প্রকৃত নাম এর্নেস্তো রাফায়েল গেভারা দে লা সের্না। তবে, শুধু ‘চে’ নামেই চেনে গোটা দুনিয়া। আর্জেন্টিনার মানুষ। ছিলেন ডাক্তার। ভালবাসতেন কবিতা শুনতে ও লিখতে। তিনি একই সঙ্গে ডাক্তার, লেখক, ভ্রমণপিপাসু, রাগবি, ফুটবল, দাবা খেলার ভক্ত, এবং বিপ্লবী।
ছাত্রাবস্থায় মোটরসাইকেলে লাতিন আমেরিকা ভ্রমণকালে সেখানকার দারিদ্র তাঁকে ভীষণ ভাবে নাড়িয়ে দেয়। তাঁর তরুণ মন এর জন্য একচেটিয়া পুঁজিবাদকে দায়ী করে।
সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় বিশ্বাসী চে এর পর গুয়েতেমালায় সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। তার পর ফিদেল কাস্ত্রোর সংস্পর্শে এসে কিউবার বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন। কিউবার অত্যাচারী বাতিস্তা সরকারের সঙ্গে প্রায় দু’বছরের সংগ্রামের পর সেই সরকারের পতন হয়। ১৯৬১ সালে ফিদেল কাস্ত্রো চে গেভারাকে শিল্পমন্ত্রী করেন। কিউবার রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিভিন্ন দেশে যান। ১৯৬৫ সালে কাস্ত্রো জানান, কিউবা ছেড়েছেন চে।
ক্ষমতার আস্ফালন দেখানোর ব্যাপারে পুঁজিবাদী আমেরিকা বা সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া, চিন— সবারই নীতি এক। রাজনৈতিক দলমতনির্বিশেষে ক্ষমতা ছাড়তে সবারই আপত্তি সমান। এইখানেই চে স্বতন্ত্র। ১৯৬৫ সালে কিউবা ত্যাগ করে তিনি আফ্রিকার কঙ্গোয় যান বিপ্লব সংগঠনের উদ্দেশ্যে। তার পর বলিভিয়া। সিআইএ-র সাহায্যপুষ্ট বলিভিয়ার সেনার হাতে চে বন্দি ও নিহত হন ১৯৬৭ সালে।
আপনি পুঁজিবাদে বিশ্বাস করতে পারেন, গোঁড়া ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাস করতে পারেন, অতি রক্ষণশীল দক্ষিণপন্থীও হতে পারেন— কিন্তু বিভিন্ন দেশে ঘুরে বিপ্লবে শামিল হওয়া এই জীবনকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারবেন না। ভারতে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে একদম নিচুস্তরের পঞ্চায়েত পর্যন্ত আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শুধুমাত্র আদর্শের জন্য তাঁর এই লড়াইয়ের কথা অলীক ঠেকা স্বাভাবিক। এই কারণেই তিনি দুনিয়া জুড়ে তারুণ্যের প্রতীক, বিপ্লবের প্রতীক। ১৪ জুন ছিল তাঁর জন্মদিন।
সুভাশীষ দত্ত
চাকদা, নদিয়া
সেই বন্যা
‘অলীক মানুষেরা’ (১৩-৬) চিঠি আমারও কিছু স্মৃতি উসকে দিল। ১৯৭৮ সালের বন্যায়, আমাদের স্কুল সুরেন্দ্রনাথ বিদ্যানিকেতন বিনা বাধায় দখল করেছেন হাজারখানেক মানুষ। সদ্য-বেকার আমি, বিনে পয়সার কাজ পেয়েছি এবং টানা সাত দিন সকাল-বিকেল খিচুড়ি রান্না করছি। কমরেডরা চাল-ডাল-তেল-আনাজ জোগাড় করছেন। এসডিও অফিস থেকে পাউরুটি ও ভেলিগুড় দিয়ে গিয়েছে তিন দিন আগে। রান্নার ফাঁকে আড্ডা মারছি, হঠাৎ দেখি এলাকার যুযুধান দুই দাদা পেটো-পাইপগান ছাড়াই সদলবল হাজির। দাদারা ’৭১ সালে মুক্তাঞ্চল গড়তে চেয়েছিলেন, চারুবাবুর লাইনে। ’৭৪-এ বেলাইন হয়ে পথ হারিয়েছিলেন সঞ্জয় গাঁধীর উত্থানে। এখন জানালেন, এক দিন তাঁরা হাজার মানুষের খাবারের দায়িত্ব নিতে চান। অতি উৎসাহে যৌথ উদ্যোগে শেওড়াফুলি বাজারে, চালের থেকে বেশি ডাল জোগাড় করে ফেললেন। পরে ডাল ফেরত দিয়ে ব্লিচিং পাউডার ও বেবিফুড সংগ্রহ করি। সেই সব অসামাজিক শ্রেণিশত্রুদের নির্মল হাসিখুশি মুখগুলি চোখ বুজলেই দেখতে পাই।
স্কুলবাড়িতে, কয়েক জন নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ, মুরগি নিয়ে সোজা দোতলায় ক্লাস টেনের ঘরে। দু’মিনিট আগে ছাগল নিয়ে অনুপ্রবেশকারী প্রতিবেশী ব্রাহ্মণের তীব্র আপত্তি। মুরগি আগে না ছাগল আগে? হুমকি দিলেন, অনশন করবেন। ব্রাহ্মণকে উৎখাতের নোটিস ধরালাম। নিঃশর্ত সমর্থন করলেন তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার ও একদা চারু মজুমদারের চেলারা। ভাগ্যিস, তখনও জিটি রোড দিয়ে রামরথ যায়নি। ব্রাহ্মণ অবশ্য উৎখাত হননি। রটনা, পরে কুক্কুটমাংসে ভাগ বসান।
শ্যামলেন্দু বিশ্বাস
শ্রীরামপুর, হুগলি
এডিএইচডি
“কী ভাবে সামলাবেন হাইপারঅ্যাক্টিভ সন্তানকে” শীর্ষক লেখাটিতে (১৩-৬, পত্রিকা) গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কিছু তথ্য সংশোধনের প্রয়োজনও রয়েছে। এই প্রবন্ধে অভিভাবকের দায়িত্ব প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, অসুখ ধরা পড়ার পর সন্তানকে স্পেশাল স্কুল বা ক্লিনিকে দেওয়াই ঠিক সিদ্ধান্ত। প্রতিবেদক হয়তো ইন্টেলেকচুয়াল ডিজ়এবিলিটি বা সিভিয়র অটিজ়মের সঙ্গে অতিচঞ্চল শিশুদের গুলিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু বাস্তব হল, এটি একটি নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল সমস্যা হলেও এমন কোনও ডিজ়অর্ডার নয়, যেখানে বিশেষ স্কুলের প্রয়োজন আছে। একটি শিশু, যার এই সমস্যা আছে, সে অন্যদের মতোই সাধারণ স্কুলে পড়তে পারে এবং তাতেই তার ঠিক বিকাশ হয়।
প্রতিবেদনটিতে বার বার অটিজ়ম এবং অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিজ়অর্ডার গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। একটি শিশু, যার হাইপার অ্যাক্টিভিটি আছে, এমনকি অটিজ়ম আছে এমন শিশুর যদি ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট ঠিক থাকে— যাকে হাই ফাংশনিং অটিজ়ম বলা হয়— এবং স্কুলে বিশেষ ব্যবস্থা থাকে, তবে তারা সাধারণ স্কুলে যেতে পারে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ধরনের সমস্যায় সাইকায়াট্রিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, রিহ্যাবিলিটেশন থেরাপিস্ট, স্পেশাল এডুকেটর, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এই ধরনের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের একত্রিত প্রচেষ্টা ও পরামর্শ প্রয়োজন হয়। থেরাপিস্ট ওষুধ দেন না, সেটা সাইকায়াট্রিস্ট-এর কাজ।
দোয়েল ঘোষ
ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি, কলকাতা
পতাকায় রংধনু
সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা যখন তোলপাড় করছে ভারতকে, তখন নিঃশব্দে চলে গেল আর একটি মেয়ে। পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল কানাডায়। অপরাধ? মিশরের সমকামী মেয়েটি উড়িয়েছিল রেনবো ফ্ল্যাগ, একটি ওপেন কনসার্টে। তাকে বন্দি করে অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছিল পুলিশ। সেই ঘটনার অভিঘাত থেকে কোনও দিনই সে পুরোপুরি বেরোতে পারেনি। সারা হেগাজি সেই নাম। রেইজ়দ্যফ্ল্যাগফরসারা বলে আজ সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে যাচ্ছে তার আত্মহত্যার প্রতিবাদে। সে লিখেছিল, “পৃথিবীর প্রতি— তুমি সাংঘাতিক নিষ্ঠুর, কিন্তু তোমাকে ক্ষমা করলাম।” আমাদের বলা হচ্ছে, নিজের মনের কথা খুলে বলো। খুলেই বলেছিল সারা। কিন্তু শোনার কানগুলো এখনও যে ঠিকমতো তৈরি হয়নি, সেটাই প্রমাণ করে দিল তার অসহায় আত্মহত্যা।
অথচ ভাগ্যের কী পরিহাস! বৈষম্যের ইতিবৃত্ত সম্পূর্ণ হল যেন। সারার মৃত্যুর ঠিক এক দিন পরেই একটি ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা হয়ে গেল আমেরিকায়। সমকামী যুগলদের বিয়ের অনুমতি দেওয়ার পাঁচ বছর পর আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট জানাল, অবশেষে কর্মক্ষেত্রেও সুরক্ষা পেল এলজিবিটি সম্প্রদায়। শুধু সমকামিতার জন্য তাদের চাকরি থেকে কোনও ভাবেই বরখাস্ত করা যাবে না— এটা জেরাল্ড বস্টকের মতো শত শত মানুষের জীবনে স্বপ্নের মতো। একটি গে সফটবল টিমে যোগ দিয়েছিলেন বলে এক দিন চলে গিয়েছিল তাঁর চাকরি। ঠিক তেমনই আর এক জন ডোনাল্ড জর্ডা, যিনি ছিলেন স্কাই ডাইভিং প্রশিক্ষক। শূন্যে ঝাঁপ দেওয়ার আগে জর্ডার শরীরের সঙ্গে নিজেকে আবদ্ধ করে তবেই ক্লায়েন্টকে ঝাঁপাতে হত। তেমনই এক জন মহিলা ক্লায়েন্টকে আশ্বস্ত করার জন্যেই হয়তো তিনি বলেছিলেন “চিন্তার কোনও কারণ নেই। আমি একশো শতাংশ গে।” চাকরি খুইয়েছিলেন জর্ডা। আজকের এই জয় দেখে যাওয়া হল না তাঁরও। সারার মৃত্যু যে কালো অন্ধকারে পিষে দিয়ে যাচ্ছিল আমাদের, এই রায় যেন কোথাও একটু আলোর দিশা ছুঁয়ে দিল। তবে, মনে কিছু প্রশ্নও উঁকি দিয়ে যায়। এই তড়িঘড়ি উদার সিদ্ধান্ত কোনও রাজনৈতিক লাভের জন্য নয়তো?
ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য
নিউ জার্সি