নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘কথায় কাজে এত ফারাক’ (১৫-৯) প্রবন্ধটি প্রণিধানযোগ্য। সত্যিই, মোদীজির কথায় কাজে মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রশ্ন উঠতেই পারে, নেতাজিকে নিয়ে ‘কুনাট্য’ করার সুযোগ নরেন্দ্র মোদী পেলেন কী ভাবে? নেতাজি তাঁর বক্তৃতা ও লেখায় বরাবরই বলে এসেছেন, স্বাধীন ভারতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্রমুক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখেছি, স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, এবং তাঁর পরিবারের ছত্রছায়ায় থাকা কংগ্রেস কোনও দিন নেতাজির সেই প্রদর্শিত পথে পা রাখেনি। বরং স্বাধীনতার পরে ওই বরেণ্য দেশনেতাকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টাই যেন করা হয়েছে। সেই সুযোগটাই গ্রহণ করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
৮ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়া গেটের সামনে নেতাজির মূর্তির আবরণ উন্মোচিত হল। ব্রিটিশদের তৈরি কিংসওয়ের নামই ছিল রাজপথ। সেই নাম বদলে হল ‘কর্তব্য পথ’। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের ঠিকানা রেস কোর্স রোড-এর বদলে হয়ে গেল ‘লোক কল্যাণ মার্গ’। বর্তমান শাসক নেতাজিকে ‘অখণ্ড ভারতের প্রথম প্রধান’ বলেও উল্লেখ করলেন। সন্দেহ নেই, এ সবই কংগ্রেস বিরোধিতা, তথা রাজনীতির সঙ্কীর্ণ স্বার্থেই। এ সব নিয়ে বিতর্ক ওঠা স্বাভাবিক। তবে এখন থেকে ইন্ডিয়া গেটে আলোকিত হবেন ভারতের যথার্থ দেশপ্রেমী বরেণ্য নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, এটাই প্রাপ্তি।
নেতাজি বলতেন, সংখ্যালঘুদের পারিবারিক আইন বজায় রাখার অধিকার রয়েছে। সংখ্যাগুরুর আইন চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। এই সূত্র ধরে প্রেমাংশুবাবু উল্লেখ করেছেন, নরেন্দ্র মোদীর সরকার মুসলিমদের পারিবারিক আইনে হস্তক্ষেপ করেই তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিয়েছে। কিন্তু ভুললে চলবে না, এ-দেশে বিরুদ্ধ মতের মানুষের অভাব নেই। এটা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের অবতারণা হতেই পারে। কারণ, ইউরোপের দেশগুলি ও অন্য অনেক উন্নত দেশ কিন্তু অভিন্ন আইনেরই আওতাধীন।
শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া
অসার স্তুতি
‘নেতাজি কুনাট্য’ সম্পাদকীয়র জন্য ধন্যবাদ (১২-৯)। নেতাজি মূর্তি উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বলেছেন, তিনি এবং তাঁর সরকার নেতাজির পথেই চলছেন, তা সত্য নয়। নেতাজি গান্ধীজির পথ মানতেন না, কিন্তু বিনায়ক দামোদর সাভারকরের পথে ছিল তাঁর তীব্র আপত্তি। তিনি জানতেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে জাত-ধর্ম নির্বিশেষে ভারতীয়দের যে ঐক্য দরকার, সাভারকরের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি তাকে বিঘ্নিত করবে। স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে আরএসএস-এর দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে গোলওয়ালকর বলেছিলেন, “ব্রিটিশ বিরোধিতাকে ভাবা হচ্ছে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের সমার্থক। এই প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সমগ্র স্বাধীনতা আন্দোলন, তার নেতৃবর্গ ও সাধারণ মানুষের উপর বিনাশকারী প্রভাব ফেলেছিল” (চিন্তাচয়ন, ১ম খণ্ড, পৃ ১২৫)। স্বাধীনতা আন্দোলনে সশস্ত্র বা শান্তিপূর্ণ, কোনও সংগ্রামেই আরএসএস যোগ দেয়নি।
আসলে জাতি গড়ে ওঠার বিষয়ে একটা মনগড়া ধারণা থেকে তারা সর্বদা হিন্দুরাষ্ট্রের দাবি করেছে। গোলওয়ালকরের মতে, “আমাদের দেশের হাজার হাজার বছরের ইতিহাস এই কথাই বলে যে, সব কিছু করেছে একমাত্র হিন্দুরা। এর অর্থ কেবল হিন্দুরাই এই মাটির সন্তান হিসেবে এখানে বসবাস করেছে” (চিন্তাচয়ন, ২য় খণ্ড, পৃ ১২৩-২৪)। এই বক্তব্য ভারতীয় জাতি গঠনের ইতিহাসের সম্পূর্ণ বিরোধী। এমনকি বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথও এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। বিবেকানন্দ বলেছেন, “কোনও সভ্যতা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ভাবে গড়িয়া উঠিয়াছে, এ রূপ দৃষ্টান্ত একটিও পাওয়া যায় না। একটি সুসভ্য জাতি আসিয়া কোনও জাতির সহিত মিশিয়া যাওয়া ছাড়াই যে জাতি সভ্য হইয়া উঠিয়াছে— এ রূপ একটি জাতিও জগতে নাই।” (বিবেকানন্দ রচনাবলী, ৩য় খণ্ড, পৃ ৩৪২)। রবীন্দ্রনাথও বলেছেন, “ভারতবর্ষের কেবল হিন্দু চিত্তকে স্বীকার করলে চলবে না। ভারতবর্ষের সাহিত্য, শিল্পকলা, স্থপতিবিজ্ঞান প্রভৃতিতেও হিন্দু-মুসলমানের সংমিশ্রণে বিচিত্র সৃষ্টি জেগে উঠেছে। তারই পরিচয়ে ভারতবর্ষীয়ের পূর্ণ পরিচয়”(রবীন্দ্র রচনাবলী, খণ্ড ১৪, পৃ ২৫৯, বিশ্বভারতী সংস্করণ)।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন বুঝে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট হিসাবে যখন সুভাষচন্দ্র কংগ্রেসের ঘোষিত লাইনের বাইরে গিয়েও ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের ডাক দিচ্ছেন, বিদেশে গিয়ে আজ়াদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে শামিল হচ্ছেন, তখন আরএসএস ব্রিটিশকে সহায়তার পক্ষে সওয়াল করেছে। সাভারকর ১৯৪১ সালে ভাগলপুরে হিন্দু মহাসভার ২৩তম অধিবেশনে বলছেন, “ভারতের প্রতিরক্ষার কথা বলতে গেলে, ভারত সরকারের সমস্ত যুদ্ধ প্রস্তুতিকে হিন্দুদের অবশ্যই দ্বিধাহীন চিত্তে সমর্থন করতে হবে।... হিন্দুদের বৃহৎ সংখ্যায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে হবে” (সাভারকর সমগ্র, খণ্ড ৬, পৃ ৪৬০)।
প্রধানমন্ত্রীর দল বিজেপি কিংবা আরএসএস-এর লক্ষ্য যে হিন্দু রাষ্ট্র, তা আজ তারা গোপন করে না। সেই রাষ্ট্রে মুসলমানরা তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার হারিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে অবস্থান করবেন। এই সাম্প্রদায়িক চিন্তা সে দিনও একই ভাবে লালন করত হিন্দু মহাসভা এবং আরএসএস। তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নেতাজি সে দিন বলেছিলেন, “হিন্দুরা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ বলিয়া ‘হিন্দুরাজের’ ধ্বনি শোনা যায়। এগুলি সর্বৈব অলস চিন্তা।” প্রধানমন্ত্রী কি নেতাজির এই বক্তব্য পড়ে দেখেছেন? হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগের মতো সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছে, এ বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলেন নেতাজি। যে সব স্বার্থান্বেষী লোক ক্ষুদ্র ও ব্যক্তিগত স্বার্থের লোভে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি করছে, তাদেরও দেশের শত্রু বলে গণ্য করা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী যে পথে চলেছেন, তা নেতাজির পথ বলে মনে হয়? বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী আর নেতাজির পথ সম্পূর্ণ বিপরীত। এই রূঢ় বাস্তবকে প্রধানমন্ত্রী কি শুধু নেতাজি স্তুতি দিয়ে ঢাকতে পারবেন?
সমরেন্দ্র প্রতিহার, কলকাতা-৪
পর্বতারোহী
সম্প্রতি পর্বতারোহী সুজয় দলুইয়ের মৃত্যুসংবাদ খবরে প্রকাশ পেয়েছে (‘ট্রেকিংয়ে গিয়ে ফের মৃত্যু বাঙালির’, ৫-৯)। হিমাচলের আলিরত্নি টিব্বায় পর্বতারোহীর নিখোঁজ হওয়ার খবরও কাগজে জায়গা পেয়েছে। কিন্তু লেখা হয়নি, ৫৫০১ মিটার উচ্চতার ‘টেকনিক্যাল পিক’-এ এটাই প্রথম ভারতীয় সামিট। কোনও পর্বতারোহীর মৃত্যুসংবাদ নিয়ে লেখা হলেও, তাঁদের সাফল্য নিয়ে এত কম চর্চা হয় কেন? ছন্দা গায়েন, দীপঙ্কর ঘোষের মৃত্যুর পরও দীর্ঘ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। অথচ, এভারেস্ট জয় করে আসা পিয়ালী বসাক, কিংবা ইন্দ্রাসন জয় করে আসা বাঙালি দলের বিষয়ে তেমন উত্তেজনা দেখা যায়নি। বাঙালি পর্বতারোহীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাঁরা নিজের চেষ্টায় বিশাল অঙ্কের অর্থ জোগাড় করে পাহাড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের সাফল্যের উদ্যাপন না করে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হচ্ছে এই পথের মৃত্যুভয়। এই মানসিকতা বদলানো দরকার।
চিত্র সেনগুপ্ত, মধ্যমগ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা
উপদ্রব
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমান অধিকার ও মর্যাদায় আমি বিশ্বাসী। কিন্তু তাঁদের কিছু আচরণ আপত্তিকর। রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে তৃতীয় লিঙ্গের কিছু মানুষ টাকার জন্য রীতিমতো উত্ত্যক্ত করেন ভ্রমণকারীদের। এই জোর করে টাকা আদায় বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
অসীম মণ্ডল, কলকাতা-৬৮