও গ্রাম থরহরি কম্প হয়, বৃদ্ধি পায় দূষণ। সর্বত্র এক অবস্থা। আর এই দূষণের জন্য দায়ী বেশ কিছু আমোদপ্রিয় দায়িত্বজ্ঞানহীন অসচেতন মানুষ। মহালয়া, দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো ও সঙ্গে রাসের কাঠামো বা পাটপুজোর ধুম। কালীপুজো এবং রাস উৎসবে চলে শব্দবাজি ও আলোবাজির বেলাগাম ব্যবহার। সঙ্গে ডিজে তো আছেই। শব্দবাজি ও আতশবাজি দুটোই পরিবেশ তথা মানব জীবনের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর বস্তু। শহরের অনেক বাড়িতেই লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে শব্দবাজি ও আলোর বাজির প্রতিযোগিতা চলে। প্রতিযোগিতা চলে রাসের কাঠামো পুজো উপলক্ষে শব্দবাজি ও ডিজের তাণ্ডবের।
ফলে, সর্বত্র যে পরিমাণ দূষণ ঘটে, তাতে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের কষ্ট বাড়ে। বিশেষত, শিশু ও বৃদ্ধদের উপর মারাত্মক ক্ষতি করে এই প্রবল শব্দ। হার্ট ও উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে ভুগছেন যাঁরা, তাঁদের জন্যও যথেষ্ট চিন্তাজনক এই পরিস্থিতি। পথচলতি মানুষদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বেশি। উৎসব পালনের মধ্যে এখন আনন্দের চেয়ে উল্লাস ও উচ্ছৃঙ্খলতা বেশি। আশপাশের মানুষগুলি এর দ্বারা কত দূর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, সেটা জেনেও মনে রাখেন না কেউ। বায়ুদূষণকে অদৃশ্য ঘাতক হিসাবে বর্ণনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ অপরিণত বয়সে মারা যান। যাঁরা বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছেন, তাঁদের মস্তিষ্ক নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দূষণের শিকার অনেকের মানসিক সমস্যাও তৈরি হতে পারে।
ভারতে প্রতি বছর ৩০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় পরিবেশ দূষণের কারণে। বিশ্বে দূষণের কারণে প্রতি ছ’জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যু ঘটে। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হল, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে দূষণের কারণে সর্বাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে। এই রাজ্যে সরকার এক সময় ঘোষণা করেছিল, ‘সাইলেন্ট জ়োন’, অর্থাৎ হাসপাতাল, নার্সিংহোম, স্কুল, কলেজের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও রকম ডিজে, মাইক বাজানো যাবে না এবং আতশবাজিও ফাটানো যাবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! এ সব আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করেই চলে শব্দের তাণ্ডব। এ ভাবেই প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হয় মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার এবং জনস্বাস্থ্য। প্রতি বছর দেশ জুড়ে শব্দবাজির দাপটে এবং ডিজে, মাইক বাজানোর কারণে অসংখ্য শিশু শ্রবণক্ষমতা হারাচ্ছে চিরকালের মতো। চিকিৎসকদের মতে, সদ্যোজাতদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব মারাত্মক।
অথচ, এর বিরুদ্ধে সরকারের তরফ থেকে কার্যকর কোনও ভূমিকা আমরা দেখতে পাই না। আমাদের রাজ্যে তথা দেশে দূষণ রোধে অনেক কড়া আইন আছে। কিন্তু সরকার আর্থিক সাহায্য দিয়ে এই বিষয়গুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে। প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন নাগরিকের উচিত, এই ব্যাপারটি নিয়ে প্রতিবাদে সরব হওয়া।
প্রতাপ চন্দ্র দাস, নবদ্বীপ, নদিয়া
বন্ধ রুট
২ নম্বর রুটের বাস, যা চলত চুঁচুড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত। বেশ কয়েক মাস হয়ে গেল তা বন্ধ আছে। এই রুটের বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে চুঁচুড়া, চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর ও বৈদ্যবাটির জিটি রোড সংলগ্ন এলাকার মানুষদের একটু দূরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, ২ নম্বর রুটের বাস পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করা হোক।
কালী শঙ্কর মিত্র, ভদ্রেশ্বর, হুগলি